বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১১ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

শিরোনাম :
‘মানতিক; যুগের চাহিদার সাথে মিলে না’ এ ধরেণের কথা অযৌক্তিক: মুফতি হিফজুর রহমান দাওরায়ে হাদিসের ফলাফল নজরে সানীর আবেদনের সময় বাকি ৩ দিন  বৃষ্টি প্রার্থনায় জামিয়াতুল আবরার রাহমানিয়ায় ‘সালাতুল ইস্তিসকা’  আদায় হাসপাতালে সৌদি বাদশাহ সালমান সোস্যাল মিডিয়ায় প্রচারিত পাঠ্য তালিকার সাথে বেফাকের পাঠ্য তালিকার সম্পর্ক নেই: বেফাক সৈয়দপুরে তাপদাহে অতিষ্ঠ মানুষ, ‘হিটস্ট্রোকে’ ১ জনের মৃত্যু স্বর্ণের দাম আরও কমলো, ভরি ১ লাখ ১৪ হাজার ১৫১ টাকা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান ইরান-পাকিস্তানের ঢাবিতে বৃষ্টির জন্য ‘সালাতুল ইসতিস্কা’র অনুমতি দেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ‘বৃষ্টির জন্যে সালাত আদায় করলেই অবশ্যম্ভাবী বৃষ্টি চলে আসবে—বিষয়টা তা নয়’

‘আব্বা কখনো বলতেন না এটা কর ওটা কর; বলতেন যোগ্য হও দীনের কাজ করো’

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

জাতির আধ্যাত্মিক রাহবার উলামায়ে কেরামকে আমরা শুধু একজন দাঈ হিসেবেই চিনি। তাদের বিস্তৃত জীবনের বাইরের অংশটুকুই আমরা জানি। কিন্তু একজন বাবা হিসেবেও তারা যে ছিলেন অতুলনীয় এবং পরিবার গঠনেও যে তারা আমাদের আদর্শ হতে পারেন তা হয়তো কখনো ভেবে দেখিনি। আমাদের ভাবনার আড়ালে থাকা সেসব শ্রেষ্ঠ বাবাদের পাঠকের সামনে তুলে ধরছে ourislam24.com।

ধারাবাহিক স্মৃতিচারণের পঞ্চম পর্বে থাকছেন সাবেক এমপি, বিশিষ্ট আলেম লেখক ও গবেষক মাওলানা আতাউর রহমান খান রহ.। প্রিয় বাবাকে নিয়ে আওয়ার ইসলামের সঙ্গে কথা বলেছেন তারই সুযোগ্য বড় ছেলে দৈনিক ইনকিলাবের সিনিয়র সহকারী সম্পাদক মাওলানা উবায়দুর রহমান খান নদভী। তার স্মৃতি, আবেগ ও অনুভূতিগুলো পাঠকের সামনে তুলে ধরেছেন আতাউর রহমান খসরু ।

আমার আব্বা একজন বিখ্যাত ব্যক্তি ছিলেন। তিনি একাধারে একজন রাজনীতিক, মুহাদ্দিস, সুবক্তা, লেখক ও গবেষক ছিলেন। তিনি অনেক কাজ করতেন এবং অনেক ব্যস্তও থাকতেন। কিন্তু সব ব্যস্ততার উর্ধ্বে ছিলো তার পরিবার ও সন্তান। আব্বার ব্যস্ততা দেখে অনেকের ধারণা হতে পারতো তিনি তার সাথে আমাদের এবং আমাদের আম্মার হয়তো দেখা-সাক্ষাৎ ও কথা-বার্তা খুব একটা হতো না। বিষয়টা এমন নয়। তিনি সন্তাদের ও তার স্ত্রীকে সময় দেয়া নিজের দায়িত্ব মনে করতেন এবং যথেষ্ট গুরুত্ব দিতেন।

আব্বার সঙ্গে আমরা এক সঙ্গে খেতাম। বিশেষত রাতের খাবার আমরা এক সঙ্গে করতাম। খাবার সময় ছাড়াও রাতে এশার পর, আসরের পর বা অন্য কোনো সময়ে আমাদের পারিবারিক বৈঠক ও আলোচনা হতো। আলোচনা হতো অনেকটা সেমিনারের মতো। সেখানে দীন, ধর্ম, সংস্কৃতি, রাজনীতি, ইতিহাস এবং আমাদের পূর্ব পুরুষদের ইতিহাস আলোচিত হতো। আরও মজার ব্যাপার হলো, আমি আমার ব্যক্তিগত পাঠ ও অধ্যয়ন থেকে যা শিখেছি, আব্বার কাছ থেকে তার প্রায় সমপরিমাণ শিখেছি। তিনি ইসলাম, জ্ঞান-বিজ্ঞান ও সমকালীন সাহিত্যের একজন অগ্রসর পাঠক ছিলেন। আমার সব ভাই-ই এমনটি মনে করে।

আব্বা খুবই মিশুক ধরনের মানুষ ছিলেন। কিন্তু তিনি খুব শালীন ও অভিজাত ছিলেন বলে এবং জ্ঞানী মানুষ হিসেবে খুব কম কথা বলতেন বলে বাইরে থেকে মনে হতো তিনি খুব গম্ভীর। আব্বার বন্ধু, ছাত্র, খাদেম এবং যারা তার কাছে আসতেন তারা জানতেন আব্বা খুবই সরল ও মিশুক ছিলেন। সন্তানদের সঙ্গে আব্বার সহজ একটা সম্পর্ক ছিলো। আমরা আব্বাকে শ্রদ্ধা ও সমীহ করতাম। কিন্তু তার সঙ্গে মিশতে কোনো দ্বিধা ছিলো না। পরস্পর ভাব-বিনিময়ে আব্বার আচরণ ছিলো বন্ধুসূলভ। তবে এটাও ঠিক আব্বা আমরা বন্ধু মনে করতাম না। তার মৃত্যুর পর আমরা সহজ মেলামেশা ও ভাব-বিনিময়কে মিস করি।

আব্বার আদর ও শাসন ঠিক বোঝা যেতো না। তিনি আমাদের শাসন করতেন ঠিক এমন মনে হয় না। আবার সরাসরি আদর করতেন তাও নয়। তবে তিনি আমাদের জন্য দোয়া করতেন এটা আমরা দেখতাম ও বুঝতাম। তার বিশুদ্ধ জীবনাচারই আমাদের নির্দেশ করতো। সারা জীবনে তিনি হয়তো দুয়েকবার আমাদের ধমক দিয়েছেন। তবে আব্বার একটা নিবিড় ভালোবাসা সব সময় ছায়ার মতো আমাদের মাথার উপর বিরাজ করতো।

আব্বা সারা জীবনে দুবার আমাকে শাসন করেছেন। একবার সেলুনে যেয়ে বিশেষ স্টাইলে চুল কাটার পর আব্বা নিজ হাতে আমার চুল সমান করে দিয়েছিলেন। এতে আমি কান্না করায় আমাকে থাপ্পর মেরেছিলেন।

আরেকদিন কোনো অনুষ্ঠানে আমার না’ত গাওয়ার কথা ছিলো। আমি অনুষ্ঠানে আগত একজন মেহমানের হেলিকপ্টর দেখার জন্য বন্ধুদের সাথে চলে যাই। সে অনুষ্ঠানে আমি সময় মতো উপস্থিত হতে পারি নি। আব্বা সেদিন আমাকে মেরেছিলেন এবং ধমকও দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, হেলিকপ্টরের তামাশা দেখার জন্য অনেক মানুষ আছে। যে অনুষ্ঠানে তোমার দাদা সভাপতি, আমি প্রধান বক্তা সেখানে উপস্থিতির গুরুত্ব কতোটুকু বোঝো? তুমি যে মেহমানকে দেখতে গিয়েছো তিনি তো মঞ্চেই এসেছেন। মঞ্চে তোমাকে দেখলে তোমার সম্পর্কে তার ধারণা কতো উঁচু হতো।

আব্বার মৃত্যুর আগে আমি লিভারের রোগে আক্রান্ত হই। এক-দেড় মাস হাসপাতালে ভর্তি থাকতে হয়। এ সময় আব্বা আমার দেখাশোনা, আমার জন্য তার উদ্বেগ, নির্ঘুম রাত, সেজদায় কান্নাকাটি, যার সাথে দেখা তার কাছে আমার জন্য দোয়া চাওয়া -আদর-ভালোবাসার এর চেয়ে বড় দৃষ্টান্ত আর কী হতে পারে? আমি বেহুশ ছিলাম। আম্মা ও ভাইবোনের কাছে এসব শুনেছি।

আব্বা ছিলেন একজন নীরব ওলি। তিনি আল্লাহর উপর আস্থাশীল ছিলেন। দোয়ার মাধ্যমে নিজের ভাগ্য পরিবর্তনে বিশ্বাসী ছিলেন। তিনি কখনো বলতেন না এটা কর, ওটা কর। এটা হও, ওটা হও। বলতেন, যোগ্য হও, দীনের কাজ করো। প্রতিভাব থাকলে তোমরা চমকাবেই।

তিনি বলতেন, তোমরা আল্লাহর জন্য যোগ্য হও। যোগ্য ব্যক্তিদের মানুষ ভালোবাসে। আল্লাহ যোগ্যদের উপযুক্ত ব্যবস্থ্যা করে করে দেন। নিজে চেষ্টা করে কোথাও পৌঁছা যায় না, যদি আল্লাহ না চান।

আমি দেশ-বিদেশের বহু মানুষের সাথে মিশেছি, দেখেছি কিন্তু আব্বার মতো একজন যোগ্য ও পারফেক্ট মানুষ আমি সমকালে আরেকটি দেখি নি।

আব্বা আমাদের যা শেখাতে চাইতেন তা নিজেই করা শুরু করতেন

‘বাবার চিঠি পাঠানো দেখে ছাত্ররা বলতো এমন সন্তানপাগল লোক আর দেখিনি’

বাবার মৃত্যুর পর কোনো বিরোধ লাগলে তা নিষ্পত্তির জন্য পারিবারিক কমিটি করে গেছেন

বাবা হিসেবে শায়খ ছিলেন অতুলনীয়


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ