শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫


যুক্তরাষ্ট্রের দরজা মুসলমানদের জন্য বন্ধ হতে যাচ্ছে?

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

americaআওয়ার ইসলাম:   বিভিন্ন দেশের নাগরিক যাদের জঙ্গিক্ষেত্রে অর্থায়ন-প্রশিক্ষণ ও আশ্রয়দাতা হিসেবে সন্দেহের তালিকায় নাম আছে  যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসনের ক্ষেত্রে ট্রাম্প প্রশাসন তাদের  নিষেধাজ্ঞা আরোপের পরিকল্পনা করতে যাচ্ছে।

মার্কিন সংবিধান মেনে গঠিত ট্রাম্পের অন্তবর্তী দলের মনোনীত চিফ অব স্টাফ রেঞ্চ প্রিয়েবাস মুসলিম দেশগুলোর দিকে ইঙ্গিত করে এই মন্তব্য করেন। তিনি দাবি করেন, অভিবাসীদের ধর্মভিত্তিক নিবন্ধনের পরিকল্পনা নেই ট্রাম্প প্রশাসনের। সামগ্রিকভাবে ইসলাম নিয়ে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গীও। তবে অভিবাসী বাছাইয়ের ভালো ব্যবস্থা না থাকায় বিভিন্ন মুসলিম দেশের নাগরিকদের ক্ষেত্রে ঢালাওভাবে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা নেমে আসতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন হোয়াইট হাউসের শীর্ষ কর্মকর্তা হতে যাওয়া এই রক্ষণশীল ব্যক্তি।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন এবং এনবিসি নিউজকে দেওয়া পৃথক পৃথক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প প্রশাসনের অভিবাসন নীতির রূপরেখা তুলে ধরেন তিনি। এতে আগামি দিনের অভিবাসন নীতিতে ব্যাপক কঠোরতার আভাস পাওয়া যায়।

ট্রাম্পের অন্তবর্তী প্রশাসনের শীর্ষ ব্যক্তিদের ইসলাম বিদ্বেষ আর সাম্প্রতিক সব মন্তব্যে একটি প্রশ্ন জোরালো হয়ে উঠেছে। তা হলো মুসলমানদের জন্য দেশটি সত্যিই দরজা বন্ধ করে দিতে যাচ্ছে কিনা। রাজনীতি বিশ্লেষকরাও মনে করেন, অভিবাসীদের বিতাড়িত করা কিংবা তাদেরকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে বাধা দেওয়ার ক্ষেত্রে ট্রাম্প প্রশাসন সর্বোচ্চ কঠোরতা আরোপ করতে পারে। সবমিলে যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন অভিবাসনীতি নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।

উল্লেখ্য, ট্রাম্প প্রশাসনের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবে মনোনীত লেফটেন্যান্ট জেনারেল মাইকেল ফ্লিনের সাম্প্রতিক এক মুসলিমবিদ্বেষী মন্তব্য নিয়ে তোলপাড় চলছে যুক্তরাষ্ট্রে। ক’দিন আগে তিনি মন্তব্য করেন, মুসলিমদের ভয় পাওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। রবিবার (২০ নভেম্বর) মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন-এর ‘স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন’ অনুষ্ঠানে প্রিয়েবাসের কাছে ফ্লিনের ওই মন্তব্যের ব্যাপারে জানতে চাওয়া হয়।

pr

নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনে মুসলিমবিরোধীদের প্রাবল্য থেকে আশঙ্কা করা হচ্ছে হোয়াইট হাউসও মুসলিমবিরোধী হয়ে যেতে পারে, আর এতে মুসলমান অভিবাসীরাই সবচেয়ে বেশি রোষের স্বীকার হতে পারেন। তিন কট্টর মুসলিমবিদ্বেষীকে নিয়ে উদ্বেগে রয়েছে মুসলিম বিশ্ব, বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে এক ধরনের আতঙ্ক বিরাজ করছে। অভিবাসন প্রশ্নে প্রিয়েবাসের রবিবারের মন্তব্য সেই আশঙ্কাকেই আরও বাড়িয়ে তুলেছে। অ্যাটর্নি জেনারেল, সিআইএ-র ডিরেক্টর ও সম্ভাব্য জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার মতো শীর্ষ তিন পদে ট্রাম্প মুসলিমবিরোধী তিন ব্যক্তিকে বসিয়েছেন।


মার্কিন মানবাধিকার সংগঠনগুলির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল মাইকেল ফ্লিনকে নতুন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবে মনোনীত করায় সবচেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন মুসলিমরা। মার্কিন প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা এজেন্সির সাবেক প্রধান ফ্লিন এর আগে বেশ কয়েক বার মুসলিমদের ‘ক্যান্সার’ রোগের সঙ্গে তুলনা করে বলেছিলেন, ‘আমেরিকায় মুসলিমদের সম্পর্কে যে ভয়টা রয়েছে তা যৌক্তিক।’

মানবাধিকার সংগঠনগুলোর আপত্তির দ্বিতীয় কারণ, সিনেটর জেফ সেশনস। ট্রাম্প যাকে পরবর্তী অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে নির্বাচিত করেছেন। যিনি প্যারিস হামলার ঘটনার পর আমেরিকায় সাময়িকভাবে মুসলিমদের প্রবেশের বিরোধিতা করেছিলেন। আর ইসলাম ধর্মকে বলেছিলেন ‘বিষাক্ত মতাদর্শ’।

উদ্বেগের তৃতীয় কারণ, ট্রাম্প যাকে সিআইএ-র নতুন ডিরেক্টর করছেন তিনি মাইক পম্পিও। যিনি মিশরের একটি মুসলিম সংগঠন ‘মুসলিম ব্রাদারহুড’কে যুক্তরাষ্ট্রে নিষিদ্ধ করার বিল প্রস্তাবের ক্ষেত্রে মূল ভূমিকা নিয়েছিলেন।


রক্ষণশীল মতাদর্শ ফেরি করা অভিবাসন নীতি বিষয়ক অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান ফেডারেল অব আমেরিকান ইমিগ্রেশন রিফর্ম (ফেয়ার)-এর প্রেসিডেন্ট ড্যান স্টেইন। ট্রাম্পের অন্তবর্তী দলের ঘনিষ্ঠ ওই রক্ষণশীল বিশ্লেষক মনে করেন, ওমাবা প্রশাসনের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী অভ্যন্তরীণ অভিবাসী বিতাড়নে গতি আনতে এবং বিতাড়ন-যন্ত্রগুলোকে আরও ধারালো ও শক্তিশালী করতে বিপুল পরিমাণে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারে মনোনিবেশ করতে পারে ট্রাম্প প্রশাসন।

গার্ডিয়ানকে ড্যান স্ট্নে আভাস দিয়েছেন, নাটকীয়ভাবে অভিবাসন-বিষয়ক বিচারপতির সংখ্যা বাড়ানো, রিভিউ-এর সুযোগ সংকুচিত করা, অভিবাসন বিষয়ক আপিল বোর্ডে সম্ভাব্য পরিবর্তনসহ বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক প্রক্রিয়ায় এই পরিবর্তন আনতে পারে ট্রাম্প প্রশাসন।

এবিআর


সম্পর্কিত খবর