শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
কাল যাত্রাবাড়ী মাদরাসায় মজলিসে দাওয়াতুল হকের ইজতেমা শেখ হাসিনা ভারতে বসে দেশের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছেন: মজলিস মহাসচিব ডেঙ্গুতে এক সপ্তাহে ৩১ জনের মৃত্যু, আক্রান্ত ৬২৩০ মসজিদে নববীর আদলে হবে আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ: ধর্ম উপদেষ্টা খাগড়াছড়ি প্রেস ক্লাবের সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত নতুন নির্বাচন কমিশনকে বিগত কমিশন থেকে শিক্ষা নিতে হবে: মুফতী ফয়জুল করীম লালপুরে যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে জমি দখল ও বাড়ি ভাংচুরের অভিযোগ জনতার চেয়ারম্যান সৈয়দ তালহাকে সুনামগঞ্জ ৩ আসনে জমিয়তের প্রার্থী ঘোষণা কুরআন-হাদিসের ভিত্তিতেই হতে হবে সংস্কার: বায়তুল মোকাররমের খতিব ইসলামী সঙ্গীত সম্রাট আইনুদ্দীন আল আজাদ রহ.-এর বাবার ইন্তেকাল

কলরবে কোনো সমস্যা নেই, লাখও মানুষের ভালোবাসা আছে: রশিদ আহমদ ফেরদৌস

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

রশিদ আহমদ ফেরদৌস। একজন সমাজদরদি সাংস্কৃতিমনা মানুষ। ছোট থেকেই নিজেকে জড়িত রেখেছেন নানারকম কল্যাণকাজের সঙ্গে। মাত্র ১৭ বছর বয়সে গড়ে তুলেছিলেন ইখওয়ান সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থা। বর্তমানে তিনি কলরবের প্রধান পরিচালক হিসেবে নিজের বোধ ও শিল্পচেতনাকে ছড়িয়ে দিচ্ছেন। পেশাগত জীবনে তিনি বুনইয়ান আবাসন লি. এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তামিরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসা থেকে কামিল সম্পন্ন করেছেন। সমসাময়িন নানা বিষয় নিয়ে তার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আওয়ার ইসলামের নির্বাহী সম্পাদক রোকন রাইয়ান

কলরবের বর্তমান হাল হাকিকত কেমন?
রশিদ আহমদ ফেরদৌস: ২০০৪ সালে আইনুদ্দীন আল আজাদ প্রতিষ্ঠানটি শুরুর পর অনেক ত্যাগ তিতিক্ষার মধ্য দিয়ে একে মাঠ পর্যায়ে গ্রহণযোগ্য করতে প্রাণান্তকর চেষ্টা করে গেছেন। গানবাজনা রেখে মানুষ যেন ইসলামি সঙ্গীতমুখী হয় সার্বক্ষণিক সেই চিন্তা লালন করেছে কলরব। এটি সূচনা করেছিলেন আইনুদ্দীন আল আজাদ রহ.। একে পরিচিত করতে তিনি দীর্ঘ সময়ও ব্যয় করেছেন। দু:খজনক ব্যাপার হলো ২০১২ সালে একটি সড়ক দুর্ঘটনায় তিনি ইন্তেকাল করেন। হুট করে এমন একটা সংবাদ কলরবের জন্য বিপদজনক ছিল। এর কিছুদিন পর হুমায়ুন কবির শাবিব চলে যান কলরব থেকে। তখন থেকে কিছু ক্রাইসিস ছিল কলরবে। কিন্তু কলরবে যারা আছেন সবার বিচক্ষণতায় সেগুলো ধীরে ধীরে কাটিয়ে কলরব একটি নির্ভরযোগ্য জায়গায় এসেছে।

আজ শুধু বাংলাদেশ নয় সারা বিশ্বেই কলরবের সঙ্গীতের একটা শ্রোতা সবর্ত্র তৈরি হয়েছে। কলরবের রিংব্যাকটোন লাখো মানুষ ব্যবহার করছেন। এসবের দিকে তাকালে বলতেই হবে একটা বিপ্লব ঘটেছে কলরবের মাধ্যমে। অনেক গানের শ্রোতাও এখন ইসলামি গানে ফিরছেন এবং মোবাইলে ইসলামি গান রিংব্যাকটোন বানাচ্ছেন। এটি স্ট্যাবলিশ হওয়ার জন্য কলরবের অবদান অনেক বেশি।

এত স্বল্প সময়ে ব্যাপকভাবে ইসলামি সঙ্গীতের বিস্তৃত হওয়ার পেছনে কী কারণ?
রশিদ আহমদ ফেরদৌস: আমার মনে হয় এটার বিস্তৃত একটা কারণ আছে। সারা বিশ্বেই ইসলাম থেকে মানুষ দূরে সরে যাওয়ার পর যে অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল সেটা থেকে পুনরায় মানুষ ব্যাপকভাবে ইসলামে ফিরে আসছে। এটা কেবল সঙ্গীতের ক্ষেত্রে নয় সামগ্রিক ইসলামের উন্নয়ন সাধিত হচ্ছে এখন।

এখানে কিছু রাজনৈতিক বিষয় আছে, রাশিয়ার সোভিয়েত ইউনিয়ন, সমাজতন্ত্রের পতনের মধ্যে দিয়ে আমেরিকার একক গণতন্ত্রের উত্থানের মাধ্যমে সারা পৃথিবীতে একটা আধিপত্য বিস্তারের যে প্রবণতা এসবে ইসলাম কোণঠাসা হওয়ার একটা দিক সবসময় ছিল। ইসলামকে কোণঠাসা করতে হবে, দাবিয়ে রাখতে হবে এই মানসিকতাটা দীর্ঘদিন থেকেই আমরা দেখে আসছি। কিন্তু এর বিপরীতে যারা ইসলামকে ভালোবাসেন, ইসলামি চেতনা লালন করেন তারা সবসময় বিষয়টি নিয়ে ফিকির করেছেন। তাদের কাজ, চিন্তা ও অবদানেই সারা বিশ্বে ইসলামের ব্যাপকভাবে ঘুরে দাঁড়ানোটা আমরা ইদানিং প্রত্যক্ষ করি।

আজ শুধু বাংলাদেশ নয় সারা বিশ্বেই কলরবের সঙ্গীতের একটা শ্রোতা সবর্ত্র তৈরি হয়েছে। কলরবের রিংব্যাকটোন লাখো মানুষ ব্যবহার করছেন। এসবের দিকে তাকালে বলতেই হবে একটা বিপ্লব ঘটেছে কলরবের মাধ্যমে

বাংলাদেশ তো ছোট্ট একটা দেশ। কিন্তু এখানে দাওয়াতি কাজ প্রচুর। প্রতিটি পাড়া মহল্লাতেই মসজিদ মাদরাসা গড়ে উঠেছে। একটা দীনি দাওয়া ও আবহ কন্টিনিউ হওয়ার কারণে ব্যাপক পরিবর্তন হচ্ছে। মানুষের ইসলাম গ্রহণ ও পালনের মানসিকতা প্রচুর বেড়েছে।

একটা প্রশ্ন অনেকেই করেন কলরব যে আদর্শে সূচনা করেছিল সেখান থেকে কিছুটা সরে আসতেছে, এটাকে যৌক্তিক মনে করেন কিনা।
রশিদ আহমদ ফেরদৌস: আমার মনে হয় যারা কলরবের উন্নতিকে যারা বাধাগ্রস্ত করেন তারাই এমন অভিযোগ করে থাকে। কারণ কলরব আজ যে জায়গায় রয়েছে যে ভালোবাসার উচ্চ মিনার তৈরি করেছে তা আইনুদ্দীন আল আজাদ ও তার হাতে গড়া ছাত্রদের ফসল। তারা যদি সেই আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়ে যায় তবে প্রতিষ্ঠান এতদূর এগুতে পারতো না। সুতরাং যারা কলরবকে হিংসা করে, দেখতে পারে না এগুলো তারাই ছড়ায়।

আমি আইনুদ্দীন আল আজাদকে সঙ্গীতের শুরুর জীবন থেকে দেখেছি, আর এখন তার শিষ্যদের দেখছি এর মধ্যে কোনো ফারাক খোঁজে পাইনি। কলরব আজাদের চেতনা ও আদর্শ এবং কাজকে বুকে লালন করেই এগিয়ে যাচ্ছে।

বর্তমান সময়ের শ্রোতাদের যে চাহিদা কলরব কি সেটা পূরণ করতে পারছে?
রশিদ আহমদ ফেরদৌস: কলরব তার শ্রোতাদের চাহিদা পূরণে সব সময় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং সেটা ভালোভাবেই করে যাচ্ছে। আমার মনে হয় এখান থেকেই নিন্দুকরা কলরবের প্রতি বিষোদগার করছে। কারণ শ্রোতার চাহিদা পূরণে অনেক কিছুই যোগ করতে হচ্ছে। একটা সময় ইসলামি গান কেবল ওয়াজ মাহফিলে সীমাবদ্ধ ছিল এখন আলাদা কনসার্ট হয়, অ্যালমাব হয়, ভিডিওগ্রাফি হয়। এসব করতে গিয়ে আগের চেয়ে সবকিছুকে একটু উন্নত করতে হয়েছে। এগুলোকে অনেকেই বিপরীত মনে করছে। অথচ বিশ্বের দিকে তাকালে দেখতে পারবেন ইসলামি গান কতদূর এগিয়ে গেছে। তাদের ইন্সটুম্যান্ট, চিন্তা চেতনা, ভিডিওগ্রাফি সবই উন্নত। এগুলো কিন্তু খেয়াল করতে হচ্ছে।

আর এক সময় কলরবের গান একটা নির্দিষ্ট অঙ্গনের শ্রোতাদের মধ্যে সীমিত ছিল এখন সর্বস্তরে পৌঁছে গেছে। সার্বিকভাবে সবখানে ইসলামি সঙ্গীতকে পৌঁছানোর কাজ করছে কলরব। এবং আমি মনে করি এটাতে আমরা সফল আলহামদুলিল্লাহ।

আরেকটা বিষয় হলো, কিছু কাজ করতে গিয়ে সবারই ভুল হতে পারে। আমাদেরও হতে পারে। কেউ যদি শুভাকাঙ্ক্ষি হয়ে এগুলো ধরিয়ে দেয় অবশ্যই আমরা সেগুলোর সমাধান করার মানসিকতা রাখি।

rashid_ferdousকিছুদিন আগে ফেসবুকে কলরবের নিয়ে বেশ লেখালেখি চোখে পড়েছে, বাইরের মানুষের পাশাপাশি কলরবের ভেতরকার মানুষও সেসবে জড়িত দেখা গেছে এগুলো কেন হচ্ছে?
রশিদ আহমদ ফেরদৌস: হ্যাঁ বিষয়টা বেশ পীড়াদায়ক ছিল। এখনও রয়েছে। তবে এগুলো থাকবে না আশা করি। আসলে আইনুদ্দীন আল আজাদ চলে যাওয়ার পর তার মতো অভিভাবকের শূন্যতা এখানে কিছুটা গ্যাপ তৈরি করেছে। কলরবের উপার্জনে অনেকের চোখ পড়েছে হয়তো। এগুলো ব্যক্তিস্বার্থে কাজ করেছে। যার ফলে একটা সমস্যা তৈরি হয়েছিল।

আলহামদুলিল্লাহ কয়েকদিন আগে একটা কমিটি হয়েছে, সেখানে সিনিয়র অনেকেই রয়েছেন ইমতিয়াজ আলাম, শাহ ইফতেখার তারিক ভাই রয়েছে। তারা একটা প্রতিবেদনও তৈরি করছেন। এটা হলে এ ধরনের সমস্যাগুলো কেটে যাবে।

আরেকটা বিষয় কলরবের সংগঠনে কোনো সমস্যা নেই। অনেকেই ব্যক্তিগতভাবে কোনো ঝামেলায় জড়াতে পারে এগুলো সংগঠনের ব্যাপার নয়।
পেশার ফাঁকেও একসময় আপনি তৃণমূল নিয়ে প্রচুর কাজ করতেন সামাজিক একটা সংগঠনও ছিল। সেই কাজগুলো এখন কম দেখি।

হ্যা ইখওয়ান সামাজিক সংগটন নামে একটা সগঠন ছিল। এখনো আছে। আর সমাজসেবার এসব কাজ তো সব সময়ই চালু আছে। কিন্তু সবসময় সংগঠনবেইজ কাজ করার সময় থাকে না বা হয়ে উঠে না।

সংগঠনটার ইতিহাস মোটামুটি পুরনো। ১৯৮৭ সালে সংগঠনটা গঠিত হয়। আমার বয়স তখন সতেরো। ৮০ সালে যখন হাফেজ্জী হুজুর তওবার রাজনীতির ডাক দিলেন তখন থেকেই আমার সামাজিক কাজকর্মের শুরু। যদিও তখন মিছিল করার বয়স হয়নি। কিন্তু হাফেজ্জী হুজুরের প্রত্যেকটা মিটিংয়ে আমি যেতাম। দেয়ালে বটগাছ আঁকানোর সময় আমি হাড়িকেন ধরে রাখতাম। সেই কাজগুলোই আমাকে দায়িত্ববান করে তোলে। আমাকে কি করতে হবে না করতে হবে তার একটা স্বচ্ছ ধারণা দিয়েছে সংগঠনটি। আমার ভেতর সমাজ ও সামাজিকতা সম্পর্কে দায়বদ্ধতা তৈরি করেছিল। একারণে ছোট থেকেই বহু কাজ করার তওফিক হয়েছে।

বর্তমানে কলরবের সঙ্গে রয়েছি। এটিও আমি একটি সামাজিক সংগঠন মনে করি। এখানে সময় দিচ্ছি, অর্থ ব্যয় করছি সবই তো দীনের স্বার্থে, জনতার স্বার্থে। মানুষ যেন অশ্লীলতা ছেড়ে সুস্থ সংস্কৃতি চর্চা করে এটিও সমাজ সামাজিকতার অংশ।

আপনি তো তামিরুল মিল্লাতের ছাত্র, আপনাকে হাফেজ্জী হুজুরের আন্দোলন আকর্ষণ করলো কিভাবে?
রশিদ আহমদ ফেরদৌস: আামর বাবা মাওলানা এসহাক রহ. এর মুরীদ ছিলেন। পারিবারিকভাবে আমাদের একটা দীনি পরিবেশ ছিল। আমরা চরমোনাই পীরের বয়ান শুনতাম। পীর সাহেবের বয়ানে একটা জিনিস খুব আকর্ষণ করতো সেটা হলো দরদ দিয়ে দীনের প্রতি আহ্বান। এটা খুব ভালোভাবে পেয়েছি পীর সাহেবের কাছ থেকে। এসব কারণে এই কেন্দ্রীক আন্দোলনগুলো আমাকে প্রভাবিত করতো।

রাশিয়ার সোভিয়েত ইউনিয়ন, সমাজতন্ত্রের পতনের মধ্যে দিয়ে আমেরিকার একক গণতন্ত্রের উত্থানের মাধ্যমে সারা পৃথিবীতে একটা আধিপত্য বিস্তারের যে প্রবণতা এসবে ইসলাম কোণঠাসা হওয়ার একটা দিক সবসময় ছিল। ইসলামকে কোণঠাসা করতে হবে, দাবিয়ে রাখতে হবে এই মানসিকতাটা দীর্ঘদিন থেকেই আমরা দেখে আসছি। কিন্তু এর বিপরীতে যারা ইসলামকে ভালোবাসেন, ইসলামি চেতনা লালন করেন তারা সবসময় বিষয়টি নিয়ে ফিকির করেছেন। তাদের কাজ, চিন্তা ও অবদানেই সারা বিশ্বে ইসলামের ব্যাপকভাবে ঘুরে দাঁড়ানোটা আমরা ইদানিং প্রত্যক্ষ করি।

আপনার পরিবারের কেউ মাদরাসায় পড়ুয়া ছিলেন?
রশিদ আহমদ ফেরদৌস: না আমার পরিবারের মাদরাসায় পড়ুয়া কেউ ছিল না। কিন্তু চরমোনাই পীরের মুরীদ ছিলেন। সে সুবাদে পরিবারে দীন ছিল। একারণে আমিও আলিয়া মাদরাসায় পড়ালেখা সূচনা করি।

কিন্তু চরমোনাই সিলসিলা তো আলিয়ায় পড়াকে সেভাবে সমর্থন করে না?
রশিদ আহমদ ফেরদৌস: সে সময় আমাদের বাপ চাচাদের মধ্যে দুই মাদরাসার ভেদাভেদ এতটা ছিল না। মাদরাসা বলতে দুইটার একটাই বুঝত।

ইসলামি রাজনীতি নিয়ে ভাবেন? কেমন মনে করেন?
রশিদ আহমদ ফেরদৌস: ইসলামি রাজনীতির প্লাটফরম সমৃদ্ধ। তবে একত্রিত নয়। এখানে নানান আন্দোলন হয় যা সমন্বিত হলে একেকটি বিপ্লব হয়ে যেত। কিন্তু সেটা নানা কারণে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। আবার ঐক্যের ফরমুলা নিয়েও দ্বিধা আছে। কেউ একটা নামের তালিকা তৈরি করলো সেখানে কারো নাম বাদ গেলে সেটা কোনো ঐক্যই না, এরকমই জ্ঞান করা হয়। বৃহৎ স্বার্থকে এড়িয়ে অনেকে আবার ব্যক্তিস্বার্থকে প্রাধান্য দিচ্ছি। এগুলো বর্জন করতে পারলে অনেক সম্ভাবনা হাতছানি দিচ্ছে।

আরআর

 


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ