শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৭ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১১ শাওয়াল ১৪৪৫


ভিন্নতা; মসজিদ থেকে বাসায় যায় ইফতারি

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

১৬ তলা ভবনের ওপরে লিফটের দরজা খুলতেই চোখ জুড়িয়ে গেল! প্রায় পুরো ফ্লোরে একটি মসজিদ। স্বচ্ছ কাচের দরজার সামনে দাঁড়ালে সেটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে খুলে গেল। মসজিদে নানা আকৃতির ঝাড়বাতি, নান্দনিক কারুকাজ। আবাসিক ভবনের ওপরে ব্যক্তি উদ্যোগে করা এই মসজিদের নাম বায়তুল ফালাহ্ ফকির বানু জামে মসজিদ।

গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় মসজিদে চলছিল ইফতারের আয়োজন। মসজিদের বারান্দায় লম্বা সারিতে কয়েক শ মানুষ। পুরান ঢাকার প্রচলিত ইফতারির নানা অনুষঙ্গের পাশাপাশি আছে কয়েক রকমের ফল।

এর আগে মসজিদ থেকে ভবনটির ৯৬টি ফ্ল্যাটে ইফতারি পাঠানো হয়। রোজায় প্রতিদিনই চলে এই আয়োজন।

মসজিদ চালুর প্রথম রমজান থেকে প্রতিদিন ১ হাজার ২০০ মানুষের ইফতারের আয়োজন করা হয় ভবনের চিলেকোঠায় থাকা আলাদা রান্নাঘরে।

ভবনের স্থায়ী বাসিন্দা ইউসুফ আলী বলেন, ‘আমার ঘরে যথেষ্ট ইফতারির ব্যবস্থা থাকে। তবু আমার পাঁচ বছরের মেয়ে এশা প্রতিদিন মসজিদ থেকে পাঠানো ইফতারি নেওয়ার জন্য নির্দিষ্ট সময়ে দরজায় দাঁড়িয়ে থাকে।’

এ ছাড়া রাজধানী মার্কেটের সামনে অবস্থিত মসজিদসহ সালাউদ্দিন স্পেশালাইজড হাসপাতালে ইফতারি পাঠানো হয় এই মসজিদ থেকে। রমজানের শুরু থেকে ইফতারি বানানোর জন্য কয়েকজন বাবুর্চিকে এক মাসের জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়। পুরি, পেঁয়াজি, আলুর চপের মতো নিয়মিত অনুষঙ্গ ছাড়াও মাঝে মাঝে খিচুড়ি, তেহারির ব্যবস্থা থাকে। এলাকার একজন দোকানি বেলাল হোসেন বলেন, ‘প্রথম রমজান থেকেই আসি। এখানে লোকজনের সঙ্গে ঠান্ডার মধ্যে বসে ইফতার করতে ভালো লাগে।’

হাটখোলার শহীদ নজরুল ইসলাম সড়কে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের পাশেই ফকির বানু ভবনের অবস্থান। মূল সড়কের পাশে হলেও এলাকাটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতো। পেছনের এলাকাটির নাম ভগবত ব্যানার্জি রোড। কাছাকাছি মসজিদ নেই। এখানকার বাসিন্দাদের নামাজ আদায় করতে বড় রাস্তা পার হয়ে টিকাটুলী জামে মসজিদ কিংবা ওয়ারী এলাকার মসজিদগুলোতে যেতে হয়। ঝড়-বাদলের দিনে দুর্ভোগে পড়ে যান স্থানীয় বাসিন্দারা। এমন পরিস্থিতিতে পুরান ঢাকার দক্ষিণ মৈশুণ্ডী এলাকার প্রবীণ বাসিন্দা হাজি সালাহউদ্দীন নিজের উদ্যোগে তাঁর বাবা-মায়ের নামাঙ্কিত ভবনের ১২ হাজার বর্গফুটের একটি ফ্লোরের পুরোটাই দেন মসজিদের জন্য।

মসজিদের খতিব মাওলানা মুফাজ্জল হোসাইন জানান, ২০১১ সালে মসজিদটি চালু হয়। মসজিদের উদ্যোক্তা হাজি সালাউদ্দীন সাহেব এটি ওয়াক্ফ করে দেন। শীতাতপনিয়ন্ত্রিত এই মসজিদে ১ হাজার ৫০০ মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ পড়তে পারেন।

ফকির বানু ভবনের ব্যবস্থাপক ওয়াহিদুজ্জামান জানান, ১৬ তলা এই ভবনের বাসিন্দাদের যাতায়াতের জন্য আলাদা চারটি লিফট আছে। মসজিদের লিফটটি অন্য কোনো ফ্লোরে থামে না।

রমজানে তারাবি নামাজ পড়ানোর জন্য মসজিদের নিয়মিত খতিব, ইমাম ছাড়াও এক মাসের জন্য একজন হাফেজ নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এখানে তারাবির নামাজ আদায়ের জন্য দূরদূরান্ত থেকে মানুষ আসেন। ওয়ারী এলাকা থেকে আসা তারাবির নিয়মিত মুসল্লি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমার বাসা থেকে এই মসজিদে আসতে রিকশা লাগে। তবু প্রতি জুমা এবং তারাবি আদায়ের জন্য এখানে চলে আসি। এ মসজিদের পরিবেশটা এত ভালো লাগে যে আমার বৃদ্ধ বাবা প্রতিবছর ২০ রমজান থেকে এখানে ইতিকাফে বসেন।’ টিকাটুলী কে এম দাস লেনের মোহাম্মদ ইকবাল বলেন, এখানকার শীতল এবং নীরব পরিবেশটায় মন জুড়িয়ে যায়।

মসজিদের খাদেম আবদুর রউফ জানান, গত শুক্রবার ২০তম রমজানে মসজিদে ইতিকাফের জন্য অনেক দূর থেকে মুসল্লিরা এসেছেন। মসজিদের ভেতর পর্দা দিয়ে তাদের আলাদা থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ইফতার এবং সাহ্‌রির ব্যবস্থাও আছে।

মসজিদ এবং ইফতারির কার্যক্রম নিয়ে কথা বলতে গেলে হাজি সালাউদ্দীন খুব একটা আগ্রহ দেখালেন না। বললেন, ‘আমি কখনো রাজনীতি করিনি। নিজের প্রচারেরও কোনো উদ্দেশ্য আমার নেই। আমার উদ্যোগে যদি মানুষের ন্যূনতম উপকার হয়, তাহলেই আমার শান্তি।’

লেখাটি প্রথম আলো থেকে নেয়া


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ