বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৫ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ৯ শাওয়াল ১৪৪৫


সন্দেহে শুধু জামায়াতকে নয়; সববিষয় মাথায় রাখার দাবি লিটনের বোনদের

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

litonআওয়ার ইসলাম: এমপি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন হত্যার ঘটনায় তার  স্ত্রীসহ দলের অন্যান্য নেতারা  হত‌্যাকাণ্ডের জন‌্য জামায়াতে ইসলামীকে সন্দেহ করলেও এই সংসদ সদস‌্যের বোনেরা সুষ্ঠু  তদন্তে সব বিষয়কেই মাথায় রাখতে বলছেন।

মঙ্গলবার বাড়িতে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথায় লিটনের বোন তৌহিদা বুলবুল ও ফাহমিদা বুলবুল কাকলী কোনো কিছু স্পষ্ট না করেই  বলেন, শুধু জামায়াতকে ঘিরে যেন হত্যা মামলার তদন্ত আটকে না থাকে।সুষ্ঠু তদন্তের জন্য যেন দৃষ্টিকে প্রসারিত করা হয়।

তৌহিদা বুলবুল বলেন, “শুধু জামায়াত-জামায়াত করলে তো হবে না। যদি জামায়াত হয়, জামায়াত। যদি আওয়ামী লীগ হয়, আওয়ামী লীগ। যদি আমি হই, আমি। এনি বডি। আমরা তার পানিশমেন্ট চাই। আমাদের আর কিছু চাওয়ার নেই।”

তার আগে লিটনের স্ত্রী খুরশিদ জাহান স্মৃতি সাংবাদিকদের বলেন, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হিসেবে জামায়াতই তার স্বামীকে হত‌্যা করেছে বলে তার ধারণা।

আওয়ামী লীগের নেতারাও সেই সন্দেহের কথা ইতোমধ‌্যে জানিয়েছেন। তবে জামায়াত এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, প্রকৃত খুনিদের আড়াল করতে তাদের উপর দোষ চাপানো হচ্ছে।

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার সর্বানন্দ ইউনিয়নে শাহাবাজ গ্রামে লিটনের বাড়িতে ঢুকে গত শনিবার তাকে গুলি করে যায় কয়েকজন দুর্বৃত্ত। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পরপরই তার মৃত‌্যু ঘটে।

হত‌্যাকাণ্ডের ঘটনায় অজ্ঞাতনামা পাঁচজনকে আসামি করে মামলা করেন লিটনের বোন ফাহমিদা। বেশ কয়েকজনকে আটক করলেও তবে তিন দিনেও খুনিদের শনাক্ত কিংবা গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।

মঙ্গলবার লিটনের বাড়িতে দোয়া মাহফিল হয়। এর মধ‌্যেই সাংবাদিকদের সামনে আসেন লিটনের দুই বোন ও স্ত্রী। তাদের চোখে মুখে ছিল আতঙ্কের ছাপ; আতঙ্কিত যে তা লুকানোর চেষ্টাও তারা করেননি।

এমপি লিটনের বন্ধু ও তার পরিবারের নিকটজন হিসাবে পরিচিত মুকুট বলেন, “জামায়াত হতে পারে। কিন্তু ডাইরেক্ট জায়ামাত করছে- এ কথাটা কখনও বলা হয়নি।”

মামলার বাদী ফাহমিদা কাকলী বলেন, “আমার ভাইয়ের হত্যাকারী কে, কারা করল- সেটা আমি জানতে চাই এবং তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।”

গাইবান্ধার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এ সার্কেল) রবিউল ইসলাম বলেন, “পারিবারিক, স্থানীয় রাজনীতির বিভেদ, ব্যবসাগত অর্থনৈতিক লেনদেন, জামায়াত-শিবির ও জঙ্গিসহ সকল বিষয় মাথায় রেখে পুলিশ তদন্ত করছে। আমরা আশা করছি, খুব শিগগিরই খুনি ধরা পড়বে।”

লিটন হত‌্যাকাণ্ডের দিন তার বাড়িতে স্ত্রী স্মৃতি ও শ‌্যালক বেদারুল আহসান বেদারসহ দুই-একজন ছাড়া আর কোনো স্বজন ছিলেন না। বেশ কয়েকজন গৃহকর্মী ও গাড়িচালক ছিলেনও তখন বাড়িতে।

প্রত‌্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা অনুযায়ী, সেদিন সন্ধ‌্যায় পাঁচজন ঘাতক দুটি মোটর সাইকেলে এসেছিলেন। তাদের মধ‌্যে দুজন লিটনের সঙ্গে কথা বলে তার বৈঠকখানায় ঢুকেছিলেন। এরপরই গুলির শব্দ আসে।

ফাহমিদা বলেন, “এইভাবে গ্রামের মধ্যে এসে হত্যা করে যাওয়া এবং সেই সুযোগটা পাওয়া সব মিলিয়ে সব অ‌্যাঙ্গেল থেকে পুলিশ তদন্ত করে দেখুক। প্রত্যেকটা অ‌্যাঙ্গেলে তারা সার্চ করুক। আসলে কী ঘটনাটা।”

“লিটন আমার ভাই। হত্যাকারীর বিচার তো আমি চাইতেই পারি। যতদিন বেঁচে আছি। যতদিন বিচার না হয়, তত দিন বিচার চাইব,” বলতে বলতে কেঁদে ফেলেন ফাহমিদা।

বড় বোন তৌহিদা বুলবুল বলেন, “একবারে বাড়ি এসে মেরে যাওয়া। এটা সহ্যও করতে পাচ্ছি না। আবার কিছুটা ভয়ও পাচ্ছি। আবার ও (কাকলী) বাদী হয়েছে। ওকে আবার টার্গে টকরবে কি না?

“আমাদের এক তরফ থেকে বলাও হয়েছে- ‘আপনারা ভাই-বোনেরা একটু সেইফ থাকেন।”

লিটনের স্ত্রী গাইবান্ধার মহিলা আওয়ামী লীগের নেত্রী স্মৃতি বলেন, ১৯৯৮ সালের সুন্দরগঞ্জে গোলাম আযমকে নিয়ে জামায়াতের এক সমাবেশ পণ্ড করে দিয়েছিলেন লিটন। তার জের ধরেই তাকে হত‌্যা করা হয়েছে।

“সে সময় তার (লিটনের) গুলিতে আহত জামায়াতের ফতেখাঁ গ্রামের ক্যাডার হেফজসহ আরও দুর্ধর্ষ জামায়াত ক্যাডাররা লিটনকে মোবাইলে মেসেজ পাঠিয়ে এবং ফোন করে দীর্ঘদিন থেকেই হত্যার হুমকি দিয়ে আসছিল।”

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে স্মৃতি বলেন, ২০১৫ সালের ২ অক্টোবর শিশু শাহাদত হোসেন সৌরভকে গুলি ছোড়ার ‘একটি পরিকল্পিত মিথ্যা ঘটনাকে’ কেন্দ্র করে এমপি লিটনের লাইসেন্সকৃত রিভলবার ও শটগান জব্দ করে নেওয়া হয়।

“জামায়াত-শিবির চক্র জানত, তার বাড়িতে তাদের প্রতিরোধ করার মতো কোন অস্ত্র এখন আর নেই। সেই সুযোগে বাড়িতে এসে পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যা করতে সাহস পেয়েছে।”

শিশু শাহাদাত হোসেন সৌরভকে গুলি করার মামলায় গত বছর গ্রেপ্তার হয়ে কিছুদিন কারাগারে থেকে জামিনে ছাড়া পেয়েছিলেন লিটন।

প্রতিদিন বিকালে অনেক নেতা-কর্মী তাদের বাড়িতে থাকত। পুলিশ পাহারার ব্যবস্থাও ছিল রাতে। সাধারণত সন্ধ্যার আগেই নেতা-কর্মীদের নিয়ে লিটন তার বাড়ি থেকে বেরিয়ে বামনডাঙ্গা রেল স্টেশন সংলগ্ন তার অফিসে গিয়ে বসতেন। রাত ৯টা থেকে ১০টা অবধি সেখানে থাকতেন তিনি।

স্মৃতি বলেন, “কিন্তু কেন জানিনা সেদিন কোন নেতাকর্মী তার বাড়িতে ছিল না।”

লিটনের স্ত্রী জানান, বাড়িতে তখন তিনি, তার ভাই বেদার, ভাগ্নি মারুফা সুলতানা শিমু, চাচি শামীম আরাসহ কয়েকজন গৃহকর্মী ছিলেন।

“আমি ও আমার ভাই উঠানের রান্না ঘরের কাছে ছিলাম। তখন গুলির শব্দ শুনতে পাই। তিনি (লিটন) ঘর থেকে ভেতর দরজা দিয়ে বেরিয়ে এসে বলে, ওরা আমাকে গুলি করেছে, আগে ওদের ধর। তিনি বুকে হাত দিয়ে ছিলেন, বুকের বাম পাশ দিয়ে রক্ত ঝরছিল।”

লিটনের চিৎকার শুনে গাড়িচালক ফোরকান মিয়া হামলাকারীদের ধরতে গিয়েছিলেন বলে স্মৃতি জানান। লিটনকে নিয়ে স্মৃতি, ইসমাইল ও বেদার বেরিয়ে আসেন। গাড়ি ও চালক না থাকায় একটি মোটর সাইকেলের মাঝখানে বসিয়ে লিটনকে নিয়ে হাসপাতালে রওনা হন তারা। কিন্তু এর মধ‌্যে গাড়িচালক ফিরে আসে।

ডিএস


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ