শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৫ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

শিরোনাম :
শিক্ষক ও বাবুর্চি নিয়োগ দেবে রাজধানীর আল্লামা শামসুল হক রহ.মাদরাসা উপজেলা নির্বাচনে যাচ্ছে কি ইসলামি দলগুলো? পাঠ্যপুস্তকের ওপর নির্ভরশীল হয়ে স্মার্ট জেনারেশন সৃষ্টি সম্ভব নয়: শিক্ষামন্ত্রী বিচ্ছিন্নভাবে দে‌শের স্বার্থ অর্জন করার সুযোগ নেই : সেনা প্রধান স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন সংসদে পাশ করব : স্বাস্থ্যমন্ত্রী যাত্রাবাড়ীতে দুই বাসের মাঝে পড়ে ট্রাফিক কনস্টেবল আহত আ.লীগের মন্ত্রী-এমপির আত্মীয়দের উপজেলা নির্বাচনে নিষেধাজ্ঞা; অমান্য করলে ব্যবস্থা ফকিহুল মিল্লাত রহ. এর পরামর্শ -‘ফারেগিন কার সঙ্গে পরামর্শ করবে’ ঢাকায় চালু হলো চীনা ভিসা সেন্টার ফিলিস্তিনকে জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্য পদ দেওয়া নিয়ে ভোট শুক্রবার

জবানবন্দিতে সাত খুনের বিবরণ: রায় ১৬ জানুয়ারি

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

sat khuner asamiআওয়ার ইসলাম: নারায়ণগঞ্জে চাঞ্চল্যকর সাত খুন মামলার রায় ঘোষণা করা হবে আগামী ১৬ জানুয়ারি। এ মামলায় গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে যেসব আসামি ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য তিনজন হলেন- র‌্যাবের চাকরিচ্যুত ও অবসরে পাঠানো সেনা কর্মকর্তা লে. কর্নেল তারেক সাঈদ, মেজর আরিফ হোসেন ও লে. কমান্ডার এমএম রানা।

মূলত এ তিনজনই শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সাত খুনের সঙ্গে জড়িত।
এ তিনজনই সাত খুন নিয়ে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এদের মধ্যে আরিফ হোসেন ২০১৪ সালের ৪ জুন ১৬৪ ধারায় আদালতে জবানবন্দি দেন।
তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করেন নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কে এম মহিউদ্দিন।

আরিফ হোসেনের জবানবন্দির চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো:
২০১৪ সালের মার্চে আদমজীনগরে অবস্থিত র‌্যাব-১১ এর হেডকোয়ার্টারে আমাদের কনফারেন্স ছিল। ওই কনফারেন্সে সিও লে. কর্নেল তারেক সাঈদ কাউন্সিলর নজরুলকে গ্রেফতারের জন্য আমাকে বলেন। একাজে আমাকে সাহায্য করতে লে. কমান্ডার রানাকে নির্দেশ দেন। আমরা নজরুলকে ধরার জন্য তার প্রতিপক্ষ অপর কাউন্সিলর নূর হোসেনকে সোর্স হিসেবে ব্যবহার করি।

২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল সকাল ১০টার দিকে নূর হোসেন আমাকে ফোন করে বলেন, নজরুল আজকে (২৭ এপ্রিল ) নারায়ণগঞ্জ কোর্টে হাজিরা দিতে এসেছে। আমি ওই সংবাদটি সিও তারেক সাঈদকে জানাই। তিনি তখনই নজরুলকে ধরার জন্য আমাকে ও রানাকে অভিযান পরিচালনার নির্দেশ দেন। আমি অভিযানের বিষয়ে কমান্ডার রানার সঙ্গে কথা বলি।

এরপর আমার নীল রংয়ের মাইক্রোবাসে টিমসহ কোর্টের উদ্দেশ্যে বের হই। আমার টিমের সদস্যরা- হাবিলদার এমদাদ, এসআই পুর্নেন্দু বালা, নায়েক দেলোয়ার (ড্রাইভার),বেলাল, হীরা, নাজিম, সিপাহী তৈয়ব, সৈনিক আলীম, আলামিন, মহিউদ্দিন,কনস্টেবল শিহাব একত্রে আনুমানিক বেলা ১১টায় কোর্টের বাইরের গেটে উপস্থিত হই।

নজরুলের গতিবিধি নজরদারি করতে আমি হাবিলদার এমদাদ, নায়েক বেলাল, সিপাহী তৈয়বকে কোর্টের ভেতরে পাঠাই। আমরা কোর্টের বাইরে রাস্তার পশ্চিম পাশে অপেক্ষা করছিলাম। বেলা সোয়া ১১টার দিকে একটি সিলভার কালারের মাইক্রোবাসে করে রানার টিমের ৭/৮ জন সদস্য আমাদের সঙ্গে যোগ দেন। ওই সময় তিনি মাইক্রোবাসে ছিলেন না। আনুমানিক বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রানা নিজের গাড়িতে করে এসে গাড়ি ছেড়ে দেন এবং আমার মাইক্রোতে এসে বসেন।

আমি তাকে (রানা) জানাই, নজরুলের সঙ্গে তার ১৫/১৬ জন সহযোগী আছে। রানা সিনিয়র হওয়ার কারণে তখন তিনি অপারেশন কমান্ডার হয়ে যান এবং তিনি যেভাবে প্ল্যান করেন সেভাবেই কাজ হয়। ওই সময় কমান্ডার রানা প্ল্যান করেন, রুটিন পেট্রোল টিমের সদস্যদের দিয়ে ফতুল্লা স্টেডিয়াম এলাকায় সিটি করপোরেশনের গেটের কাছে ফাঁকা এলাকায় নজরুলের গাড়িটি থামানো হবে।

জবানবন্দিতে আরিফ জানান, আনুমানিক দুপুর ১টার দিকে নজরুল একটি সাদা প্রাইভেটকারে করে কোর্ট থেকে বের হয়ে সাইনবোর্ডের দিকে যায়। তখন আমি ও রানা আমাদের মাইক্রোবাস দুটি নিয়ে নজরুলের গাড়ির পিছু পিছু যাই। রানা ওই সময় নজরুলের গাড়ির বর্ণনা দিয়ে পেট্রোল টিমকে ওই গাড়িটি থামাতে বলে। আনুমানিক দেড়টার দিকে পেট্রোল টিম চেকপোস্ট বসিয়ে সিটি করপোরেশনের গেটের কাছে নজরুলের গাড়িটি থামায়। তখন আমরা নজরুলের গাড়ি থেকে নজরুলসহ পাঁচজনকে বের করে আমার মাইক্রোবাসে তুলি।

এ সময় আমাদের পেছনে একটি অ্যাশ কালারের প্রাইভেটকার থেকে একজন নেমে চিৎকার করতে থাকেন। তখন রানা ওই লোক ও তার ড্রাইভারকে তার মাইক্রোবাসে তোলেন। আমি ওই পাঁচজনকে মাইক্রোবাসে তুলে কাঁচপুরের দিকে রওনা দেই এবং রানাকে বলি আমার গাড়িটিকে ফলো করার জন্য। আনুমানিক ১টা ৫০ মিনিটের দিকে আমি তারাবো নামক এলাকায় পৌঁছাই। ২/৩ মিনিটের মধ্যেই রানার গাড়িটিও সেখানে পৌঁছায়। পরে আমি সিওকে রিপোর্ট করি, নজরুলসহ সাত জনকে আটক করা হয়েছে।

জবাবে সিও বলেন, কোনও প্রত্যক্ষদর্শী রাখা যাবে না। সাতজনকেই গুম করে ফেলো। তার আদেশে আমি আমার ক্যাম্পের বেলালকে সাত সেট ইটের বস্তা তৈরি করার জন্য বলে মাইক্রোবাস দুটি নিয়ে নরসিংদীর দিকে চলে যাই। আনুমানিক আড়াইটার দিকে আমি নরসিংদী র‌্যাব ক্যাম্পের কাছাকাছি পৌঁছাই। ওই সময় নরসিংদী ক্যাম্প কমান্ডার সুরুজকে ফোন করে তার সঙ্গে ক্যাম্পের বাইরে দেখা করি। পরে আনুমানিক বিকাল চারটার দিকে আমি শিবপুর উপজেলার দিকে একটি নির্জন জায়গায় অপেক্ষা করতে থাকি।

আনুমানিক রাত ৮টার দিকে নারায়ণগঞ্জে যাওয়ার জন্য সিওকে জানাই। রাস্তায় পুলিশের কড়া নজরদারি থাকার কারণে সিও আমাদের জন্য ট্রাক পাঠাবেন বলে জানান। সিও বলেন, তোমরা ওই ট্রাকে করে আসামিদের নিয়ে এসো।
আমি সিওকে বলি, ট্রাক আসতে অনেক দেরি হবে, আমরা মাইক্রোবাস নিয়ে নারায়ণগঞ্জে চলে আসছি।

রাত আনুমানিক ৯টার দিকে আমরা নরসিংদীর বেলানগর পৌঁছাই। সেখানে সৈনিক মহিউদ্দিনকে সাতটি সাকসা (চেতনানাশক ইনজেকশন) এবং একটি সিরিঞ্জ কিনে আনতে বলি। রাত সাড়ে ১০টার দিকে কাঁচপুরে পৌঁছে একটি পরিত্যক্ত পেট্রোল পাম্পে অপেক্ষা করতে থাকি। এরপর সিওকে ফোন করে জানাই,রাস্তায় পুলিশের কড়া নজরদারি চলছে। এ অবস্থায় নারায়ণগঞ্জ শহরে ঢোকা ডিফিকাল্ট। তাই রানা যেন ট্রলারটি কাঁচপুর ব্রিজের নিচে পাঠিয়ে দেন। কিছুক্ষণ পর রানা ফোন করে আমাকে জানান, কাঁচপুর ব্রিজের নিচেই ট্রলার থাকবে।

আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে আরিফ বলেন, আমি তখন নূর হোসেনকে ফোন করে জানাই, কাঁচপুর ব্রিজের নিচে যেন কোনও মানুষের জটলা না থাকে। রাত ১১টার দিকে আমি মাইক্রোবাস দুটিসহ কাঁচপুর ব্রিজের নিচে বিআইডব্লিউটিএ’র ঘাটে পৌঁছাই। রাত সাড়ে ১১টার দিকে বেলালকে ফোন করে ইটের প্যাকেটগুলো কাঁচপুর ব্রিজের নিচে নিয়ে আসতে বলি।

রাত আনুমানিক ১২টার দিকে একটি সাদা মিতসুবিশি মাইক্রোবাসে করে হাবিলদার এমদাদ, নায়েক বেলাল, সৈনিক আরিফ, সৈনিক তাজুল ইটের প্যাকেটগুলো নিয়ে বিআইডব্লিউটিএ’র ঘাটে আসেন। রাত সাড়ে ১২টার দিকে রানার ট্রলারটি কাঁচপুর ব্রিজের নিচে আসে। আমি সিওকে চূড়ান্ত রিপোর্ট দিয়ে বলি, সাত জনকে গুম করার বিষয়ে আমি প্রস্তুত। ওই সময় সিও আমাকে বলেন, ওকে গো অ্যাহেড।

আরিফ বলেন, তার (সিও) আদেশ পেয়ে আমি নায়েক হিরা, সিপাহী তৈয়ব মাইক্রোবাসে থাকা সাতজনকে সাকসা ইনজেকশন পুশ করতে বলি। ইনজেকশন পুশ করার পর নায়েক বেলাল, হীরা, সিপাহী তৈয়ব, এসআই পুর্নেন্দু বালা, সৈনিক আলামিন, তাজুল, কনস্টেবল শিহাব ও সৈনিক আলীম এই আট জন মিলে আটককৃত সাত জনের মুখে পলিথিন প্যাঁচিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে । এরপর আমি সবার মৃতদেহ ট্রলারে লোড করতে বলি। আমার টিমসহ ট্রলারে উঠি এবং রানার টিম ও গাড়িগুলো ফেরত পাঠাই।

আমরা রাত আড়াইটার দিকে ট্রলার নিয়ে মেঘনা নদীর মোহনায় পৌঁছাই। সেখানে পৌঁছানোর পর আমার টিমের সদস্যরা প্রতিটি মৃতদেহের সঙ্গে এক সেট ইটের বস্তা বেঁধে নদীতে ফেলে দেয়। পরে সেখান থেকে ফেরত আসার সময় তৎকালীন র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (এডিজি অপস) কর্নেল জিয়াউল আহসান আমাকে ফোন করেন। তার ফোন না ধরে সিওকে ফোন করে বলি,এডিজি জিয়াউল কেন আমাকে ফোন করছেন? তখন সিও আমাকে বলেন, আমি তার সঙ্গে কথা বলে তোমাকে জানাচ্ছি।

কিছুক্ষণ পর সিও আমাকে ফোন করে জানান, এডিসি আমাকে ও আমার টিমের সদস্যদেরকে তার অফিসে যেতে বলেছেন। রাত অনুমান সাড়ে তিনটার দিকে আমি ট্রলারে করে নারায়ণগঞ্জ ঘাটে এসে পৌঁছাই। সেখানে গিয়ে সিও সাঈদের সঙ্গে কথা বলে আমি র‌্যাব হেডকোয়ার্টারের উদ্দেশ্যে রওনা দেই।

রাত চারটার দিকে আমি এডিজির অফিসে পৌঁছাই। এডিজি জিয়াউল আমাকে জিজ্ঞাসা করেন, নজরুল কোথায়? তার প্রশ্ন শুনে আমি একটু অবাক হই। তারপর বলি, নজরুল কোথায় আমাকে জিজ্ঞাসা করছেন কেন? তিনি আবারও আমাকে একই প্রশ্ন করেন। আমি তাকে বলি, আমি যা করি সিও’র আদেশে করি। এ বিষয়ে যা জিজ্ঞাসা করার আপনি তাকে করেন। তারপর এডিজি সিওকে ফোন দিয়ে আমার সঙ্গে কথা বলান।

তখন সিও আমাকে বলেন, এডিজি কেন এমন করছে তা বুঝতে পারছি না। তুমি তাকে ঘটনার বর্ণনা দিয়ে আসো। পরে আমি সমস্ত ঘটনা এডিজিকে জানাই।
২৯ এপ্রিল আমি ও সিও দুপুর দেড়টার দিকে র‌্যাবের হেডকোর্য়াটারে পৌঁছানোর পর এডিজি জিয়াউল আমার কাছে জানতে চান,লাশগুলো কী করেছি।
উত্তরে আমি বলি,লাশগুলো মেঘনাতে ফেলে দিয়েছি।

ডিএস


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ