শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫


কওমির স্বীকৃতি; যেভাবে দেখছেন শিক্ষার্থীরা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

যুবাইর ইসহাক
প্রতিবেদক

গতকাল গণভবনে কওমি মাদরাসার স্বীকৃতি বিষয়ে শীর্ষ আলেমদের বৈঠক ছিলো। এতে আল্লামা আহমদ  শফীসহ প্রায় তিনশতাধিক আলেম উপস্থিত ছিলেন। সন্ধা সাতটায় শুরু হওয়া এই বৈঠকে একে একে শীর্ষ আলেমরা বক্তব্য দেন। শেষে রাত নয়টার দিকে প্রধানমন্ত্রীও বক্তব্য পেশ করেন। প্রধান মন্ত্রী তার বক্তব্যে কওমির স্বকীয়তা বজায় রেখে আলেমদের দেওয়া ৭ দাবি মেনে দাওরা হাদিসকে মাস্টার্স সমমান ঘোষণা করেন।

এই স্বীকৃতিতে কওমি অঙ্গনে অানন্দ ছড়িয়ে পড়েছে। বহু কাঙ্ক্ষিত স্বীকৃতি পেয়ে ছাত্ররা বেশ আনন্দিত। তেমন কিছু অনুভূতি আওয়ার ইসলামকে জানিয়েছেন কওমি পড়ুয়া কিছু তরুণ।

মাওলানা কবীর হুসাইন। বর্তমানে খুলনা খালিশপুর দারুল মুকাররম মাদরাসার হিফযুল কুরআন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান। ২০০১ সালে খুলনা দারুল উলূম থেকে দাওরায়ে হাদিস (মাস্টার্স) শেষ করেন।

কওমির স্বীকৃতি বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ্ অনেক দিনের স্বপ্ন আজ পূরণ হতে চলছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জবান থেকে দেশের তিনশত শীর্ষ উলামায়ে কিরামের সামনে দাওরায়ে হাদীসকে মাস্টার্সের সমমান ঘোষনা দিয়েছেন। এক্ষেত্রে বেফাকের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস সাহেবের একটা কথার সাথে আমিও একমত যে শুধু ঘোষণায় সীমাবদ্ধতায় নয়, বরং সংসদে পাশ করতে হবে। আমরা কওমি আলেমরা এতদিন দেশের স্বীকৃত শিক্ষিত হিসেবে পরিগণিত ছিলাম না। (যদিও নিঃসন্দেহে আল্লাহর নিকটে মকবূল)। এখন থেকে দেশের তথাকথিত বুদ্ধিজীবিরা কওমি শিক্ষাটাকে হেয় করে কথা বলার সাহস পাবে না।"

জাহেদ আহমেদ। জামেয়া ইসলামিয়া হুসাইনিয়া মীরবক্সটুলা নয়াসড়ক মাদরাসায় এ বছর দাওরা হাদিস পড়ছেন। তিনি স্বীকৃতি বিষয়ে আওয়ার ইসলামকে বলেন, ‘অালহামদুলিল্লাহ। আমি মনে করি আজ স্বীকৃতির ঘোষণার মাধ্যমে জাতীয়ভাবে শিক্ষার হার বাড়বে।

যেদেশে ২০ লক্ষ শিক্ষার্থীর শিক্ষার স্বীকৃতি নেই সে দেশে কিভাবে শতভাগ শিক্ষার হার নেয়া যাবে?
কওমি মাদরাসার স্বীকৃতির মাধ্যম আমার মনে হচ্ছে স্বীকৃতির কারণে কওমি অঙ্গনের কোন ক্ষতি হবে না। কারণ স্বীকৃতি হয়েছে দেওবন্দের আদলে। তাছাড়া কওমি আলেমরা যে প্লাটফর্মে কাজ করবে তা হবে শতভাগ দুর্নীতি মুক্ত।

ঢাকার জামিউল উলুম মাদ্রাসার ছাত্র আব্দুল আযিয রোমান। তিনি কওমির স্বীকৃতি বিষয়ে আওয়ার ইসলামকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক স্বীকৃতি প্রদান এটা কওমি জনগোষ্ঠীর উপর অনুগ্রহ নয়, বরং আমাদের ন্যায্য অধিকার। এটা তার মাধ্যমে পেয়েছি আমরা।

স্বীকৃতি আদায়ে উলামায়ে কেরামের অতীত-বর্তমানের চেষ্টা-প্রচেষ্টা অবশ্যই সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। মসজিদের জমি অধিগ্রহণ ও সুপ্রিমকোর্ট প্রাঙ্গনে মূর্তি স্থাপনের বিরুদ্ধে আজকের অনুষ্টানে আলেমগন যে বলিষ্ট ভূমিকা রেখেছেন তা যথেষ্ট সাহসিকতার পরিচয়।

হাটহাজারি থেকে ২০০৭ সালে ফারেগ মুতিউর রহমান আযাদ। বর্তমানে মাদরাসায় শিক্ষকতা করছেন, তিনি কওমির স্বীকৃতি বিষয়ে বলেন, আমার বলার তেমন কিছু নেই। আমি সদা কওমির উপকার চাই।
দেখুন কওমিতে সবচেয়ে ভাল লেখা পড়া হয়, অথচ আমাদেরকে অযোগ্য বলা হয়। শুধু দাওরা পর্যন্ত ইংলিশ পড়ানো হলে, আমাদের আর কোন ত্রুটি থাকবে না।

তিনি বলেন, স্বীকৃতি পেয়ে ভালই লাগছে। আগামী প্রজন্ম যেনো কোন অপবাদের বুঝা বইতে না পারে। তবে স্বীকৃতি যেনো নিষ্ক্রিয় করে না দেয়, সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে।

তিনি আরো বলেন, আমাদের আরো আগে স্বীকৃতি পাওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু কিছু কিছু মানুষের জন্য তখন সম্ভব হয় নি।

শরীফ হাসান। জামিয়া ইসলামিয়া মাদানিয়া দারুল উলুম যাত্রাবাড়ী মাদরাসার অারবি সাহিত্য বিভাগের ছাত্র।

স্বীকৃতি বিষয়ে আওয়ার ইসলামকে তিনি বলেন, কওমি মাদরাসার স্বীকৃতি এটা আমাদের নাগরিক অধিকার। এ অধিকার আমরা চেয়ে আসছি বহু আগ থেকে। আমাদের প্রধানমন্ত্রীও বলেছেন, কওমি শিক্ষা এ দেশের প্রথম শিক্ষাব্যবস্থা। এ জন্য আমি মনে করি এতদিন স্বীকৃতি না পাওয়াটা এক প্রকার অন্যায়। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার সরকারি স্বীকৃতি হয়েছে এতে আমাকে খুশি হতেই হবে। এবং সরকার প্রধানকেও ধন্যবাদ না দিলে অকৃতজ্ঞতার প্রকাশ ঘটবে। তবে স্বীকৃতির সঠিক ব্যবহার এখন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটা নিয়ে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।

নিয়াজ তাহমিদ। জামিয়া মাদানিয়া আস্আদুল উলূম মাদানীনগর খুলনার ছাত্র।স্বীকৃতি বিষয়ে তার অভিমত- অবশেষে অর্জিত হলো আমাদের প্রাপ্য অধিকার কওমি শিক্ষা সনদের স্বীকৃতি। দীনি শিক্ষার মান বিচারে কওমি ধারার শিক্ষা ব্যবস্থা অনেক আগে থেকেই স্বীকৃতির হকদার। কিন্তু আমাদের নাকের ডগায় বসে একটি বিদ্বেষী মহল গায়ে ইসলামের লিবাস জড়িয়ে বিভিন্ন ধর্মীয় অঙ্গনে অবৈধ রাজত্ব কায়েম করেছিল। অযোগ্যরা যোগ্যদের মসনদ দখল করে বসেছিল, একখানা সার্টিফিকেটের জোরে। আজ অন্তরে প্রশান্তির হাওয়া
লেগেছে। স্বীকৃতি বাস্তবায়নের ফলে যোগ্যরাই তাদের মসনদ ফিরিয়ে আনবে। কর্মক্ষে বাড়বে। ফলে দরস-তাদরিসের পাশাপাশি রাষ্ট্রের অগ্রগতি উন্নতিতে উলামায়ে কেরাম সফলভাবে অবদান রাখতে পারবে। ফলে আমরা একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের প্রত্যাশা করতেই পারি। মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার অনুপ্রেরণা যোগাতে এই
স্বীকৃতির বড়ই প্রয়োজন ছিল।

কওমি মাদরাসাকে স্বীকৃতি দেয়ায় খালেদার গায়ে আগুন ধরেছে: প্রধানমন্ত্রী

১৪ কোটি মানুষের বিশ্বাসের পরিপন্থি কোনো কাজ দেশের সংস্কৃতি হতে পারে না: মুহাম্মদ যাইনুল আবিদীন

 


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ