শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ।। ১৫ চৈত্র ১৪৩০ ।। ১৯ রমজান ১৪৪৫


পাক ভারত শেষ পর্যন্ত কি সত্যিই যুদ্ধে জড়াবে?

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

jia hasanজিয়া হাসান

লাইন অফ কন্ট্রলে ভারতের হামলাটা, ভারতের সফট পাওয়ারের বিশাল বড় পরাজয়।

আমি ব্যক্তিগত ভাবে মনে করে, অস্ত্র, আর্মি, বোমারু বিমান, যুদ্ধ জাহাজ দিয়ে প্রতিষ্ঠিত হার্ড পাওয়ার এখন একাবিংশ শতকের বিশ্বে ক্ষমতার কোন পরিচয় নয়। আন্তর্জাতিক দ্বন্দ্বে ক্ষমতার মূল শক্তি এখন হার্ড পাওয়ার, এলায়েন্স তৈরি করার ক্ষমতা, আপনার বক্তব্য বিশ্ব নাগরিকের দৃষ্টি আকর্ষণের ক্ষমতা, বিশ্ব জনমত তৈরি করার ক্ষমতা।

ভারত যতই হার্ড পাওয়ার তৈরি করুক, নিউক্লিয়ার ডিটারেন্সের কারণে, সেই হার্ড পাওয়ারের তেমন কোন মুল্য নাই। কারণ, ভারত জানে সে কখনোই পাকিস্তানকে সেই পরিমাণ গুতাতে পারবেনা, যেই পরিমাণ গুতালে পাকি জেনারেল গুলো জাস্ট নিজের ক্ষমতা প্রমান করার জন্যে নিউক্লিয়ার মেরে দিবে।
একই প্রশ্ন পাকিস্তানের জন্যেও খাটে। পাকিস্তান কখনোই ভারতকে সেই পরিমাণ টিজ করবেনা, যার ফলে একটা ফুল স্কেল যুদ্ধ নামে।

সো, ভারত পাকিস্তানের মধ্যে এখন একটা ফুল স্কেল যুদ্ধ এখন, সহজ বাংলায়, ইম্প্রবেবল বা অসম্ভব।

যুদ্ধ না হওয়া মানে তো না যে, বিরোধ হবেনা। বিরোধ হবে, দুই পক্ষের সৈন্যদের মধ্যে গুতাগুতি হবে। লাইন অফ কন্ট্রোলে কেউ কেউ মারা পরবে।

এই দ্বন্দ্ব গুলোর জয় পরাজয় নির্ধারণ হবে, সফট পাওয়ার দিয়ে। (কিছু দিন আগে, মিয়ানমারে আমাদের বিজিবির জওয়ানের আটকে থাকার সময়ে বাংলাদেশের সফট পাওয়ারের অক্ষমতা টের পাচ্ছিলাম। যদিও আমাদের আর্মি পন্থী জনগণ পারলে ট্যাঙ্ক নামায় দেয়। যাক সে অন্য আলোচনা।)

তো এই অবস্থায় ভারতের সেনা ছাউনিতে সৈন্যদের উপরে যে হামলা হয়েছে তার পরে ভারত যে, যুদ্ধ যুদ্ধ ভাব নিয়েছে - সেইটা জাস্ট একটা শো অফ মাত্র।
ভারতের মূল উদ্দেশ্য ছিল,তার সফট পাওয়ার ব্যবহার করে পাকিস্তানকে এক ঘরে করে ফেলা। এবং আন্তর্জাতিক জনমত নিজের পক্ষে নিয়ে আসা এবং বিশাল একটা হই হুল্লোড় সৃষ্টি করা।

কিন্ত, বাস্তবতা হইলো, এমনকি, যুক্তরাষ্ট্র যার সাথে ভারত এখন খুব গভীর আত্মিয়তা গড়ে তুলেছে, সেও এইটাকে ভারতের মত খেলে নাই। চীন এবং রাশিয়া বলতে গেলে, টেকনিকালি পাকিস্তানের পক্ষেই থেকেছে।

ভারতীয় মিডিয়া যুদ্ধ যুদ্ধ বলে ফাটায় ফেললেও আন্তর্জাতিক বিশ্ব ঘটনাটাকে তেমন সিরিয়াসলিই নেয় নাই। পাকিস্তান- ভারতের চিরন্তন বিরোধের আর একটা ধাক্কা ধাক্কি হিসেবে দেখেছে এবং পাকিস্তান এক ঘরে করার তেমন কোন এটেম্পট তার কাজে আসে নাই।

তাই, এই সফট পাওয়ারের যুদ্ধে ভারত পরিষ্কার ভাবে পরাজিত হয়েছে। তাই সে এখন হার্ড পাওয়ার নিয়ে খেলছে। লাইন অফ কন্ট্রোলে আক্রমন করেছে।

বাস্তবতা হচ্ছে ভারত যদি এই সফট পাওয়ারের খেলায় জিততো তবে সে হার্ড পাওয়ার দেখাইতে যাইতো না। এই আক্রমন করতো না।

এখন, এই পরাজয়টা ভারতের জন্যে একটা বিশাল রিয়ালিটি চেক। এমনকি আমি নিজেও বিস্মিত হয়েছি। কারণ, আমার নিজেরও ধারণা ছিল, ভারতের আইটি এক্সপোর্ট, সারা বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা বিশাল টেকনিকাল জনগোষ্ঠী, মার্কিন প্রশাসনের ভেতরে নন রেসিডেন্ট ইন্ডিয়ানদের উপস্থিতি, বিশ্বের প্রথম সারির সফটওয়ার বাজারে ভারতীয় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বলিউডি সংস্কৃতির বিশ্ব বিস্তার,ভারতীয় মার্কেট ধরার জন্যে গ্লোবাল কর্পোরেটের আগ্রহ এবং ওয়ার অন টেররের জ্বিহাদী কার্ড - ভারত ব্যবহার করতে পারবে। এবং তারা পাকিস্তানকে এক ঘরে করতে পারবে। এবং ভারতকে খুশি করার জন্যে, বা ভারতীয় বাজার ধরার জন্যে ভারতের মর্দানিকে পরাশক্তি গুলো প্রশ্রয় দিবে।

ভারতীয় প্রশাসন, মিডিয়া, জনগন এবং আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরাও ধরে নিয়েছিল ভারতের সফট পাওয়ার এখন একটা সক্ষমতা অর্জন করেছে, যার ফলে সে চাইলেও এই ধরণের দ্বন্দ্বে আপারহ্যান্ড পাবে।

কিন্ত, এই সো কল্ড যুদ্ধে ভারত সেই খানে চরম ভাবে ব্যর্থ হয়েছে।
এইটা ভারতের জন্যে চরম একটা পরাজয় এবং রিয়ালিটি চেক।

আমার হিসেবে ভারত পাকিস্তানের এই সেমি যুদ্ধ ভারতিয় মিডিয়ার তৈরি করা যারা ভারতীয় ক্যাম্পের উপরে আক্রমনকে, নিজের আল্ট্রা হাইপ করা ইগোকে শো করার একটা সুযোগ হিসেবে দেখেছে।

প্রতিটা রাষ্ট্রের ইগো তার সফট পাওয়ার যোগ হার্ড পাওয়ারের সমানুপাতিক। হার্ড পাওয়ার মাপা যায়। কিন্ত সফট পাওয়ার মাপা যায়না। এইটা পারসেপ্সান।

সেই পারসেপ্সানে তারা এখন আমার হিসেবে খুব খারাপ ভাবে পরাজিত হয়েছে। যেই জন্যে তাদের এখন নিজেদের ফেস সেভ করার জন্যে, একটা আক্রমন করা ছাড়া কোন উপায় ছিলনা।

ফার্স্ট পোস্ট নামের ভারতীয় অন লাইন নিউজ পেপার পড়ে দেখলাম, সেই খানে এক দিকে তারা বলছে , ভারতীয় সামরিক বাহিনী পাকিস্তানকে জানিয়েছে তারা আর আক্রমন করবেনা, আবার বলছে, এইটা জ্বিহাদী আক্রমন ঠেকানোর জন্যে করা হয়েছে, আবার বলছে বল এখন পাকিস্তানের কোর্টে । মানে তারা চায় পাকিস্তান কিছু একটা করুক।আবার চায়না পাকিস্তান বেশী কিছু করুক।

খুবই কনফিউজড।

কিন্ত একটা জিনিষ পরিষ্কার। ভারতীয় মিডিয়া খুবই ডেঞ্জারাস। তারা রাষ্ট্রকে যুদ্ধের দিকে নিয়ে যেতে পারে। এবং সেই খানে রাষ্ট্রের কি ক্ষতি হবে, তার কোন রেন্সপন্সিবিলিটি নিয়ে ভাবনা তার নাই।

এর থেকে পরিষ্কার শিক্ষণীয় হইলো, ফারাক্কা, নদী সংযোগ প্রকল্প, সিমান্ত হত্যা,রামপাল সহ সকল ক্ষেত্রে ভারতকে ঠেকাতে যদি আমরা সফট পাওয়ার ব্যবহার করি এবং সেই সক্ষমতা গড়ে তুলি সঠিক এলায়েন্সের মাধ্যমে তবে ভারতীয় আধিপত্যের বিরুদ্ধে পরিষ্কার প্রতিরোধ করা সম্ভব- কারণ ভারত নিজে এবং আমরা সবাই ভারতীয় ক্ষমতাকে পরিষ্কার ভাবে ওভার ইস্টিমেট করেছি।

আরআর


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ