বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১১ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

শিরোনাম :
‘মানতিক; যুগের চাহিদার সাথে মিলে না’ এ ধরেণের কথা অযৌক্তিক: মুফতি হিফজুর রহমান দাওরায়ে হাদিসের ফলাফল নজরে সানীর আবেদনের সময় বাকি ৩ দিন  বৃষ্টি প্রার্থনায় জামিয়াতুল আবরার রাহমানিয়ায় ‘সালাতুল ইস্তিসকা’  আদায় হাসপাতালে সৌদি বাদশাহ সালমান সোস্যাল মিডিয়ায় প্রচারিত পাঠ্য তালিকার সাথে বেফাকের পাঠ্য তালিকার সম্পর্ক নেই: বেফাক সৈয়দপুরে তাপদাহে অতিষ্ঠ মানুষ, ‘হিটস্ট্রোকে’ ১ জনের মৃত্যু স্বর্ণের দাম আরও কমলো, ভরি ১ লাখ ১৪ হাজার ১৫১ টাকা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান ইরান-পাকিস্তানের ঢাবিতে বৃষ্টির জন্য ‘সালাতুল ইসতিস্কা’র অনুমতি দেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ‘বৃষ্টির জন্যে সালাত আদায় করলেই অবশ্যম্ভাবী বৃষ্টি চলে আসবে—বিষয়টা তা নয়’

কওমি স্বীকৃতি নিয়ে কী ভাবছেন আলিয়ার ছাত্র-শিক্ষক

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

শাহনূর শাহীন : উপমহাদেশে মাদরাসা শিক্ষা ব্যবস্থায় কওমি ও আলিয়া দুটি ধারা চলে এসেছে শত বছর ধরে। অবিভক্ত ভারত বর্ষে কওমি মাদরাসার সূচনা হয়েছে বেসরকারিভাবে গণমানুষের সহায়তায়। অপরদিকে আলিয়া মাদারাসার গোড়াপত্তন ঘটে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায়। শুরুর দিকে উভয় মাদরাসার সিলেবাস একই ছিল। ক্রমান্বয়ে সরকারি হস্তক্ষেপে আলিয়া মাদারাসার সিলেবাস সংকুচিত হয়েছে। সংকুচিত হয়েছে আলিয়া মাদারাসায় ইসলামিক জ্ঞানভাণ্ডারও।

ভারত এবং পাকিস্তানে আগ থেকেই কওমি মাদারাসার সনদের স্বীকৃতি ছিল। সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকার কওমি মাদরাসার দাওরা হাদিসের সনদকে মাস্টার্সের সমমান দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। এ নিয়ে নানান মহলে নানান রকম আলোচনা-সমালোচনা ও তর্ক-বিতর্ক চলছে। স্বীকৃতির ফলে কওমি মাদরাসা তার ঐতিহ্যে ঠিক রাখতে পারবে কিনা, কিংবা দাওরা হাদিসের সনদ মাস্টার্সের সমমান পাওয়ার যোগ্যতা রাখে কিনা এসব বিষয়ে আওয়ার ইসলামের পক্ষ থেকে মুখোমুখি হয়েছিলাম দেশের শীর্ষস্থানীয় কয়েকটি আলিয়া মাদরাসার প্রিন্সিপাল, ভাইস প্রিন্সিপাল ও বিভিন্ন আলিয়া মাদরাসা এবং ভার্সিটি পড়ুয়া ছাত্রদের সাথে।

[caption id="" align="alignleft" width="368"] আ.খ.ম. আবু বকর সিদ্দিক, প্রিন্সিপাল দারুন নাজাত সিদ্দিকিয়া কামিল মাদরাসা।[/caption]

আশা করি, কওমি মাদরাসা  তার স্বকীয়তা রক্ষা করতে পারবে
আ. খ. ম আবু বকর সিদ্দিক

স্বীকৃতির বিষয়ে দারুন নাজাত সিদ্দিকিয়া কামিল মাদরাসার প্রিন্সিপাল বলেন, সবেমাত্র প্রজ্ঞাপন জারি হয়েছে, বিষয়টা এখনই স্পষ্ট হয়নি তাই এখনই এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করা যায় না। তবে কওমি মাদরাসার স্বকীয়তা বহাল রেখে স্বীকৃতি হলে সেটা অবশ্যই ইতিবাচক হবে। সনদের মানগত প্রশ্নেও তিনি প্রায় অভিন্ন কথাই বলেন। তিনি বলেন, সরকার কীভাবে স্বীকৃতি দিচ্ছে নীতিমালা প্রণয়ন হওয়ার পর সবকিছু স্পষ্ট হবে। বিষয়টি স্পষ্ট হওয়ার আগ পর্যন্ত ভালো মন্দ মন্তব্য করা যায় না।

সারাদেশে হাতেগোনা কয়েকটি আলিয়া মাদরাসা বাদে অধিকাংশ আলিয়া মাদরাসার পড়াশুনা, ছাত্র আমল আখলাক খুব শোচনীয়। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করে কওমি স্বীকৃতির ফলে এমন কোনো আশংকা আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা এমনটি আশা করি না। আশা করি কওমি মাদরাসা তার নিজস্ব স্বকীয়তা ও ঐতিহ্য ধরে রাখবে।

[caption id="" align="alignleft" width="428"]মাওলানা আব্দুর রশিদ মাওলানা হারুনুর রশিদ, ভাইস প্রিন্সিপাল সরকারি মাদরাসা-ই আলিয়া, ঢাকা।[/caption]

কওমি সনদের স্বীকৃতি বেশি সস্তা হয়ে গেলো
মাওলানা হারুনুর রশিদ

কথা বলেছিলাম সরকারি মাদরাসা-ই-আলিয়া, ঢাকার ভাইস প্রিন্সিপাল মাওলানা হারুনুর রশিদের সঙ্গে। যোগাযোগ করলে প্রথমে ফোনে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান। তারপর বলেন, আমরা সরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করি সেই হিসবে সরকারি সিদ্ধান্তের বাহিরে যেতে পারি না।

তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি আমাদের আলিয়া মাদরাসার ছাত্র দাখিল আলিম ফাযিলে ইংরেজিসহ অন্যান্য সাবজেক্ট পড়ে তারপর কামিলে এসে তারা মাস্টার্সের সনদ পায় কিন্তু এখানে দাওরা পড়েই মাস্টার্সের সনদ পাওয়ায় আমার কাছে স্বীকৃতিটাকে সস্তা মনে হচ্ছে।

আলিয়াপড়ুয়া শিক্ষার্থীরা কী ভাবছেন সেটা জানার জন্য কথা বলেছিলাম কুষ্টিয়া ইউনিভার্সিটিসহ দেশের শীর্ষস্থানীয় বিভিন্ন মাদরাসার একাধিক ছাত্রের সাথে।

সার্বিক দিক বিবেচনায় স্বীকৃতি তাদের প্রাপ্য ছিল

হাসান নাসিদ
কুষ্টিয়া ইসালমিক ইউনিভার্সিটির এমফিল গবেষক

তিনি মনে করেন, স্বীকৃতির ঘোষণাকে দুইভাবে ব্যাখ্যা করা যায়। প্রথমত এর ইতিবাচক দিক হল, কওমি মাদারাসার ছাত্ররা তাদের যোগ্যতা এবং সামাজিক মর্যাদার স্বীকৃতি পেয়েছে। নেতিবাচক দিক হল, স্বীকৃতি পাওয়ার ফলে অনেকে সরকারি চাকরির দিকে ঝুঁকবেন সেকেত্রে চাকরির বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকতে হলে তাকে বাংলা ইংরেজি সাধারণ জ্ঞানের উপর অধিক মাত্রায় গুরুত্ব দিতে হবে। তখন দেখা যাবে তার কওমি মাদরাসার পড়াশুনার মূল উদ্দেশ্য ব্যহত হবে। ইলমী প্রখরতায় কিছুটা হলেও ঘাটতি দেখ দিবে। তবে সার্বিক দিক বিবেচনায় স্বীকৃতি তাদের প্রাপ্য এবং এটা জরুরি ছিল।

দাওরার হাদিসের সনদ অন্যান্য ভার্সিটির কিংবা আলিয়া মাদরাসার তুলনায় মাস্টার্সের মর্যাদা পাওয়ার যোগ্যতা রাখে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, দেখুন দাওরা হাদিসকে কোন বিষয়ের উপর মাস্টার্সের সনদ দেয়া হচ্ছে সেটা খেয়াল করলে বলা যায় আমাদের আলিয়া মাদরাসা কিংবা অন্যান্য ভার্সিটির তুলনায় কওমি মাদরাসার দাওরার ছাত্ররা অধিক যোগ্যতা সম্পন্ন। অর্থাৎ ইসলামিক স্টাডিজ এবং আরবীর উপর দাওরার সনদ মানোর্ত্তীণ। ইংরেজির গুরুত্ব কম থাকায় এর সনদের মান কম হওয়ার প্রশ্ন আসবে না কেননা ভার্সিটিতেও ইসলামিক স্টাডিজ বা আরবীতে মাস্টার্সের সিলেবাসে ইংরেজি বা অন্যান্য সাবজেক্ট স্বল্প গুরুত্বই রাখে।

স্বীকৃতির ফলে কওমি শিক্ষার মান বাড়বে

এইচএম তানজিল
কামিল ১ম বর্ষ, সরকারি মাদরাসা-ই-আলিয়া, ঢাকা

তিনি ঢাকা আলিয়া মাদরাসা থেকে হাদিসের উপর কামিল শেষ করে এখন ফিকহে প্রথম বর্ষে অধ্যায়নরত। তার কাছে জানতে চেয়েছিলাম আলিয়া মাদরাসার ব্যাপারে যে ইলমী শূন্যতার অভিযোগ আছে স্বীকৃতির ফলে কওমি মাদরাসা সেই আশংকায় পড়বে কিনা? তিনি বলেন, আমি মনে করি কওমি মাদরাসার স্বকীয়তা বহাল রেখে স্বীকৃতি হলে এমন কোনো আশংকা নেই আর আপাতত আমরা যেটা দেখছি, সরকার কওমি মাদরাসার সূতিকাগার দারুল দেওবন্দের নীতিমালা অনুযায়ীই স্বীকৃতি দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। সুতরাং আমি মনে করি এতে করে কওমি মাদরাসার পড়াশুনার মান কমবে না বরং ছাত্রদের মাঝে প্রতিযোগিতা বাড়বে ফলে সবাই গুরুত্বের সহিত পড়াশুনায় মনযোগী হবে। এবং পড়াশুনার মান আরো উন্নত হবে।

চিত্রে থাকতে পারে: ১ জন, দাড়ি এবং কাছাকাছি

 

স্বীকৃতির চেয়ে স্বকীয়তা রক্ষা করা বেশি জরুরি

হাসান নাসরুল্লাহ
অনার্স ২য় বর্ষ, দারুন নাজাত সিদ্দিকীয় কামিল মাদরাসা

দারুন নাজাত সিদ্দিকীয়া কামিল মাদরাসার অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। কওমি সনদের মানের প্রশ্নে তিনি বলেন, আমাদের সরকারি মাদরাসার ছাত্রদের কাছে যদি সনদসহ একটি হাদীস জানতে চান তাহলে অধিকাংশই পারবে না। এমনকি অনেক গুরুত্বপূর্ণ আরবী কিতাবের ইবারতও পড়তে পারবে না। অথচ আমরা কিন্তু মাস্টার্সের সনদ পাচ্ছি।

কওমি মাদরাসার অধিকাংশ ছাত্র ভালো মেধাবী এবং ইলমী যোগ্যতায় অধিক যোগ্যতা সম্পন্ন। কিন্তু আমাদের সরকারি মাদারাসায় অধিকাংশই এ দিক থেকে পিছিয়ে। সরকারি মাদরাসায় অল্প কিছু মেধাবী ছাত্র ইলমী যোগ্যতা রাখে তাও সারাদেশে হাতেগোনা কয়েকটি মাদারাসায় ইলমী চর্চা হয়। বাকীগুলো সব নামকাওয়াস্তে সার্টিফিকেট পাচ্ছে।

সর্বোপরি কওমি মাদরাসার স্বকীয়তা বহাল রেখে স্বীকৃতি হলে সেটা গ্রহণযোগ্য এবং জরুরি অন্যথায় স্বীকৃতি না হওয়াই উত্তম। তবে যতটুকু জানি, কওমি মাদরাসার স্বকীয়তা বহাল রেখেই স্বীকৃতি হচ্ছে এজন্য স্বীকৃতিকে সাধুবাদ জানাই।

কওমি স্বীকৃতির ঘোষণা শিক্ষাব্যবস্থায় একটি ইতিবাচক সিদ্ধান্ত

নেসার আহামাদ
ফাযিল ৩য় বর্ষ, দারুন নাজাত সিদ্দিকীয় কামিল মাদরাসা

দারুন নাজাত সিদ্দীকিয়া কামিল মাদরাসার ফাযিল শেষ করে বর্তমানে কামিল প্রথম বর্ষে অধ্যায়নরত। কওমি সনদের মানের প্রশ্নে তিনি বলেন, আসলে বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় কোনো প্রতিষ্ঠানই যুগোপযোগী না। কওমি, আলিয়া, কিংবা কলেজ ভার্সিটি বলেন কোনোটিই না। তবে হ্যাঁ, আলিয়া মাদারাসার চেয়ে কওমি মাদারাসা যুগোপযোগীতার তুলনায় সামান্য পিছিয়ে। এ দিকটায় কিছুটা গুরুত্ব দিতে হবে।

তবে এটাও সত্যি বিষয়গত দিক থেকে দাওরা হাদিস মাস্টার্সের সনদ পাওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই যথোপযুক্ত। সর্বোপরি কওমি স্বীকৃতির ঘোষণা দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় একটি ইতিবাচক সিদ্ধান্ত। এতোদিন কওমি মাদারাসার ছাত্ররা সামাজিক বা রাষ্ট্রীয়ভাবে বৈষম্যমূলক আচরণের স্বীকার হতো। ধর্মীয় ক্ষেত্রেও রাষ্ট্রীয়ভাবে সর্বোচ্চ অবদান রাখার সুযোগ ছিল না। এখন তারা সব জায়গায় নিজেদেরকে মেলে ধরার সুযোগ পাবেন। নিজের মেধা এবং যোগ্যতা দিয়ে সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে উল্লেখযোগ্য ভুমিকা রাখতে পারবেন।

এসএস/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ