বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১১ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

শিরোনাম :
‘মানতিক; যুগের চাহিদার সাথে মিলে না’ এ ধরেণের কথা অযৌক্তিক: মুফতি হিফজুর রহমান দাওরায়ে হাদিসের ফলাফল নজরে সানীর আবেদনের সময় বাকি ৩ দিন  বৃষ্টি প্রার্থনায় জামিয়াতুল আবরার রাহমানিয়ায় ‘সালাতুল ইস্তিসকা’  আদায় হাসপাতালে সৌদি বাদশাহ সালমান সোস্যাল মিডিয়ায় প্রচারিত পাঠ্য তালিকার সাথে বেফাকের পাঠ্য তালিকার সম্পর্ক নেই: বেফাক সৈয়দপুরে তাপদাহে অতিষ্ঠ মানুষ, ‘হিটস্ট্রোকে’ ১ জনের মৃত্যু স্বর্ণের দাম আরও কমলো, ভরি ১ লাখ ১৪ হাজার ১৫১ টাকা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান ইরান-পাকিস্তানের ঢাবিতে বৃষ্টির জন্য ‘সালাতুল ইসতিস্কা’র অনুমতি দেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ‘বৃষ্টির জন্যে সালাত আদায় করলেই অবশ্যম্ভাবী বৃষ্টি চলে আসবে—বিষয়টা তা নয়’

বসন্তের বইমেলা, বইয়ের বসন্ত

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আবু নাঈম ফয়জুল্লাহ

boimela_alem_21শীতের ফ্যাকাশে প্রকৃতি বিদায় নেয় । উঁকি দেয় বসন্তের মিষ্টি সকাল । সবুজের গায়ে রঙ লাগে নতুন করে । বাংলার প্রকৃতির সাথে আমরা বঙালীরাও জেগে উঠি । নতুন করে সুন্দরের বীজ বুনি । আমাদের জ্ঞানের গজৎটাকে নাড়িয়ে দিতে তখনি আসে বইমেলা । মেলা, বাঙালীর আনন্দের পাঠশালা । আবার বইয়ের সাথে যখন এই মেলা যোগ হয় তখন আমাদের আনন্দটা অন্য রকম মাত্রা পায় । আনন্দের সাথে জ্ঞানের এমন গলায় গলায় ভাব একটা জাতির জন্য অনেক বড় পাওয়া । আমাদের এ আনন্দের ইতিহাস বেশ পুরোনো । সেই বাহাত্তর থেকে । তখন অবশ্য পরিসরটা আজকের মত ছিল না । একাশিতে এসে আমরা বাংলা একাডেমির হাত ধরে পাই আজকের ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’। ধীরে ধীরে বড় হয় মেলার পরিধি । প্রকাশনা জগতে ঘটে নানা পরিবর্তন । এভাবে সমৃদ্ধ হতে হতে বিশাল মহীরুহ হয়ে দাঁড়ায় বইমেলা । এদেশের মানুষের আনন্দ বেদনা ও জ্ঞান বিজ্ঞানের অনন্য মিলন ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে আজকের বইমেলা ।

বইমেলার কারণে সারা দেশে একটা জাগরণ তৈরি হয় । জ্ঞানের জাগরণ । মেলা ছাড়া এ জাগরণ সম্ভব না । বইমেলা আসে । শিক্ষার্থীরা পছন্দের বইয়ের সন্ধানে মেলায় ছোটে । শিশুরা বাবা মার কাছে আব্দার করে মেলায় যাব । চূড়ান্ত ব্যস্ত মানুষটাও মেলার জন্য একটু সময় বের করতে বাধ্য হয় । ছেলে মেয়েকে বই কিনে দেয় । সবারই নিজের আলাদা একটা পছন্দ থাকে । হয়ত সময়ের অভাবে বইয়ের দোকানে যাওয়া হয় না । ব্যস্ত এ সময়ে বই খুঁজে খুঁজে জ্ঞানবিলাসের সময় কই? ছেলে মেয়ে বা বন্ধু বান্ধবের আব্দার রক্ষায় মেলায় যেতে হয় । এ সুযোগে নিজের পছন্দের বইগুলোও কেনা হয়ে যায় । ঢাকার সমাজে এ শ্রেণীর মানুষের সংখ্যা অনেক । হাতের কাছে পেলে এরা অনেক কিছুই করে ফেলে । কাছে না পেলে এরা অনেক কিছুই এড়িয়ে যায় । মেলা উপলক্ষ্যে অনেকে টাকা জমায় । মেলা আসছে বই কিনতে হবে এমন একটা হুজুগ সবার ভিতরেই কম বেশি থাকে । মেলা না থাকলে এদের অধিকাংশেরই বই কেনার জন্য টাকা জমানোর চিন্তাও আসত না । উঠতি তরুণদের তো এভাবেই বই কেনা হয় । নিজের প্রিয় মানুষকে উপহার দেয়ার জন্য বই কিনে এমন মানুষও কম না । মেলা না থাকলে এ জায়টা অনেকাংশেই অন্য কোন পণ্যের দখলে থাকত ।

লেখকদের আমরা উঁচু চোখে দেখি । নানাভাবে তাদেরকে কল্পনা করি । বিশেষত প্রখ্যাত লেখকদের একটা চিত্র আমাদের ভেতরে এঁকে রাখি । তাদের নির্মিত চরিত্র থেকে, তাদের চিন্তার গতি ও কল্পনার সূত্র ধরে আমরা কল্পনা করি । সবারই ইচ্ছা থাকে প্রিয় লেখককে কাছে থেকে দেখার । লেখকের সাথে নিজের একখণ্ড স্মৃতি ধরে রাখার । কিন্তু কয়জনের পক্ষে আলাদা করে লেখকের সাথে সাক্ষাতের সুযোগ মিলে ? মেলায় গিয়ে ভক্ত পাঠকরা সহজেই কবি সাহিত্যিকদের সাথে কাছ থেকে মেলা মেশার সুযোগ পায় । লেখকের সাথে পাঠকের এই যোগসূত্র একদিকে পাঠককে আপ্লুত করে, অন্য দিকে লেখকের জন্যও তা প্রেরণার কারণ হয় । লেখকের জন্য পাঠকের মনকেনিখুঁত ভাবে পাঠ করা সম্ভব হয় । এতে লেখকের চিন্তা সমৃদ্ধ হয় , পাঠকের সামনে জ্ঞানের নতুন নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয় ।

বইপ্রেমীরা নতুন বইয়ের জন্য মেলার দিকে তাকিয়ে থাকে । কোন লেখকের নতুন কী বই বের হল তার জন্য সবাই উন্মুখ থাকে । লেখকরাও এ সুযোগকে লুফে নেন । নিজের পছন্দের বইটা মেলায় প্রকাশ করেন । এতে একসাথে সবার দৃষ্টি পড়ে তার বইটির উপর । আলাদা কোন প্রচারণা ছাড়াই সব শ্রেণীর পাঠকের সামনে নিজের বইটাকে তুলে ধরতে পারেন । এভাবেই লেখকের চিন্তা, লেখকের সাজানো স্বপ্ন একসাথে সব পাঠকের হৃদয়ে সাড়া ফেলতে পারে । মেলা ছাড়া পাঠকের হাতে হাতে বইয়ের ভাণ্ডারগুলো তুলে দেয়া কতটা দুঃসাধ্য তা সহজেই অনুমেয় ।

মেলায় এসে প্রকাশকরাও পরষ্পরকে চূড়ান্ত ভাবে যাচাই বাছাই করতে পারে । পাঠকের জায়গা থেকে নিজেদেরকে পরখ করতে পারে । এতে নিজের বইটাকে বাজার পাওয়ার জন্য হলেও শিল্প মানে ‍তুলে আনার চিন্তা করে ।  এভাবে একটি মেলা আমাদের সাহিত্য সংস্কৃতির জগৎটাকে দুলিয়ে দিয়ে যাচ্ছে প্রতি বছর । দিন দিন আমাদের জ্ঞানের জগতটা সমৃদ্ধ হচ্ছে । প্রকাশনা শিল্পের উন্নতী হচ্ছে । নতুন নতুন অসংখ্য বই বের হচ্ছে । এর পেছনে -আমরা না দেখলেও- বসন্তের এই বইমেলা অনেকখানি গতিশীল ভুমিকা পালন করছে । প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি আমাদের কাছে বসন্ত নিয়ে আসে । জ্ঞান বিজ্ঞানের বসন্ত । বইপ্রেমীদের বসন্ত ।

আরআর


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ