বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১১ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

শিরোনাম :
‘মানতিক; যুগের চাহিদার সাথে মিলে না’ এ ধরেণের কথা অযৌক্তিক: মুফতি হিফজুর রহমান দাওরায়ে হাদিসের ফলাফল নজরে সানীর আবেদনের সময় বাকি ৩ দিন  বৃষ্টি প্রার্থনায় জামিয়াতুল আবরার রাহমানিয়ায় ‘সালাতুল ইস্তিসকা’  আদায় হাসপাতালে সৌদি বাদশাহ সালমান সোস্যাল মিডিয়ায় প্রচারিত পাঠ্য তালিকার সাথে বেফাকের পাঠ্য তালিকার সম্পর্ক নেই: বেফাক সৈয়দপুরে তাপদাহে অতিষ্ঠ মানুষ, ‘হিটস্ট্রোকে’ ১ জনের মৃত্যু স্বর্ণের দাম আরও কমলো, ভরি ১ লাখ ১৪ হাজার ১৫১ টাকা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান ইরান-পাকিস্তানের ঢাবিতে বৃষ্টির জন্য ‘সালাতুল ইসতিস্কা’র অনুমতি দেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ‘বৃষ্টির জন্যে সালাত আদায় করলেই অবশ্যম্ভাবী বৃষ্টি চলে আসবে—বিষয়টা তা নয়’

বাংলা শেখা ফরজ, আরবি নফল। সরকার এত বোকা না যে চার-ছ’জন ব্যক্তিকে স্বীকৃতি দিয়ে দেবে

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

abdul jabbar2বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ ‘কওমি মাদরাসা শিক্ষা সনদের স্বীকৃতি’  শুধু চায়ই না বরং বেফাকই এ দাবি নিয়ে প্রথম মাঠে নেমেছে এবং এখনো মাঠেই আছে। উলামায়েকেরামের সমন্বিত উদ্যোগে এ দাবি কিভাবে আরো জোরালো করে বাস্তবায়ন করা যায় সে জন্য ইতোমধ্যেই বেফাক আগামী ‘১৭ অক্টোবর জাতীয় উলামা-মাশায়েখ সম্মেলন’আহ্বান করেছে। সুতরাং এ নিয়ে আর কোনো সন্দেহ-সংশয় থাকলো না। নেতৃত্বেও কোনো সমস্যা নেই বলে তারা জানিয়েছেন। কওমি মাদরাসা শিক্ষাব্যবস্থার সিলেবাস সংশোধন, মানোন্নয়ন, শিক্ষক প্রশিক্ষণ, মাতৃভাষায় পুস্তক রচনা ও পাঠ্যভুক্তকরণে বেফাকের অবদান অনস্বীকার্য। এর আওতায় পরিচালিত হচ্ছে দেশের শতকরা আশি ভাগ মাদরাসা। এসবের বিভিন্ন দিক ও ‘কওমি সনদের স্বীকৃতি’ নিয়ে ৬ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার বেফাক মহাসচিব মাওলানা আব্দুল জব্বার জাহানাবাদীর মুখোমুখি হয়েছেন আওয়ার ইসলামের বিশেষ প্রতিবেদক জাকির মাহদিন ড়ুন এর শেষ পর্ব...

জাকির মাহদিন : কওমি অঙ্গনের নতুন প্রজন্ম বেফাকের যেসব সমালোচনা করছেন, হতাশা ব্যক্ত করছেন, সিলেবাস পরিবর্তনের কথা বলছেন সে বিষয়ে আপনাদের বক্তব্য কী? আপনারা এসব সমালোচনা গঠনমূলকভাবে নিচ্ছেন কি না। আর আপনারা কি মনে করেন এই গতানুগতিক সিলেবাস, পাঠপদ্ধতি একজন শিক্ষার্থীর মন-মানসিকতা যথাযথভাবে বিকশিত করতে পারবে এবং প্রতিটি শিক্ষার্থীকে নিজের পায়ে দাঁড়াতে শেখাবে?

মাওলানা আব্দুল জব্বার : মোটামুটি গ্রহণযোগ্য সমালোচনাগুলো আমরা অবশ্যই গঠনমূলকভাবে নিচ্ছি এবং আমরা মনে করি না যে কওমি মাদরাসাগুলোর বর্তমান সিলেবাস ও পাঠপদ্ধতি যথেষ্ট। আমরা ক্রমান্বয়ে এসবে পরিবর্তন আনছি। তবে এটাও দেখতে হবে যে, একসময় এ শিক্ষাব্যবস্থার কোনো অস্তিত্বই ছিল না। এরপর এর প্রয়োজনীয়তা ও জনপ্রিয়তা ক্রমাগত বাড়তে থাকলেও বিভিন্ন বিশৃঙ্খলা ও অন্যান্য সমস্যার কারণে সঠিকভাবে বিকশিত হতে পারছিল না, তখন বেফাক এ শিক্ষাধারাকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যায়।

রাষ্ট্র ও সরকার এ শিক্ষাব্যবস্থায় কোনো সহযোগিতা করেনি, স্বীকৃতি দেয়নি বরং জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত সহযোগিতায় চলছে, তাই আমরা এর নামকরণ করেছি কওমি শিক্ষা। ব্রিটিশ আমলে এই কওম বা জাতিই ছিল আমাদের মৌলিক পরিচয়। আর এখন স্বাধীন বাংলাদেশে ‘কওম’ বলতে আমরা বুঝব জনগণ। কওমি মাদরাসা মানে জনগণের মাদরাসা। এর অর্থায়ন, দেখাশুনা, পরিচালনা সবই সরাসরি জনগণ করে থাকে।

জাকির মাহদিন : বেফাকের বাইরের কোনো ব্যক্তি বা সংগঠন যদি সম্মিলিতভাবে সরকারের কাছ থেকে ‘কওমি মাদরাসা শিক্ষা সনদের’ স্বীকৃতি নিয়ে আসে এবং বেফাক সেটাকে গ্রহণ না করে, তখন কি বেফাকভুক্ত মাদরাসাগুলোকে বেফাকের ভেতরে রাখা যাবে? না তারা স্বীকৃতির পেছনে ছুটবে?

মাওলানা আব্দুল জব্বার : আমার মনে হয় সরকার এতটা বোকা না যে বেফাককে রেখে চার-ছ’জন ব্যক্তিকে এমন একটা স্বীকৃতি দিয়ে দেবে আর হাজার হাজার মাদরাসা এর বাইরে থাকবে।

জাকির মাহদিন : সারাদেশে বেফাকের যে এত জনসমর্থন, এত কর্মযজ্ঞ, এত পরিকল্পনা এবং শতকরা আশিভাগ মাদরাসা বেফাকের সিলেবাস অনুসরণ করে তা সরকারকে জানানোর আপনারা কী ব্যবস্থা নিয়েছেন?

মাওলানা আব্দুল জব্বার : একটা হচ্ছে আমাদের পক্ষ থেকে জানানো। অন্যটা হচ্ছে সরকারের পক্ষ থেকে জানা, জানতে চেষ্টা করা। সরকার যদি জানতে আগ্রহী না হয়, আন্তরিক এবং সচেষ্ট না হয় তাহলে আমরা ব্যবস্থা নিয়েওবা কতটুকু জানাতে পারব?

জাকির মাহদিন : কওমি অঙ্গন, কওমি নেতৃত্ব ইত্যাদিতে যে বিশৃঙ্খলা-বিভক্তি-অনৈক্য আমরা সচরাচর দেখতে পাই, বেফাকের মতো এত বৃহৎ একটা জনমুখী শক্তির পক্ষে তা দূর করতে না পারা কি ব্যর্থতা নয়?

মাওলানা আব্দুল জব্বার : বেফাকের ব্যর্থতা বলতে পারি না এ কারণে যে, প্রতি বছরই আমরা দুয়েকবার সবার কাছে যাই, বৈঠক ডাকি। বলি, আসুন আমরা ঐক্যবদ্ধ হই, ঐক্যবদ্ধ থাকি। আমাদের ধারাবাহিক কার্যক্রম এবং আহ্বানে সারাদেশের মাদরাসাগুলো এবং আলেমগণ অভূতপূর্ব সাড়া দিচ্ছেন।

abdul_jabbar

জাকির মাহদিন : ‘কওমি শিক্ষা‘ বলতে আমরা কী বুঝব? ‘কওম’ মানে জাতি। এখানে জাতির সংজ্ঞা কী?

মাওলানা আব্দুল জব্বার : মানুষকে বোঝাবার জন্য আমরা কওমি শিক্ষা বলে থাকি। আসলে এটা একটা ধর্মীয় শিক্ষার প্রাধান্যে ‘জাতীয় শিক্ষা’; ইসলামি জাতীয় শিক্ষা। প্রথমে এর নাম ছিল দরসে নেজামী। নেসাব তৈরি করেছিলেন মোল্লা নেজাম উদ্দিন, বাদশাহ আলমগীরের আমলে। তখন সেটা রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃত ছিল। তার নামেই নামকরণ। তারপর অতিদ্রুত তা সারা ভারতে ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে এর হাত ধরেই মূলত ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন দানা বেঁধেছে এবং স্বাধীনতা এসেছে। তাই ভারত ও পাকিস্তানে দরসে নেজামীর শিক্ষা রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ও সহযোগিতা পেতে কোনো সমস্যা হয়নি। কিন্তু বাংলাদেশে যেহেতু রাষ্ট্র ও সরকার এ শিক্ষাব্যবস্থায় কোনো সহযোগিতা করেনি, স্বীকৃতি দেয়নি বরং জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত সহযোগিতায় চলছে, তাই আমরা এর নামকরণ করেছি কওমি শিক্ষা। ব্রিটিশ আমলে এই কওম বা জাতিই ছিল আমাদের মৌলিক পরিচয়। আর এখন স্বাধীন বাংলাদেশে ‘কওম’ বলতে আমরা বুঝব জনগণ। কওমি মাদরাসা মানে জনগণের মাদরাসা। এর অর্থায়ন, দেখাশুনা, পরিচালনা সবই সরাসরি জনগণ করে থাকে।

আমরা মনে করি আমাদের প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ক্লাশ চলাকালীন জাতীয় পতাকা উড়ানো উচিত। কারণ এদেশ আমাদের। স্বাধীন করেছি আমরা, জেল খেটেছি আমরা, রক্ত দিয়েছি আমরা, ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলেছি আমরা। এতে আমাদের বিশেষ অবদান আছে।

জাকির মাহদিন : আজ আমরা এখানে এসে দেখতে পেলাম বেফাকের এই কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে  আমাদের জাতীয় পতাকা পতপত করে উড়ছে। এটা খুবই সুন্দর এবং আবেগপ্রবণ দৃশ্য। বেফাক কার্যালয়ে যদি এই পতাকা উড়তে পারে তাহলে বেফাকভুক্ত সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ক্লাশ চলাকালীন কেন এই পতাকা উড়ানো বেফাক কর্তৃক বাধ্যতামূলক করা হবে না?

মাওলানা আব্দুল জব্বার : আমরা বলেছি সব মাদরাসায় এ পতাকা উড়াতে। অনেকেই তা মানছেন। আর যারা মানছেন না তাদের যুক্তি হচ্ছে, যেহেতু সরকারিভাবে এ শিক্ষাব্যবস্থাকে সহযোগিতা ও স্বীকৃতি দেয়া হচ্ছে না, তাই সরকারও আমাদের কাছে কিছু চাইতে পারে না। তারপরও তারা ক্লাশ চলাকালীন না হলেও বিশেষ দিনগুলোতে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। তাছাড়া সরকার এখনো সরাসরি আমাদের কোনো নির্দেশ দেয়নি। তবুও আমরা মনে করি আমাদের প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ক্লাশ চলাকালীন জাতীয় পতাকা উড়ানো উচিত। কারণ এদেশ আমাদের। স্বাধীন করেছি আমরা, জেল খেটেছি আমরা, রক্ত দিয়েছি আমরা, ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলেছি আমরা। এতে আমাদের বিশেষ অবদান আছে।

জাকির মাহদিন : বেফাকভুক্ত মাদরাসাগুলোয় মাতৃভাষা বাংলার অবস্থান কোথায়?

মাওলানা আব্দুল জব্বার : আমাদের মাদরাসাগুলোতে মাতৃভাষা বাংলা শিক্ষা করা ‘ফরজ’। আরবি ভাষা শিক্ষা নফল। আরবি শিক্ষা করা সবার জন্য জরুরি না, কিন্তু মাতৃভাষা শিখতেই হবে। এটা বাধ্যতামূলক। এক্ষেত্রে কোনো অবহেলা চলবে না। বেফাক দীর্ঘকাল ধরে মাদরাসা শিক্ষার্থীদের জন্য সারাদেশে ‘বাংলা ভাষা শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের’ ব্যবস্থা করে আসছে। এর উপর বিভিন্ন কোর্স করাচ্ছে। ভবিষ্যতে এ কাজ আরো মজবুত হবে ইনশাআল্লাহ।

প্রথমপর্ব পড়ুন: বেফাকও স্বীকৃতি চায়, তবে নিয়ন্ত্রণ নয়

আরআর


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ