বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১১ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

শিরোনাম :
‘মানতিক; যুগের চাহিদার সাথে মিলে না’ এ ধরেণের কথা অযৌক্তিক: মুফতি হিফজুর রহমান দাওরায়ে হাদিসের ফলাফল নজরে সানীর আবেদনের সময় বাকি ৩ দিন  বৃষ্টি প্রার্থনায় জামিয়াতুল আবরার রাহমানিয়ায় ‘সালাতুল ইস্তিসকা’  আদায় হাসপাতালে সৌদি বাদশাহ সালমান সোস্যাল মিডিয়ায় প্রচারিত পাঠ্য তালিকার সাথে বেফাকের পাঠ্য তালিকার সম্পর্ক নেই: বেফাক সৈয়দপুরে তাপদাহে অতিষ্ঠ মানুষ, ‘হিটস্ট্রোকে’ ১ জনের মৃত্যু স্বর্ণের দাম আরও কমলো, ভরি ১ লাখ ১৪ হাজার ১৫১ টাকা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান ইরান-পাকিস্তানের ঢাবিতে বৃষ্টির জন্য ‘সালাতুল ইসতিস্কা’র অনুমতি দেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ‘বৃষ্টির জন্যে সালাত আদায় করলেই অবশ্যম্ভাবী বৃষ্টি চলে আসবে—বিষয়টা তা নয়’

ট্রাম্পের কাছে এক ফিলিস্তিনির চিঠি

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আমি ওয়েস্টব্যাংক থেকে বলছি

letter_toc

প্রিয় ডোনাল্ড ট্রাম্প!

আমি এশা আমরো। বয়স ৩৪ বছর। ফিলিস্তিনের একজন মানবাধিকারকর্মী। আমি ইসরাইলের দখলকৃত হেবরনের ওয়েস্টব্যাংক থেকে বলছি। আমি এখানে ‘বসতি স্থাপন বিরোধী যুব সমাজ’ নামক সংগঠনের সঙ্গে কাজ করি। আমি ও আপনি হাজার কিলোমিটার দূরে বাস করছি। কখনো সাক্ষাৎও হয় নি। কিন্তু ভাগ্য আমাকে আপনার হতে যাওয়া অফিসের প্রতি মনোযোগী করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট যে পথ ধরেছেন এবং যে চিন্তা লালন করে তা আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। যুক্তরাষ্ট্র সামরিক , অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিকভাবে ইসরাইলকে ক্রমশ ফিলিস্তিনের ভূমিদখল, উগ্র জাতীয়তাবাদ ও জাতিগত বিদ্বেষের ব্যাপারে অব্যাহত সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে।

আমি আমার যৌবন ও তারুণ্যকে আমার ভবিষ্যত গঠনে বা বিশ্ব ভ্রমণে ব্যয় করতে পারছি নি। ইসরাইল আমার জাতি ও সমাজকে একটি গণ্ডির মধ্যে আবদ্ধ করে ফেলেছে। রুদ্ধ করে রেখেছে আমার ভবিষ্যত সম্ভাবনাকে। এখন প্রায় প্রতিদিন আমাকে শত্রু ভাবাপন্ন বসতি স্থাপনকারীদের মুখোমুখি হতে হচ্ছে।

আমি দীর্ঘ বন্ধুর পথ পাড়ি দিয়ে এসেছি। ইসরাইলি বসতিস্থাপনকারীরা প্রায় আমাদের ঘরে ফেরার পথে বাধা দেয়। আমাদেরকে বাজারে যেতে বাধা দেয়। এমনকি আমাদের সন্তানদের স্কুলে যেতে বাধা দেয়। ইসরাইল প্রায় আমাদের পথচলার অধিকার অস্বীকার করে। বসতি স্থাপনকারীরা আমাকেও গালমন্দ করেছে যখন আমি হেবরন গিয়েছিলাম। আমাকে অপমান করেছে। আরও জঘণ্যভাবে আমার জীবনের প্রতি হুমকি সৃষ্টি করেছে।

আমাকে থামিয়ে দেয়া হয়েছে। নিজ বাড়িতে আমাকে তল্লাসি ও মারধর করা হয়। এ বছরের শেষে আমাকে একটি সামরিক আদালতে গুরুতর অভিযোগ মাথায় নিয়ে দাড়াতে হবে। তাহলো বিগত বছরগুলো আমি কতোগুলো মানবাধিকার লঙ্ঘিত হতে দেখেছি। দোষী প্রমাণিত হলে, আমাকে কয়েক বছর জেল খাটা লাগতে পারে। আমি ভয় করছি, হয়তো আমি আমার জীবনের মূল্যবান সময়গুলো হারিয়ে ফেলবো। আমাকে দেখে অন্যান্য ফিলিস্তিনি যুবকের মন ভাঙ্গবে। যারা অহিংস মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করে যাচ্ছে। এবং তা আমাদের একান্তই প্রয়োজন।

আমি চাই পৃথিবীতে অনন্য হতে। কিন্তু প্রায় ৭০ বছর লাখ লাখ ফিলিস্তিনি নৃশংস ইসরাইলি বাহিনীর স্বৈরতন্ত্রের অধীনে বসবাস করছে। আমরা খুব সামান্য অধিকারই সংরক্ষণ করি। আমরা শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদেরও অধিকার রাখি না। বসতি স্থাপনকারীরা আমাদের ভূমি আত্মসাৎ করবে এটাই আমেরিকার ভ্রষ্ট প্রাশাসনিক নীতি।তারা আমাদেরকে একটি বিচ্ছিন্ন ভূ-খণ্ডে আবদ্ধ রাখতেই পছন্দ করে।

অন্যদিকে ইসরাইলের ফিলিস্তিনি নাগরিক –যারা জনসংখ্যার প্রায় ২০ ভাগ- ব্যাপক ও পরিকল্পিত বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। কারণ, তারা ইহুদি নয়।ফিলিস্তিনি শরণার্থীদেরকে স্বভূমে ফিরতে দিতেও অস্বীকার করে ইসরাইল কর্তৃপক্ষ।

যুক্তরাষ্ট্র তার অনন্য বৈশিষ্ট্যের জন্য চমৎকার একটি দেশ। আমি জানি, যুক্তরাষ্ট্রের বৈচিত্রময় সমাজ তার সৌন্দর্যের প্রতীক। সেখানে বহু শ্রেণি ও পেশার মানুষ মানবাধিকার ও সমতার সঙ্গে বসবাস করছে। কিন্তু ইসরাইল ও ফিলিস্তিনের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের নীতি বৈষম্যপূর্ণ। স্বাধীনতা, মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের মহৎ ধারণার বিপরীত।

আমি বিশ্বের মহান ব্যক্তিবর্গ যেমন, নেলসন ম্যান্ডেলা, মহাত্মা গান্ধি ও তোমাদের সমাজের বিখ্যাত সমাজকর্মী মার্টিন লুথার কিং প্রমুখের জীবন ইতিহাস পাঠ করেছি। আমি অনুপ্রাণিত হয়েছি, আমার ও আমার জাতির জন্য একটি অসহিংস ও সহনশীল কর্মপদ্ধতি উদ্ভাবনে। আমি সহ্য ও সংগ্রামের মহৎ সিদ্ধান্তের জন্য মার্টিন লুথার কিং ও তার মতো ব্যক্তিদের কাছে ঋণী।

এখন যুক্তরাষ্ট্র বিগত বছরের তুলনায় ইসরাইলকে ৩৪ বিলিয়ন ডলার অতিরুক্ত সামরিক সুবিধা প্রদান করবে। আমেরিকার বহু প্রেসিডেন্ট ফিলিস্তিনকে নৈরাজ্য পরিহার করে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের আহবান জানিয়েছেন। বিষয়টি আমি ও আমার সহকর্মীদেরকে চেক পয়েন্টে যেয়ে সংগীত ও শিল্পের প্রচার করতে বলার মতো। আর ইসরাইল যখন শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদগুলোতে নৃশংস আক্রমণ করে -যেমন আমার উপর করা হয়েছে- যুক্তরাষ্ট্র তখন নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে।

প্রকৃতপক্ষে প্রত্যেক ফিলিস্তিনি সম্মান ও স্বাধীনতা প্রত্যাশা করে যেমন প্রত্যাশা করে একজন আমেরিকান বা অন্য দেশের নাগরিক। তারা কোনো প্রকার বিধি নিষেধ ও বাধ্যবাধকতা ছাড়াই স্কুল ও কর্মক্ষেত্রে যেতে চায়। তারা চায়, তাদের সন্তানকে সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে এবং তাদের জন্য সুন্দর ভবিষ্যত নিশ্চিত করতে।

আমি নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করি, আমি বহু আমেরিকানের সাথে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি যারা ফিলিস্তিদেরকে সমমযাদায় দেখতে চায়। কিন্তু সাম্প্রতিক নির্বাচন প্রতিশ্রুতিশীল পরিবর্তনকে দুরূহ করে তুলেছে। আমার সহকর্মী ও মিত্রদের বাইরে বিপুল সংখ্যক আমেরিকান সরকারের এমন নীতি প্রত্যাশা করে যাতে ফিলিস্তিনের ভবিষ্যত স্বাধীনতা নয়; বরং ইসরাইলের বর্ণবাদী আগ্রাসন অব্যাহত থাকে।

আপনি প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্বগ্রহণ করার পর আপনার নিকট প্রত্যাশা থাকবে, আপনি এ ভূ-খণ্ডে শান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগী হবেন। এবং আমেরিকা ফিলিস্তিন-ইসরাইলের মাঝে বৈষম্যহীন আচরণ করবে। তারা নিশ্চিত করবে ইসরাইল যেনো ফিলিস্তিনিদের অধিকার রক্ষা করবে। সর্বোপরি, আপনার দেশের মহান নীতি জনগণ সবাই সমান এখানেও কাযকর করবেন। ফিলিস্তিনি হিসেবে আমরা এমন এক সমাজে বসবাস করি যেখানে সমতা অস্তিত্বের প্রশ্ন। উন্নত জীবনের স্বপ্ন নয়।

বিনীত

এশা আমরো

১৭ জানুয়ারি ২০১৭ আল জাজিরায় প্রকাশিত চিঠিটির অনুবাদ করেছেন আতাউর রহমান খসরু


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ