শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫


ঘড়ির ইতিকথা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

যুবাইর ইসহাক

clockসর্বকালে মানুষ সময়কে বেঁধে রাখার চেষ্টা করত। হিসাব করে ঠিক ঠিক ভাবে ব্যয় প্রচেষ্টা ছিল সবসময়। আদিকালে সময় দেখার জন্য মানুষের কাছে ঘড়ি ছিল না। থাকলেও আমাদের ঘড়ির মতো নয়। তাদের ছিল সকাল-বিকাল, সূর্য বা রাতের চন্দ্র তারা সময় নির্ণয়ের পন্থা। ঘড়ি আবিষ্কার হয়েছে আজ থেকে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার পূর্বে। প্রথম ঘড়ি আবিষ্কার করেছে তখনকার মিশরীরা। মিশরীরা যে ঘড়ি আবিষ্কার করেছিল তা ছিল সূর্যঘড়ি। সূর্যঘড়ি বানাতে মানুষ একটা লাঠি পুতে রাখতো খোলা জায়গায়। তারপর সেই লাঠিকে ঘিরে ছোট বড় নানা চক্র দিয়ে দেয়। চক্রর ওপর লিখে রাখে বিভিন্ন সংকেত যা দিয়ে নানান সময় বুঝানো হতো। লাঠির ওপর সূর্যের আলো পড়লে সেই আলো পড়তো মাটিতে আর সেখান থেকে সময় নির্ধারণ করা হতো। এমন একটি ঘড়ি আজো রক্ষিত আছে বার্লিন মিউজিয়ামে। তারপর আবিষ্কার হল তারাঘড়ি। তারাঘড়ি আবিস্কার হয়েছিল রাতের সময় নির্ধারণের জন্য।

মানুষ সূর্যঘড়ি দ্বারা দিনের সময় জানতে পারলেও রাতের সময় জানতে পারত না। ফলে জার্মানিদদের হাতে আবিষ্কিত হল তারাঘড়ি। তারাঘড়ি মূলত আকাশের একটি তারা। যা দেখতে w মতো। এটা আকাশের উত্তর দিকে ওঠে আর ধীরে ধীরে দক্ষিণ দিকে এগিয়ে যায়, এমনকি এ তারাটি মেরুকে কেন্দ্র করে ঘড়ির কাঁটার মত ঘুরতে থাকে যা দিয়ে অনায়াসে সময় নির্ধারণ করা সম্ভব। এর নাম ‘ক্যাসিওপিয়া’। তারপর খ্রীস্ট পূর্ব ১৪০০ সালে আবিস্কার হয় পানিঘড়ি। গ্রিকরা একে বলত ‘ক্লিপসেড্রা’। পানিঘড়িও আবিষ্কার করে মিশরীরা। পানিঘড়িটা এরকম ছিল যে, ফানেলের মধ্যে পানি ভরা হততো, সেই ফানেলের নীচে লাগানো হতো এক সরু পাইপ। ফানেলের পানি এক সরু পাইপ বেয়ে বেয়ে পড়তো একটি জারে। সেই জারের মধ্যে একটা হালকা কর্ক রেখে দিতো তারা। পাত্রের অপর প্রান্তে লাগিয়ে দেয়া হতো চাকা যুক্ত একটা সময় নির্দেশক কাঁটা। ফানেল থেকে ধীরে ধীরে পানি চলে আসতো জারে, জারে যত পানি পড়তো কর্ক ততই ভেসে উঠতো। সেই সঙ্গে সময় নির্দেশক কাঁটা ঘুরতে আরম্ভ করতো। যা বলে দিত সময়। তারপর আবিষ্কার হল বালুঘড়ি। প্রায় বারোশ বছর আগে এর আবিস্কার হয়। বালুঘড়ি ছিল কিছুটা পানিঘড়ির মতো। তবে এ ঘড়ির জন্য প্রয়োজন হয়একটা ফানেল যার মাঝখানটা চ্যাপ্টা। এবার ফানেলের ওপর দিয়ে কিছুটা বালিফানেলের মধ্যে ঢেলে দিল, সেই বালি ফানেলের মাঝখানে যেয়ে বাধা পেল।অপেক্ষাকৃত সরু ও মিহি দানার বালি ফানেলের চ্যাপ্টা অংশ দিয়ে নিচে পড়া শুরুহলো। ফানেলের নিচের অংশে আকা থাকত স্কেল। বালুর জমা হওয়ার পরিমাণ নির্ণয়করত নির্দিষ্ট সময়। এরপর আবিষ্কার হল মোমঘড়ি। মোমঘড়ি প্রথম আবিষ্কার হয় চিনে। সূর্য ঘড়িরপদ্ধতিতে এই ঘড়ি চিনেরা ব্যবহার করত। অন্ধকার ঘরে একটা মোমবাতি জ্বালিয়ে।সেই আলোর কাছাকাছি তারা রেখে দিত কোন মানদণ্ড। মোমের আলো গিয়ে পড়ত সেই মানদণ্ডে। মানদণ্ডের সামনের অংশ আলোকিত হতো আর পিছনের অংশে পড়ত তার ছায়া।মোম যত ছোট হতো ছায়া তত দীর্ঘ হতো। এই ছায়া পরিমাপ করে সময়কে পরিমাপ করা হত।

এতকাল পর্যন্ত ঘড়ির কোন কাঁটা ছিল না। ছিল না ঠিকঠিকির শব্দের মতো ঠিকঠিক শব্দও। এরপর আবিষ্কার হয় যান্ত্রিকঘড়ি। ১৪ শতাব্দীতে এসে ইউরোপিয়ানরাই প্রথম যান্ত্রিক ঘড়ি আবিষ্কার করেন।কিন্তু ১৪ শতকের দিকে নির্মিত ঘড়িগুলোতে শুধুমাত্র ঘন্টা নির্দেশ করতে সক্ষম হত, মিনিট বা সেকেন্ড কিছুই নির্ধারণ করতে পারতো না। তাই সঠিক ও নির্ভুল সময় নির্ণয় হত না। অবশেষে ডাচ জ্যোতির্বিদ ক্রিশ্চিয়ার হাইজেন্স ১৬৫৭ সালে এসে সম্পূর্ণ নির্ভুলভাবে মিনিট, সেকেন্ড ও ঘণ্টা নির্দেশকারী উন্নতমানের যান্ত্রিক ঘড়ির নকশা করেন। আমেরিকায় প্রথম ফিউজ স্পন্সর তৈরি করেন হাতঘড়ি। যুগের পরিবর্তেরর সাথে সাথে বর্তমান ঘড়িগুলো অনেক উন্নত। এলর্রাম ডিজিটালসহ এসেছে দেয়াল ঘড়িতে নতুন ডিজাইন। হাত ঘড়িগুলো বেশ অার্ষণীয়। হাত ঘড়িতে থাকছে, ফোনের সুযোগ, গুগল, ফোটো তুলার ব্যবস্থা সহ অারো অনেক কিছু।

এফএফ


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ