শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ।। ১৫ চৈত্র ১৪৩০ ।। ১৯ রমজান ১৪৪৫


’চলছে হত্যাযজ্ঞ; কোথাও ঠাঁই নেই রোহিঙ্গাদের’

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আকবর হোসেন

ruhinga

কক্সবাজারের কুতুপালংয়ে একটি শরণার্থী শিবিরে দশ বছর ধরে বসবাস করছেন মোহাম্মদ নূর। তার জন্ম ও বেড়ে ওঠা মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশের মংডুর উত্তরাঞ্চলীয় একটি গ্রামে।

তার মা ও বোন এখনও সেখানে থাকেন। গত সাত দিন ধরে মা-বোনের সাথে কোন যোগাযোগ নেই মি. নূরের।

খুবই উদ্বিগ্ন তিনি। রাখাইনে সেনা অভিযানের যেসব খবরাখবর তিনি পাচ্ছেন, তাতে উদ্বিগ্ন হবারই কথা।

তাদের বাংলাদেশে নিয়ে এলেই তো পারেন?

এমন প্রশ্নের জবাবে মি. নূরের বক্তব্য, কিভাবে আনবো? বর্ডারের যে অবস্থা? গত দুই বছরে আমাদের ক্যাম্পে নতুন করে একজন রোহিঙ্গাও আসেনি। স্থানীয় টানের ভাঙ্গা ভাঙ্গা বাংলায় বলছিলেন মোহাম্মদ নূর।

কিন্তু গত ৯ই অক্টোবর থেকে রাখাইনে যে সেনা অভিযান চলছে, তারপর থেকে বহু রোহিঙ্গা মুসলমান প্রাণভয়ে এলাকা ছেড়ে পালাচ্ছে, এমন খবর গত ক'দিন ধরেই আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোতে আসছে।

এদের মধ্যে অনেকেই বাংলাদেশে আসার চেষ্টা করেছে এমন খবরও আছে এবং বাংলাদেশের বর্ডার গার্ড ও সরকারি কর্মকর্তারা বিবিসির কাছে নিশ্চিত করেছেন যে অবৈধভাবে আসা কাউকেই ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না।

 

মিয়ানমারে সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীমিয়ানমারে সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা প্রায়ই রোহিঙ্গাদের সাথে সংঘাত করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

 

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আলী হোসেন বলছেন, তারা সীমান্তে নজরদারি আরও জোরদার করেছেন।

বৈধ কাগজপত্র ছাড়া বাংলাদেশে কোন ধরণের প্রবেশ ঠেকাতেই তারা বদ্ধপরিকর বলে জানালেন।

অবশ্য গত তিন দিন ধরে নাফ নদী দিয়ে নৌকা ভরে বাংলাদেশে আশ্রয়ের জন্য আসা শত শত রোহিঙ্গাকে 'পুশব্যাক' করার খবর বিভিন্ন গণমাধ্যম দিলেও, টেকনাফে বিজিবির একজন কর্মকর্তা একদিন আগেই বিবিসির কাছে 'কিছু কিছু অনুপ্রবেশের চেষ্টা প্রতিহত' করার কথা স্বীকার করেন। কিন্তু সেটা কী পরিমাণ, তাদের সংখ্যা কত - তা স্পষ্ট নয়।

আন্তর্জাতিক অভিবাসন নিয়ে কাজ করে এরকম একটি সংস্থার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেছেন, বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সাথে যে সীমান্ত আছে তার পুরোটা বন্ধ করে রাখার মত জনবল বাংলাদেশের নেই।

ফলে প্রাণভয়ে ভীত বহু সংখ্যক রোহিঙ্গাই বাংলাদেশে ঢুকে পড়তে পারছে এবং তাদের মধ্যে কিছু সংখ্যককে এই সংস্থাটি দেখভাল করছে বলেও উল্লেখ করছিলেন ওই কর্মকর্তা।

তবে প্রাণ বাঁচাতে রাখাইন থেকে পালিয়ে আসাদের বেশীরভাগই বাংলাদেশে ঢুকতে ব্যর্থ হচ্ছে, যাদের সংখ্যা হাজার হাজারও হতে পারে, বলছিলেন টেকনাফের একজন ব্যবসায়ী দিদার হোসেন। তিনি মূলত মিয়ানমার থেকে বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী বাংলাদেশে আমদানি করেন।

মি. হোসেন বলছিলেন, রাখাইনে সহিংসতা শুরু হবার পর থেকে মংডুর সাথে বাংলাদেশের ব্যবসা বাণিজ্য কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে।

মাঝখানে পুরো মিয়ানমারের সাথেই ব্যবসা বাণিজ্য বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এখন শুধু ইয়াঙ্গুনের সাথে কিছু কিছু ব্যবসা হচ্ছে।

 

জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কোফি আনানজাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কোফি আনান রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারে একটি কমিশনের প্রধান হিসেবে কাজ করছেন।

 

এদিকে বার্তা সংস্থা এএফপি জানাচ্ছে, রাখাইনে সেনাবাহিনীর 'হত্যাযজ্ঞ' এবং বহু রোহিঙ্গার বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কোফি আনান।

তাঁর নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি কমিশন এখন মিয়ানমারে আছে। দলটির আজ সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্ত একটি গ্রামে যাবার কথা রয়েছে।

যদিও মিয়ানমারের সেনাবাহিনী, রাখাইনে তাদের ভাষায় ৬৯ জন 'বাঙ্গালী' এবং 'সহিংস হামলাকারী' কে হত্যার কথা স্বীকার করেছে।

এ নিয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম অতিরঞ্জন করছে বলেও অভিযোগ করে সেনাবাহিনী।

কিন্তু ওই এলাকায় কাজ করেছেন বাংলাদেশের এমন একজন পদস্থ কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেছেন, সেনাবাহিনী ওখানে 'নির্বিচার হত্যাযজ্ঞ' চালাচ্ছে।

কোন সাহায্যকারী সংস্থাকে ত্রাণ নিয়ে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না বলেও উল্লেখ করেন ওই কর্মকর্তা।

ফলে রাখাইনের মূল বাসিন্দা যারা, সেই রোহিঙ্গা মুসলমানেরা ক্ষুৎপীড়িত অবস্থায় মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন।

এরই মধ্যে যারা মিয়ানমারের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিজিবি'র কড়া নজরদারি এড়িয়ে বাংলাদেশের দিকে চলে আসতে পারছেন, তাদেরকে এখান থেকে 'পুশব্যাক' করার ঘটনায় নতুন করে মানবিক পরিস্থিতির মুখে পড়ছেন তারা।

এ নিয়ে একেবারেই মুখ খুলছে না বাংলাদেশের সরকার।

তবে স্থানীয় পর্যায়ের একজন দায়িত্বশীল সরকারি কর্মকর্তাকে এই মানবিক পরিস্থিতির প্রসঙ্গে বিবিসিকে বলেছেন, "মানবিক দিক কেন শুধু বাংলাদেশ দেখবে। মিয়ানমারের কি কোন দায়িত্ব নেই? তাদেরকে কেন কেউ বলছে না?"

সূত্র: বিবিসি বাংলা


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ