শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৬ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১০ শাওয়াল ১৪৪৫


সুস্বাদু ফল আখরোট

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

*
akhrotএকটি বাণী চিরন্তন ও আখরোট
‘অন্যের ক্ষতিসাধনের ইচ্ছে করলে নিজের ক্ষতিই হয় বটে৷ যেমন আখরোট দেয়ালে মারলে দেয়ালের গায়ে নয়, নিজের গায়েই লাগে৷' কথাটি ফার্সি কবি আল্লামা শেখ সাদি রহ. রচিত ‘গুলিস্তা'র একটি কবিতাংশ৷
কবিতায় ‘আখরোট'-এর উপমা দিয়েছেন কবি৷ কিন্তু সেই ‘আখরোট'টা কী? খায় না মাথায় দেয়? জানতাম না কোনোদিন৷ শৈশব-কৌশোরে আরও বেশ কয়েকটি কিতাবে শব্দটির উদাহরণ পড়েছি৷ অজানা, অজ্ঞতায়ই রয়ে গেছে শব্দটির বিশ্লেষণভূমি৷
‘হুজুর, আখরোট কি?'
   ‘একটি ফল৷'
‘দেখতে কেমন?'
‘নিমের মতোন৷'
‘আর খেতে?'
‘ওরকমটাই হবে হয়তো৷'
শব্দটি নিয়ে কৌশোরে আমার এক প্রিয় উস্তাদের সঙ্গে এই ছিলো আমার বাচ্চাসূলভ প্রশ্নঝুরি৷
ছোটবেলা থেকেই নিমফলকে খুব ভয় পাই আমি৷ আমার স্কুলবেলার এক পড়শিবোন নিমফল দিয়ে ভাত মেখে খেতো৷ ওকে বলতাম, ‘নিমের মতোন তুইও তিতো হয়ে যাচ্ছিস দিনদিন৷ তোর সঙ্গে আর মিশবো না৷' দশহাত দূরে থাকতাম তাই ওর থেকে৷
‘আখরোট' যদি নিমের মতো হয় দেখতে, আর নিমের মতোই হয় খেতে, তাহলে এই অপছন্দের ফলটি নিয়ে আমার আর মাথাব্যথার দরকার নেই৷ ওই পড়শিবোনের মতোন দশহাত দূরে দূরেই থাকতাম অজ্ঞভুমিতে৷
.
দেওবন্দি দাওয়াত ও আখরোট
‘তোমহারে সাথ মোলাকাত কারনে কা বড়া শৌক হে৷' গতকাল এক আফগানি বন্ধু ফোন করে দাওয়াত দিলো ওর কামরায়৷ ‘পাঁচ মিনিটকে আন্দার আঁ রাহা হুঁঁ ইয়ার!' গ্রহণ করলাম নেমন্তন্ন৷
দুদিন হলো ঘর থেকে এসেছে আফগানি৷ সঙ্গে নিয়ে এসেছে অামার অচেনা শহর কাবুলের বাহারি খাবার৷ একেক করে পেশ করলো আমার সামনে৷ আমিও ‘না' করলাম না৷ কৌতূহলবশত প্রতিটার নাম জানতে চাইলাম৷ বেচারাও সব বলতে লাগলো৷ বাদামেরই আট কিসিমের নাম বাতলালো৷ বলতে বলতে হঠাৎ যখন ‘আখরোট'-এর নাম নিলো, তখন মনে মনে সেই শৈশবের ঘৃণা মাথা চারা দিয়ে ওঠলো৷ সেই পড়শিবোনটির তিতো চেহারাটি চোখের তারায় হাজির হলো৷
‘নেহি, এ অলা নেহি খা সাকতা ম্যায়৷' আখরোট খেতে সোজা অস্বীকৃতি জানালাম আমি৷ ও অনেক জোরাজুরি করলো তবু৷ শেষমেষ হাতে নিলাম ঘৃণাভরে৷ কিন্তু একী, ‘আখরোট'তো নিমের মতো দেখতে নয়! বিস্ময়ে চোখ আমার ছানাবড়া৷ হাতের তারায় রেখে ভাঙলাম৷ ভেতরের শাশটি মুখে দিয়ে চিবোতে লাগলাম৷ বাহ, দারুণ তো! দেখতেও মনকাড়া, এর স্বাদও ভিন্ন৷ তাহলে এতোদিন যাবত এর প্রতিই কী আমার ঘৃণা ছিলো!?
.
আখরোটের আকৃতি ও গুণাগুণ
‘আখরোট' ফলটি বাদাম জাতীয়৷ কিন্তু সাইজটা বাদামের আট ডবল৷ দেখতে নারকেলের ছোটভাই৷ শুকনো ঝুনঝুনে৷ কিন্তু হাতে নিয়ে বাজাতে চাইলে বাজে না৷ ওজনে অনেক হালকা৷ দেয়ালে মারলে উল্টো নিজের প্রতি এন্ট্রি মারে৷ দুহাতের তারায় রেখে চাপ দিতে হয়৷ অমনিই খুলে যায়৷ ভেতরের শাশটি কামরাঙার মতো দেখতে৷ কিন্তু রঙটা একদম দুধেল সাদা৷ ওপরে গায়ের রঙ শুকনো, ঝুনঝুনে নারকেলের মতোন৷ স্বাদে তিলের মতো৷ ঘ্রাণে সর্ষের মতো৷
মস্তিস্ক ঠাণ্ডা রাখতে ও সতেজ করতে ভারী উস্তাদ আজকের এই প্রিয় ফলটি৷ ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, বাহরাইন, সৌদি আরব, সাউথ আফ্রিকাসহ বেশ কয়েকটি দেশে উৎপন্ন হয় এটি৷ ভারতে প্রতি কেজির দাম দেড়শো রুপি৷
 .
লেখক : শিক্ষার্থী, দারুল উলুম দেওবন্দ, ভারত


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ