বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১০ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫


মকতবের উস্তাদই বড় উস্তাদ

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

ওমর ফারুক মজুমদার
তরুণ আলেম ও লেখক

omar_maktabইলম অর্জন করে যারা আলেম হতে চায় তাদের জন্য অবশ্য পালনীয় একটি কাজ হলো, শিক্ষকদের প্রতি সর্বদা শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা। কেননা, ইলম অর্জিত হয় সীনা-বসীনা অর্থাৎ শিক্ষকের হৃদয় থেকে শিক্ষার্থীর হৃদয়ে। নিজে নিজে কিতাব পড়ে কেউ আলেম হতে পারে না। আর যদিও কেউ চেষ্টা করে তার ভ্রান্ত হওয়ারও সম্ভাবনা থাকে।

তাই তো মহাজ্ঞানী হযরত আলী রা. শিক্ষকের মর্যাদা বুঝাতে গিয়ে বলেছিলেন। “যিনি আমাকে একটি অক্ষরও শিক্ষা দিয়েছেন তিনি আমার মনিব আমি তার গোলাম।” কিন্তু আজকাল শিক্ষকের প্রতি ছাত্র-ছাত্রীদের সেই মূল্যবোধ অনেকাংশেই হ্রাস পেয়েছে। ফলে এমন অনেক ছাত্র আছে, যারা দেশ-বিদেশের উচ্চ বিদ্যাপীঠ থেকে শিক্ষা সম্পন্ন করে এসে প্রাথমিক শিক্ষকদের নিজের চেয়ে তুচ্ছ মনে করতেও দ্বিধা বোধ করে না।

উদাহরণ স্বরূপ নিচের ঘটনাটি- একদা জনৈক ছাত্র বিদেশ থেকে সর্বোচ্চ শিক্ষিত ‘মুফতি’ হয়ে গ্রামে ফিরে এসে দেখলো, গ্রামের লোকেরা তার চেয়ে বেশি সম্মান করে সেই গ্রামের মকতবের প্রবীণ হুজুরকে। ছোটবেলায় যার কাছে সে নিজেও আলিফ বা তা শিখেছিলো। যাই হোক, বিষয়টি তার কাছে অসহ্যকর মনে হলো। অবশেষে আকলের দাম্ভিকতায় বেআক্কেল হয়ে সে ভাবতে লাগলো; এটা আমার জন্য অপমানকর। আর তাই, নিজেই নিজেকে বড় জ্ঞানী হিসেবে পরিচিত করানোর লক্ষ্যে গ্রামের লোকদের কাছে বলে বেড়াতে লাগলো যে; আমি বিদেশ থেকে মুফতি হয়ে এসেছি। অতএব মকতবের এই হুজুর থেকে কুরআন হাদীস আমি বেশি জানি। আর তা প্রমাণের জন্য আমি মকতবের ওই হুজুরের সাথে বাহাস তথা জ্ঞানের প্রতিযোগিতা করতেও প্রস্তুত আছি।

এমন অনেক ছাত্র আছে, যারা দেশ-বিদেশের উচ্চ বিদ্যাপীঠ থেকে শিক্ষা সম্পন্ন করে এসে প্রাথমিক শিক্ষকদের নিজের চেয়ে তুচ্ছ মনে করতেও দ্বিধা বোধ করে না।

এক পর্যায়ে তার পীড়াপীড়িতে বাধ্য হয়ে গ্রামের সাধারণ মুসল্লিরা নির্দিষ্ট দিনে, নির্দিষ্ট স্থানে বাহাসের ব্যবস্থা করলেন। মকতবের হুজুর ও অহংকারী ছাত্র উভয়েই উপস্থিত হলো। ছাত্রটি তখন মকতবের হুজুরকে বললো, প্রথমে আপনি আপনার জানা সমস্ত জ্ঞান প্রকাশ করুন, তারপর আমি আমার জ্ঞান প্রকাশ করবো। এ কথা শুনে মকতবের হুজুর ছাত্রটিকে বললেন, আমি কিছুই বলবো না, সব তুমি-ই বলো। তবে আমার একটি শর্ত আছে।

আর তা হলো- ছোটবেলায় মকতবে পড়ার সময় আমার কাছ থেকে যা কিছু পড়েছো তা বাদ দিয়ে বাকি যা জানো তা বলতে হবে। উস্তাদের মুখ থেকে এই শর্তের কথা শুনে অহংকারী ছাত্রটি নিরুত্তর বনে গেলো। কেননা, মকতবের শিক্ষা “আলিফ, বা, তা, ছা” ব্যতীত কুরআন হাদিসের জ্ঞান প্রকাশ করা কখনোই সম্ভবপর নয়।

সবশেষে উপায়ান্তর না পেয়ে ছাত্রটি নিজের ভুল বুঝতে পেরে, অনুতপ্ত হয়ে মকতবের শিক্ষকের পায়ে পড়ে ক্ষমা চাইলো।

শিক্ষা

শিক্ষক যদি এক বর্ণ শিক্ষা দেয় শিষ্যরে কোনোদিন
পৃথিবীতে নেই কোনো দ্রব্য, যা দিয়ে শোধিবে ঋণ।

আরআর


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ