আতাউর রহমান খসরু : বহুল আলোচিত ২৫ তারিখের বাহাস নিয়ে আবারও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। আগামী ২৫ মে মিলাদ-কিয়াম বিষয়ে যাত্রাবাড়ী মাদরাসায় বাহাস অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা নিয়ে সংশয় দেখা দেয়।
জানা গেছে, এবারও নানা কারণে পিছপা হয়েছেন ড. এনায়েতুল্লাহ আব্বাসীর অনুসারীগণ। তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের ব্যক্তিগত ওয়াল এবং পেইজে এ বিষয়ে একাধিক স্ট্যাটাসে দিয়ে নিজেদের অনাগ্রহের কথা স্পষ্ট করেছেন।
তাদের অভিযোগ ২য় (মিলাদ-কিয়ামের বিরোধী) পক্ষ চুক্তির শর্ত মানছেন না।
চুক্তির ৯ নং ধারায় রয়েছে, পুরো বাহাস ভিডিও হবে। এ ক্ষেত্রে ইন্টারনেট ও ইলেক্ট্রিক মিডিয়ায় সরাসরি সম্প্রচার হবে। কোনো পক্ষ বাধা প্রদান করতে পারবে না।
বাহাস এড়াতে এনায়েতুল্লাহ আব্বাসীর নতুন কৌশল
২৫ মে বাহাসের অনুমতি প্রদানে আল্লামা মাহমুদুল হাসানের শর্ত এবং অন্যান্য প্রসঙ্গ
১২ নং ধারায় রয়েছে, প্রশাসনিক নিরাপত্তার পূর্ণ গ্যারান্টি থাকতে হবে। উভয় পক্ষের সমঝোতার ভিত্তিতে আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ব্যাপারটি অবহিতকরণ পূর্বক সেখানে নিরাপত্তার ব্যাপারটি নিশ্চিত করতে হবে।
আব্বাসী অনুসারীদের দাবি ২য় পক্ষ এ দুটি ধারায় কোনোভাবেই রাজি নয়। এছাড়াও তারা মাওলানা আজিজুল হক মাদানীকে নতুন করে মুবাহিসদের অন্তর্ভূক্ত করার অভিযোগও এনেছেন। মাদরাসায় সীমিত সংখ্যক লোক প্রবেশের শর্তের ব্যাপারেও তাদের আপত্তি রয়েছে।
এ ব্যাপারে আব্বাসী অনুসারীদের প্রতিনিধি মাওলানা মঞ্জুর হোসাইনকে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘২ মাস যাবৎ কথা হচ্ছে বাহাস হবে। এখন বলা হচ্ছে, ইলমি মুজাকারা। যাত্রাবাড়ীর হজরতও আমাদের স্পষ্ট বলেছেন, এখানে বাহাসের অনুমতি দিচ্ছি না। ইলমি মুজাকারার অনুমতি দিচ্ছি। ইলমি মুজাকারায় কোনো বিচারক থাকে না। এ থেকে কোনো সিদ্ধান্ত আসে না। আমরা ইলমি মুজাকারা চাই না, বাহাস চাই।
তিনি আরও বলেন, প্রশাসনিক নিরাপত্তা ছাড়া তারা কিছুতেই নিজেদের নিরাপদ বোধ করছেন না। তিনি মনে করেন, প্রশাসন ছাড়া বাহাস হওয়া সম্ভব নয়।
মিডিয়া থাকবে না এ কথাটি আল্লামা মাহমুদুল হাসান বলেছেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, যাত্রাবাড়ির হজরত আমাদের স্পষ্ট বলেছেন, মুবাহিস বা আলোচক ব্যতীত কেউ প্রবেশ করতে পারবে না। এমনকি প্রশাসনও নয়। সেখানে আইটিম্যান ও সাংবাদিক কীভাবে প্রবেশ করবে?
বাহাসের ব্যাপারে তাদের সিদ্ধান্ত জানতে চাইলে তিনি বলেন, যদি সব শর্ত মানা হয় তবে বাহাস হবে। নতুবা হবে না। তিনি মনে করেন, এখন আর যাত্রাবাড়ীতে বহস হওয়ার সুযোগ নেই।
মাওলানা মঞ্জুর হোসাইন জানান, যাত্রাবাড়ী মাদরাসায় বাহাস না হওয়ায় মুফতি মিযানুর রহমান সাঈদের ঘোষণা অনুযায়ী এখন আব্বাসী হুজুর বাহাসের নতুন জায়গা ঘোষণা করবেন। আগামীকাল ২৩ তারিখ তিনি সাংবাদিক সম্মেলন করে বাহাসের নতুন জায়গা ঘোষণা করবেন।
এ ব্যাপারে ২য় পক্ষের প্রতিনিধি ও অন্যতম সংগঠক মাওলানা লুৎফর রহমান ফরায়েজির সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘মিডিয়া থাকবে না ও সম্প্রচার হবেন এ কথা আমাদের কেউ কখনো বলি নি। ভিডিও হবে এবং সরাসরি সম্প্রচারও হবে।’
‘প্রশাসন উপস্থিত থাকার প্রয়োজন আমরা বোধ করছি না, কারণ এটা একটি ইলমি মুবাহাসা (জ্ঞানভিত্তিক বিতর্ক)। তার পরও আমরা বলেছি, আপনাদের পূর্ণ নিরাপত্তার দায়িত্ব আমাদের। আপনাদের উপর কেউ একটি ফুলের টোকাও দিবে না।’
তিনি বলেন, নিয়ম হলো, যারা বহস আহবান করেন এবং যারা স্থান নির্বাচন করেন, তারাই নিরাপত্তার ব্যাপারটি নিশ্চিত করবেন। আমরা যাত্রাবাড়ী মাদরাসা নির্বাচন করি নি। তারাই করেছে। সে হিসেবে তাদেরেই দায়িত্ব নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। উল্টো আমরা তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করছি।
মাওলানা ফরায়েজি আরও বলেন, মাওলানা আজিজুল হক মাদানীকে অন্তর্ভূক্ত করতে চেয়েছি মুফতি ফয়জুল করীমের বিকল্প হিসেবে। তিনি ব্যস্ততার দরুণ অংশগ্রহণ করবেন না।
তিনি বলেন, পূর্ব থেকে কথা ছিলো কোনো পক্ষ মুবাহিস পরিবর্তন করতে চাইলে অন্যপক্ষকে তা জানিয়ে করতে পারবেন। আমরা তাদেরকে জানিয়েই মাওলানা আজিজুল হক মাদানীকে অন্তর্ভুক্ত করেছি।
মাওলানা ফরায়েজি বলেন, বাহাস ও ইলামি মুজাকারা শুধু শব্দের পার্থক্য। জিনিস একই। তারা বলছে, বিচারক থাকবে না। আমরা তো বলি নি? যে নামেই হোক বিচারক থাকবে।
আসলে, তাদের সদ্বিচ্ছার ব্যাপারে আমি সন্দিহান। তারা মূলত বাহানা খুঁজছে একের পর এক।
-এআরকে