হাওলাদার জহিরুল ইসলাম
দেওবন্দ থেকে
[caption id="attachment_25344" align="alignright" width="416"] ফ্রি সময়গুলো কাজে লাগান, শিখে ফেলুন অনলাইন সাংবাদিকতা[/caption]
গতকাল (৩/২/২০১৭) দারুল উলুম দেওবন্দের ফতোয়া বিভাগের ওয়েবসাইটে একটি সম্মিলিত বিবৃতি/ফতোয়া প্রকাশ করা হয়েছে৷ সাথে সা'দ সাহেবের পক্ষ থেকে গত ৯ জানুয়ারি রুজুনামা আকারে পাঠানো একটি চিঠিও প্রকাশ করা হয়েছে৷ চিঠিতে সা'দ সাহেব দেওবন্দের ফতোয়ায় উত্থাপিত ৬টি বিষয়ের ৪টি উল্লেখ করেছেন৷ ৩টি থেকে নিঃশর্ত রুজু করেছেন৷ আর ১টির (হজরত মুসা {আ.}এর শানের খেলাফ বয়ানের ব্যাপারে) ক্ষেত্রে নিজস্ব দলিল পেশ করেছেন৷ যা দেওবন্দ ভুল বলে সাব্যস্ত করে তা প্রত্যাখ্যান করেছে৷ এ বিষয়ে আবারও রুজু করে ঘোষণা দিতে বলা হয়েছে ওই বিবৃতিতে৷
দেওবন্দের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ওই সম্মিলিত ফতোয়ায় বলা হয়েছে, “মাওলানা সা'দ সাহেবের কিছু বয়ানের আলোকে তার নিজস্ব ধ্যান-ধারণা ও চিন্তা-চেতনার ব্যাপারে দারুল উলুম দেওবন্দ তাদের সর্বসম্মত অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়েছিলো৷ সেখানে বলা হয়েছিলো, 'তাহকিকে'র পর এটা প্রমাণিত হয়েছে যে সা'দ সাহেবের বয়ানের মধ্যে (কুরআন হাদিসের বিষয়ে) ভুল বা অগ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যাসমূহ, ভুল দলিলসমূহ পেশ করা এবং মনগড়া তাফসির পরিলক্ষিত হয়েছে৷ আর কিছু কিছু কথায় নবীদের মোবারক শানের খেলাফ পাওয়া গিয়েছে৷ অপর দিকে এমন অনেক বিষয় রয়েছে যেখানে তিনি 'জমহুর উম্মত' ও 'এজমায়ে সালফে'র বাইরে চলে গিয়েছেন৷
যেহেতু সেই সম্মিলিত ফতোয়াটি সর্বত্র ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়েছে তাই সেগুলো পুনরায় উল্লেখ করার প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না৷”
“ইতোপূর্বে মাওলানা সা'দের পক্ষ থেকে একটি 'রুজুনামা'র নামে একটি চিঠি হস্তগত হয়েছিলো কিন্তু তাতে দেওবন্দ আস্বস্ত হতে পারে নি৷”
“পরে সা'দ সাহেবের পক্ষ থেকে গত ১০ রবিউস সানী ১৪৩৮তাং রুজুনামা আকারে একটি নতুন চিঠি হস্তগত হয়েছে৷ যদিও দেওবন্দ ওই চিঠির সমস্ত বিষয় ও ব্যাখ্যার সাথে একমত নয়৷ তবে যেহেতু সা'দ সাহেবের ওই চিঠিতে সে সকল (বিতর্কিত) বয়ান থেকে রুজু করেছেন যেগুলো দেওবন্দের ফতোয়ায় উল্লেখ করা হয়েছিলো এবং আগামীতে ওই ধরনের গোস্তাখি হবে না বলে অঙ্গীকার করেছেন তাই এখন এই বিষয়টি স্পষ্ট হওয়া জরুরি যে, “দারুল উলুম দেওবন্দ মাওলানা সা'দ সাহেবের যে সব প্রশ্নবিদ্ধ বিষয়ে নিজেদের সম্মিলিত অবস্থান/ফতোয়া প্রকাশ করেছিলো তা আপন অবস্থায়ই বহাল আছে৷ দেওবন্দ নিজেদের সেই অবস্থান থেকে ফিরে আসেনি এবং ফতোয়ায় উল্লেখিত সা'দ সাহেবের 'ধ্যান-ধারণা, চিন্তা-চেতনা (আফকার ও নজরিয়াত)কে দেওবন্দ সর্বাবস্থায়ই ভুল ও অগ্রহণযোগ্য মনে করে৷ যে ভুলগুলোর ব্যাপারে ফতোয়ায় সতর্ক করা হয়েছিলো সেগুলোর ক্ষেত্রে তাবলিগ জামাতের প্রতিটি স্তরেই সীমাবদ্ধতা আরোপ করা আবশ্যক মনে করে৷ ক্ষতিকারক মনে করে৷”
কিন্তু যেহেতু মাওলানা সাহেব সে সকল ভুল থেকে রুজু করেছেন এবং আগামীতে তা করবেন না বলে আস্বস্ত করছেন তাই আমরা আশা করবো তিনি আগামীতে এমন সব বিষয় থেকে সম্পূর্ণরূপে বেঁচে থাকবেন যেগুলোর ব্যাপারে নির্ভরযোগ্য আলেগণ প্রশ্ন উত্থাপন করতে পারেন৷
“এরই সাথে মাওলানা সা'দ সাহেবেক বিশেষত এই বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করছি যে, হজরত মুসা আ. এর ব্যাপারে তার বয়ানটি 'মারজুহ' তাফসির হিসেবেও মানা যাচ্ছে না৷ বরং সেটা সম্পূর্ণই ভুল ছিলো৷ শুধু তাই নয় সেটা জলিলুল কদর নবী হজরত মুসা আ. এর মকাদ্দাস শানেরও খেলাফ!”
“সুতরাং এ ব্যাপারে সা'দ সাহেবকে অবশ্যই কোনো রকম ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ ব্যতীত সেই বয়ান পরিহার করতে হবে৷ চাই সেটা মুসা নবীর 'আজলত' (তূর পাহাড়ে দ্রুত আগমণ)কে বনি ইসরাইলের গোমরাহ হওয়ার বিষয় হোক কিংবা মুসা নবীর দাওয়াতের কাজ ছেড়ে ৪০ দিন ইবাদতে মশগুল থাকার অভিযোগ হোক (সর্বসুরতেই আপনার বয়ান পরিহার করতে হবে৷) এবং এ ক্ষেত্রে আয়াতের সঠিক ও গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা জানতে মাওলানা হাবিবুর রহমান আজমি কর্তৃক সমকলিত 'ওয়া মা আ'জালা 'আন কওমিকা ইয়া মুসা' কি রাজেহ ওয়া মু'তাবার তাফসির অত্যন্ত মনযোগের সাথে অধ্যয়ন করে নেবেন৷ এটি আপনার কাছে পাঠানো হচ্ছে এবং দেওবন্দের ওয়েবসাইটেও প্রকাশ করা হয়েছে৷”
এর পর ওই সম্মিলিত সিদ্ধান্তে সা'দ সাহেবেক হজরত মুসা আ.এর শানের খেলাফ বয়ানের ভুল ধরিয়ে বিশুদ্ধ তাফসিরের আলোকে আরো কিছু নির্দেশনা দেয়া হয়েছে৷ এবং বলা হয়েছে “আপনি বলেছেন, 'আমি যে বয়ান করেছি তা মারজুহ তাফসির৷' বাস্তবতা হলো আপনার বয়ানটি মারজুহ তাফসিরের গণ্ডির ভেতরেও পড়ে না৷ বরং এটি আগা-গোড়াই ভুল ও বাতিল৷”
“আপনি স্পষ্ট বলেছেন, 'হজরত মুসা নবী মাত্র ৪০ দিন দাওয়াতের কাজ করেন নি!'”
“মাওলানা সাহেব তো এখানে স্পষ্টই বলছেন যে হজরত মুসা আ. এর ওপর যে দাওয়াত ও তাবলিগের দায়িত্ব অর্পিত ছিলো তা তিনি আদায় করেন নি!? অথচ হজরত মুসা আ. স্বীয় ভাই হজরত হারূন আ.কে নিজের নায়েব বা স্থালভিষিক্ত করে গিয়েছিলেন৷ যার নবুওত কুরআনের নস দ্বারা স্পষ্ট প্রমাণিত এবং নবুওতি কাজে হজরত মুসা আ. এর অংশীদার ছিলেন৷ আর কুরআন বলছে হজরত হারূন আ. দাওয়াত ও তাবলিগের কাজ যথাযথভাবে আঞ্জামও দিয়েছেন৷ তো কী করে মাওলানা সাহেব বললেন, যে মুসা আ. দাওয়াতের কাজ ছেড়ে দিয়েছিলেন!? এটা শানে রেসালাতের ক্ষেত্রে স্পষ্ট অপমান নয় কি? সুতরাং রুজুর আগে মাওলানা যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন তা কোনোভাবেই সঠিক নয়৷
অতএব হজরত মুসা আ. এর ব্যাপারে মাওলানা সা'দ সাহবের নিজস্ব বয়ানগুলো থেকে কোনো ধরনের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ ছাড়াই স্পষ্ট রুজু করতে হবে এবং সেটার ঘোষণাও করতে হবে৷”
সম্মিলিত সিদ্ধান্ত/ফতোয়ায় যারা স্বাক্ষর করেছেন
১৷ মুফতি আবুল কাসেম নোমানি৷ মুহতামিম, দারুল উলুম দেওবন্দ৷
২৷ মুফতি হাবিবুর রহমান খায়রাবাদি৷ মুফতি আজম, দেওবন্দ৷
৩৷ মুফতি সাঈদ আহমদ পালনপুরী৷ শায়খুল হাদিস৷
৪৷ আল্লামা কমরুদ্দিন
৫৷ মুফতি হাবিবুর রহমান আজমি৷
৬৷ আল্লামা নেয়ামাতুল্লাহ আজমি
৭৷ মুফতি আবদুল খালেক সাম্ভলি৷
৮৷ মুফতি আবদুল খালেক মাদরাজি৷
৯৷ মাওলানা সাইয়্যিদ আরশাদ মাদানি
১০৷ মুফতি নোমান সিতাপুরী
১১৷ মুফতি যাইনুল ইসলাম৷
১২৷ আল্লামা মুফতি ইউসুফ তাওলাবী
১৩৷ মুফতি আসাদুল্লাহ
১৪৷ মুফতি সালমান মানসুরপুরী
১৫৷ মুফতি মুসআব
১৬৷ মুফতি ওকার আলী
১৬৷ মুফতি ফখরুল ইসলাম
১৭৷ মুফতি মাহমুদ হাসান বুলন্দ শহর
আগের খবর: মাওলানা সা’দ কান্ধলভীর নতুন রুজুনামা: দেওবন্দের সম্মিলিত সিদ্ধান্ত
দারুল উলুম দেওবন্দের ওয়েব সাইটে প্রকাশিত জবাব এর লিংক : দারুলইফতা দেওবন্দ ডটকম