শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫


ক’জন মাদরাসা পড়ুয়ার ঈদানন্দ

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

রকিব মুহাম্মদ
আওয়ার ইসলাম

খুশির ঈদ আসে আনন্দের বার্তা নিয়ে। এক মাস সিয়াম সাধনার পর ঈদ আসে মুমিনের পুরষ্কার হিসেবে। সকল পেশা, সকল শ্রেণীর মানুষদের জন্যই ঈদ খুশির। চাকরিজিবি, সরকারি কর্মচারি, কৃষক, শ্রমিক কিংবা শিক্ষার্থী সকলের জন্যই ঈদ আসে আনন্দেরর বার্তা নিয়ে। ঈদের আনন্দ প্রাণভরে উপভোগ করার জন্য সবাই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে এই দিনটির জন্য। সবার হৃদয়ে অন্যরকম অনুভূতি কাজ করে। বছরের দু’টি ঈদের মধ্যে ঈদুল ফিতরকে ঘিরে থাকে বেশি আনন্দ।

এই আনন্দ কাজ করে মাদরাসা পড়ুয়াদের ভেতরেও। ঈদের আনন্দ পরিবারের সাথে আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে মাদরাসা পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা ছুটে চলে গ্রামের পথে। পড়ালেখা ও বিভিন্ন দ্বীনি কাজে অংশগ্রহণের মধ্য দিয়েই তাদের বছর পার হয়। এমনকি মৌসুমি ছুটিতেও অনেকের বাড়ি যাওয়া হয়ে ওঠে না। আর সেই জন্যে রমজানের ছুটি শুরু হওয়ার আগেই শুরু হয় গ্রামে যাবার প্রস্তুতি।

বাড়ির ঈদ আর প্রবাসের ঈদে যে অনেক তফাৎ, সেটা বোধহয় এতদিনে বুঝতে পারলাম। আব্বু-আম্মুহীন ঈদ আসলেই যাতনাময়। ঈদসকালে আম্মুর স্পেশালি বানানো সন্দেশের স্বাদ, আর সেমাইর ঘ্রাণ রীতিমত মিস করতেই হলো আমায়। তবে আলহামদুলিল্লাহ্‌! ভালোলাগাটাও কম ছিলো না। দেওবন্দ-এর সুদর্শন 'মসজিদে রশীদে হাজার হাজার মুসল্লিদের সঙ্গে ঈদের জামাতে অংশগ্রহণ। নামাজ পরবর্তী বন্ধুদের সঙ্গে কিছুটা হাসা-হাসি, এবং মাদানি দস্তরখানের মেহমান হওয়ার অনুভূতি সত্যিই অন্যরকম ছিলো। তবে দেশের মতো ঘুরানোটা হয়নি। বেলা গড়াতেই ঘুম কিংবা কিতাব নিয়ে পড়তেই বসতে হলো। আর মাদরাসার মুগ্ধকর পরিবেশে তৃতীয় কোন অপশন বের করার সে সুযোগও নেই। আর সম্ভবও হয় না। যাক, সব মিলিয়ে আলহামদুলিল্লাহ্‌! ঈদের খুশি যে হয়নি ওমন না। কিছুটা হলেও তো হয়েছে (?)

ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দে দাওরা হাদীসে অধ্যায়নরত মুহাম্মাদ নাজমুল ইসলাম ঈদের দিনে মাদরাসার চত্বরেই ছিলেন। তার ঈদের আনন্দ অনুভূতির কথা এভাবেই তুলে ধরেছেন তিনি।

জামিয়া পটিয়ায় দাওরা হাদীস অধ্যায়নরত ইকবাল আজীজ ঈদের দিনের ভাবনা নিয়ে বলেন, “দীর্ঘ এক মাস রোজা রাখার পর ঈদের আনন্দটাই যেন অন্য রকম। নতুন জামা কাপড়, নতুন জুতা, ঈদের সালামি, এগুলো নিয়ে আমার উৎসাহের কমতি নেই। বন্ধু-বান্ধব মিলে সারা দিন এবাড়ি-ওবাড়ি গিয়ে সালাম আর কোলাকোলির মধ্যে শুধুই আনন্দ ছিল। যেহেতু লেখাপড়ার জন্য বাইরে থাকতে হয় তাই পরিবারের সাথে ঈদ পালন করতে পারাটাও অন্যরকম আনন্দের। ঈদের এই খুশি ধনী গরিব সবার জন্য। সবার ঈদ ভাল কাটুক “ঈদ মোবারক”।

“সারা গ্রামের একমাত্র মাদ্রাসা পড়ুয়া হিসেবে গ্রামবাসীদের চাওয়া একটু বেশীই আমার কাছে। ঈদের দিন ততটা ঘুরাফেরা না হলেও, প্রত্যুষে ঘুম থেকে উঠে ভালো কাপড় পরে ঈদগাহে যাওয়া এবং নামাজ শেষে এলাকার কবরগুলো জেয়ারত করাই এ দিনের প্রধান আর মুখ্য কর্ম হয়ে ওঠে। এতে এলাকাবাসী তাদের মৃত আত্নীয়স্বজনদের প্রতি সামান্য সদকায়ে জারিয়া পৌঁছাতে পেরে যেমন প্রশান্তি লাভ করে, তেমন আমিও অনুভব করি পবিত্র আনন্দের এক না-বলা তৃপ্তি”। টঙ্গী দারুল উলুম মাদরাসায় মেশকাত জামাতে অধ্যায়নরত মঈন উদ্দিন তাওহীদ এভাবেই তুলে ধরেন ঈদের দিনের অনুভূতি।

ঢাকার মারকাজুল উলামা সাইন বোর্ড মাদ্রাসার জালালাইন জামাতের শিক্ষার্থী হাবিব মাসুদ জানান, “ঈদ নিয়ে বলতে গেলে প্রথমেই বলতে হয়, আমাদের(মাদরাসা শিক্ষার্থীদের) জন্য ঈদ-উল ফিতর হল সোনার হরিণ। কুরবানীর ঈদ মাদরাসাতেই করতে হয়। কিন্তু রোযার ঈদ উপলক্ষে লম্বা ছুটি পাই। পরিবার, আত্নীয়স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশীদের সাথে দীর্ঘ একটা সময় কাটাতে পারি। সম্পর্কটা ঝালাই দেয়ার একটা বড় সুযোগ পাই। একমাস রোজা রাখা, পরিবারের সাথে ইফতার, তারাবীহ, ঈদের দিনে ঈদগাহে নামাজ আদায়, সব মিলিয়ে একটা অন্যরকম অনুভূতি কাজ করে। আনন্দের মধ্য দিয়েই কাটে এক মাস।

কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া এমদাদুল উলুম মাদরাসার নাহবেমীর জামাতের শিক্ষার্থী নুরুল জান্নাত মান্না বলেন, “আমি পড়ালেখা করি গ্রাম পর্যায়ের একটি কওমী মাদরাসায়। বাড়িটাও মাদরাসার পাশেই। সেই ছোট বেলা থেকেই আব্বা, আম্মা, দাদা, দাদু, চাচাদের নিয়ে এক সাথে ঈদ করছি। খুব সকালে ঘুম থেকে উঠি, গোসল করে ঈদগাহে নামাজের জন্য যাই এবং নামাজ শেষে কবর জিয়ারত করি। বন্ধুদের সাথে ঘোরাঘুরি আরও অনেক আয়োজন থাকে এই দিনটিকে ঘিরে। পরিবারের একমাত্র কওমীর সন্তান হিসেবে সবাই একটু বেশিই ভালবাসেন আমাকে। সত্যিই অন্যরকম অনুভূতি। যে অনুভূতির কথা বলে বোঝানো সম্ভব নয়”।

পথশিশুদের সাথে সাম্যের ঈদ


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ