বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১২ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫


সংবিধান সংশোধনে গণভোট : বিপুল জনসমর্থনে এরদোগান

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

বিপুল জনসমর্থনে হিরো তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোগানআওয়ার ইসলাম: তুরস্কের উত্তরাঞ্চলীয় শহর ‘আমাসিয়ার’ অধিবাসী এমিনি আলটিনবাস। ১৬৫ মাইল দূরের এই শহর থেকে তিনি আঙ্কারায় একটি রাজনৈতিক সমাবেশে যোগ দিতে এসেছেন। বিকালের উষ্ণতায় তিনি দেশটির প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য গভীর মনোযোগ দিয়ে শুনেন। দেশটির আসন্ন গণভোটে ‘হ্যাঁ’র পক্ষে ভোট দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী তাকে সহ উপস্থিত অন্যান্য সমর্থকদের প্রতি আহ্বান জানান। এই গণভোটে হ্যাঁ জয়ী হলে দেশটির বর্তমান সংসদীয় পদ্ধতির পরিবর্তে প্রেসিডেন্ট পদ্ধতির শাসন প্রবর্তিত হবে। কিন্তু আলটিনবাসকে এটা বুঝানোর কোন প্রয়োজন নেই। সংশোধিত এই প্যাকেজ অনুযায়ী, ২০২৯ পর্যন্ত দেশটির বর্তমান প্রসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগান ক্ষমতায় থাকতে পারবেন। এই সাংবিধানিক পরিবর্তনকে কেন সমর্থন করছেন জিজ্ঞেস করলে আলটিনবাস জানান, এরদোগানের অবস্থানকে তিনি সঠিক বলে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন।

তিনি বলেন, ‘এরদোগান মানুষের প্রতি খুবই আন্তরিক। তিনি যা বলেছেন তা সত্য। তিনি কখনোই মিথ্যে বলেন না এবং জনগণের চাওয়ার বাইরে তিনি কিছুই করেন না।’ এই ব্যবস্থায় বিরোধী দলের বিরোধিতা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘বিপর্যস্ত বিরোধী দল শক্তিশালী নেতৃত্বের অধীনে দেশে বিভাজন সৃষ্টি করতে চাচ্ছে। শেষ পর্যন্ত আমি ‘হ্যাঁ’ পক্ষে নিজের অবস্থান ব্যক্ত করছি।’ গত ফেব্রুয়ারিতে জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টির (একে) হাজার হাজার সমর্থক তুরস্কের রাজধানীর উত্তর-পশ্চিমের শহরতলি ‘খারামানকাজানে’ ‘হ্যাঁ’র সমর্থনে একটি বিশাল সমাবেশ করেন।

আগামী ১৬ এপ্রিল সাংবিধানিক পরিবর্তন নিয়ে আসন্ন গণভোটে তাদের অনেকেই ভোট প্রদান করবেন; যেটি ৯৩ বছর বয়সী তুর্কি প্রজাতন্ত্রের জন্য একটি সন্ধিক্ষণ হিসেবে চিহ্নিত হবে। সমাবেশের জন্য ওই স্থানটিকে বেছে নেয়া কোন কাকতালীয় ঘটনা ছিল না। এখানেই অবস্থিত ‘আকিনজি বিমান ঘাঁটি’। গত বছরের জুলাইয়ে এই ঘাঁটিতে দেশটির সামরিক অভ্যুত্থানের প্রচেষ্টাকে সাত বেসামরিক নাগরিক তাদের জীবন দিয়ে প্রতিরোধ করেন। ওই ঘটনা পর কাজানের শহরতলীর নতুন নামকরণ করা হয়েছে ‘খারামানকাজান’। তুর্কি শব্দে এর অর্থ হচ্ছে হিরো বা নায়ক। এখনো পর্যন্ত মানুষের আবেগকে উত্তপ্ত করার ক্ষমতা রয়েছে ওই অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার। স্টেডিয়াম ভিতরে বৈপ্লবিক অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার সেই রাতের কয়েকটি ভিডিওতে প্রদর্শন করা হয়। এসময় উপস্থিত সমর্থকেরা ওই অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে স্লোগান দেন ও তীব্র ক্রোধ প্রকাশ করেন।

জনতার উদ্দেশে একে পার্টির প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী বিনালি ইলদিরিম বলেন, ‘নতুন এই শাসন ব্যবস্থার অধীনে অভ্যুত্থানের চেষ্টার দিন চিরতরে শেষ হয়ে যাবে। আমাদের অর্থনীতি শক্তিশালী হবে, প্রবৃদ্ধি দ্রুত বৃদ্ধি পাবে, নতুন চাকরি সুযোগ তৈরি হবে, লাল ফিতার দৌরাত্মের অবসান ঘটবে এবং সন্ত্রাসবাদ চিরতরে নির্মূল হবে।’ স্টেডিয়ামের বাইরের পরিবেশও তখন বেশ উল্লাসমূখর। হাজার হাজার সমর্থক এরদোগানকে সমর্থণ করে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। রাস্তার হকাররা এরদোগানের ছবি সম্বলিত টি-শার্ট পরে ব্যানার নিয়ে আসেন। এতে লেখা ছিল ‘আমার সমস্ত হৃদয় হ্যাঁ’র পক্ষে’ এবং ‘আমাদের শক্তিশালী দেশের জন্য আমাদের সিদ্ধান্ত ‘হ্যাঁ’। তবে বিরোধীরা বলছে, এই সাংবিধানিক পরিবর্তন এরদোগানকে ২০২৯ সাল পর্যন্ত দেশ শাসনের অনুমতি দেবে এবং তিনি এর মাধ্যমে সর্বময় ক্ষমতার মালিক হবেন। একই সঙ্গে বিচার বিভাগে তার পূর্ণকর্তৃক প্রতিষ্ঠা পাবে; যা দেশকে এক ব্যক্তির শাসনের দিকে নিয়ে যাবে। তবে ‘হ্যাঁ’ প্রচারাভিযানের সমর্থকদের যুক্তি এই সংশোধনীর মধ্যে যথেষ্ট ভারসাম্য রয়েছে। তাদের মতে, এটি ১৯৮২ সালের সামরিক শাসনের অধীনে সংবিধানে আরোপিত একটি সংবিধানিক সংশোধন। তারা মনে করছেন, এর মাধ্যমে জোট সরকারের ঝগড়াটে রাজনীতির অবসান ঘটবে। যেটি তুরস্কের অতীতের বিভিন্ন মন্দ ঘটনার জন্য দায়ী। একই সঙ্গে সংসদীয় ব্যবস্থার নির্বাহী কর্তৃপক্ষের দীর্ঘ অনিশ্চয়তার অবসান ঘটাবে।

দ্যা গার্ডিয়ান অবলম্বনে।

এসএস


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ