শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৬ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১১ শাওয়াল ১৪৪৫


কওমি সনদের সরকারি স্বীকৃতি একটি সময়োপযোগী ও ঐতিহাসিক পদক্ষেপ: মাওলানা শহীদুল ইসলাম ফারুকী

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

চলমান কওমী সনদের স্বীকৃতি প্রসঙ্গে আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় মালয়েশিয়ার রিসার্চ ফেলো, আধ্যাত্মিক সংগঠন-রিসালাতুল ইনসানিয়াহ বাংলাদেশের আমীর, বরেণ্য লেখক ও গবেষক মাওলানা শহীদুল ইসলাম ফারুকীর সাক্ষাতকার নিয়েছেন আওয়ার ইসলাম টুয়েন্টিফোর ডটকমের নির্বাহী সম্পাদক রোকন রাইয়ান

আওয়ার ইসলাম : কওমি মাদরাসার সর্বোচ্চ ডিগ্রি দাওরায়ে হাদিসকে প্রধানমন্ত্রী মাস্টার্সের সমমান ঘোষণা করেছেন। এ বিষয়ে আপনার মুল্যায়ন বা মন্তব্য কী?

মাওলানা ফারুকী : আমার দৃষ্টিতে কওমি সনদের সরকারি স্বীকৃতি একটি সময়োপযোগী ও ঐতিহাসিক পদক্ষেপ। এ জন্য আমি প্রথমেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও সংশ্লিষ্ট উলামায়ে কিরামকে অভিনন্দন জানাতে চাই। বর্তমান সরকার যেভাবেই হোক কওমি মাদরাসা নিয়ে ভাবছে। এটাকে মুল্যায়ন করার চেষ্টা করছে। এজন্য আমি সরকারকে সাধুবাদ জানাই।

আজকের এ অর্জনের পিছনে অনেক ত্যাগ ও কুরবানী রয়েছে। অনেক অশ্রু ও রক্ত ঝরেছে। আমি মনে করি আজকের এ সফলতা মুসলমানদের আধ্যাত্মিক রাহবার শাইখুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফীর দূরদর্শি ও আধ্যাত্মিক নেতৃত্বের কারণেই সম্ভব হয়েছে। এজন্য আমি শাইখুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফী দা. বা.-কে আন্তরিক মুবারকবাদ জানাই এবং তাঁর সুসাস্থ্য কামনা করছি।

আগে সাধারণ মানুষ বা শিক্ষিত সমাজ কওমি মাদরাসার শিক্ষাকে মূল্যায়ন করত না, বরং অবজ্ঞার চোখে দেখত। অনেকেই মনে করত কওমিপড়ুয়ারা সমাজের বোঝা। এমনকি ঠাট্টা-বিদ্রূপ পর্যন্ত করতো। এখন সে সুযোগটা তারা পাবে না। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার মাধ্যমে এই শিক্ষাব্যবস্থা স্বীকৃত হয়ে গেল। প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে যে কথাগুলো বলেছেন তা অনেক বড় স্বীকৃতি।

তিনি পরষ্কিার বলেছেন, আলেমদের পদধূলিতে গণভবন ধন্য হয়েছে। বাংলাদেশের শীর্ষ আলেমরা এখানে এসেছেন। দীনি ইলম হলো মৌলিক শিক্ষা। এ শিক্ষা ছাড়া মানুষ পরিপূর্ণ হয় না। আমাদের শিক্ষার সূচনাতেই আছে কওমি মাদরাসা। বাংলাদেশে ১৪ হাজার কওমি মাদরাসা এবং ১৪ লাখ ছাত্র রয়েছে। বাংলাদেশ স্বাধীনের পর দ্বীনি এই শিক্ষার মাধ্যমেই কিন্তু আমরা বেড়ে উঠেছি। এমনকি উপমহাদেশ থেকে বৃটিশবিরোধী আন্দোলনের সূচনা এই আলেমরাই প্রথমে শুরু করেছিলেন। কওমী মাদরাসাই এদেশের প্রথম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে কওমী মাদরাসা তথা দেওবন্দ মাদরাসার অগ্রণী ভূমিকা রয়েছে।

এই ঘোষণার মাধ্যমে সর্বস্তরের মানুষ বিশেষ করে যারা কওমি মাদরাসা নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করত তাদের কাছে একটা ম্যাসেজ পৌঁছে গেল যে, কওমি মাদরাসা অবজ্ঞার পাত্র নয়, বরং এরাই যে মূল ধারা এবং একটি সুন্দর সমাজ গঠনে কাজ করে যাচ্ছে সেটাই ফুটে উঠেছে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে। এটা কিন্তু বিশাল প্রাপ্তি বলে আমি মনে করি।

আওয়ার ইসলাম : কেউ কেউ বলছেন এটা সরকারের রাজনীতির কূটকৌশল এবং এর মাধ্যমে আলেমদের প্রতিবাদী মানসিকতা থেকে দমাতে চাইছে?

মাওলানা ফারুকী : সরকার রাজনীতি করবেই। সব সরকারই রাজনীতি করে। রাজনীতির চিন্তার বাইরে কেউ নেই। স্বার্থ ছাড়া কেউ কাউকে কিছু দেয় না। সূতরাং সরকার রাজনীতি করছে এটা আমাদের কাছে বিবেচ্য বিষয় নয়। কারণ আমরা সরকারের কাছে করুণা চাইতে যাইনি। আমরা আমাদের অধিকার পাওয়ার জন্য গেছি। সেই অধিকার আমরা পেয়েছি। এটাই বড় কথা। দ্বিতীয় কথা হলো, এই কাজটা হয়েছে সকল উলামায়ে কিরামের ঐক্যমতের ভিত্তিতে। কোনো বিরোধিতা আসেনি। আলেমদের এত বড় ঐক্য বাংলাদেশে ইতোপূর্বে আর কখনো হয়নি। জাতির কর্ণধার উলামায়ে কিরাম সর্বসম্মতিক্রমে কোনো ভুল সিদ্ধান্ত অতীতেও কখনো নেইনি, আশা করি ভবিষ্যতেও নিবেন না। উলামায়ে কিরাম অনেক চিন্তা ভাবনা করেই গণভবনে গেছেন। উলামায়ে কিরাম ও আধ্যাত্মিক নেতৃত্বকে বোকা ভাবার কোনো সুযোগ নেই। সুতরাং সরকারের ফাঁদে পা দেয়ার কোনো প্রশ্নই আসে না। আর উলামায়ে কিরামকে দমানোর কথা কথা বলছেন, সে সম্পর্কে আমি স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই যে, স্বীকৃতির কারণে ওলামায়ে কেরাম সরকারের হাতে বন্দী হয়ে গেছেন, একথা আমি কখনই বিশ্বাস করি না। স্বীকৃতি পেয়েছে বলে আলেমদের মুখ কিছুতেই বন্ধ হবে না ইনশাআল্লাহ| কারণ আলেমরা আকাবিরে দেওবন্দের উত্তরসূরী। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, স্বীকৃতি আমাদের অধিকার ছিল। এটা আপনারা এতদিন পরে বুঝতে পেরেছেন। তাই আপনাদের মোবারকবাদ। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে, আপনারা যা ইচ্ছা তাই করবেন আর আমরা মুখ বুজে সহ্য করব। এটা কখনই সম্ভব না। এর মাধ্যমে আলেমরা সরকারের কাছে বিক্রি হয়ে গেছেন, একথা আমরা বিশ্বাস করি না। বরং এর মাধ্যমে আলেমরা সত্য উচ্চারণে আরও এক ধাপ এগিয়ে গেছেন। যেমন, গ্রিক মূর্তির প্রসঙ্গটি তারা স্পষ্টভাবে বলেছেন সেখানে এবং প্রধানমন্ত্রীও এর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিবেন বলে জানিয়েছেন।

আওয়ার ইসলাম : কেউ কেউ বলছেন, এটা শাপলা চত্বরের শহীদদের সাথে গাদ্দারী?

মাওলানা ফারুকী : আমি বলতে চাই এটা গাদ্দারী নয়, বরং এটা বিজয়। কারণ যারা শাপলা চত্বর ঘটিয়েছিলো, শাপলার শহীদদের সাথে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করেছিলো এবং আল্লামা আহমদ শফীকে নিয়ে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করেছিলো, আজ তারাই মাথানত করেছে, তাদের মুখ দিয়েই শাপলার উত্তরসূরীদের প্রশংসা ও স্বীকৃতি বের হয়েছে এবং তারা আল্লামা শফীর কদমবুচি করেছে-এটা অনেক বড় বিজয়। এ দেশে এ যাবত যারা কওমী মাদরাসা ও উলামাদের সবচেয়ে বেশি বিরোধিতা করেছে, নানান বাজে বাজে কথা বলেছে, জঙ্গি প্রমাণ করার চেষ্টা করেছে, আজ তারাই তাদের প্রশংসা করলো, করতে বাধ্য হলো-এটা অনেক বড় বিজয়। আমি মনে করি এটা অনেক বড় বিজয়। আর এই বিজয় সম্ভব হয়েছে আল্লামা আহমদ শফীর আধ্যাত্মিক ও দূরদির্শ নেতৃত্বের কারণে। নেতৃত্বের সাথে দূরদর্শিতা ও আধ্যাত্মিকতার কোনো বিকল্প নেই। আধ্যাত্মিক নেতৃত্ব কখনো ব্যর্থ হয় না। ইসলামের যে নেতৃত্বে আধ্যাত্মিকতা নেই, আধ্যাত্মিক রাহবার নেই, তা কোনো দিন সফল হতে পারে না।শাপলা চত্বরে তাদের জুলুমকে আমরা নন্দিা করি এবং প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক আজকের কওমী উলামা ও কওমী মাদরাসা শিক্ষার প্রতি মর্যাদা ও স্বীকৃতি প্রদানের কাজেরI ভূয়সী প্রশংসা করি। ভালকে ভাল বলা, আর মন্দকে মন্দ বলা ঈমানদারের বৈশিষ্ট।

আওয়ার ইসলাম : স্বীকৃতি বাস্তবায়নে আপনি কেমন সম্ভাবনা দেখছেন?
মাওলানা ফারুকী : যেখানে প্রধানমন্ত্রী স্পষ্টভাবে বলেছেন, তাই এটা দ্রুত বাস্তবায়ন হবে বলে আমি আশা করি। তবে সরকারের ভিতরে ঘাপটি মেরে থাকা লোকেরা এটাকে বিলম্বিত করার অপপ্রয়াস চালাতে পারে। স্বীকৃতি দেওয়াটা একটা দীর্ঘ প্রক্রিয়া। এর আগেও খালেদা জিয়া এরকম ঘোষণা দিয়েছেন। কিছুই হয় নি। আলেম-ওলামাদের এটা থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিৎ ছিল। আগে একটা গেজেট জারি হয়েছিল এরপরেও হয় নি। এখন যেটা হল এটা প্রজ্ঞাপন হবে। এরপরে প্রক্রিয়াধীন। এরপর সনদ যারা দিবেন তাদের সঙ্গে সিলেবাস, পরীক্ষা, প্রশ্নপত্র তৈরি, মুল্যায়ন ইত্যাদি বিষয়ে কমিটির সমন্বয় করতে হবে। এরকম অনেক কাজ বাকি আছে। এ ক্ষেত্রে আলেমদের সতর্ক থাকতে হবে।

কওমির শিক্ষার্থীরা কি অন্য দেশের মানুষ? তাদের চাকরি করার অধিকার নেই?

হেফাজত ইস্যুতে ওরা প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যকে চ্যালেঞ্জ করছে

 


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ