শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ।। ১৪ চৈত্র ১৪৩০ ।। ১৯ রমজান ১৪৪৫


এসেছে এক ভিখারি আজ

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

۞  সালাহউদ্দীন জাহাঙ্গীর

jamshed7

আমার ল্যাপটপে মাওলানা তারিক জামিল সাহেবের সাম্প্রতিক বয়ানের একটি ক্লিপ আছে। ইংল্যান্ডের ব্র্যাডফোর্ডের কোনো এক দীনি মজলিসে বয়ান করেছিলেন। বয়ানের বিষয়বস্তু- কিছুদিন আগে করাচি বিমানবন্দরে জুনায়েদ জামশেদের ওপর বিদআতিদের অতর্কিত আক্রমণ এবং তাকে অপমানের চেষ্টা। তারিক জামিল সাহেব জুনায়েদ জামশেদের কথা বলছিলেন আর অঝোর ধারায় কাঁদছিলেন। এতো পরিমাণ কাঁদছিলেন যে তার কণ্ঠ রুদ্ধ হয়ে আসছিলো। বয়ানের মাঝে মাঝেই তিনি থেমে যাচ্ছিলেন।

এ বয়ানটি যখনই শুনি, আমার চোখও জলে পূর্ণ হয়ে উঠে।

জুনায়েদ জামশেদের মৃত্যুর খবরটা দেখার সঙ্গে সঙ্গে চোখের তারায় প্রথম ভেসে উঠলো তারিক জামিল সাহেবের কান্নাভেজা মুখটা। ভাবলাম, জুনায়েদ জামশেদকে সামান্য অপমানে যে মানুষটি এভাবে কেঁদে উঠেছিলেন, জুনায়েদের মৃত্যু এই মানুষটি কীভাবে সহ্য করবেন? জুনায়েদের এমন মর্মান্তিক মৃত্যুর শোক কীভাবে তিনি কাটিয়ে উঠবেন? আবার যখন মিম্বারে বসবেন, জুনায়েদ জামশেদের কথা যখন মনে পড়বে, তিনি হয়তো মিনিটের পর মিনিট কথাই বলতে পারবেন না। শুধু চোখের অশ্রুজলে লেখা হবে ভালোবাসার কথামালা।

মুফতি তকি উসমানি সাহেবকে আমরা সবাই জানি একজন আইনজ্ঞ হিসেবে, ইসলামি আইনের সবচে অভিজ্ঞজন হিসেবে তিনি বিশ্বব্যাপী পরিচিত। কী কারণে কে জানে, জুনায়েদ জামশেদের জন্য একদিন তিনি একটি গান লিখলেন-

ইলাহি তেরি চৌখাট পর

ভিখারি বন কে আয়া হো...

পাকিস্তানের সবচেয়ে বিখ্যাত গায়ক জুনায়েদ জামশেদ ততোদিনে গান-বাজনা ছেড়ে দিয়ে পুরোদস্তুর তাবলিগওয়ালা। ফর্সা গালে ইয়া লম্বা দাড়ি, গায়ে আজানুলম্বা পাঞ্জাবি। এমন বেশভূষার জুনায়েদ যদি ফের গান গায়, মানুষ কীভাবে নেবে বিষয়টি? তাবলিগের ইমেজও তো ক্ষুণ্ন হবে! কিন্তু তকি উসমানির লেখা গান! কীভাবে তিনি ফিরিয়ে দেবেন? গাইলেন। এবং এ গান একসময় সারা পৃথিবীর মুসলিম তরুণদের জাতীয় সংগীতে পরিণত হয়ে গেলো।

এভাবেই জুনায়েদ জামশেদ পরিণত হলেন বিশ্ব মুসলিম তারুণ্যের এক রোল মডেলে।

আরো পড়ুন

঳ পাকিস্তানে বিমান বিধ্বস্ত; যাত্রীদের মধ্যে আছেন জুনায়েদ জামশেদও

঳ থেমে গেল হৃদয় শীতল করা সুর

঳ যেভাবে তিনি জুনায়েদ জামশেদ

আধুনিক পৃথিবীর মুসলিম তরুণদের কাছে জুনায়েদ জামশেদ একটা আইকন। তিনি মুসলিম তারুণ্যের জন্য একটা সিম্বলের কাজ করেছেন। যে তারিক জামিল সাহেব তাকে অন্ধকারের গলিত আঁধার থেকে আলোর পথে নিয়ে এসেছিলেন, সেই তারিক জামিল সাহেবকে তিনি নিরাশ করেননি। তার হাত ধরে পাকিস্তান, ইন্ডিয়া, বাংলাদেশের সেলিব্রেটি সমাজে তাবলিগের দাওয়াত সগৌরবে পৌঁছে যায়। এ কারণে জুনায়েদ জামশেদকে কেবলমাত্র একজন হামদ-নাত শিল্পী হিসেবে দেখলে তার দাওয়াতি অবদানের প্রতি অবিচারই করা হবে।

আজকের সমাজের বিত্তবানদের কাছে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছানোর যে জোয়ার শুরু হয়েছে, দাওয়াতে তাবলিগের এ কৃতিত্বকে অস্বীকার করার উপায় নেই। তেমনি এর পেছনে মাওলানা তারিক জামিল এবং জুনায়েদ জামশেদের অবদানকেও ছোট করে দেখার জো নেই।

জুনায়েদ জামশেদ আজ বিমান দুর্ঘটনায় দুনিয়া ছেড়ে চলে গেলেন। আল্লাহ তাকে জান্নাতের সর্বোচ্চ স্থান দান করুন।

তিনি চলে গেলেও যে আইকনিক সিম্বল তিনি মুসলিম তরুণ সমাজের জন্য রেখে গেলেন, তা যুগ যুগ ধরে জাগরুক থাকবে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে। যে সুরের মায়াজালে তিনি রাসুলে মদিনার ছবি এঁকেছিলেন শত সহস্র মুসলিম হৃদয়ে, তা অনন্তকাল ধরে অশ্রুজলে বিধৌত করবে তার কবরগাহ। সারা পৃথিবীর কোথাও না কোথাও, কোন না কোনো মুমিন হৃদয়ে বাজতে থাকবে-

এ আঁখে খুশক হ্যায়

ইয়া রব ইনহে রুনা নেহি আতা...

‘আয় আল্লাহ! এই দুনিয়ার এক যুবক তোমার দরবারে ভিখারি সেজে এসেছিলো। সকল খ্যাতি-নাম-যশ বিসর্জন দিয়ে তোমার চৌকাঠে মাথানত করেছিলো। আজ সে সত্যিকারের ভিখারি হয়ে তোমার দরবারে কড়া নাড়ছে, তুমি তাকে ফিরিয়ে দিও না। তোমার ভালোবাসার চাদরের এক কোণায় তার জন্য লিখে দিও- মাগফেরাত, ইয়া রাব্বানা!’

আরআর

জুনায়েদ জামশেদ সম্পর্কে আরো খবর ও লেখা পড়তে আওয়ার ইসলামের থাকুন.. 

 


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ