শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৭ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১১ শাওয়াল ১৪৪৫


কার স্বার্থে সউদি এই অপটু সিদ্ধান্তে ‘হ্যাঁ’ বললো?

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

ইয়াহইয়া ইউসুফ নদভী
সম্পাদক, কিশোর স্বপ্ন

আমি কখনো কাতার যাই নি। একবার যাওয়ার একটা সুযোগ তৈরি হয়েছিলো, কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর হয় নি। কাতারে না গেলেও আমি কাতারকে ভালোবাসি তার মানবতা ও ইসলামবান্ধব নানা কর্মসূচির কারণে। বিশেষ করে কুরআনকে ঘিরে কাতারের নানামুখী উদ্যোগ সত্যি ঈর্ষণীয়। আমি এখনো কাতার যেতে চাই। কিন্তু আমার মনে একটা অদ্ভুত শংকা জেগেছে― কাতার আক্রান্ত হওয়ার আগে কাতারের শিল্পরূপ দেখতে পারবো কি?

গতকাল সৌদিসহ ৫টি আরব ভূখণ্ড কাতারের সাথে নৌ আকাশ ও স্থল যোগাযোগসহ যাবতীয় কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছে। ব্যক্তিগতভাবে খুব কষ্ট পেয়েছি। কিন্তু সীমাহীন অবাক হই নি। অবাক না হওয়ার কয়েকটা কারণ বলি :

১.বর্তমান আমীর তামিম এর পিতা শায়খ হামদ বিন খলীফা ২০১২ সালের অক্টোবরে গাজা সফর করেন। মিসরে তখন মুহাম্মদ মুরসি প্রেসিডেন্ট। মূলত তাঁরই সহযোগিতা ও বদন্যতায় কাতারের আমীরের এ সফরের পথ সুগম হয়েছিলো। সে কথা আমীর প্রকাশও করেছেন সফরপরবর্তী প্রতিক্রিয়ায়। বলেছেন, "لولا الرئيس محمد مرسي وثورة 25 يناير ما كنت قد استطعت زيارة القطاع" ― প্রেসিডেন্ট মুহাম্মদ মুরসি এবং মিসরে ২৫ জানুয়ারির বিপ্লব না হলে আমরা পাজা সফর করতে পারতাম না।

উল্লেখ্য যে, এ সফরকে ইসরঈল এবং তার বন্ধুরা ভালো চোখে দেখে নি। ইসরাঈলের পররাষ্ট্র দফতর বলেছে, ‘এ সফর বিস্ময়কর’। বিস্ময়কর তো বটেই! কারণ ইসরাঈল এবং তার বন্ধুদের প্রধান শত্রু ও হুমকি হামাস গাজা শাসন করছে। এ ছাড়া ১৯৬৭ সালের পরে আর কোনো আরব শাসক ফিলিস্তিনমুখী হন নি। গাজামুখী হন নি। অবশ্য ইসরাঈলের বিস্ময়ের ক্ষেত্রটা সম্ভবত আরো গভীরে প্রোথিত।
এই সফরে কাতার গাজাকে কী কী সহযোগিতা দিয়েছিলো?
২০০৮ সালে ইসরাঈলের বর্বর আক্রমণে বিধ্বস্ত গাজাকে?
নানা প্রকল্পে ২৫৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার!

আমি অবচেতন মনে সেদিন ভেবেছিলাম, কাতারের কপালে দুঃখ আছে। এবং মুহাম্মদ মুরসির ভাগ্যেও দুঃখ আছে।

২. কাতার আশ্রয় দিয়ে যাচ্ছে বহুদিন থেকে হামাসের শীর্ষ রাজনীতিকদেরকে। ইখওয়ানের জন্যেও কাতারের উদার আকাশ ছিলো অবারিত। জর্দান সংকোচিত হয়ে এলে খালেদ মিশাল চলে আসেন এই কাতারে। একদিকে সিসির ‘পুতুল খেলার’ আদালতে ড. ইউসুফ কারযাভীর মৃত্যুদণ্ড ঘোষিত হয় অপরদিকে তিনি কাতারের বরিত রাজমেহমান।
আমি অবচেতন মনে ভেবেছি, হামাস-ইখওয়ানের দুশমনেরা নিশ্চিত কাতারকে জব্দ করার ছক নিয়ে বসে গেছে। কাতারের কপালে দুঃখ আছে।

৩. সিরিয়ায় কাতার সাহায্য করে, কাকে? অনেক বন্ধু না জেনে বলে থাকেন আসাদ সরকারকে। মনে হয় তথ্যটি সঠিক নয়। আমার মনে হয়, কাতারের অবস্থান ‘মাজলুম মানবতার’ পাশে।

৪. প্রেসিডেন্ট রজব তৈয়ব এরদুগানের সাথে কাতারের বন্ধুত্ব সূচনা থেকেই ‘সৎ কাজে সাহায্য করো আর অসৎ কাজে বাধা দাও’― এ নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত।
তুরস্ক-কাতার ও সম্পর্কটিও ‘অনেকে’ মেনে নিতে পারেন নি। প্রতিশোধ নেয়ার জন্যে মরিয়া হয়ে সুযোগ খুঁজে বেড়াচ্ছিলো। তুরস্কের সেই কালো সামরিক অভ্যুত্থানের কথা মনে পড়ে? এখন কি কাতারের পালা? ....

৫. কদিন আগে অনুষ্ঠিত হয়ে যাওয়া আমেরিকান ইসলামিক শীর্ষ সম্মেলন হয়ে গেলো সউদি রাজধানী রিয়াদে। সেখানে পঞ্চাশটিরও বেশি রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান অংশ গ্রহণ করেছেন।

বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানও অংশ নিয়েছে। কিন্তু এরদুগান ছিলেন না। কাতার ছিলো, কিন্তু কাতারের সাথে ‘বৈরী আচরণ’ করা হয়েছে। সিসিকে স্বাগত জানানো হচ্ছে আরব-চুমোয় উষ্ণতাভরা পরিবেশে। অপরদিকে কাতারের আমীরের জন্যে শুধু একফালি ‘পানসে টুকরো হাসি ‘ আর দায়সারা গোছের হাত ধরাধরি।
তখন খটকা লেগেছিলো― কেনো এই অশিষ্ট বৈষম্য? আহা, তখন তো বুঝি নি, গতকালের ঘটনার শেকড়-বিছানো ‘বৃক্ষ’টা ওই দিনই ‘নীল কিশলয়’ গজাতে শুরু করেছে।

লেখাটা লম্বা হয়ে যাচ্ছে। থেমে যাই। আবার বলি, গতকালের ঘটনায় আমি সীমাহীন অবাক হইেনি। কাতার-তুরস্কের শত্রুরা সব সময় সজাগ। ছিলো আছে থাকবে। হামাস-ইখওয়ানের বন্ধুদের কোনো ছাড় তারা সহজে দেবে না। তুরস্ক তো এরদুগানের ‘কবলে’ পড়েছে। বিচক্ষণ. দক্ষ, দূরদর্শী, প্রজাহিতৈষী, সুশাষক, প্রচণ্ড ঠাণ্ডা মাথায় সিদ্ধান্তগ্রহণকারী এরদুগানকে সহজে পরাস্ত করা মুশকিল।

এখন অপেক্ষার পালা। সব প্রশ্নের উত্তর এখন পাওয়া যাবে না। সব অনুমান সত্য নাও হতে পারে।
কিন্তু কার স্বার্থে সউদি এই অপটু সিদ্ধান্তে ‘হ্যাঁ’ বললো?

পাশ্চাত্য-ইসরাঈল বান্ধব আমিরাত কি সউদিকে বিভ্রান্ত করেছে?
কাতারি এখন কি ইরাক হবে? কিংবা ইয়েমেন লিবিয়া?

অনেকের চোখের বালি কাতারের বিপ্লবী উন্নয়নধারা এবং আলিশান স্থাপত্যশৈলীর উপর নেমে আসবে কি মায়াদয়াহীন কোনো আকাশ ঝড়?

কেন আরব রাষ্ট্রগুলো কাতার কে বর্জন করেছে?


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ