মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১০ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫


গল্পটা একজন রিকশাওয়ালার

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

শাকীর এহসানুল্লাহ

একদিন এক রিকশাওয়ালাকে ভাড়া দেয়ার পর তিনি মুচকি হেসে ভদ্রভাবে আরও কয়েকটা টাকা চাইলেন।

বললেন, সামনে উনার বোনের বিয়ে। কয়েকটা টাকা বেশি দিলে অনেক উপকার হতো। কথাটা আমার কাছে সত্যই মনে হয়েছে। মাসের শেষ দিক বলে আমি খুব একটা টাকা দিতে পারিনি সেদিন। রিকশাওয়ালা মামাকে আমার কার্ড দিয়ে বলেছিলাম, সামনের ৩/৪ তারিখে আমাকে একটা ফোন দিবেন। আমি যতটুকু সম্ভব আপনাকে সাহায্য করার চেষ্টা করবো।

৩ তারিখে উনার ফোন এলো। আমি উনার একটা বিকাশ নাম্বারে বেশ কিছু টাকা পাঠাই। টুকটাক কথাও হয় তখন। কি মনে করে যেনো আমার নাম জিজ্ঞেস করেন তিনি। নাম বলার পরে অবশ্য শাকীরকে তিনি শাকিব মনে করেছেন। তাতে আমার কোনো সমস্যা নাই। তবে উনার নাম খায়রুল। খুব সাধাসিধে মানুষ। চাপাইয়ের দিকে সোনা মসজিদের খুব কাছেই উনার বাড়ি। চাপাইয়ের দিকে বাড়ি হওয়ায় উনার কথা বুঝতে আমার যথেষ্ট হিমশিম খেতে হয়েছে। যাই হোক, টাকা পেয়ে লোকটা খুশি হলেন। উনার আনন্দ দেখে আমি শান্তি পেলাম।

আমার কাছে ঘটনাটা এখানেই শেষ হয়ে গেলেও খায়রুল মামার কাছে ঘটনাটা এখানে মাত্র শুরু। সেটা বুঝতে আমার বেশ দেরি হয়েছে। কিছুদিন পরে উনি আবার আমাকে ফোন দিলেন। প্রথমে চিনতে পারিনি। পরিচয় দেয়ার পরে চিনলাম। ভাবলাম, লোকটা হয়তো আবারও টাকা চাইবে আমার কাছে। কিন্তু টাকা না চেয়ে বোনোর বিয়ের খবর জানালো। বললো দুজন এখন ভালোই আছে। বোনের জামাই ঢাকায় রাজমিস্ত্রীর কাজ করেন। এসব অনেক কথা বলে ফোন রাখলাম। যাক, এবার চায়নি তো কিছুদিন পরে চাইবে। ভাবসাবে তো আমার কাছে তাই মনে হচ্ছে। এটা ভেবে নাম্বারটা সেভ করে রাখলাম। যেনো আরেকবার উনি ফোন দিলে আমি টের পেয়ে যাই।

[শাকীর এহসানু্ল্লাহ’র সিক্কি]

কিছুদিন পরে আবার তিনি ফোন দিলেন। আমি ফোনটা ধরতে অস্বস্তি বোধ করছি। বারবার মনে হচ্ছে, উনি আমাকে পেয়ে বসেছে। এই কাহিনী ওই কাহিনী শুনিয়ে আবারও টাকা চাইবে। একটু মেজাজও খারাপ হচ্ছে। কয়েকবার ফোন দেয়ার পরে রিসিভ করলাম। ফোন ধরতেই বললেন, ঢাকায় এসেছি মামা, আপনার সাথে দেখা করতে চাইছিলাম। আমি এই কথা শুনে ব্যস্ততার অজুহাতে পাশ কাটিয়ে গেলাম। মনে হলো, উনি দেখা করেই আরেক ঝামেলার গল্প শোনাবে। বারবার উনাকে আমি কীভাবে সাহায্য করবো! আবার মিথ্যাও তো হতে পারে।

মাসখানেক পরে তিনি আবার ফোন দিলেন। এবার আমি বেশ বিরক্ত। ফোন ধরে হালকা রেগেই বললাম, হ্যা বলেন, কী হইছে! ফোনের অপাশ থেকে খায়রুল মামা খুব বিনয়ের সাথে বললেন, - না মামা কিছু হয়নাই। আমার বোন বলতেছিলো আপনি যদি একদিন আমাদের বাড়িতে আসতেন, তাইলে আমরা সবাই খুব খুশি হইতাম।' আমি কিছুক্ষণ চুপ করে রইলাম। তিনি একই বাক্য আরেকবার বললেন, ভাবলেন আমি শুনিনি।

আসলে আমি লজ্জায় চুপ করে ছিলাম। লোকটা কি জন্যে ফোন দিলো আর আমি কী ভাবলাম। বুঝিয়ে বললাম, ‌'এতো দূরে তো আসলে যাওয়ার সময় হবে না মামা। তবুও যদি কোনো দিন সম্ভব হয় আমি আসবো ইনশাল্লাহ।' সেদিন কোনো রকম বুঝিয়ে ফোনটা রাখলাম। নিজেকে নিয়ে নিজেই ছি ছি করছিলাম সেদিন।
আজকেও খায়রুল মামা আমাকে ফোন দিয়েছিলেন। আমি আজকে খুব উৎফুল্ল হয়ে উনার ফোন রিসিভ করেছি। কেমন যেনো বুঝতেই পারছিলাম যে, উনার ফোনটা ধরলেই আমার মন ভালো হয়ে যাবে।

ফোন ধরার পরে খোঁজ খবর নিয়ে বললেন, উনাদের এলাকায় নাকি বেশ ভালো আম হয়। এবারও হয়েছে। আমি আম কেমন পছন্দ করি এটা জানতে চাইলেন। যদি পছন্দ করি তাহলে ঈদের পরে ঢাকায় আসার সময় আমার জন্য আম নিয়ে আসবেন তিনি। শুনে আমার বুকের ভেতরে কেমন জানি ঠাণ্ডা লাগতে শুরু করেছে। সেই ঠাণ্ডার স্বাদ চাপাইয়ের আমের চেয়েও মিষ্টি। এটা খায়রুল মামা নিশ্চয় জানেন না। হেসে বললাম, থাক মামা, আমি অনেক খুশি হয়েছি। আম আনতে হবে না। তারপরেও তিনি আমাকে বুঝিয়েই যাচ্ছেন। আম অনেক ভালো, অনেক মিষ্টি। অারও অনেক কিছু। মোট কথা উনি আমার জন্য আম আনবেনই। শেষে রাজি হতে হলো।

এরপর থেকে নিজের মন নিয়ে নিজেই চিন্তিত। আমি ভালো থেকেও এতো ছোট মনের মানুষ হয়ে আছি। অথচ ভালো না থাকা মানুষটা, বোনের বিয়ের টাকা ম্যানেজ করতে না পারা মানুষটা কতো বড় একটা মনের মানুষ হয়ে বেঁচে আছে। সেদিন আমি উনাকে সাহায্য করে বড় মনের মানুষ হতে চেয়েছিলাম, আর আজকে তিনি আমাকে বুঝিয়ে দিলেন যে, টাকা দিয়ে সাহায্য করলেই আসলে বড় মনের মানুষ হওয়া যায় না। তিনি নিজে বড় মনের মানুষ হয়ে এসে আমাকে বুঝিয়ে দিলেন, আমি আসলে কতোটা ছোট মনের মানুষ। বড় মনওয়ালা এই গরিব মানুষের থেকে আমি আজীবনের জন্য শিক্ষা নিলাম আজ...

ইসলাম আবারও বিশ্বকে নেতৃত্ব দেবে!


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ