মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


জীবনের প্রথম রোজা অবস্থায় পুলিশের নির্দয় লাঠির আঘাতে জখমপ্রাপ্ত হলাম

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

হাবিবুর রহমান মিছবাহ
প্রিন্সিপাল, মারকাযুত তাকওয়া ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার

রাতের ঢাকা তখন সুনসান নিরবতা। প্রথম রোযার তারাবি শেষে গভীর ঘুমে দেশের মুসলিম জনগোষ্ঠী। ক'দিনের অসহ্য তাপদহ কমে রমযানের বরকতে যখন সারাদেশে বর্ষিত হয়েছে শান্তির বৃষ্টি। হাফ ছেড়ে স্বস্তির নি:শ্বাস ফেলতে প্রস্তুত দেশবাসী। ঠিক তখনই মুসলিম গণ-মানুষের অস্বস্তির খবর হয়ে আসে থেমিসের পূণ:স্থাপন। সুপ্রিমকোর্টের সামনে থেকে মূর্তি সরিয়ে যখন এনেক্স ভবনের সামনে পূণ:স্থাপন করে দেশের ৯২% মুসলমানের ঈমানী চেতনায় আঘাত ও আবেগের সাথে প্রতারণার খবর আসে, তখন জাতির পিতা ইব্রাহীম আ. এর সন্তানরা বসে থাকে কি করে?

মধ্যরাত। ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়'র মেধাবী ছাত্র শাইখ ফজলুল করীম মারুফ ভাই'র একটি পোস্ট নজরে পড়ে। পোস্টে ঘোষণা ছিলো 'থেমিস পূণ:স্থাপনের প্রতিবাদে ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন অবস্থান কর্মসূচি পালন করবে'।

নিজেকে ধরে রাখতে পারিনি। ঘুমের বিছানা ত্যাগ করে যদি ছাত্র জনতা এ গভীর রাতে ঈমানী আন্দোলনের ডাক দিয়ে রাজপথে নামতে পারে, তাহলে আমি কেনো নই? আমরা তো জিহাদ ও বিপ্লবের শ্লোগানই দেই!

এভাবেই তো একদিন বিপ্লব ঘটে যাবে! অতএব, নিজেকে কোনোভাবেই স্বার্থপরের কাতারে রাখতে পারি না। আমাকেও যে স্বাক্ষী হতে হবে বিপ্লবী কাফেলার।

নিজের গাড়ি বের করতে সময়ের প্রয়োজন। কিন্তু আমার যে সময় নেই! স্ত্রীর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে দোআ চেয়ে সিএনজি ধরে পৌছি সুপ্রিমকোর্ট চত্বরে। প্রচুর পুলিশ নজরে পড়ে সেখানে। ছাত্র জনতা সুপ্রিটকোর্টের সামনে অবস্থানের প্রাক্কাল প্রথম পুলিশি বাধার সম্মুখীন হয়। তবে সেখানে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেনি। আন্দোলনকারীরা বাধারমুখে প্রেসক্লাব চত্বরে অবস্থান নেয়। প্রতিবাদী শ্লোগানে প্রকম্পিত চারপাশ।

ম-তে মূর্তি; ভাঙ্গতে হবে ভাঙ্গতে হবে
শ-তে শাহবাগী; পালাইছেরে পালাইছে
মুসলমানের বাংলায়; নাস্তিকদের ঠাঁই নাই
ভাঙ্গা মূর্তি আবার কেনো; বিচারপতি জবাব চাই
বদরের হাতিয়ার; গর্জে উঠুক আরেকবার

ইত্যাদি শ্লোগানে কেঁপে উঠছিলো ঢাকার রাজপথ। সময়ের সাথে সাথে আন্দোলনকারীদের সংখ্যাও বাড়তে থাকে। অবস্থান কর্মসূচিতে ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সভাপতি জিএম রুহুল আমীন ভাই, সহ-সভাপতি শাইখ ফজলুল করীম মারুফ ভাই, সেক্রেটারী জেনারেল সাইফুল ইসলাম, জয়েন্ট সেক্রেরারী জেনারেল এমদাদুল্লাহ ফাহাদ, সাংগঠনিক সম্পাদক হাসিবুর রহমান, ইলিয়াস হাসান, শরীফুল ইসলাম, মুস্তকিম বিল্লাহসহ কেন্দ্রীয় নগর নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। এসময় যুব আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতা কাওসার বাঙ্গালী ভাই, রহমতুল্লাহ বিন হাবিব ও শ্রমিক নেতা মাকসুদুর রহমান ভাইও যোগ দেন অবস্থান কর্মসূচিতে। জনপ্রিয় ওয়ায়েজ বন্ধুবর রাফি বিন মুনীরও কিছু সময় অবস্থান করেছিলেন আন্দোলনকারীদের সাথে।

রাত গভীর। শ্লোগানের পাশাপাশি রাজপথে তাহাজ্জুদে দাঁড়িয়ে গেলেন কিছু বিপ্লবী তরুণ। ইতিহাস গড়ে প্রথম রোযার সাহরি সম্পন্ন হয় রাজপথেই। শাহবাগীরা খেয়েছে বিরানী, তৌহিদী জনতা খেয়েছে সাহরি। ওরা করেছে অশৃঙ্খলতা, তৌহিদী জনতা আদায় করেছে তাহাজ্জুদ। ওরা করেছে মশাল মিছিল, তৌহিদী জনতা তুলেছে তাওহীদের শ্লোগান। ওদের রাত শেষ অকাজে, তৌহিদী জনতার ফজর আদায়ে।

সাহরির পর পর ছাত্র জনতাকে উৎসাহ যোগাতে অবস্থানে শরীক হন ইসলামী যুব আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সভাপতি কে.এম আতিকুর রহমান ভাই, সেক্রেটারী জেনারেল নেসার উদ্দীন ভাই, নূরুল ইসলাম আল আমীন ও আজীজুল হক। যুব নেতাদের আগমনে আন্দোলনকারীদের বেশ উজ্জীবিত দেখা গেছে।

https://www.facebook.com/Afifarahmanmisbah/videos/770518666462347/

সাহরি ও ফজর নামায শেষে হঠাৎ অসংখ্য পুলিশ জড়ো হয় অবস্থানস্থলে। বাধার মুখে আন্দোলনকারীরা শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ বিক্ষোভ মিছিল শুরু করলে সুপ্রিমকোর্ট মোড় হতে পল্টনের দিকে মিছিল ঘুরিয়ে দেয় পুলিশ। হঠাৎ কোনো উস্কানী ছাড়াই রোযাদার আন্দোলনকারীদের মিছিলের পেছন দিক থেকে নগ্ন হামলা শুরু করে পুলিশবাহিনী। যুব আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সভাপতি কে এম আতিকুর রহমান, আমি ও ঢাকা মহানগর ইশা ছাত্র আন্দোলনের দায়িত্বশীল সালমানসহ অর্ধশতাধিক আহত হই। গ্রেফতার হয় ইশা ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি শেখ ফজলুল করীম মারুফ ও যুব আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতা হোসাইন মুহাম্মাদ কাওসার বাঙ্গালীসহ ছাত্র ও যুব আন্দোলনের ৯ জন নেতাকর্মী।

জীবনের প্রথম পুলিশের নির্দয় লাঠির আঘাতে জখমপ্রাপ্ত হলাম। তাও রোযা অবস্থায় এবং আসমানী সাকিনা নাজিলের সময়। তবে তা চুরি, ডাকাতি, সন্ত্রাসী বা ইভটিজিংয়ের অপরাধে নয়, দেশের ৯২% মুসলিম জনগোষ্ঠীর দাবির পক্ষে ও গুটি কয়েক নাস্তিকের বিরুদ্ধে দীনি আন্দোলনে শরীক হওয়ার অপরাধে। আমাদের অপরাধ আমরা মুসলমানের দেশে মুসলমানের দাবী নিয়ে আন্দোলন করা। সুপ্রিমকোর্ট সংলগ্ন মূর্তি স্থাপনের বিরুদ্ধে আন্দোলন করাই আমাদের অপরাধ।

মূর্তি পূণ:স্থাপন দেশে বড় ধরনের দাঙ্গা বাঁধানোর কোনো কুটকৌশল নয়তো!

প্রচণ্ড ব্যাথায় কাতরাচ্ছি। রোযার কারণে ওষুধ সেবন সম্ভব নয়। তবে প্রাথমিক অনটাইম ব্যান্ডেজ করেছি। দোআর দরখাস্ত।

গ্রিক মূর্তি প্রতিস্থাপনের প্রতিবাদে মধ্যরাতে ইশা ছাত্র আন্দোলনের বিক্ষোভ

মধ্যরাতে আন্দোলনকারীদের প্রতি সহমর্মিতা ও গ্রেফতারকৃতদের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করলেন আল্লামা আহমদ শফী


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ