মাওলানা জামিল আহমদ : নাহবেমির জামাত হলো দরসে নেজামির একটি গুরুত্বপূর্ণ জামাত। ভালো আলেম হতে হলে এই জামাত ভালো পড়তে হবে। আর নাহবেমির জামাতকে দরসে নেজামির ভিত্তিও বলেন অনেকেই। যে ভালোভাবে এই জামাত পড়বে সে পরবর্তী জামাতগুলো সহজে অধ্যয়ন করতে পারবে। বলা হয়ে থাকে নাহবেমির হলো শাহী মেজাজের পড়া, এ জামাতের কিতা গুলো শুধু মুখস্থ করলে চলে না সাথে বুঝতেও হয়। আর শুধু না বুঝে মুখস্থ করাতে কোন ফায়দা নেই। এজন্যই মুখস্থ করার পাশাপাশি বুঝতেও হবে।
যেহেতু নাহবেমির কিতাবটি নাহু তথা আরবি ব্যকরণের প্রথম কিতাব তাই কিতাবটি পড়ার সময় প্রচুর অনুশীলন ও কিতাবের বাইরের অনেক উদাহরণ তৈরি করতে হবে।
ক. পরিভাষিক সংজ্ঞাসমূহ খুব ভালভাবে বুঝে-শুনে বাংলা ভাসায় সাজিয়ে-গুছিয়ে মুখস্ত করতে হবে।
খ. ইসম, ফে’ল, হরফ নির্ণয় এবং জুমলায়ে ইসমিয় ও ফি’লিয়া তৈরি এবং মু‘রাব ও মাবনী নির্ণয়, জমলার প্রকার নির্ণয় করার জন্য অনেক অনুশীলন করতে হবে।
গ. ‘তরিকে এরাবে’র দিক দিয়ে ইসমে মুতামাক্কিন ষোল প্রকারের প্রত্যেক প্রকারকে তার তরীকে এ’রাবসহ খুব ভালভাবে বুঝে মুখস্ত করতে হবে এবং এ ক্ষেত্রে কিতাবের বাইরের অনেক উদাহরণ তৈরি করে শুরু তে তার মুনাসেব আমেল এনে অনুশীলন করা আবশ্যক। অনেককে দেখা যায় যে, শুরু তে এমন আমেল এনে উদাহরণ তৈরি করে যার সাথে অর্থের দিক দিয়ে মা’মুলের কোনো সম্পর্ক থাকে না।
ঘ. বিভিন্ন আমেলের আমলসমূহ খুবভালভাবে সাজিয়ে আত্মস্ত করতে হবে এবং এক্ষেত্রেও পর্যাপ্ত অনুশীলন করতে হবে।
ক. প্রতিটি অধ্যায় খুব ভাল করে পড়তে হবে।
খ. প্রতিটি শব্দের অর্থ সামান্য বিশ্লেষণসহ মুখস্ত করতে হবে। যেমন কোনো শব্দ একবচন হলে তার বহুবচন এবং বহুবচন হলে তার একবচন এবং শব্দটি ফে’ল হলে তার বাব, মাদ্দাসহ অর্থ খুব ভালভাবে মুখস্ত করতে হবে।
গ. আরবি বাক্যের বাংলা অনুবাদ করার নিয়ম এবং বাংলা থেকে আরবি বাক্য গঠন করার প্রতি বিশেষ দৃষ্টি রাখতে হবে।
ঘ. কিতাবে উল্লে¬খিত বিভিন্ন আমেলের আমল বুঝে আত্মস্ত করে নিজের থেকে আরবি বাক্য গঠনে অভ্যস্ত হতে হবে। যাতে কিতাবের বাইরের কোনো বাংলা আসলে তার আরবিতে অনুবাদ করতে অসুবিধা না হয়।
ঙ. কিতাবের বিভিন্ন বাক্যের তারকিব সম্পর্কে পূর্ণধারণা রাখতে হবে। লিখে লিখে তারকিবের অনুশীলন করতে হবে।
চ. কিতাবে উল্লেখিত আরবি প্রবাদগুলোর অর্থ সামান্য ব্যাখ্যাসহ খুব ভালভাবে বুঝে ইয়াদ করতে হবে।
সিরাতে খাতামুল আম্বিয়া
‘সিরাতে খাতামুল আম্বিয়া’ কিতাবটি নাহবেমির জামাতের একটি গুরু ত্বপূর্ণ কিতাব। কিতাবটির নেসাব কিছুটা দীর্ঘ- তাই, কিতাবের ঘটনা পড়ার সময় উক্ত ঘটনার মূল পয়েন্টগুলো (নাম, স্থানের নাম, সন, তারিখ ইত্যাদি) মুখস্ত করে ঘটনাটি কিতাব থেকে মনোযোগসহকারে কয়েকবার পড়বে। তাহলে দেখা যাবে পূর্ণঘটনাটি মুখস্ত হয়ে গেছে। এভাবে কিতাবের ঘটনা পড়লে আশা করা যায় খুব সহজেই কিতাবটি আত্মস্ত হয়ে যাবে।
মালাবুদ্দা মিনহু/ফিকহুল মুয়াসসার
ইলমে ফিকাহ মানবজীবনে অতীব গুরুত্বপূর্ণ ও নিত্য প্রয়োজনীয় বিষয়।
ক. যে কোনো মাসআলা পড়া হোক না কেন, তা বুঝে পড়ার চেষ্টা করা।
খ. মাসআলাসমূহ ভালভাবে আত্মস্ত করার জন্য পরস্পরে মুযাকারা বা আলোচনা করা জরু রি।
গ. যে সকল মাসআলায় ইমামগণের মতবিরোধ রয়েছে, খিয়াল করে সেগুলো ভালভাবে মুখস্ত করতে হবে।
ঘ. খুঁটিনাটি ছোট-খাট মাসআলাসমূহকেও গুরু ত্বসহকারে মুখস্ত করতে হবে। এগুলোকে অবহেলার দৃষ্টিতে এড়িয়ে যাওয়া ঠিক হবে না।
ঙ. বিভিন্ন প্রসঙ্গে উল্লে¬খিত আরবি দোয়াসমূহ এমনভাবে মুখস্ত করতে হবে। যাতে হরকত ও অর্থসহ আরবিতে মুখস্ত লেখা যায়। এমনিভাবে বিভিন্ন অধ্যায়ে বর্ণিত হাদিসগুলোও মুখস্ত করতে হবে।
চ. কিতাবের বাইরেও গুরু ত্বপূর্ণ মাসায়েল যা আমাদের নিত্যদিন প্রয়োজন পড়ে সেগুলোও খেয়াল রাখতে হবে। অনেক সময় এ জাতীয় প্রশ্ন আসলে পরীক্ষার্থী ঘাবড়িয়ে যায়। অথচ একটু খেয়াল করলেই উত্তরটি সে দিতে পারতো। তাই বাইরের প্রয়োজনীয় মাসায়েল সম্পর্কে জ্ঞান রাখতে হবে।
উল্লেখিত বিষসমূহের প্রতি যত্নবান হয়ে পরীক্ষার বেশ কিছুদিন আগে থেকেই পরীক্ষার প্রস্তুতিমূলক লেখা-পড়া ও অনুশীলন করতে থাকলে এবং আল্লাহর কাছে ভাল ফলাফল চেয়ে দোয়া করতে থাকলে ইনশাআল্লাহ ভাল ফলাফলের আশা করা যায়।
গুলিস্তা
ক. কিতাবটি পড়ার সময় ফার্সি ফে’লসমূহের সীগা ও বাহাসের দিকে পূর্ণদৃষ্টি রাখতে হবে।
খ. হিকমাতগুলো ভালভাবে অর্থসহ পড়। সম্ভব হলে ৮ ম খন্ডের অধিকাংশ হিকমাত ও কবিতা ফার্সিতেও মুখস্ত করা।
গ. বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা প্রশ্নগুলোর জবাব ফার্সিতে মুখস্ত করা।
ঘ. বিভিন্ন প্রসঙ্গে উল্লে¬খিত আরবি বাক্যগুলোর অর্থ মুখস্ত করতে হবে এবং তা কি প্রসঙ্গে উল্লে¬খ করা হয়েছে তা ভালভাবে বুঝে আত্মস্ত করতে হবে।
ঙ. কিতাবে উল্লেখিত ঘটনাসমূহ এমনভাবে মুখস্ত করতে হবে। যাতে কোনো ঘটনার একটু অংশ উল্লেখ থাকলেই পূর্ণঘটনা লিখতে অসুবিধা না হয়।
চ. ঘটনা বা হিকমাতের মাধ্যমে শিক্ষাণীয় বিষয়গুলো নোট করে পড়া।
এগুলো হলো কিতাব ভালকরে আত্মস্ত করার বিষয়ে আলোচনা। আর পরীক্ষায় ভাল রেজাল্ট করার জন্য আরেকটি বিষয়ের প্রতি লক্ষ রাখতে হবে। তা হলো- কিতাব পড়ার সময় বেফাকের প্রশ্নপত্র সামনে রেখে প্রশ্নের উত্তরসমূহ মুখস্ত করতে হবে। প্রশ্নের উত্তর কিভাবে সাজাতে হবে, উত্তর কতটুকু আসবে, কোথায় থেকে উত্তর শুরু হবে, কোথায় শেষ হবে এবং উত্তর কীভাবে সাজাতে হবে এসব বিষয়ের ক্ষেত্রে একজন দক্ষ,অভিজ্ঞ উস্তাদের তত্ববধানে থেকে পর্যাপ্ত প্রশ্নের উত্তর লিখে অনুশীলন করতে হবে। পাশাপাশি নিজ জামাতের ভাল ছাত্রের উত্তরপত্র বা উপরের জামাতের ভাল ছাত্রের খাতা দেখে সে অনুযায়ী প্রশ্নের উত্তর লিখে অনুশীলন করা যেতে পারে। এটিও পরীক্ষায় ভাল রেজাল্ট করার জন্য সহায়ক।
বাংলা সাহিত্য ও ব্যাকরণ
ভাষা অর্থাৎ বাংলা ভাষার ওপর ভাল দখল থাকা। এজন্য পাঠ্যবই পড়ার সময় শব্দের প্রয়োগ ও বানান শুদ্ধ করার প্রতি বিশেষ ভাবে খেয়াল রাখবে। আর ভাষার বলা ও লেখার ক্ষেত্রে ব্যাকরণের প্রয়োজন অপরিসিম তাই ব্যাকরণও ভালভাবে পড়তে হবে। প্রয়োজনে কঠিন বানানগুলো লিখেলিখে মুখস্ত করা।
ক. গদ্য, প্রবন্ধ এবং কবিতার পুরো বিষয়বস্তু ভালোভাবে আয়ত্ব করা। এজন্য মনোযোগের সাথে একাধিকবার পড়তে হবে এবং লেখক বা কবি কি বোঝাতে চেয়েছেন তাঁর সারসংক্ষেপ বের করে খাতায় লিখে অনুশীলন করতে হবে।
খ. মুখস্ত করার সময় প্রতিটি লাইনের দাড়ি, কম, আশ্চর্যবোধক চিহ্ন, জিজ্ঞাসা চিহ্নের মধ্য থেকে যেখানে যেটা দেয়া হয়েছে তা খেয়াল করে মুখস্ত করা। পাশাপাশি কবি পরিচিত পড়া।
গ. বাংলা মান বন্টন ৬০ সংক্ষিপ্ত, রচনামূলক, ও ব্যাখ্যা। ব্যাকরণ ৪০ সাধারণ প্রশ্ন রচনা, দরখাস্ত, ইত্যাদি।
ঘ. প্রত্যেক পাঠের সারাংশ ও পাঠের উদ্দেশ্য ভাল করে পড়া।
ঙ. প্রত্যেক পাঠ থেকে ব্যাখ্যা মুখস্ত করা
চ. বিভিন্ন শব্দ দিয়ে বাক্যরচনা ও বিপরীত শব্দ লেখার অনুশীলন করা।
ছ. বিগত বছরগুলোর প্রশ্ন সামনে রেখে অনুশীলন করা।
জ. পাঠ্য বইয়ের রচনাগুলো মুখস্ত করা। সবগুলো মুখস্ত করা সম্ভব না হলে যেগুলো মুখস্ত হবে না সেগুলো বার বার পড়ে সারসংক্ষেপ বুঝে রাখা।
ঝ. মুখস্ত করার পর প্রতিটি জিনিস অবশ্যই লেখা। তাহলেই বাংলায় ভাল ফলাফল করা যাবে। ইনশাআল্লাহ।
ঞ. সমাস, কারক, বাগধারা, সারাংশ ভাল করে শিখতে হবে।
ত. দরখাস্ত ও চিঠি মুখস্ত করা এবং এক পৃষ্ঠায় লেখা শেষ করতে হবে।
-এআরকে