মাওলানা মুহাম্মদ সালমান। মাদরাসা দারুর রাশাদ মিরপুরের প্রিন্সিপাল। কওমি শিক্ষার পাশাপাশি জেনারেল শিক্ষাও রয়েছে এ প্রতিষ্ঠানে। প্রতিষ্ঠানটি বেফাকভুক্ত। দাওরায়ে হাদিসসহ অন্যান্য জামাতের কেন্দ্রীয় পরীক্ষা বেফাক বোর্ড থেকেই হয়। সম্প্রতি কওমি সনদের স্বীকৃতি চলমান সংকট ও উত্তরণের পথ ও পদ্ধতি নিয়ে তার সঙ্গে কথা বলেছেন আওয়ার ইসলামের বিশেষ প্রতিনিধি মোস্তফা ওয়াদুদ
মোস্তফা ওয়াদুদ : বর্তমানে কওমী সনদ নিয়ে আলেম উলামাদের মাঝে বিভেদ বিরাজ করছে। এমতাবস্থায় আপনার কি বক্তব্য? কওমি সনদের স্বীকৃতি চান কি চান না?
মাওলানা মুহাম্মদ সালমান : আমরা স্বীকৃতি চাই। তবে বর্তমানে আমাদের দেশের উলামায়ে কেরাম দুটি ভাগ হয়ে গিয়েছে। এভাবে ভাগ না হয়ে একসাথে হয়ে আমরা স্বীকৃতি নিতে চাই। স্বীকৃতি নেয়ার প্রয়োজন অনেক আগেই অনুভব করেছি। সর্বপ্রথম যখন আলোচনা হয় তখনও আমি স্বীকৃতির পক্ষেই ছিলাম। শায়খুল হাদীস সাহেব ও গওহরপুরী সাহেবের মাধ্যমে বেফাক অফিসে অনেক আগেই এসব আলোচনা হয়েছে। তবে তখন স্বীকৃতি হয়নি। এখন আমার খেয়াল হলো যদি একতাবদ্ধ হয়ে স্বীকৃতি নেয়া যায় তাহলে অনেক ভালো হয়। এখনো সময় আছে, দুই গ্রুপের মাঝে সমন্বয় করে, বা সমন্বয়ের চেষ্টা চালিয়ে স্বীকৃতি আদায় করা উচিত। যদি একতাবদ্ধ হয়ে নেয়া যায় তাহলে আমাদের স্বকীয়তা রক্ষা, সরকারের উপর চাপ প্রয়োগের সুযোগ এবং মজবুত একটি কমিশন গঠন করা সম্ভব হবে। আর যদি বিচ্ছিন্নভাবে নেয়া হয় তাহলে জিনিসটা একটু হালকা হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।
বাংলাদেশ স্বাধীন দেশ। এটা ইন্ডিয়া না। সরকার কি করে ফেলবে না করবে! এই যে একটা ভয় কাজ করে সবার ভেতর। আরে ভাই এটাতো একটা স্বাধীন দেশ। এদেশে কোনো কিছু করতে চাইলে আশা করা যায় সরকার সেটা আমাদের স্বকীয়তা বজায় রেখেই করবে।
মোস্তফা ওয়াদুদ : আমি একটু ক্লিয়ার হতে চাচ্ছি। আপনি একটু আগে দুটো গ্রুপের কথা বলছিলেন। তো এ দুটো গ্রুপ দ্বারা আপনি কাকে কাকে বুঝাচ্ছেন?
মাওলানা মুহাম্মদ সালমান : দুটো গ্রুপ বলতে মাওলানা ফরিদউদ্দীন মাসউদ সাহেব, রুহুল আমীন সাহেব এক গ্রুপ। আর একটা গ্রুপ হলো হাটহাজরী হযরত, মাওলানা আব্দুল জব্বার জাহানাবাদী সাহেব। বেফাকের সাথে যারা সম্পৃক্ত যারা।
মোস্তফা ওয়াদুদ : আপনার কথা ও বর্তমান পরিস্থিতি মিলিয়ে দেখা যায় কওমি অঙ্গনে বিশাল এক সংকট তৈরি হয়েছে। এ সংকট থেকে উত্তরণের মাধ্যম কী?
মাওলানা মুহাম্মদ সালমান : দু গ্রুপ একসাথে বসে নিজ নিজ অবস্থান থেকে কিছু কিছু ছাড় দিয়ে সমন্বয় করে যদি আনা যায় তাহলে আমি মনে করি সমাধানের পথ বেরিয়ে আসবে।
মোস্তফা ওয়াদুদ : এটার পদ্ধতি কী হবে? এটার পদ্ধতি এমন হতে পারে, মাওলারা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ থেকে পাঁচজনের একটি দল থাকবে। আর বেফাক থেকে পাঁচজনের একটি দল থাকবে। দু'দল মিলে বৈঠকের মাধ্যমে সমাধান খুঁজবে। মুরুব্বিরাতো প্রথমেই বসবেন না। বরং তাদের অধিনস্থ কিছু লোক মিলে বসবেন। তারা বুঝাপড়া করে মুরুব্বিদের এক জায়গায় বসানোর চেষ্টা করবেন।
মোস্তফা ওয়াদুদ : সরকার দাওরায়ে হাদিসকে এম.এ মান দিবে। প্রশ্ন হলো এ সার্টিফিকেট দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি পাওয়া যাবে কি না?
মাওলানা মুহাম্মদ সালমান : এটাতো সহজ বিষয়। আমাদেরতো এম.এ মান দিবে ঠিকাছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ইংরেজি বা অন্যান্য বিষয় পড়ানো হয়। সেসব তো মাদরাসায় পড়ানো হয়না। সর্বোচ্চ এটি দিয়ে ইসলামি স্টাডিজ বা আরবি কোনো সাবজেক্টে ভর্তি হওয়া যাবে। এরপর অন্য লাইনে যাওয়ার কোনো আগ্রহ থাকবে না। মাওলানা রুহুল আমীন সাহেব যে সিলেবাসটি তৈরি করেছেন সেটি আমরা দেখেছি। সেখানে মোটামুটি বাংলা ইংরেজি কিছু আছে। জেনারেল সিলেবাসে যেভাবে নিচের থেকে উপর পর্যন্ত সব বিষয় পড়ানো হয়। সেসবতো মাদরানায় নেই।
মোস্তফা ওয়াদুদ : আপনাদের দারুর রাশাদ মাদরাসা কি বেফাকভুক্ত?
মাওলানা মুহাম্মদ সালমান : জি বেফাকভুক্ত ।
মোস্তফা ওয়াদুদ : যদি কখনো এমন হয়, বেফাক স্বীকৃতি নেয়নি। অন্য গ্রুপ নিয়েছে। তাহলে আপনারা কার সাথে থাকবেন?
মাওলানা মুহাম্মদ সালমান : আমরাতো এখনো ন্যাশনাল বোর্ডে আছি। বেফাক যদি স্বীকৃতি না নেয় তাহলে আমাদের মাদরাসায় কোনো সমস্যা নেই। আমরা বর্তমানে যেভাবে বেফাকের পাশাপাশি ন্যাশনাল বোর্ডে অংশ নিচ্ছি। সেভাবে বেফাকেও অংশ নিবো। আমাদের মাঝে কোনো চেঞ্জ আসবে না।
মোস্তফা ওয়াদুদ : আপনি বলছিলেন উভয় গ্রুপ থেকে কয়েকজন মিলে বসলে একটা সমাধান সম্ভব। তো আপনি কি ব্যক্তিগতভাবে কাউকে নিয়ে বসার উদ্যোগ নিয়েছেন?
মাওলানা মুহাম্মদ সালমান : আমি নিজে থেকে মাওলানা মাহফুজুল হকসহ বেফাকের একটা মিটিংয়ে গিয়েছিলাম। তো সেখানে অনেক হুমকি ধমকি, তারা আসবে না। এরা যাবে না। তো এ অবস্থায় আমরা যারা মধ্যম সারির আছি, তারা চিন্তা করলাম কি করা যায়। তখন আমরা আলাপ আলোচনা করেছিলাম। মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ সাহেবের থেকে লোক আসছিলো। মাওলানা কাসেম সাহেব। মাওলানা এমদাদুল্লাহ সাহেব। তাদের সাথে বসে আমাদের আলাপ হয়েছিলো। মোটামুটি ভেতরে সমাধানের একটা প্রক্রিয়া তৈরির কাজ আমরা করছি।
আরো পড়ুন: শায়েখ বললেন ‘আদার ব্যাপারীর কাছে জাহাজের খবর নিতে এসেছেন’
আরআর