বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪ ।। ১৪ চৈত্র ১৪৩০ ।। ১৮ রমজান ১৪৪৫


পাঠ্যবইয়ে ভুল: পাল্টাপাল্টি দোষারোপ দুই মন্ত্রণালয়ের

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

boi_silebasআওয়ার ইসলাম: নতুন পাঠ্যপুস্তকে ভুলের জন্য শিক্ষাখাত সংশ্লিষ্ট সরকারের দুই মন্ত্রণালয়ের কেউ দায়িত্ব নিতে চাইছে না; তারা একে অন‌্যের উপর দোষ চাপাচ্ছে।

ফলে পাঠ্যবইয়ের ভুল-ক্রটি পর্যালোচনায় জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) একটি কমিটি করলেও কারা দায়ী, তা বই বিতরণের নয় দিন পরেও চিহ্নিত হয়নি।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের দাবি, শিক্ষা মন্ত্রণালয় এনসিটিবির প্রাথমিক উইংয়ের ২৪টি পদের ২০টিতেই নিজেদের ‘অযোগ্য’ কর্মকর্তাদের বসিয়ে রাখায় প্রাথমিকের বইয়ে ভুল থেকে গেছে।

অন্যদিকে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলছেন, গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় দেরিতে পাণ্ডুলিপি জমা দেওয়ার তা যাচাই-বাছাই না করেই ছাপাখানায় পাঠাতে ‘বাধ্য হয়েছেন’ তারা।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থা এনসিটিবি থেকে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের বই ছাপিয়ে দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে তা বিনামূল্যে সরবরাহ করা হয়।

গত আট বছরে ২২৫ কোটি ৪৫ লাখ ১১ হাজার ৭৫০টি বই ও শিক্ষা উপকরণ বিতরণ করেছে শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন সরকার।

ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির সব বই এবার বাংলাদেশের ছাপাখানায় মুদ্রণ হলেও বিশ্ব ব্যাংকের কিছু আর্থিক সহায়তায় প্রাথমিকের বই ছাপাতে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করতে হয়েছিল।

এবারের প্রাথমিকের ৫০ লাখ বই মুদ্রণের কাজ পায় ভারতের একটি প্রতিষ্ঠান, যদিও সোমবার পর্যন্ত ওই সব বই বাংলাদেশে পৌঁছেনি।

গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. গিয়াস উদ্দিন আহমেদ সোমবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এনসিটিবিতে প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক উইং নামে দুটি সম্পাদনা পরিষদ আছে। প্রাথমিক উইংয়ের ২৪টি পদের ২০টিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় অযোগ্য কর্মকর্তাদের নিয়োগ দিয়ে রেখেছে।”

গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা কর্মকর্তাদের এনসিটিবির প্রাথমিক উইংয়ের পদগুলোতে নিয়োগ দেওয়ার কথা থাকলেও সেখানে প্রাথমিকের মাত্র চার কর্মকর্তাকে ‘বিষয়-বিশেষজ্ঞ’ হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

“২৪টি পোস্ট আমাদের উছিলায় সৃষ্টি হল, কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয় তাদের মতো করে অযোগ্য লোকদের এখানে বসিয়েছে শুধু তাদের (কর্মকর্তাদের) ঢাকায় থাকার জন্য। এনসিটিবিতে আমরা নিধিরাম সর্দার।”

রোববার শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে বিষয়টি জানানো হয়েছে জানিয়ে গিয়াস উদ্দিন বলেন, “ঝিনাইদহের পিটিআই সুপার সালমা নার্গিস (বর্তমানে রিচিং আউট অব স্কুল চিলড্রেন প্রকল্পের উপ-পরিচালক) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাঠ্যক্রমের উপরে ডক্টরেট করেছেন। তাকে আমরা এনসিটিবিতে দিতে চেয়েছিলাম, কারণ আমরাই ভালো বুঝি ওখানে কে ভালো করবে।”

গিয়াস উদ্দিন জানান, সালমাকে এনসিটিবিতে নিয়োগ দিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মতামত চাইলে তারা তা নাকচ করে দেয়।

textbook-04

“প্রাথমিকের কারিকুলামে যোগ্য লোক নেই, গোড়ায়ই গলদ। … এটা থেকে না বের হতে পারলে এমন ঘটনা (প্রাথমিকের পাঠ্যবইয়ে ভুল) ঘটবেই।”

শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এবারের প্রাথমিকের বইয়ের পাণ্ডুলিপি গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় দেরিতে জমা দেয়।

“এমন সময় পাণ্ডুলিপি হাতে পেয়েছি যে ওই সময় তা যাচাই-বাছাই ছাড়াই ছাপাখানায় পাঠানো ছাড়া অন্য কোনো উপায় ছিল না।”

দেরির অভিযোগ স্বীকার করে গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব গিয়াস উদ্দিন বলেন, প্রাথমিকের বই ছাপানোর সঙ্গে বিশ্ব ব্যাংকের সংশ্লিষ্টতা থাকায় কিছু বিষয়ে তাদের অনুমোদন নিতে হয়। তবে পাণ্ডুলিপি জমা দিতে ‘খুব বেশি’ দেরি হয়নি।

এসব বিষয়ে এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহা কোনো কথা বলেননি। সংস্থাটির কোনো কর্মকর্তাও সোমবার এনিয়ে মুখ খোলেননি।

বিব্রত গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়

প্রাথমিকের বইয়ে ভুল নিয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় উদ্বিগ্ন ও বিব্রত হয়েছে জানিয়ে এই ভুলের জন্য দায়ীদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণায়কে রোববার চিঠি দিয়েছে তারা।

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিবকে পাঠানো ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, “২০১৭ শিক্ষাবর্ষের প্রাথমিক স্তরের পাঠ্যপুস্তকে বেশ কিছু ভুল সম্পর্কে জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত হওয়ার প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় উদ্বিগ্ন ও বিব্রত। প্রাথমিক স্তরের পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা এর দায় এড়াতে পারেন না।”

textbook-03

এনসিটিবি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন হওয়ায় প্রাথমিকের বইয়ে ‘ভুলের বিষয়টি তদন্ত করে সংশ্লিষ্টদের দায়-দায়িত্ব নিরূপণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে’ গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়কে জানাতে ওই চিঠিতে বলা হয়েছে।

এছাড়া প্রাথমিকের পাঠ্যবইয়ে ভুলের কারণ কী তা সাত কর্মদিবসের মধ্যে ব্যাখ্যা করে জানাতে এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহাকে আরেকটি চিঠি দিয়েছে গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।

এই মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব গিয়াস উদ্দিন বলেন, এনসিটিবি চেয়ারম্যানের বক্তব্য পাওয়ার পর পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

ঘুম ভাঙল ৮ দিন পর

বই বিতরণের পর পাঠ্যবইয়ের ভুল-ক্রটি নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় গত আট দিনে কোনো উদ্যোগ না নিলেও সোমবার হঠাৎ করেই সরব হয়েছে।

প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে সোমবার সন্ধ্যায় এনসিটিবির প্রধান সম্পাদক প্রীতিশ কুমার সরকার এবং ঊর্ধ্বতন বিশেষজ্ঞ লানা হুমায়রা খানকে ওএসডি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

এছাড়া পাঠ্যপুস্তকে ভুল-ত্রুটি নির্ণয় এবং এসব ভুলের জন্য দায়ীদের চিহ্নিত করে সুপারিশ দিতে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব রুহী রহমানকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের একটি কমিটিও করেছে তারা।

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের যুগ্ম-সচিব মাহমুদুল ইসলাম এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালককে (মাধ্যমিক) এই কমিটির সদস্য করা হয়েছে। কমিটিকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

পাঠ্যবইয়ের ভুল-ক্রটি নিয়ে মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিকভাবে সংবাদ সম্মেলনও ডেকেছেন শিক্ষামন্ত্রী নাহিদ।

পাঠ্যবইয়ের ভুল-ক্রটি নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নীরবতার সমালোচনা করে গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, “এবার প্রাথমিকের বইয়ে বেশি ভুল থাকায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় এনিয়ে কোনো তৎপরতাই দেখাচ্ছে না, অথব এনসিটিবি তাদের অধীন একটি প্রতিষ্ঠান।”  সূত্র:বিডি নিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

ডিএস


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ