শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৭ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১১ শাওয়াল ১৪৪৫


স্বীকৃতির বিষয়ে আলেমদের ইজমা হয়েছে; বিরোধিতা করা বোকামি

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

শাহনূর শাহীন: কওমি স্বীকৃতির ঘোষণা নিয়ে সর্বমহলে আলোচনা সমালোচনা অব্যহত রয়েছে। অনেক শিক্ষাবিদ ও বুদ্ধিজীবীরা এর মান নিয়ে প্রশ্ন করছেন। আবার কওমি আলিয়ার ছাত্র শিক্ষকরাও এ বিষয়ে নানা প্রশ্ন উত্থাপন করছেন। কেউ কেউ এ কমিটিতে রাজনীতিবিদমুক্ত সদস্যের দাবি জানাচ্ছেন। অনেকে তুলোধুনো করছেন আল্লামা আহমদ শফী ও অন্যান্য আলেমদের। এমন কিছু প্রশ্ন নিয়ে আওয়ার ইসলামের পক্ষ থেকে আমরা মুখোমুখি হয়েছিলাম বিশিষ্ট লেখক, গবেষক ও শাইখুল হাদিস মুফতি জহির ইবনে মুসলিমের সঙ্গে। প্রশ্নগুলোর সুষ্পষ্ট ও সুগঠিত জবাব দিয়েছেন তিনি।

আওয়ার ইসলাম : প্রথমত জানতে চাইব কওমি স্বীকৃতি বিষয়ে এই মুহূর্তে আপনার ভাবনা কী?

জহির ইবনে মুসলিম : কওমি মাদারাসা স্বীকৃতি প্রদানের ঘোষণা দীর্ঘদিনের দাবি ছিল। এটা আমাদের কওমি মাদরাসা শিক্ষক শিক্ষার্থীসহ সংশ্লিষ্টদের অধিকার। কারো করুণা নয়, স্বীকৃতির ঘোষণা হয়েছে এটা অবশ্যই কওমি মাদরাসার জন্য ইতিবাচক কল্যাণ বয়ে আনবে আশা করি।

আওয়ার ইসলাম : স্বীকৃতির ফলে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো হস্তক্ষেপের আশঙ্কা আছে কিনা?

জহির ইবনে মুসলিম : স্বীকৃতির উপর ভিত্তি করে কওমি মাদরাসার উপর কোনো আশংকা দেখছি না। এটা একটি অমূলক অযুহাত। কেননা সরকার যদি চায় তাহলে স্বীকৃতি দেয়া ছাড়াই যে কোনো প্রকার হস্তক্ষেপ করতে পারে। সুতরাং এ নিয়ে সময় নষ্ট করা বোকামি। কিন্তু হ্যাঁ, আশংকা তো থাকবেই। তবে সেটা স্বীকৃতি নেয়া হয়েছে সে জন্য নয় বরং তা বাংলাদেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটের কারণে। আর সে জন্যই এ বিষয়ে আমাদের সর্বদা সচেতন থাকতে হবে। সংশয়, সন্দেহ নিয়ে বসে থাকলে তো আর এগোনো যাবে না।

আওয়ার ইসলাম : স্বীকৃতি নেয়ায় অনেকে বিশেষ করে অনলাইনে প্রচুর সমালোচনা হচ্ছে, তাদের আক্রমণাত্মক বক্তব্য ছাড় দিচ্ছে না আল্লামা আহমদ শফীসহ আলেম উলামাও। কী বলবেন এ ব্যাপারে?

জহির ইবনে মুসলিম : আসলে কওমি মাদরাসার বিরোধিতা করা কিছু কিছু লোকের এজেন্ডা। জামায়াত ইসলামী, ভণ্ড-বেদাআতিসহ আলিয়া মাদরাসা সংশ্লিষ্ট জমিয়াতুল মুদার্রেছিনের অনেকেই চায় না কওমি স্বীকৃতি হোক। এদের প্রপাগাণ্ডাতেই অনেক বিভ্রান্ত হচ্ছে। স্বীকৃতি ঘোষণা বৈঠকে শুধুমাত্র আল্লামা আহমাদ শফী সাহবে একাই ছিলেন না। বাংলাদেশের শীর্ষ পর্যায়ের প্রায় সব আলেমই উপস্থিত ছিলেন। আমি মনে করি স্বীকৃতির বিষয়ে ওলমায়ে কেরামের ইজমা হয়ে গেছে। এখন এটার বিরোধিতা করা বোকামি। তবে হ্যাঁ, মানুষের ভুলের উর্ধ্বে নয়। সমালোচনা করার অধিকারও সবার আছে। তবে সেটা হতে হবে শালীনতা বজায় রেখে। যারা আক্রমণাত্মক বক্তব্য দিচ্ছে তারা ভুল করছে। তাদের সংযত হওয়া উচিত।

আওয়ার ইসলাম : অনেক শিক্ষাবিদ বলছে মাস্টার্স এর সমমান পওয়ার জন্য কওমি শিক্ষার মান যাচাই না করেই স্বীকৃতি দেয়া হচ্ছে, তাদের এই অভিযোগের সত্যতা কতটুকু?

জহির ইবনে মুসলিম : কওমি মাদরাসা শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন তোলা পাগলের প্রলাপের মতোই। এটা তাদের অজ্ঞতারই বহিপ্রকাশ। আপনি খেয়াল করে দেখবেন স্বীকৃতি কিন্তু ইংরেজি সাহিত্য কিংবা ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ারিং এ দেয়া হয়নি। স্বীকৃতির ঘোষণা হয়েছে আরবী এবং ইসলামিক স্টাডিজের উপর। আর কওমি মাদারাসায় যা পড়ানো হয় তা মাস্টার্স এর মর্যাদা পাওয়ার মান উর্ত্তীণ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের যে কয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ে আরবি এবং ইসলামিক স্টাডিজ পড়ানো হয় কওমি মাদরাসার সনদ তার চেয়ে বহুগুণে মান উর্ত্তীণ।

আওয়ার ইসলাম : শিক্ষাবিদ বুদ্ধিজীবীদের অনেকে আবার কওমি স্বীকৃতির প্রয়োজনীয়তার কথা স্বীকার করে সিলেবাসের মানোন্নয়নের কথা বলেছেন...

জহির ইবনে মুসলিম : আসল কথা হলো তারা বুঝতে চাইছেন না কওমি স্বীকৃতি কিসের উপর দেয়া হয়েছে। আগেই বলেছি কওমি স্বীকৃতি ইংরেজি সাহিত্য, কিংবা ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ারিং এর উপর দেয়া হয়নি সুতরাং এখানে অন্যান্য বিষয়ের ঘাটতির কথা বলে কওমি সনদের মান নিয়ে প্রশ্ন তোলা বোকামি। কওমি মাদরাসার উদ্দেশ্য যোগ্য আলেম তৈরি করা। তবে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ারি, উকিলসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে দক্ষ জনবল তৈরির জন্য বিশেষায়িত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। কওমি মাদরাসাও ধর্মীয় ক্ষেত্রে বিশেষায়িত একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সুতরাং কওমি মাদরাসার মূল লক্ষ্য উদ্দেশ্য ঠিক রাখকে হবে। তবে তার মানে এই নয় যে, জাগতিক অন্যান্য জ্ঞানের প্রয়োজন নেই। মানুষের প্রয়োজনীয় মৌলিক ইংরেজি, বাংলা, বিজ্ঞান সহ অন্যান্য বিষয়ে পড়ানো হয় এবং সেটার প্রয়োজনীয়তা আছে।

আওয়ার ইসলাম : সরকারি প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে স্বীকৃতি বাস্তবায়ন পরিষদকে রাজনৈতিক প্রভাবের উর্ধ্বে থাকতে হবে। এর মানে কী রাজনৈতিক ব্যাক্তিরা বাস্তবায়ন কমিটিতে থাকতে পারবে না বা থাকলে কী এটা সমন্বয় করা সম্ভব?

জহির ইবনে মুসলিম : আসলে এর মানে এই নয় যে রাজনৈতিক ব্যক্তিরা স্বীকৃতি বাস্তবায়ন পরিষদের বাইরে থাকবেন। কেননা শীর্ষ পর্যায়ে অধিকাংশ আলেমই রাজনীতির সাথে জড়িত। সেক্ষেত্রে বাস্তবায়ন পরিষদকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখাই উদ্দেশ্য। আর এটা অবশ্যই সম্ভব। আমার মনে হয় যারা এ বিষয়ে বিরোধিতা করছে তারা অধিকাংশ ইসলামী রাজনীতিরই বিরোধী। তবে হ্যাঁ, কেউ যদি স্বীকৃতি বাস্তবায়ন পরিষদে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করে তাহলে সেটা গ্রহণযোগ্য হবে না।

আওয়ার ইসলাম : আমাদেরকে সময় দেয়ার জন্য আওয়ার ইসলামের পক্ষ থেকে আপনাকে ধন্যবাদ।

জহির ইবনে মুসলিম : আপনাকেও ধন্যবাদ।

আগের সাক্ষাৎকার : সম্মিলিত পরীক্ষা কওমি মাদরাসা শিক্ষার মান বৃদ্ধি করবে: আল্লামা মুহাম্মদ আবূ মূসা


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ