বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৫ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ৯ শাওয়াল ১৪৪৫

শিরোনাম :
খাদেম-ক্লিনার ও শিক্ষক নিয়োগ দেবে ‘গ্লোবাল এডুকেশন ইনস্টিটিউট’ স্বাধীন দেশে অবৈধ অস্ত্রধারী সংগঠন থাকবে না: র‍্যাব মহাপরিচালক  মার্চে ৫৫২ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৫৬৫, আহত ১২২৮ ইরানের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ফোনালাপ পুতিনের তেজগাঁও আল-জামিয়াতুল ইসলামিয়া বায়তুল আমান মাদরাসায় ভর্তি শুরু আগামীকাল   ইরানের হামলার জন্য নেতানিয়াহুই দায়ী: এরদোগান ঝালকাঠিতে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত বেড়ে ১৪, ট্রাকচালক আটক ইসরায়েলে হামলার বিষয়ে যা বললেন ইরানের প্রেসিডেন্ট রাইসি ঘুমন্ত স্বামীর গোপনাঙ্গ কেটে পালালেন স্ত্রী ইরান-ই’সরায়েল যুদ্ধের পরিস্থিতির আলোকে প্রস্তুতি নিতে মন্ত্রীদের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

তৃণমূল থেকে শীর্ষ পর্যায়ে ঘুরেফিরে জামায়াতের নাম

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

litonআওয়ার ইসলাম: সাংসদ মনজুরুল ইসলাম লিটন হত্যায় সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে সরকারি দলের তৃণমূল পর্যন্ত জামায়াতকে দায়ী করা হচ্ছে। তবে মামলার তদন্ত কর্মকর্তারা এমন কিছু প্রশ্নের মুখোমুখি হচ্ছেন, যার জবাব মিলছে না।

গতকাল সোমবার সুন্দরগঞ্জের বামনডাঙ্গায় বাবার কবরের পাশে দাফন করা হয়েছে মনজুরুল ইসলামকে। ওই ঘটনায় সন্দেহভাজন ৩৩ জনকে আটকের কথা জানিয়েছে পুলিশ, যাদের মধ্যে রোববার রাত থেকে সোমবার পর্যন্ত ১৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের প্রায় সবাই জামায়াতের স্থানীয় রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।

স্থানীয় বিভিন্ন সূত্র বলছে, আতঙ্কে জামায়াত নেতা-কর্মীদের অনেকেই এলাকা ছেড়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় বলেছেন, ‘জামায়াতের বিরুদ্ধে লড়াই করে লিটন সেখানে দলকে একটা পর্যায়ে নিয়েছিল। সে একাধিকবার হামলার শিকারও হয়েছে। সর্বশেষ সে যখন হামলার শিকার হয়, তখন কেবল শিশুটির গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর গণমাধ্যমে এসেছে। কিন্তু সে যে আক্রান্ত হয়ে গুলি করেছিল, এটা তখন কেউ বলেনি।’
সাংসদ মনজুরুল ইসলাম হত্যাশিশু গুলিবিদ্ধ হওয়ার ওই ঘটনায় সমালোচিত হলেও শেষ বেলায় চোখের পানিতে তাঁকে বিদায় জানিয়েছেন দলের হাজারো কর্মী-সমর্থক। সাংসদকে হত্যার প্রতিবাদে এবং হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে রোববার থেকেই সুন্দরগঞ্জে হরতাল চলছে।

গতকাল সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় বিক্ষোভ করেছে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলো। বামনডাঙ্গা স্টেশনে ট্রেন আটকে রেখে দিনভর সান্তাহার-রংপুর-লালমনিরহাট রেলপথ অবরোধ করে রাখা হয়।
গত শনিবার সন্ধ্যায় গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের বামনডাঙ্গায় নিজ বাড়িতে গুলি করে হত্যা করা হয় মনজুরুলকে। পুলিশ এখন পর্যন্ত

হত্যার উদ্দেশ্য ও হত্যাকারীদের সম্পর্কে ধারণা পায়নি। ঘরের ভেতর থেকে তাঁকে গুলি করা হয়েছে, নাকি বাইরে থেকে—এই প্রশ্নের জবাবও গতকাল পর্যন্ত মেলেনি। আবার অজ্ঞাতনামা হত্যাকারীরা ঘরে ঢোকার পর সাংসদের স্ত্রী ও শ্যালক স্বেচ্ছায় বাইরে গেলেন, নাকি সাংসদই তাঁদের বাইরে যেতে বলেছিলেন, তা-ও পরিষ্কার নয়। আবার সাংসদের স্ত্রী জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের নেতা হলেও মামলার বাদী কেন সাংসদের বোন হলেন, তা নিয়ে স্থানীয় ব্যক্তিদের কেউ কেউ প্রশ্ন তুলছেন। যদিও সাংসদের স্ত্রীর সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন নেই। পুলিশ জানায়, দু-এক দিনের মধ্যে এসব প্রশ্নের জবাব পাওয়া যাবে।

পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা দফায় দফায় ঘটনাস্থল ঘুরে দেখেছেন। ঘটনাস্থল থেকে তিনটি গুলির খোসা ও দুটি ব্যবহৃত গুলির পিলেট (সামনের অংশ) উদ্ধার করা হয়েছে। এগুলো ৭.৬৫ এমএম পিস্তলের গুলি। এর আগে গত বছর রংপুরে জাপানি নাগরিক কুনিও হোশি হত্যায় একই মাপের গুলি ব্যবহার করেছিল হত্যাকারীরা। তবে পুলিশের আরেকটি সূত্র জানায়, সন্ত্রাসীরা সাধারণত একই ধরনের ক্ষুদ্র অস্ত্র ব্যবহার করে।
মন্ত্রিসভার বৈঠকে আলোচনা
প্রথম আলোর বিশেষ প্রতিনিধি জানান, গতকাল মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে সাংসদ মনজুরুল ইসলামের মৃত্যুতে শোক প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক মন্ত্রী প্রথম আলোকে বলেন, শোক প্রস্তাব গ্রহণের পর প্রথমেই কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, এই জঘন্য হত্যাকাণ্ডের প্লট অনেক দিন ধরে তৈরি করা হয়েছে। জামায়াত-অধ্যুষিত ওই এলাকায় লিটনের ভূমিকার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, হত্যাকারীকে চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে এখন এমন অবস্থা নেই যে একজন সাংসদকে এভাবে হত্যার শিকার হতে হবে। এটি পরিকল্পিত হত্যা। এই হত্যার ক্ষেত্র অনেক দিন ধরেই তৈরি হয়েছে। যার ছেলে গুলিবিদ্ধ হয়েছে, সে নিশ্চয়ই এই হত্যাকাণ্ড ঘটায়নি। এ ঘটনাকে পুঁজি করে কারা এই হত্যাকাণ্ডের প্লট তৈরি করেছে, তা খুঁজে দেখা হচ্ছে।
মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংসদ মনজুরুলের মৃত্যুতে শোক প্রস্তাব গ্রহণের কথা জানান। তবে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, অনানুষ্ঠানিক আলোচনার বিষয়টি তিনি অবগত নন।
জানাজা ও দাফন
গতকাল সকালে জাতীয় সংসদ ভবনে জানাজা শেষে সাংসদের মরদেহ হেলিকপ্টারে করে সুন্দরগঞ্জের বামনডাঙ্গায় নেওয়া হয়। সেখানে কয়েক হাজার মানুষ তাঁর বাড়ি ও কলেজ মাঠের আশপাশে জড়ো হন। বিকেলে জানাজা শেষে বাবার কবরের পাশে তাঁকে দাফন করা হয়। জানাজা ও দাফনের সময় স্বজনদের কান্না ছড়িয়ে পড়ে অন্যদের মধ্যেও।
জানাজায় অংশ নিতে ঢাকা থেকে সুন্দরগঞ্জে এসেছিলেন ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া, হুইপ মাহাবুব আরা বেগম, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা জাহাঙ্গীর কবির নানক, বি এম মোজাম্মেল হক; ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাহমুদ হাসান রিপন প্রমুখ।
জানাজার আগে জাহাঙ্গীর কবির বলেন, জামায়াত-শিবির ও জঙ্গিগোষ্ঠী পরিকল্পিতভাবে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। এখানে জামায়াতের ঘাঁটি ছিল। সেই ঘাঁটি ভেঙে দিয়ে মনজুরুল মানুষের ভোটে সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন।
এর আগে সকাল ১০টার দিকে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় সাংসদের দ্বিতীয় জানাজা সম্পন্ন হয়েছে। তাঁর মরদেহে শ্রদ্ধা জানান রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাষ্ট্রপতির পক্ষ থেকে সাংসদের মরদেহে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান তাঁর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল সরোয়ার হোসেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শ্রদ্ধা জানান। প্রধানমন্ত্রীর পরে সাংসদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। এ সময় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, সাবেক মন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
তদন্তে অগ্রগতি নেই
গতকাল পর্যন্ত পুলিশ ৩৩ জন সন্দেহভাজনকে আটকের কথা জানালেও হত্যাকারীদের সম্পর্কে কোনো সূত্র পায়নি। জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল ফারুক প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটনে সব রকম চেষ্টা করছেন। এখন পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য কোনো তথ্য পাননি।
সুন্দরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতিয়ার রহমান প্রথম আলোকে বলেন, রোববার রাত থেকে সোমবার পর্যন্ত আরও ১৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। হত্যাকারীদের খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে।
সুন্দরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা প্রথম আলোকে বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যুক্তদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনার দাবি করছি আমরা।’
প্রকৃত খুনিদের আড়ালের চেষ্টা হচ্ছে: জামায়াত
জামায়াতে ইসলামী এক বিবৃতিতে বলেছে, প্রকৃত খুনিদের আড়াল করার জন্যই জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে জড়িয়ে উসকানিমূলক বক্তব্য দেওয়া হচ্ছে। দলটি বলেছে, আওয়ামী লীগের নেতাদের বক্তব্যে মনে হচ্ছে, তাঁরা রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার হীন উদ্দেশ্যেই জামায়াত-শিবিরের দিকে ইঙ্গিত দিয়ে বক্তব্য দিচ্ছেন। দলের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান এক বিবৃতিতে বলেন, উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপানোর লক্ষ্যে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বক্তব্য দেওয়া হচ্ছে। ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেন তিনি।প্রথম আলো

ডিএস


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ