শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৭ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১১ শাওয়াল ১৪৪৫


ছোটদের বইয়ে বড় ভুল ‘ছেলেমেয়েদের জঙ্গিবাদের দিকে নিয়ে যাওয়ার চক্রান্ত’

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

natun_boiআওয়ার ইসলাম: এবারের পাঠ্যবইয়ে ভুল তথ্য, বানান ও শব্দচয়ন এবং বাংলা বিষয়ে ধর্মীয় পাঠ বাড়ানোর ঘটনায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। দেশের বিশিষ্ট নাগরিকরা এসব ঘটনাকে তুঘলকি কাণ্ড হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তারা বলছেন, ছোটদের বইয়ে এ যেন বড় ভুল।

শিশুকে ভুল শেখানো প্রকারান্তরে তাকে মানসিকভাবে বিপন্ন করার শামিল। পাঠ্যবইয়ে ধর্মীয় বিষয়ে বাড়াবাড়ি রকম উপস্থাপনার অর্থ হচ্ছে ছেলেমেয়েদের জঙ্গিবাদের দিকে নিয়ে যাওয়ার চক্রান্ত। এনসিটিবিতে ঘাপটি মেরে থাকা পাকিস্তানি মতাদর্শীরা সুকৌশলে এমন অপতৎরপতা চালাচ্ছেন কিনা তা খতিয়ে দেখতে বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিয়েছেন।

পাশাপাশি এ ধরনের ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে সংস্থাটিতে দক্ষ লোক পদায়ন এবং এনসিটিবির বই রচনা ও মুদ্রণ কাজ আলাদা করারও পরামর্শ দিয়েছেন।

গণমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনার পর জাতীয় পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) বৃহস্পতিবার পাঠ্যবইয়ে ভুল চিহ্নিত করতে তিন সদস্যের পর্যালোচনা কমিটি গঠন করেছে। কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে সংস্থাটির সদস্য (অর্থ) অধ্যাপক কাজী আবুল কালামকে। সাত কর্মদিবসের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে। এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহা এসব তথ্য জানান।

প্রাথমিক স্তরের পাঠ্যবইগুলোর ভুল-ত্রুটি খুব দ্রুত সংশোধন করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী অ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার। বৃহস্পতিবার রাজধানীতে একটি অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে ইতিমধ্যে এনসিটিবিকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।

১ জানুয়ারি শিশুদের হাতে তুলে দেয়া পাঠ্যবইয়ে থাকা ভুল-ত্রুটি তুলে ধরে প্রতিবেদন বৃহস্পতিবার যুগান্তরে প্রকাশিত হয়। বইয়ের ছাপা অত্যন্ত নিম্নমানের। বিভিন্ন শ্রেণীর ‘বাংলা’ এবং ‘বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়’সহ অন্যান্য পাঠ্যবইয়ে ভুলের ছড়াছড়ি। একটি পাঠ্যবইয়ের শেষ মলাটে উপদেশবাণীতে ভুল করা হয়েছে।

ইংরেজিতে 'Do not hurt anybody' লিখতে গিয়ে লেখা হয়েছে 'Do not heart anybody'। এমনকি মাদ্রাসার পাঠ্যবইয়ে মুসলিমকরণ করতে গিয়ে বিভিন্ন গল্প-কবিতায় হিন্দু নাম বাদ তো দেয়া হয়েছেই, এনসিটিবির হিন্দু চেয়ারম্যানের নাম পর্যন্ত মুখবন্ধ থেকে সরিয়ে ফেলা হয়েছে।

এ নিয়ে ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে সমালোচনার ঝড়। এসব ঘটনাকে অতি-উৎসাহ হিসেবে মন্তব্য করেছেন অনেকে। ২০১৩ সালে নতুন কারিকুলামে পাঠ্যবই দেয়ার পর হেফাজতে ইসলাম আন্দোলন করেছিল। ওই ঘটনার পর বিভিন্ন ক্লাসে ‘হিন্দু’ লেখক-কবিদের লেখা বাদ দিয়ে মুসলিম লেখক-কবির লেখা অন্তর্ভুক্ত করায় এবং ধর্মভিত্তিক পাঠ বাড়ানোর কারণে অনেকেই মনে করছেন হেফাজতে ইসলামের দাবির প্রতিফলন ঘটেছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক) অধ্যাপক ড. আবদুল মান্নান যুগান্তরকে বলেন, যুক্তবর্ণ এবং কারবিহীন ‘অ’ এবং ‘ও’ বর্ণের জন্য শব্দ খুবই কম। আগে অ-তে অজগর পড়ানো হতো।

সেটার পরিবর্তে এবার ‘অজ’ (ছাগল) আনা হয়েছে। আর চিত্রের ছাগলটি গাছে ওঠেনি। মাটিতে পেছনের দু’পা রেখে সামনের পা গাছে তুলে আমপাতা খাচ্ছে। গাছটি চেনাতে গাছে আম রাখা হয়েছে।

এটা শিশুকে আনন্দ দেয়া এবং পারিপার্শ্বিকতার সঙ্গে পরিচিত করতে হয়েছে। ‘ওড়না’ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটাও শব্দ সংখ্যার স্বল্পতার কারণে হয়েছে। তবে হিন্দু ধর্মের বইয়ে বা কুসুমকুমারী দাশের কবিতার ক্ষেত্রে যা ঘটেছে তা ‘মানবিক ভুল’ বলে মনে করেন তিনি।

এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, যুক্তবর্ণ এড়াতে ‘ওড়না’ বা ‘অজ’ শব্দ ব্যবহারের যুক্তি গ্রহণযোগ্য নয়। এটাকে খোঁড়া যুক্তি বলা যায়। তিনি বলেন, পাঠ্যবইয়ে যুগ যুগ ধরে যুক্তবর্ণের ব্যবহার ছিল। ইংল্যান্ডে শব্দ শেখাতে অনেক শক্ত ইংরেজি ব্যবহার করা হয়।

তিনি প্রশ্ন রাখেন, কবিতার লাইনে শব্দ ওলটপালটের এখতিয়ার এনসিটিবিকে কে দিয়েছে? মাত্র তিন বছরের মাথায় পাঠ্যবইয়ে কবি-লেখকদের লেখা সংযোজন-বিয়োজনের প্রয়োজন কেন পড়ল? হিন্দু নাম মাদ্রাসার পাঠ্যবইয়ে কেন রাখা যাবে না? তাহলে কী কেউ অসুস্থ হলে হিন্দু ডাক্তারের কাছে যাবে না?

তিনি ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ করার পরামর্শ দিয়ে বলেন, এসবই তুঘলকি কাণ্ড। এসব বন্ধ করতে হবে। পাশাপাশি পাঠ্যবইয়ে মুসলিমকরণের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত চিন্তা বাদ দেয়ার পরামর্শ দিয়ে বলেন, কারিকুলাম অনুযায়ী পাঠ সাজাতে হবে। তবে মহানবীর বিদায় হজের ভাষণ পাঠ্যবইয়ে অন্তর্ভুক্তির বিষয়টিকে স্বাগত জানিয়ে এই অধ্যাপক বলেন, এতে যে মানবিকতা আছে তা শিশুদের জানা প্রয়োজন।

এ ব্যাপারে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, কিছু লোকের এমন কাজের কারণে সরকারের ভালো অর্জনগুলো ঢাকা পড়ে যাচ্ছে। পাঠ্যবই রচনা ও সম্পাদনায় যারা নিয়োজিত তারা শিশুদের ধারণ ক্ষমতা দেখছেন না।

শিশুদের জন্য সুপাঠ্য রচনা না করে ভারি পাঠ্য রচিত হচ্ছে। তিনি বলেন, এনসিটিবিতে দায়বদ্ধতা ও মনিটরিংয়ের ঘাটতি আছে। তিনি এনসিটিবির  কারিকুলাম ও পাঠ্যপুস্তক রচনা এবং মুদ্রণ কাজ আলাদা করার পরামর্শ দিয়ে বলেন, অন্যথায় এসব ভুলভ্রান্তি হতেই থাকবে।যুগান্তর

ডিএস


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ