শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৭ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১১ শাওয়াল ১৪৪৫


চাকরিবিধি : ৮ মের পর কোনো অজুহাত শুনবো না, সুপ্রিম কোর্ট

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা নেতৃত্বে সাত সদস্যের আপিল বিভাগ বলেছে, ওই সময়ের পর আদালত সরকারের আর কোনো ‘অজুহাত’ শুনবে না।

এই গেজেট প্রকাশের জন্য দফায় দফায় সময় নিয়ে আসা রাষ্ট্রপক্ষকে সর্বশেষ গত ২৮ মার্চ দুই সপ্তাহ সময় দিয়েছিল আদলত।আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ওইদিনই এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, চাকরিবিধি রাষ্ট্রপতির কাছে আছে এবং তার দেখা শেষ হলেই গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে।কিন্তু অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম মঙ্গলবার আপিল বিভাগের কাছে আরও দুই সপ্তাহ সময়ের আবেদন করেন।
প্রধান বিচারপতি এ সময় রাষ্ট্রের প্রধান এই আইন কর্মকর্তাকে বলেন, “সময়ের আবেদনের এ বিষয়টি এলে আপনি মাথা নিচু করে থাকেন। রাষ্ট্রপতির বিষয় টানেন।রাষ্ট্রপতি সবার শ্রদ্ধেয়, তাকে কেন টানেন?
“তার দোহাই যখন দেন, তখন আমাদের কষ্ট লাগে। রাষ্ট্রপতি খুব ভালো লোক।”

সরকারের পক্ষ থেকে দুই সপ্তাহ সময় চাওয়া হলেও সামনে সুপ্রিম কোর্টের অবকাশ থাকায় আচরণবিধির গেজেট প্রকাশের জন‌্য সরকারকে ৮ মে পর্যন্ত সময় দেয় সর্বোচ্চ আদালত।

নতুন তারিখ রাখার পর প্রধান বিচারপতি অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমকে বলেন, “আপনি যে সময় নিলেন, সেটা ঠিক থাকবে তো? ৮ মের পর আর কোনো অজুহাত চলবে না।”

মাসদার হোসেন মামলার চূড়ান্ত শুনানি করে ১৯৯৯ সালের ২ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ সরকারের নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগকে আলাদা করতে ঐতিহাসিক এক রায় দেয়।

ওই রায়ে আপিল বিভাগ বিসিএস (বিচার) ক্যাডারকে সংবিধান পরিপন্থি ও বাতিল ঘোষণা করে। একইসঙ্গে জুডিশিয়াল সার্ভিসকে স্বতন্ত্র সার্ভিস ঘোষণা করা হয়। বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগ থেকে আলাদা করার জন্য সরকারকে ১২ দফা নির্দেশনা দেয় সর্বোচ্চ আদালত।

মাসদার হোসেন মামলার রায়ের পর ২০০৭ সালের ১ নভেম্বর নির্বাহী বিভাগ থেকে আলাদা হয়ে বিচার বিভাগের কার্যক্রম শুরু হয়। আপিল বিভাগের নির্দেশনার পর গত বছরের ৭ মে আইন মন্ত্রণালয় নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধিমালার একটি খসড়া প্রস্তুত করে সুপ্রিম কোর্টে পাঠায়।

সরকারের খসড়াটি ১৯৮৫ সালের সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালার অনুরূপ হওয়ায় তা মাসদার হোসেন মামলার রায়ের পরিপন্থি বলে গত ২৮ আগাস্ট শুনানিতে জানায় আপিল বিভাগ।

এরপর ওই খসড়া সংশোধন করে সুপ্রিম কোর্ট আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। সেইসঙ্গে তা চূড়ান্ত করে প্রতিবেদন আকারে আদালতে উপস্থাপন করতে বলা হয় আইন মন্ত্রণালয়কে।

এরপর দফায় দফায় সময় দেওয়া হলেও সরকার মাসদার হোসেন মামলার রায়ের আলোকে ওই বিধিমালা গেজেট আকারে প্রকাশ না করায় গত ৮ ডিসেম্বর দুই সচিবকে তলব করে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।

দুই সচিবের হাজিরার আগে ১১ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় আইন মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে একটি নোটিসে বলা হয়, নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা ও আচরণ সংক্রান্ত বিধিমালা গেজেট আকারে প্রকাশের প্রয়োজনীয়তা নেই বলে রাষ্ট্রপতি ‘সিদ্ধান্ত’ দিয়েছেন।

আইন মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের সচিব আবু সালেহ শেখ মো. জহিরুল হক এবং লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের সচিব মোহাম্মদ শহিদুল হক পরদিন আদালতের তলবে হাজির হলে প্রধান বিচারপতি বলেন, বিধিমালা নিয়ে “রাষ্ট্রপতিকে ভুল বোঝানো হয়েছে।”

সেদিন শুনানি করে গেজেট প্রকাশের নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমকে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় দেয় আপিল বিভাগ। এরপর আরও সাত দফায় প্রায় পাঁচ মাস সময় পেল সরকার।

এসএস


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ