শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৬ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১০ শাওয়াল ১৪৪৫


টিভিতে ইসলামিক প্রোগ্রামগুলো সাধারণ মানুষকে ভালোর দিকে নিচ্ছে: মুফতি ইউসুফ সুলতান

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মুফতি ইউসুফ সুলতান। আইটি ও মিডিয়া জগতে খ্যাতি ছড়ানো নাম। জামিয়া শরইয়্যাহ মালিবাগের সাবেক মুফতি। বর্তমানে মালয়েশিয়ার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামি অর্থনীতি বিষয়ে উচ্চতর গবেষণায় লিপ্ত আছেন। মিডিয়ায় আলেমদের কাজের বিষয়ে তার সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন আবদুল্লাহ মাহমুদ

আলেমদের টিভি মিডিয়ায় আসার ব্যাপারে আপনার বক্তব্য কী?

মিডিয়াকে আমি প্রয়োজন মনে করি। কারণ এটা বতর্মান সময়ে প্রচারের একটা বড় মাধ্যম। আমরা একে ব্যবহার না করলেও বাতিল ঠিকই ব্যবহার করছে। তবে তা প্রয়োজনের মাঝেই সীমাবদ্ধ রাখা উচিত, ঢালাওভাবে আসার সময় এখনও হয় নি। আর এখানে এসে নিজের পরিচয় ভুলে গেলে চলবে না। আমরা টিভিতে এসে সবাইকে টিভি দেখতে উৎসাহ দিতে চাই না। বরং যারা টিভি দেখছে, তাদের ইসলামিক প্রোগ্রাম উপহার দেয়ার জন্য এইসব অনুষ্ঠান।

হকপন্থী আলেমদের একসময় টিভিতে দেখা যেত না এখন আসছেন, কারণ কী?

এখনকার হকপন্থী প্রায় সব আলেমই মতামত দিচ্ছেন টিভিতে প্রোগ্রামের প্রয়োজনীয়তার কথা। মোটাদাগে বলতে গেলে তেমন কেউ ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় ইসলামিক প্রোগ্রামের ব্যাপারে বিরোধী নন। তবে মুরুব্বিরা নিজেরা আসছেন না এর একটা কারণ হলো তাদের বিতর্কিত হওয়ার একটা সুযোগ তৈরি হতে পারে। বিপক্ষের লোকরা বলতে শুরু করবে, এক সময় উনি টিভিতে প্রোগ্রামের ব্যাপারে নিষেধ করতেন আর এখন তিনি নিজেই যাচ্ছেন। এসব কারণে আমাদের মুরুব্বিরা নিজেরা আসছেন না এসবে।

টিভিতে প্রোগ্রাম নিয়ে কোনো সমস্যা অনুভব করেন কিনা?

সমস্যা তো কিছু আছেই। যেমন আমরা যেগুলো প্রোগ্রাম করি দর্শকরা মনে করেন এগুলো টিভি হাউজ থেকেই করা হচ্ছে কিন্তু এ ধারণা ঠিক নয়। ইসলামিক প্রোগ্রামগুলো নির্মাতা নির্মাণ করে থাকেন চাঙ কিনে। আর প্রোগ্রামে যেসব প্রতিষ্ঠান স্পন্সর করেন তারা তাদের মতো অনেক কিছুই দেখতে চান। অনেক সময় তারা আলোচকও নির্ধারণ করে দেন। এসব দিক থেকে একটা সীমাবদ্ধতা রয়েছে অনুষ্ঠানে। এছাড়া আমাদের যেসব ইসলামিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে তারা এখনো ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার বিজ্ঞাপনে আসেনি। আমাদের পরিচিত প্রতিষ্ঠানগুলো টিভি অনুষ্ঠান স্পন্সর করলে এ সমস্যাগুলো দূর হয়ে যেত এবং নিজেদের মত করে প্রোগ্রাম করা যেত।

ইসলামিক অনুষ্ঠানের দর্শক সাড়া কেমন?

আমার প্রোগ্রামগুলো তেমন একটা প্রচার করি না। এজন্য আমার বিষয়টা বলতে পারবো না। তবে সামগ্রিকভাবে প্রোগ্রামগুলো জনসাধারণকে প্রভাবিত করছে। আগে যেমন বাসা বাড়িতে বা অফিস আদালতে আলোচনায় মানুষজন ধর্মীয় বিষয়ে আলাপচারিতায় বিভিন্ন মাহফিল, বই-পত্র বা পত্রিকার রেফারেন্স দিত, কিন্তু এখন বিভিন্ন টিভি প্রোগ্রামের বা আলোচকের রেফারেন্স দেয়। বলে এটা অমুক চ্যানেলে দেখেছি, অমুক হুজুর আলোচনা করেছেন। এসব দেখে তো বোঝা যায় প্রোগ্রামগুলো প্রচুর মানুষকে অনুরণিত করছে। সাধারণ মানুষও এসব প্রোগ্রাম থেকে নতুন কিছু শেখা ও নিজেকে চালানোর চেষ্টা করছে।

গতানুগতিকের বাইরে তেমন কোনো প্রোগ্রাম দেখা যায় না, কারণ কী?

আমার কাছে মনে হয় এর কারণ বিজ্ঞাপন এবং আর্থিক সমস্যা। কিছু কিছু ইসলামিক প্রোগ্রাম বেশ জনপ্রিয় হয়েছে। যেমন মাসলা মাসায়েলের প্রোগ্রাম। বিজ্ঞাপনি সংস্থা মনে করে এই প্রোগ্রামেই বিজ্ঞাপন দিতে হবে। এখানে নতুন কোনো ধারণা কেউ দিলে সেটা শুরুতেই নিতে চান না তারা। আমার মনে হয় যে প্রোগ্রামগুলো চলছে এগুলো যদি ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে তাহলে ইসলামিক প্রোগ্রামের প্রতি বিজ্ঞাপনদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো আকৃষ্ট হবে। তখন চাইলে নতুন প্রোগ্রামে স্পন্সর পাওয়াও সহজ হবে।

তরুণদের এ মাধ্যমে কি আসা উচিত? কেন?

তরুণদের অবশ্যই আসা উচিত। কারণ তরুণরাই প্রচুর কাজ করে, তাদের মাধ্যমেই পরিবর্তন আসে। তবে তাদের পেছনে অবশ্যই মরুব্বিদের গাইড থাকতে হবে। তাদের পরামর্শ নিয়েই চলতে হবে। না হলে দেখা যাবে ব্যক্তির পোশাক, আমল ও আখলাকে ব্যাপক পরিবর্তন আসবে। যা কখনোই কাম্য নয়। কারণ এখানে অনেক লৌকিকতার বিষয় আছে। হালকা অনেক জিনিস আছে। যা ব্যক্তির ভারসাম্য দূর করে দিতে পারে। এ কারণে অবশ্যই নিজেকে শেকড়ের সাথে বেঁধে নিজের আদর্শের জায়গা ঠিক রেখে মিডিয়ায় আসতে হবে। না হলে ইসলামিক প্রোগ্রামগুলো গ্রহণযোগ্যতা হারাবে।

সাক্ষাৎকারটি গত রমজানে নেয়া


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ