বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১২ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫


ছোটগল্প: প্রজাপতি

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

abdullah_al_faim

© আবদুল্লাহ আল ফাহিম

গল্পের শুরু

গুড়িগুড়ি বৃষ্টি পড়ছে। তবে আকাশ তার স্বকীয়তা ধরে রেখেছে। ঘুম থেকে উঠে হঠাৎ বৃষ্টি দেখে হচকচিয়ে গেলো সুহিন। এমন বৃষ্টিতে এক কাপ কফি না হোক; চা হলেও চলে অন্তত। শীত শীত আবহাওয়ায় শীতল তাপমাত্রায় আগুনগরম কাপ স্পর্শ করে ধোঁয়া ওঠা চা, ভাবতেই রোমাঞ্চ অনুভূত হচ্ছে। তাই মুখে পানির হালকা ঝাপটা মেরে কাঁধে ব্যাগ নিয়ে বেরুলো সে। আর যথারীতি থামলো, বিখ্যাত "আজরফ টি-স্টল" এর সামনে। এ টি-স্টল নিয়ে এক বিখ্যাত তরুণ লেখকের গল্প লেখার পর বেশ নাম হয়েছে এর। যদিও লেখকের বর্ণনার সাথে অমিল ঘোষণা করতেই হয়তো এখানে বুড়ো মানুষদের আড্ডা জমে থাকে সারাদিন।
ঘড়ির দিকে তাকিয়ে সময় দেখে দিনের প্রথমবারের মত গুষ্টি উদ্ধার করলো প্রিন্সিপাল এর। ভাগ্য খারাপ থাকলে আরো কয়েকবার করতে হবে এ জঘন্য কাজ। করবেই না বা কেনো?
সাতটা বাজে কোন কলেজে ক্লাস শুরু হতে পারে, এখানে না এলে কল্পনাই করতে পারতো না সুহিন।

প্রমাণসাইজের মগভর্তি চা খেয়ে উঠে পড়লো সে। বিল দেওয়ার ফালতু ঝামেলায় পড়তে হয়না তাকে। নিজস্ব একটা মগ দেওয়ার পর মাসের শুরুতে টাকা দিয়ে দিলেই প্রতি সকালে একমগ বা চলতি কাপের আড়াই কাপ চা বানিয়েই রাখে আজরফ মিয়া। হাতঘড়ি দেখেই চোখটা বন্ধ করে ফেললো সুহিন, আজও কপালে খারাপি আছে।


"রোল কত তোমার?"
চশমার উপর দিয়ে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন 'রসখেঁকো' খ্যাত রসায়ন স্যার।
কাঁচুমাচু হয়ে উত্তর দিলো সুহিন,
"২০১, স্যার।"
স্যারের সামনে ভীতু ভীতু ভাব নিয়েই থাকতে হবে। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বকুনিই শুনতে চায় বা কে?
আরো কিছু অস্কারজয়ী অভিনয় করে অবশেষে ক্লাসে প্রবেশের অনুমতি পাওয়া গেলো। শেষ বেঞ্চের জানালার পাশের সিটটা ছাড়া আর কোন সিট খালি নেই। অগত্যা বাধ্য হয়েই বসতে হলো তিনতলার ক্লাসরুমের জানালার পাশে।
পেছনে বসার শোকে হতাশ হয়ে ঘাড় ফেরাতেই দৃষ্টি আটকে গেলো সুহিনের। তিনতলার জানালা থেকে পাশের গার্লস ক্যাম্পাসের নিচতলা ছাড়া আর কোন সুন্দর দৃশ্য দেখা যায়না। সুন্দর কারণ, ক্লাস থ্রি'র বাচ্চা-পিচ্চি; কিউট-এঞ্জেল মেয়েগুলো ঠিক বাগানের ফোটা ফুলের মতোই লাগে সুহিনের। কিন্তু আজ তাতে চোখ আটকেনি তার। চোখ আটকেছে প্রজাপতি দেখে!
মেয়েটার হাত নাড়ার ভঙ্গি দেখে প্রজাপতির ডানার কথা ছাড়া আর কিছুই মনে করতে পারছে না সুহিন, তুলনা দেওয়ার জন্য। কিন্তু স্ব-বয়সী প্রজাপতি থ্রি'র ফুলবাগানের পরিচর্যার দায়িত্বে কিভাবে আসলো?
"টু হান্ড্রেড ওয়ান।"
"টু হান্ড্রেড ওয়ান কি আছে?"
বেঞ্চমেটের ধাক্কায় 'রসখেঁকো'র কর্কশ কন্ঠটা কানে আসলো সুহিনের।
মাথা নিচু করে দিনের দ্বিতীয়বারের মতো গুষ্টি উদ্ধার করতে লাগলো স্যারের।

তিন মিনিট পর, মেয়েটার চেহারা বুঝা যাচ্ছে না। কিন্তু অবয়বটার প্রেমে পড়তে বাধ্য হবে সুরুচিবান যে কেউই। হাত নেড়ে নেড়ে কথার ঝুড়ি ফুটোচ্ছে নিশ্চয়ই। আর বাচ্চা এঞ্জেলগুলোও হাসছে খুব। পড়া শুরু করার আগে অবশ্য আরেকটা 'সিন' দেখলো সে। হালকা পায়ে একটা পিচ্চির ক্লাস থেকে পলায়ন। চোখের সামনে দিয়ে গেলেও কিছুই বললো না মেয়েটা। উহুঁ, মেয়েটা না।
মাথার দু'আঙুল উপর দিয়ে যাওয়া "ক্রোমাটোগ্রাফি" নিয়ে কর্কশ কন্ঠের লেকচার স্রোতে ভাসতে ভাসতে নাম দিয়ে ফেললো সুহিন।
প্রজাপতি।
মিস প্রজাপতিই ডাকবে সে মেয়েটাকে।


"তোর পায়ে পড়ি দোস্ত! আমি যামুনা।"
কথাটা শুনেই অগ্নিদৃষ্টি ফেললো সুহিন। আর চোখের দিকে তাকিয়েই চুপসে গেলো জাহিদ।
"আচ্ছা চল! যাচ্ছি।"
"এইতো আমার লক্ষ্মী জিহুটা। আগে রাজী হলে কি আর মাথায় চাটিটা খেতি?"
মেসেঞ্জারের পার্ফেক্ট Sad ইমোটার মত মুখ করে হাঁটা ধরলো জাহিদ। পেছনে হাঁটতে হাঁটতে সুহিন ভাবলো,
আজ যেভাবেই হোক তার চোখ চিনে নিতে হবে। নইলে এ বালিকাসমুদ্রে ড্রেস চিনে আর আলাদা করা যাবে না মিস প্রজাপতিকে।
তাই ঘড়ির দিকে তাকিয়ে জোরে পা চালালো সুহিন।


"গত সাতদিনেও চোখের দৃষ্টি উঠায়নি তোর প্রজাপতি।"
গার্লস ক্যাম্পাস থেকে অদূরে 'মামার চা-দোকান'এর কাপে চুমুক দিয়ে বললো জাহিদ।
"আর আজ কিনা ফুল নিয়ে এসেছিস প্রপোজ করতে?"
শুকনো একটা হাসি ছাড়া আর কিছুই বললো না সুহিন। এখন অবশ্য তার নিজেরও দুঃসাহস মনে হচ্ছে।
গত সাতদিন ধরেই খেয়াল করেছে সে, মিস প্রজাপতির সাথে ছায়ার মতো লেগেছিলো লম্বাটে এক মেয়ে। একেবারে হাত ধরেই হাটে দুজন।
আজও সাথে থাকার কথা নিশ্চয়ই। তবে থাকুক বা না থাকুক, আজ ফুলগুলো হাতে দিয়ে কিছু বলবেই সুহিন।
ইশ! আজ যদি একা আসতো সে।
কথাটা ভেবেই মাথা উপরে তুললো সুহিন। পরের কয়েক মিনিটের দৃশ্য চমকে দিলো দুজনকে।

জীবনের শুরু

"আফাখান বড্ড ভালা ছিলো। তয় ভালা মানুষরার কপালে সুখ সয়না। তাই এক্সিডেন্ট হইয়া আফার চোখ দুইডা লইয়া গেলো খোদায়।
ম্যাডামেরা ডাইকা বাচ্চাগুলান রে পড়াইবার লাইগা না কইলে অয়তো মইরাই যাইতো হেয় দুক্ষে।
আহারে! আম্রার খারাফ মাইনষের কপালেও এত্তো খারাবী থাহে না।"
আনমনে নিজ কথাগুলো বলছিলো যেন মামা চা-দোকান এর মামা।
আর "ব্লাইন্ড-হেল্পার" নামক ভাঁজ করা লাঠিটা খুলতে দেখে সুহিনের অবাক হওয়ার কফিনে শেষ পেরেকটা গেঁথে গেলো। তাই হাত থেকে ফুলগুলো পড়ে যাওয়াটা হয়তো খুব একটা অস্বাভাবিক মনে হলোনা তার নিজেরও। চা-দোকানের সামনে দিয়ে যাওয়া গমনপথের দিকে তাকিয়ে দ্রুত হিসেব কষে নিচ্ছে সুহিন।
পরিবার।
ক্যারিয়ার।
আর অপরদিকে, কয়েকদিনের ভালোলাগা।
নাহ!
এটা কোন রোমান্টিক গল্পের দৃশ্য নয়।
আর সে তেমন গল্পের নায়কও নয়।
সে সুহিন।
যাকে বাস্তবতার কাছে হার মানতে হয় বারবার।
তাই ঝাপসা হয়ে ওঠা চোখের উপর বিরক্ত হয়ে ফুল মাড়িয়ে বাসার পথে হাঁটা ধরে সুহিন। ঠিকমতো পড়ালেখা করে ক্যারিয়ার গড়তে হবে তাকে। নইলে প্রতিষ্ঠিত হয়ে আরেকজনের প্রেমিকাকে বিয়ে করবে সে কিভাবে?

জেএম


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ