বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১২ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

শিরোনাম :
‘মানতিক; যুগের চাহিদার সাথে মিলে না’ এ ধরেণের কথা অযৌক্তিক: মুফতি হিফজুর রহমান দাওরায়ে হাদিসের ফলাফল নজরে সানীর আবেদনের সময় বাকি ৩ দিন  বৃষ্টি প্রার্থনায় জামিয়াতুল আবরার রাহমানিয়ায় ‘সালাতুল ইস্তিসকা’  আদায় হাসপাতালে সৌদি বাদশাহ সালমান সোস্যাল মিডিয়ায় প্রচারিত পাঠ্য তালিকার সাথে বেফাকের পাঠ্য তালিকার সম্পর্ক নেই: বেফাক সৈয়দপুরে তাপদাহে অতিষ্ঠ মানুষ, ‘হিটস্ট্রোকে’ ১ জনের মৃত্যু স্বর্ণের দাম আরও কমলো, ভরি ১ লাখ ১৪ হাজার ১৫১ টাকা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান ইরান-পাকিস্তানের ঢাবিতে বৃষ্টির জন্য ‘সালাতুল ইসতিস্কা’র অনুমতি দেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ‘বৃষ্টির জন্যে সালাত আদায় করলেই অবশ্যম্ভাবী বৃষ্টি চলে আসবে—বিষয়টা তা নয়’

কাতার-সৌদি ইস্যু যেভাবে দেখছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক মাওলানা লিয়াকত আলী

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আওয়ার ইসলাম: কাতার নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে নতুন সংকট তৈরি হয়েছে। কাতারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ। মধ্যপ্রাচ্যের এ সংকটে মুসলিম বিশ্বে নতুন উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।

বিশ্ব অর্থনীতিতেও তার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। ডলারের দরপতন ঘটেছে, তেলের দাম উর্ধ্বমুখী। এ উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম জনসংখ্যার দেশ বাংলাদেশেও। বাংলাদেশসহ মুসলিম বিশ্বের প্রশ্ন, উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা নিয়ে কথা হয় মাদরাসা দারুর রাশাদের শিক্ষাসচিব, জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়ার সিনিয়র ‍মুহাদ্দিস, দৈনিক নয়াদিগন্তের সিনিয়র সহ-সম্পাদক মাওলানা লিয়াকত আলীর সঙ্গে। তার সঙ্গে কথা বলেন, আওয়ার ইসলামের বার্তা সম্পাদক আতাউর রহমান খসরু

আওয়ার ইসলাম : কাতার নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের বর্তমান সংকটের কারণ কী বলে আপনি মনে করেন?

মাওলানা লিয়াকত আলী : মুসলিম বিশ্বের বিভেদের সর্বশেষ প্রতিফলন কাতার সংকট। কাতারের বিরুদ্ধে পশ্চিমা দেশগুলো ও তাদের আরব মিত্ররা বরাবর সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে মদদ দেয়ার অভিযোগ করছে। সন্ত্রাস বলতে তারা বোঝাচ্ছে, ফিলিস্তিনের হামাস ও মিশরের ইখওয়ানুল মুসলিমিন বা মুসলিম ব্রাদারহুট। তারা এ দুটি সংগঠনকে তারা সন্তাসী সংগঠন মনে করে। কাতার তাদের সহযোগিতা করে বলেই কাতারকে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।

আওয়ার ইসলাম : হামাসের নেতারা তো মিশরসহ অন্যান্য দেশগুলোতে প্রকাশ্যে রাজনৈতিক তৎপরতা চালাচ্ছে...

মাওলানা লিয়াকত আলী : তারপরও কাতারের ভূমিকা ও অন্যান্য আরব রাষ্ট্রগুলোর ভূমিকায় পার্থক্য আছে। কাতার অনেক বেশি আন্তরিক এবং তাদের সামর্থ্যের সবটুকু দিয়ে তাদের সহযোগিতা করছে।

আওয়ার ইসলাম : তাহলে এ জায়গায় ইসরাইল, পশ্চিমা বিশ্ব ও তাদের আরব মিত্ররা একাকার হয়ে গেলো না?

মাওলানা লিয়াকত আলী : তা তো হবেই। তারা তো আগ থেকে এক। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোই ইসরাইলকে পোষণ করছে। ইসরাইলকে পোষণ করে এবং আমেরিকার আনুগত্য মধ্যপ্রাচ্যের শাসকদের কাজ।

আওয়ার ইসলাম : ইসরাইলকে পোষণ করে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর লাভ কী?

মাওলানা লিয়াকত আলী : লাভ ক্ষমতা টিকিয়ে রাখা। জনগণের ইচ্ছা ও অভিপ্রায়ের বিরুদ্ধে তারা টিকে আছে ইসরাইল ও আমেরিকার সহযোগিতায়। ইসরাইল প্রতিষ্ঠা ও সৌদি আরবে সৌদ পরিবারের প্রতিষ্ঠা একই পরিকল্পনার অধীনে হয়েছে। তাদের সমঝোতা বহু পুরাতন। সমঝোতা ও পারস্পারিক সহযোগিতায় তারা টিকে আছে।

আওয়ার ইসলাম : কাতারেও তো রাজতন্ত্র। কাতারের সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশগুলোর পার্থক্য কোথায়?

মাওলানা লিয়াকত আলী : ঠিক, কাতারেও রাজতন্ত্র। তবুও কাতারের কিছু কাজ ভালো। যেমন, তাদের আল জাজিরা সংবাদ মাধ্যমটি সারা বিশ্বে মুসলমানের পক্ষে কাজ করছে। মিসরের গণ অভ্যুত্থানের সময় ইসলামপন্থীদের জন্য কাজ করেছে। তারা ফিলিস্তিনিদের অধিকারের কথা বলে, আরব শাসকদের দুর্নীতির খবর প্রকাশ করে দেয়। এজন্য মিশরে আল জাজিরার সাংবাদিকদের আটকে রাখা হয়েছে। কয়েকটি আরব দেশে তার সম্প্রচার বন্ধ করা হয়েছে।

আওয়ার ইসলাম : মুসলিম বিশ্বে কাতার সংকটের কি প্রভাব পড়তে পারে?

মাওলানা লিয়াকত আলী : সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়বে যা তাহলো মুসলিম বিশ্বের বিভক্তি আরও স্পষ্ট হবে। সংঘাত বাড়বে। বিভক্তির কারণে মুসলিম বিশ্বের পারস্পারিক বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বিশ্ব রাজনীতিতে তারা আরও মূল্যহীন হয়ে পড়বে।

আওয়ার ইসলাম : কাতার সংকটের পর বিশ্ব বাজারে ডলারের মূল্যহ্রাস পেয়েছে। বৈশ্বিক এমন আর কী কী প্রভাব তৈরি হতে পারে?

মাওলানা লিয়াকত আলী : তেলের দাম বৃদ্ধি পাবে। তেলের দাম বাড়লে সব পণ্যের দাম বাড়বে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে মুদ্রাস্ফীতি ঘটবে। জনজীবন বিপযস্ত হবে।

কাতার যদি বিদেশি শ্রমিকদের দেশে ফেরত পাঠায় তবে তারও বড় একটি প্রভাব পড়বে বিভিন্ন দেশে।

আওয়ার ইসলাম : কাতার একটি সুন্নী দেশ। শিয়া দেশ ইরান তার পক্ষ নিচ্ছে। এখানে কোন সমীকরণ কাজ করছে?

মাওলানা লিয়াকত আলী : কাতারকে বিচ্ছিন্ন করতে ইন্ধন দিচ্ছে আমেরিকা। নেতৃত্ব দিচ্ছে সৌদি আরব। ইরান আমেরিকা ও সৌদি আরবকে শত্রু মনে করে। ইসরাইলে সঙ্গেও তার শত্রুতা। শত্রুর শত্রু বন্ধু হিসেবে কাতারের পক্ষ নিচ্ছে ইরান।

আওয়ার ইসলাম : বিশ্ব রাজনীতিতে ইরান কী শেষ পযন্ত কাতারের পাশে থাকবে?

মাওলানা লিয়াকত আলী : এখনো বলা যাচ্ছে না। তবে তুরস্ক এখনো কাতারের পক্ষে অটল রয়েছে। তুরস্ক অটল থাকলে ইরানও অটল থাকবে বলে মনে করছি। ইরান থাকলে সিরিয়াও থাকবে।

আওয়ার ইসলাম : বাংলাদেশের মতো দেশ যাদের অর্থনীতিতে রেমিট্যান্সের প্রভাব অনেক। তাদের জন্য করণীয় কি?

মাওলানা লিয়াকত আলী : বাংলাদেশের নিরপেক্ষ থাকা ছাড়া উপায় নেই। কারণ, উভয় দেশে আমাদের বিপুল পরিমাণ শ্রমিক কাজ করে।

আওয়ার ইসলাম : পাকিস্তান কিন্তু কাতারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে অস্বীকার করেছে।

মাওলানা লিয়াকত আলী : পাকিস্তানের পররাষ্ট্রনীতি এতোটা শক্তিশালী যে তার পক্ষে সৌদি আরবকে এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব। কিন্তু আমাদের পক্ষে তা সম্ভব নয়।

আওয়ার ইসলাম : এ সংকট থেকে বেরিয়ে আসার উপায় কি?

মাওলানা লিয়াকত আলী : সংলাপই সর্বোত্তম পদ্ধতি। নিরপেক্ষ দেশগুলোর উদ্যোগে সংলাপ হতে পারে। যেমন, কুয়েত ও তুরস্ক উদ্যোগ নিয়েছে।

আওয়ার ইসলাম : কুয়েত ও তুরস্কের উদ্যোগ সফল হবে বলে কী আপনি মনে করেন?

মাওলানা লিয়াকত আলী : পরিস্থিতি এখনো নিয়ন্ত্রণের মতোই আছে। সংলাপের মাধ্যমে সমঝোতা সফল হওয়া অসম্ভব নয়।

আওয়ার ইসলাম : বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে কি ভূমিকা পালন করতে পারে?

মাওলানা লিয়াকত আলী : বাংলাদেশ কুয়েত ও তুরস্কের সঙ্গে সমঝোতার উদ্যোগ নিতে পারে। অথবা চুপ থাকতে পারে।

আওয়ার ইসলাম : উপসাগরীয় যুদ্ধের সময় বাংলাদেশের শীর্ষ আলেমদের একটি দল ইরান-ইরাক সফর করেছিলেন। এখন কী তারা এমন কোনো উদ্যোগ নিতে পারেন?

মাওলানা লিয়াকত আলী : আমার মনে হয়, সে সময় এখনো আসে নি। অপেক্ষা করতে হবে।

আওয়ার ইসলামক: আমাদেরকে সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

মাওলানা লিয়াকত আলী: আপনাদেরকেও ধন্যবাদ।

এসএস/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ