শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫


আশুরাচর্চায় প্রয়োজন সুস্থতা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

ashura-gif৥ ছায়ীদ আল আরিফ

ইয়াওমুল আশুরা । ১০ মুহাররাম । দিনটির মর্যাদা অপরিসীম। অমর ইতিহাসজড়িত দিনটি পৃথিবীর ঊষাকাল হতে বয়ে আসছে সময়ের স্রোত ধরে আজ অবধি। মহত এ দিনে অস্তিত্ব দান করা হয় প্রথম মানব এবং নবি হযরত আদম আঃ এর। পৃথিবীর ভূখণ্ডেও তাঁকে প্রেরণ করা হয় মুহাররমের এ দশ
তারিখেই । অনুতপ্ত হয়ে শত শত বছর রোনাযারির পর এ তাৎপর্যমণ্ডিত দিনেই তাঁর তাওবা কবুল করা হয়। এ দিনে হযরত ইবরাহীম আঃ কে নমরুদের অগ্নিগহ্বর হতে পরিত্রাণ দেওয়া হয়। হযরত ইউনুস আ. কে মাছের পেট থেকে মুক্তি দেওয়া হয় এ শ্রেষ্ঠ দিনেই। এমনকি মানবতার শান্তির দূত
মহানবি হযরত মুহাম্মাদ সা. স্মৃতিবিজড়িত এ দিনেই দুনিয়ার জমিনে আগমণ করেন এবং তাঁর প্রাণবিয়োগের ইতিহাসও এ তারিখটির সঙ্গেই বিরহের সুতোয় গাঁথা। এছাড়াও আরো অসংখ্য অগণিত ঘটনা-উপাখ্যানের রঙিন তুলিতে আঁকা আশুরার এ দিনটিইয়াওমুল আশুরা।

শুধু মুসলিমদের কাছে নয় অমুসলিম বিশেষ করে হযরত মূসা আ. এর সম্প্রদায় ইহুদিদের কাছেও এ দিনটি সমভাবে মর্যাদাপূর্ণ। ফেরাউনের নিদারুণ
অত্যাচার অনাচার থেকে তাদের মুক্তির গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস রচিত হয় এ মহান দিনে। অবসান ঘটে দাম্ভিক ও অত্যাচারী বাদশা ফেরাউনের। মহিম
রবের কৃতজ্ঞতা স্বরূপ মূসা আ.সহ তাঁর সম্প্রদায় তথা ইহুদিগণ এ দিনটিতে সাওম পালন আরম্ভ করেন। ইসলাম আগমনের পরও মদিনার ইহুদিদের সাওম পালনের সে ঐতিহাসিক ধারা অব্যাহত ছিলো।

মহানবি সা. সে বিষয় সম্পর্কে অবগত হলেন এবং ঘোষণা দিলেন ‘আনা আহাক্কু বি-মূসা মিনকুম’ অর্থাৎ আমি মূসা আ.'র অনুসরণের ব্যাপারে
তোমাদের চে' অধিক হকদার। তিনিও এরপর ইয়াওমে আশুরায় সাওম পালন শুরু করেন এবং উম্মতকে আদেশ করেন। তবে দিনটির আগে কিংবা পরে তিনি আরেকটি দিন মিলিয়ে মোট দুটি সাওমের নির্দেশ দেন।

অর্থাৎ নয় ও দশ অথবা দশ ও এগারো এভাবে মিলিয়ে সাওম দুটি পালন করতে হয়। শারয়ী বিধান হিসাবে রোজা দুটি নফল হলেও এর তাৎপর্য অসীম।
নবি সা. বলেন, যে ব্যক্তি আশুরার সাওম দুটি পালন করবে আল্লাহ তা'আলা তার পেছনের এক বছরের গুনাহ মাফ করে দিবেন। তাছাড়া শ্রেষ্ঠ চারটি
মাসের একটি এ মুহাররম যার বর্ণনা পবিত্র কুরআনে রয়েছে।

অন্যদিকে পুণ্যময় এ দিনে একটি ছিন্নমূল সম্প্রদায় আপন শরীর ক্ষত বিক্ষত করার ভ্রান্তযজ্ঞে লিপ্ত হয়ে স্রষ্টার নৈকট্য অর্জনের ব্যর্থ চেষ্টা চালায় এবং
মাতম করে 'হায় হুসাইন! হায় হুসাইন!' বলে। হযরত আলী রা. এর কনিষ্ঠ পুত্র হযরত হুসাইন রা.। ইয়াযিদী সৈন্যের হাতে ৬১ হিজরি সনের মুহাররমের এ দিনটিতেই তিনি কারবালার প্রান্তরে শাহাদাত বরণ করেন। এ ঘটনাকে যে কোনভাবে ধর্মীয় খাতে প্রবাহিত করা হয়। এভাবে উদ্ভব ঘটে এ মাতম-প্রথার। যা স্রেফ আবেগতাড়িত এবং মনগড়া আবিষ্কার। কোন রকমের যুক্তি ও দলিলের পরোয়া না করে এই আধুনিক সময়েও রীতিমতো পালন করা হচ্ছে এ ধ্বংসাত্মক প্রথা। যুক্তির আলোকে দেখলেও এটা আত্মঘাতী বৈ কিছু না।

পৃথিবীর এমন কোন ধর্ম কিংবা সভ্যতা নেই যেখানে আপন দেহের ক্ষতিসাধনের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। থাকলে, নিঃসন্দেহে সেটা কোন আদর্শ ধর্ম কিংবা সভ্যতা নয়। সুতরাং সকল ভ্রান্ত অসভ্য এবং আত্মঘাতী প্রথা থেকে ফিরে এসে সুস্থ সুন্দর এবং সঠিক ধারার ইসলাম চর্চাই একজন প্রকৃত মুসলিমের কর্তব্য।

উত্তরা, ঢাকা ১২/১০/১৬


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ