শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৭ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১১ শাওয়াল ১৪৪৫


কওমি মাদরাসায় কুরবানির ঈদ

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

qurbani2মোস্তফা ওয়াদুদ; বিশেষ প্রতিনিধি, আওয়ার ইসলাম

আজ কুরবানির ঈদ। সবাই মেতে আছে আনন্দে। হৈ-হুল্লোড়ে। ফূর্তিতে। সবার মাঝেই বিরাজ করছে অন্য রকম আমেজ। ভাললাগা ও সুখের চাহনী। কুরাবানির আনন্দে আনন্দিত সবে। কেউ বসে নেই।তবে ব্যতিক্রমও আছে। দেশের কওমী মাদরাসাগুলোতে ঈদের আমেজ ভিন্নরকম। তাদের ঈদ করতে হয় মাদরাসাতেই। মানুষের বাড়ি বাড়ি কুরবানি করে।

ফজরের আগে ঘুম থেকে উঠা। গোসল সেরে নতুন কাপড় পরে বের হওয়া নির্দিষ্ট এলাকায়। হাতে লম্বা ছুড়ি। সাদা ধবধবে পাঞ্চাবিতে লেগে যায় রক্তের দাগ।তারপর চামড়া বইয়ে আনো মাদরাসায়। দিন শেষে ক’টুকরো গোশত আর ভাত।কারো কারো জীবনে এটিই অপার আনন্দ।কেউবা আফসোসেও পুড়েন বাবা মা’র সঙ্গে ঈদ না কাটানোয়।

মাদরাসা ছাত্রদের কুরবানির ঈদ নিয়ে নানারকম কথা রয়েছে। আমরা কজন ছাত্রের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা জানিয়েছেন তাদের মনের কথাগুলো।

জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা মাদরাসার তাকমীল জামাতের ছাত্র মোহাম্মদ জামালুদ্দীন। মাদরাসায় ঈদ মন্দ লাগে না, জানালেন এমনটিই। জামালুদ্দীন বলেন, আমি প্রায় ৫ বছর ধরে কুরবানির ঈদ মাদরাসায় করে আসছি। গরু জবাই, চামড়া কালেকশন করে দিনটি পার করি। সারাদিন রক্তেমাখা জামা নিয়ে ঘুরাঘুরি করতে আমার ভালোই লাগে। আমার কাছে এ দিনটি অন্য দশটি দিনের চেয়েও বেশি ভালো।

অভিন্ন অনুভূতির কথা জানিয়েছেন মালিবাগ জামিয়ার মিশকাত জামাতের ছাত্র মুহাম্মদ শাহাদাত। তার কাছে কুরবানীর দিনটি মাদরাসায় কাটাতে কেমন লাগে? জানতে চাইলে তার উত্তর- আমার কাছে কুরবানির যে বিষয়টি সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে সেটা হলো, কাজ শেষে সবাই মিলে গরুর গোশত খাওয়া। ছাত্র ভাইদের সাথে মজা করে গোশত খাই আমরা। বিষয় বেশ দেখার মতো বলে জানান শাহাদাত।

জামিয়া ইকরা বাংলাদেশের এক ছাত্র একটু ব্যতিক্রম মতামত জানালেন। অবশ্য ভয় পেলেন বেশ। নাম প্রকাশ করতে চাইলেন না। তার মত- আমি কওমী মাদরাসায় পড়ি। এটা জাতীয় মাদরাসা। এখানে থেকে আমরা জাতির চিন্তা করি। এখন যদি তাদের কাছে কুরবানির দিন রক্তেমাখা শরীর নিয়ে যাই। তাহলে তারা কেমন চোখে দেখবে? তারা তো আমাদের ভালো চোখে দেখবে না।সুতরাং এদিন কুরবানির কালেকশনকে আমি ব্যক্তিগতভাবে ভালো চোখে দেখি না।

তিনি বলেন, আলহামদুলিল্লাহ! আমাদের মাদরাসার সম্মানিত শায়খুল হাদীস আল্লামা ফরিদউদ্দীন মাসউদ সাহেব বিষয়টি উপলব্দি করতে পেরেছেন। তাই আমরা কুরবানির কাজ করছি না। চামড়া কালেকশন ছাড়াই আমাদের মাদরাসা চলে। আমিও মা-বাবার সাথে ঈদের খুশি ভাগ করতে বাড়িতে যাচ্ছি। এ মুহূর্তে আমার অনুভূতি অনেক সুখের।

chamra

জামিয়া রাহমানিয়ার ছাত্র মুহাম্মদ তরিক জানালেন, তার কাছে সবচেয়ে ভালো লাগে গরু জবাই করা। জবাই শেষে চামড়া আনাটাও মন্দ নয় বলেই তার মত। তিনি বলেন, মাদরাসার জন্য কিছু করতে পারাটা আনন্দের।

জামিয়া ইসলামিয়া যাত্রাবাড়ী মাদরাসার মিশকাত জামাতের ছাত্র উবায়দুল্লাহ জানালেন, কুরবানীর ঈদ বাড়িতে করতে না পেরে কিছু দুঃখ অনুভব করছি। তবে হুজুরদের সাথে এদিন কাটাবো বলে দুঃখের কিছুটা লাঘব হচ্ছে।

লালবাগ মাদরাসায় ঈদের দিন কাটাবে হোসাইন জামিল। সে পড়ে নাহবেমির জামাতে। তার সাথে কথা বলে জানা গেলো, কুরবানির দিন তার কাছে সবচেয়ে বেশি রোমাঞ্চকর মুহূর্তটি হলো, জবাইয়ের পর রিসিট কাটা। তিনি প্রতিবছর দশটি চামড়া একাই কালেকশন করেন বলে জানালেন।

কথা হয়েছে বেশ কিছু শিক্ষার্থীর সঙ্গে। বিভিন্নজন বিভিন্নভাবে বিষয়টিকে শেয়ার করেছেন আওয়ার ইসলামের সাথে। সুখ দু:খ মিলিয়ে যে আনন্দ-খুশি ও উচ্ছাসের মিলন ঘটে এ দিনে। সেটা সত্যিই আমাদের জীবনে ভিন্ন আমেজ সৃষ্টি করে।

আরআর


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ