বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১১ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

শিরোনাম :
‘মানতিক; যুগের চাহিদার সাথে মিলে না’ এ ধরেণের কথা অযৌক্তিক: মুফতি হিফজুর রহমান দাওরায়ে হাদিসের ফলাফল নজরে সানীর আবেদনের সময় বাকি ৩ দিন  বৃষ্টি প্রার্থনায় জামিয়াতুল আবরার রাহমানিয়ায় ‘সালাতুল ইস্তিসকা’  আদায় হাসপাতালে সৌদি বাদশাহ সালমান সোস্যাল মিডিয়ায় প্রচারিত পাঠ্য তালিকার সাথে বেফাকের পাঠ্য তালিকার সম্পর্ক নেই: বেফাক সৈয়দপুরে তাপদাহে অতিষ্ঠ মানুষ, ‘হিটস্ট্রোকে’ ১ জনের মৃত্যু স্বর্ণের দাম আরও কমলো, ভরি ১ লাখ ১৪ হাজার ১৫১ টাকা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান ইরান-পাকিস্তানের ঢাবিতে বৃষ্টির জন্য ‘সালাতুল ইসতিস্কা’র অনুমতি দেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ‘বৃষ্টির জন্যে সালাত আদায় করলেই অবশ্যম্ভাবী বৃষ্টি চলে আসবে—বিষয়টা তা নয়’

উপেক্ষিতের সংস্কৃতি ও কাসেম বিন আবু বাকার

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মুসা আল হাফিজ
কবি ও গবেষক

কাসেম বিন আবু বাকার, আব্দুস সালাম মিতুল,মোশাররফ হোসাইন সাগর। পশ্চিম বাংলার মুস্তফা সিরাজ কিংবা বাংলাদেশের হুমায়ূন আহমেদ,ইমদাদুল হক মিলনদের সাথে খাড়া করে এদের বিচারে নারাজ পণ্ডিতদের ধার না ধেরে এদেশের একটি বিশাল জনগোষ্ঠী তাদের রচনায় নিজেদের জীবনের ছবি দেখতে পেয়েছে।কিনেছে এদের বই; হাজারে নয়,লাখে লাখে।

এটা হঠাৎ করেই ঘটেনি। বাংলার গরিষ্ঠ সংখ্যক মানুষ নিজেদের জীবনচিত্র সাহিত্যে তালাশ করেছে বরাবরই। যখনই, যেখানেই গৌণভাবে হলেও তার সন্ধান পেয়েছে, ঝাঁপিয়ে পড়েছে। ভাবুন ব্রিটিশ শাসিত পরাজিত বাংলার মুসলিমদের কথা।তাদেরকে যখন ব্রিটিশরা নেটিভ আর শরৎ বাবুরা যবন বলেই দেখাচ্ছে, তাদের প্রেম,সংগ্রাম,সংকট ও জীবনভাবনাকে যথাযথ জায়গা থেকে ব্যক্ত করা হচ্ছে না,তখনই বাংলা উপন্যাসের এ যাবত কালের সবচে' বেশি কাটতি যে বইয়ের, সেটি রচিত হয়।বইটির নাম 'আনওয়ারা', লেখক: নজিবর রহমান সাহিত্যরত্ন।

না বঙ্কিম, না শরৎ, না হুমায়ূন; নজিবর রহমানের পাঠকপ্রিয়তাকে কেউ অতিক্রম করতে পারেনি।

কিন্তু কই? দেখলাম না তো কোথাও নজিবর রহমানের প্রতি সুবিচার। এই আমি, আমার প্রদোষবেলায়, প্রথম যে উপিন্যাস পড়ে কম্পিত,আলোড়িত,বিমুগ্ধ ও ঝঙ্কৃত হই, সে হচ্ছে 'আনোয়ারা।' কী যে তন্ময়তা আর ঘোর ছিলো তাতে!

না, কিশোর আমাকে শ্রীকান্ত যে মগ্নতায় নিতে পারেনি,মিসির আলি যে তন্ময়তায় নিতে পারেনি,আনোয়ারা তা পেরেছিলো।

তখন তো আর সাহিত্যের গুণবিচার কাজ করে না, কাজ করে টানতে পারার ক্ষমতা।এই ক্ষমতাই তো এক ম্যাজিক। কাসেম বিন আবু বাকারে নজিবরের সেই ম্যাজিক আছে বলা যায়। কিন্তু রুচি, ভাষাসৌন্দর্য, আবেগ ও আবেদনে নজিবরের উচ্চতাকে তিনি স্পর্শ করতে পারেন নি। বিসমিল্লা বলে চুমু খাওয়া কিংবা ডেটিং এর যে ব্যাপার, সেটা নেই নজিবরে। আছে এক রুদ্ধশ্বাস গতি,তীব্র জীবনময়তা।

যদিও আনোয়ারার উপন্যাসসূলভ কামালত প্রশ্নবিদ্ধ, তবুও তার এমন বহু বৈশিষ্ট উজ্জ্বল, যার তুলনা বিরল।

কাসেম বিন আবু বাকারকে ধন্যবাদ। জীবনের শেষ বেলায় উপেক্ষার গালে থাপ্পড় মেরে কতিপয় গুরুতর বিষয়কে সামনে নিয়ে এলেন তিনি।

গ্রাম বা নগর জীবনের যে ছবি এ দেশের উপন্যাসে দেখা যায়, সেটা পুরোপুরি বাংলাদেশের হয়ে উঠেনি। নদী, ধানখেত, দোয়েল-কোয়েল, ক্ষুধা ও সংগ্রাম একত্রিত করলেই সেটা বাংলাদেশ হয়ে উঠে না। এর ভেতরে আছে এ দেশের মানুষের জীবন। যে জীবন আযানে, মসজিদে, আল্লাহ-রাসুলে, ভক্তিতে, বিশ্বাসে জাগ্রত। হাজার বছর ধরে কুরআনের সুর সকালের পাখির সুরের সাথে সমস্বরে উচ্চারিত হচ্ছে, মনের জগতে মানুষ লালন করছে প্রবল ও তীব্র ঈমান,ঘুমাচ্ছে মানুষ আল্লাহর নাম নিয়ে,ঘুম থেকে জেগে সে নাম স্মরণ করছে, এই যে জীবনাচার, এর নামই তো বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতি।

শিক্ষা ও আধুনিকতা অংশত প্রবেশ করেছে, আকাশ সংস্কৃতির ছোঁয়াও ইষৎ লেগেছে, চুরি করে চোখ বিনিময়ের ইচ্ছা ও তরিকা ঢুকছে উঠতি বয়সে, এমনই এক শ্রেণী ও গোষ্ঠীকে আযানের সুর শুনিয়ে, আয়াত ও হাদিসের উপদেশ শুনিয়ে প্রেমের, বিরহের, মিলনের ও গৃহগঠনের কেচ্ছা শুনানোর উপন্যাসিক দরকার ছিলো বাঙালি মুসলমানের। কাসেম বিন আবু বাকারগণ সেই খালি জায়গাটি ধরতে পেরেছিলেন।

উপন্যাস সেই জীবনকে আঘাত করছে, উপেক্ষা করছে, বিদ্রুপ করছে। সেটাই দেখছে গরিষ্ঠ জনতা। তারা এতে আহতবোধ করে। অব্যক্ত যাতনা তাদের পীড়িত করে। সেই চাপা ক্ষোভকে, অপমানবোধকে তারা কিছুক্ষণের জন্য ভুলে যাবার আহার খুঁজে। আবুল মনসুর আহমদ, ইব্রাহীম খাঁ, মোফাখখারুল ইসলাম, আশকার ইবনে শাইখ প্রমূখে তারা নিজেদের চাহিদার যুক্তি ও বাস্তবতাকে অবলোকন করে। দেখে নিজেদের কিছু প্রতিচ্ছবি।

কিন্তু নীরিক্ষা, গভীরতা ও বাকবৈদগ্ধ তাদের বৃহৎ অংশের শিক্ষা ও সামাজিক অবস্থানের সাথে ঘনিষ্ঠ হতে পারে না। ফলে তাদের চাই সরল রোমান্টিকতা। যেখানে কলসি কাঁখে গ্রামীণ নারী প্রেমকাতর মন নিয়ে ঘরে ফিরছেন। আবার লক্ষ্য করছেন পরপুরুষের দৃষ্টি যেন তার আবরণ ভেদ না করে।

শিক্ষা ও আধুনিকতা অংশত প্রবেশ করেছে, আকাশ সংস্কৃতির ছোঁয়াও ইষৎ লেগেছে, চুরি করে চোখ বিনিময়ের ইচ্ছা ও তরিকা ঢুকছে উঠতি বয়সে, এমনই এক শ্রেণী ও গোষ্ঠীকে আযানের সুর শুনিয়ে, আয়াত ও হাদিসের উপদেশ শুনিয়ে প্রেমের, বিরহের, মিলনের ও গৃহগঠনের কেচ্ছা শুনানোর উপন্যাসিক দরকার ছিলো বাঙালি মুসলমানের। কাসেম বিন আবু বাকারগণ সেই খালি জায়গাটি ধরতে পেরেছিলেন।

তাদের শেষ কথা সেই প্রেম-বিরহ, যা হুমায়ূন-মিলনে প্রকাশ পায় প্রগতিশীল পরিপ্রেক্ষিতে আর কাসেম-মিতুলে প্রকাশ পায় মুসলিম পোশাকে। প্রথম শ্রেণীর প্রকাশরীতি সমকালীনতা নিয়ে ফুল্ল নদীর মতো এগোয়, দ্বিতীয় শ্রেণীটি রয়ে যায় সমকালীন ভাষারীতি ও প্রকরণ বিমুখ।তাদের প্রয়োজন যে পাঠক, সেও কিন্তু এই রীতি ও প্রকরণের ধার ধারে না।

পদক-পুরষ্কার নিয়ে আক্ষেপ নেই, আমি নাম যশ খ্যাতির জন্য লিখিনি’
কাসেম বিন আবুবাকারের সাহিত্য নিয়ে প্রশ্ন ও সামগ্রিক সাহিত্য
দেশি মিডিয়ায় উপেক্ষিত কাসেম বিন আবু বকরকে যেভাবে মূল্যায়ন করলো বিশ্ব মিডিয়া

আরআর


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ