শনিবার, ১১ মে ২০২৪ ।। ২৮ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ৩ জিলকদ ১৪৪৫


বিশ্ববিদ্যালয়ে সনদ বাণিজ্য!

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

sonodআওয়ার ইসলাম: সনদ বাণিজ্যের বিতর্কে বন্ধ করে দেওয়া হয় দারুল ইহসান ইউনিভার্সিটি। প্রতিষ্ঠানটির মালিক আবুল হোসেন ফের নতুন নামে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় খোলার জন্য দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন।

রওশন এরশাদ ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি নামে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবেদন করেছেন তিনি। সরকারের অনুমোদন পেতে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছেন জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতাকে।

জানা গেছে, বহুল আলোচিত দারুল ইহসান ইউনিভার্সিটির মূল উদ্যোক্তা ছিলেন সূফী ড. সৈয়দ আলী আশরাফ। তিনি মারা যাওয়ার পর ইউনিভার্সিটির মালিকানা নিয়ে ট্রাস্টিদের মাঝে শুরু হয় দ্বন্দ্ব। এ দ্বন্দ্ব চলার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের উত্তরার ক্যাম্পাসটি দখলে নেন আবুল হোসেন নামে এক ব্যক্তি। এরপর দারুল ইহসানের মালিকরা চারভাগে বিভক্ত হয়ে সারা দেশে তিন শতাধিক ক্যাম্পাস পরিচালনা করতে থাকেন। এর মধ্যে ৩৭টি ক্যাম্পাস পরিচালনা করতেন আবুল হোসেন। অবৈধ ট্রাস্টিবোর্ড, সনদ বাণিজ্যের অভিযোগে দীর্ঘদিন মামলা-মোকদ্দমা চলার পর প্রক্রিয়া শেষে সরকার দারুল ইহসান ইউনিভার্সিটি বন্ধ করে দেয়।

ইউজিসির তথ্যানুযায়ী, শুধু দারুল ইহসান ইউনিভার্সিটি নয়, প্রাইম ইউনিভার্সিটি (অবৈধ শাখা), রয়েল ইউনিভার্সিটি ও আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি সনদ বাণিজ্যসহ নানা দুর্নীতির কারণে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের সনদ বাণিজ্যের মূল হোতা ছিলেন আবুল হোসেন। তার বাণিজ্য বন্ধ হওয়ায় এখন নতুন নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন।

রাজধানীর অদূরে গাজীপুরে খাজা মাঈন উদ্দীন চিশতি বিশ্ববিদ্যালয় নামে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবেদন করেন আবুল হোসেন। তবে সনদ বাণিজ্যে বিতর্কিত হিসেবে পরিচয় থাকায় ইউজিসি তার আবেদনটি নাকচ করে দেয়। এরপরও থেমে যাননি। এবার নতুন নামে নতুন কৌশলে ফের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদনের জন্য সরকারের কাছে আবেদন করেছেন।

সরকারের সহজ অনুমোদন পেতে এ কাজে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছেন সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নামকরণ করা হয়েছে ‘রওশন এরশাদ ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি’। রওশন এরশাদের সম্পৃক্ত থাকায় ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর প্রাথমিক সম্মতি মিলেছে নতুন নামের এ বিশ্ববিদ্যালয়ের। বিশ্ববিদ্যালয়টি ময়মনসিংহে স্থাপনের জন্য প্রস্তাবনায় উল্লেখ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে গতকাল রাতে আবুল হোসেন সংবাদমাধ্যমকে জানান, তিনি শুনেছেন রওশন এরশাদ ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির কথা। তবে সুনিশ্চিত করে কিছু বলতে অনীহা প্রকাশ করেন।

ইউজিসির এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা আমাদের সময়কে জানান, চূড়ান্ত অনুমোদন নিতে গিয়ে আবুল হোসেনের পুরনো প্রোফাইল ধরা পড়ে। নিয়ম অনুযায়ী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদনের জন্য প্রথমে ইউজিসিতে আবেদন করতে হয়। পরে সরেজমিন পরিদর্শন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন পাঠায়। এরপর প্রধানমন্ত্রী চূড়ান্ত অনুমোদন দেন।

কিন্তু আবুল হোসেন বিরোধীদলীয় নেতাকে দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদনের জন্য সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করান। প্রধানমন্ত্রী প্রাথমিক সম্মতিও দিয়েছেন। চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য সারসংক্ষেপ চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে গত ২৮ নভেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পত্র দেওয়া হয়েছে। এরপর ২৮ ডিসেম্বর ইউজিসির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের সরেজমিন পরিদর্শন করার জন্য পত্র দিয়েছেন প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের বিওটির ভাইস চেয়ারম্যান মো. ইয়াহ্ইয়া চৌধুরী এমপি। তিনি সিলেট-২ আসনের জাতীয় পার্টির এমপি। বিতর্কিত আবুল প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টির চেয়ারম্যান করেছেন বিরোধীদলীয় নেতাকে। আর নিজে হয়েছেন সাধারণ সম্পাদক। বিতর্কিত এ ব্যক্তিকে রেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন দিলে সনদ বাণিজ্যের আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

ডিএস


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ