শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৭ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১১ শাওয়াল ১৪৪৫


ভাঙ্গা প্লেটের টুকরোয় তৈরি ভোলার বাপ্তা বুড়ির মসজিদ

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আওয়ার ইসলাম: ভোলা সদর উপজেলার বাপ্তা ইউনিয়নে শতবর্ষ আগে প্রতিষ্ঠিত ‘বাপ্তা জামে বুড়ির মসজিদ’টি স্থানীয় স্থাপত্ব্য শিল্পের এক অনন্য উদাহরণ।

রঙ-বেরঙের ফুল লতাপাতা আর তারকা খচিত দৃষ্টিনন্দন এই মসজিদটি সৌন্দর্য্য পিপাষুদের আকৃষ্ট করে। তাই দূর দূরান্ত থেকে অনেকেই আসেন মসজিদটি দেখতে। বাপ্তার ইলিশা সড়কের পাশে বাংলা ১৩২৪ সালে প্রতিষ্টিত হয় বুড়ির মসজিদটি। এই গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারের বৃদ্ধা ওমরজান বিবি মসজিদ এবং তার সাথে একটি পুকুর খননের জন্য এক একর জমি দান করেন। বুড়ির দানকৃত জমির উপর মসজিদটি স্থাপিত হওয়ায় স্থানীয়দের কাছে এটি বুড়ির মসজিদ নামে পরিচিতি পায়।

একশ’ বছর আগে মসজিদটি তৈরি হয় শন দিয়ে। পরবর্তীতে টিন এবং স্বাধীনতার পর এটিকে দালানে রূপান্তরিত করা হয়। মসজিদের কারিগর ছিলেন ওই গ্রামের রাজমিস্ত্রি মরহুম আব্দুল মালেক রাজ। তিনি আপন মনের মাধুরি মিশিয়ে দীর্ঘ ৯ মাসের পরিশ্রমে মসজিদটি নির্মাণ করেছিলেন। মসজিদের আলাদা বিশেষত্ব হচ্ছে মসজিদের ভিতর বাইর সর্বত্র চিনা মাটির ভাঙ্গা প্লেটের টুকরোর ব্যবহার। নিতান্তই ফেলে দেয়া ভাঙ্গা প্লেটের টুকরোর ব্যবহার ভিন্ন মাত্রা দিয়েছে।

স্থানীয়রা দীর্ঘ দিন ধরে দূর দূরান্ত থেকে কুড়িয়ে এনেছেন ওইসব প্লেটের টুকরো। মসজিদের মূল ভবনের দৈর্ঘ ৩০ ফুট, প্রস্থ ২০ ফুট। ১০ ইঞ্চি ইটের গাথুনি। ঘরের মাঝখানে মাত্র দুটি পিলারের উপর ছাদ। ছাদের চার কোনায় ৪টি গম্বুজ। তবে বারান্দার অংশে ৪টি পিলার রয়েছে।

সেই সময়ে সুপেয় পানির অভাব পূরণের জন্য মসজিদের সাথে প্রায় ৮০ শতাংশ জমির উপর মসজিদের পুকুরটি খনন করা হয়। তিন চার গ্রামের মানুষ তখন ওই পুকুরের পানি ব্যবহার করত। এখন এই পুকুরের পানি কেউ পান না করলেও গ্রামবাসীর কাছে পুকুটির গুরত্ব কমেনি। জৈষ্ঠ্যের খরতাপে একটু স্বস্তির জন্য এখনো গ্রামবাসী এসে ভীর করে পুকুরে গোসল করার জন্য।

স্থানীয়দের দাবি মসজিদটিকে সরকারি পৃষ্টপোষকাতা দিয়ে এর রক্ষণাবেক্ষণ করা হোক। মসজিদের বর্তমান মোতাওয়াল্লী মো. কাজল ইসলাম বলেন, তার দাদার দাদী ওমর জান বিবি এক শত বছর আগে এক একর জমি দান করেন। সেই জমির উপরই এ মসজিদ নির্মান করা হয়।

স্থানীয় মুসল্লী মো. শাজাহান বলেন, মসজিদটি ভোলার ঐতিহ্য বহন করে। দূর দুরান্ত থেকে মানুষ মসজিদটির সৌন্দর্য দেখতে আসেন। যদি মসজিদটি সরকারিভাবে মুল স্থাপত্য ঠিক রেখে সংস্কার করা হয় তাহলে এটিই একদিন ভোলার মানুষের কাছে সৌন্দর্যের নিদর্শন হিসেবে বহন করবে। তাই মসজিদটি সংস্কারে সরকারি সহায়তা চান তারা।

ভোলা পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট এর অধ্যক্ষ ইঞ্জিনিয়ার মো.তাজুল ইসলাম বলেন, মসজিদটি আধুনিক ও বৈজ্ঞানিক স্থাপত্ব্যবিদ্যার কোন নিদর্শন না থাকলেও স্থানীয় রাজমিস্ত্রি তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ও মননশীলতার সে স্বাক্ষর রেখেছেন তা সত্যি প্রশংসার দাবি রাখে।

এসএস/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ