শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ।। ১৫ চৈত্র ১৪৩০ ।। ১৯ রমজান ১৪৪৫


দুয়া কবুলের গল্প

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আহমাদ আবদুল্লাহ : বৃদ্ধ মানুষটি হতভম্ব হয়ে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলেন মসজিদের সামনে! এত রাতে কোন মানুষজনের ঘরে গিয়ে তাঁদের কষ্টের কারণ হতে চান নি তিনি। সেকারণেই চেয়েছিলেন মসজিদেই কাটিয়ে দিবেন রাতটুকু। নফল নামাজ আর কিছুটা ঘুমিয়ে দিব্যি রাত কাটিয়ে দেয়া যেত।

কিন্তু বাধ সাধলেন মসজিদের খাদেম। কোন এক অজানা কারণে তাঁকে পছন্দ করলেন না খাদেম। স্রেফ মানা করে দিলেন খাদেম– মসজিদে রাত কাটানো যাবে না। মসজিদের সামনে দাঁড়িয়ে খাদেম সাহেব সেই কথাটি-ই বেশ উঁচু গলায় কথা বলে দিলেন বৃদ্ধকে।

মরমে মরে গেলেন বৃদ্ধ মানুষটি। মসজিদ লাগোয়া রুটির দোকানে মধ্য বয়স্ক একজন বিশাল তন্দুরে রুটি বানাচ্ছেন। খাদেমের চড়া গলা তাঁর কানে পর্যন্ত গেল। রুটি বানানো বন্ধ রেখে মধ্যবয়স্ক মানুষটি ধীর পায়ে এগিয়ে গেলেন ঠায় দাঁড়িয়ে থাকা বৃদ্ধ মানুষটির কাছে।

– আসসালামু আলাইকুম। পথিক বুঝি আপনি? আপনার আপত্তি না থাকলে আজকের রাত আমার সাথে কাটিয়ে দিতে পারেন আপনি। আমি ওপাশের দোকানে রুটি বানাই, একটু কষ্ট হয়তো হবে আপনার।
খুব খুশি হলেন বৃদ্ধ মানুষটি। রুটি বানানো লোকটির সাথে গিয়ে তার ঘরে উঠলেন। বৃদ্ধের শোয়ার আয়োজন করে দিয়ে আবার রুটি বানাতে লেগে গেলেন মানুষটি। বিছানায় আধশোয়া বৃদ্ধ খেয়াল করছিলেন- কাজের ফাঁকে ফাঁকে কি যেন পড়ছেন তাঁকে আশ্রয় দেয়া মানুষটি।

বৃদ্ধ জিজ্ঞেস করলেন, – কিছু মনে না করলে আপনাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করি ভাই? রুটি বানাতে বানাতে আপনি কিছু পড়ছেন মনে হচ্ছে। দয়া করে বলবেন কি পড়ছেন?

– তেমন কিছু না, ইস্তিগফার (মহান আল্লাহ পাকের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা) করছি।

– এই যে কাজের ফাঁকেও একটানা ইস্তিগফার করছেন, কোন লাভ কি হয়েছে আপনার?
– জ্বী জনাব। আলহামদুলিল্লাহ, আমার মনে হয় এই ইস্তিগফারের কল্যাণেই মহান আল্লাহ এখন পর্যন্ত আমার যাবতীয় দোআ কবুল করেছেন; শুধু একটি দোআ ছাড়া।

– আপনার কোন দোআটি কবুল করেন নি আল্লাহ পাক?
– আমাদের এখান থেকে অনেক দুরে আল্লাহর প্রিয় এক বান্দা থাকেন। জ্ঞান-গরিমা-মেধা-যুক্তি সবকিছুতেই আল্লাহ পাকের রহমতপ্রাপ্তদের একজন তিনি।

আমার খুব শখ – একবার যদি তাঁর সাথে দেখা করতে যেতে পারতাম। কিছুটা সময় যদি কাটাতে পারতাম সেই জ্ঞানী বান্দার সাথে। আল্লাহ পাক আমার এই প্রার্থনাটি-ই শুধু কবুল করেন নি এখনও। নিশ্চয়ই কবুল করবেন তিনি। আমার কোন গুনাহের কারণে হয়তো এখনো কবুল হচ্ছে না।

বৃদ্ধ মানুষটির চোখ ভারী হয়ে এলো কান্নায়। ধরা গলায় কান্না চেপে জিজ্ঞেস করলেন তিনি, – আপনি কি আহমদ ইবনে হাম্বলের কথা বলছেন ভাই?
– জ্বী জনাব। আমি শায়খুল ইসলাম, জগত বিখ্যাত মুজতাহিদ ও মুহাদ্দীস ইমাম আহমাদ বিন মুহাম্মাদ বিন হাম্বল এর কথাই বলছি। আল্লাহ তা’আলা তাঁর প্রতি অবিরাম রহমত বর্ষণ করুক।

বৃদ্ধ মানুষটি এবার উঠে এসে পাশে দাঁড়ালেন- “সেই পবিত্র স্বত্তার কসম- যাঁর হাতে আমার প্রাণ! আপনার ইস্তিগফার আল্লাহ পাক শুধু কবুল-ই করে নি, উপরন্তু আমাকে এই দূর দেশে, অচিন শহরে, মধ্য রাতে – আপনার ঘর পর্যন্ত নিয়ে এসেছেন। আমি-ই মহান আল্লাহ তাআ’লার সেই অধম বান্দা – আহমাদ ইবনে হাম্বল!”

“….আমি মহান আল্লাহর নিকটে ক্ষমা প্রার্থনা করছি যিনি ব্যতীত আর কোন উপাস্য নেই। যিনি চিরঞ্জীব ও বিশ্বচরাচরের ধারক। আমি অনুতপ্ত হৃদয়ে তাঁর দিকে ফিরে যাচ্ছি।” [সুত্রঃ মানাকিব আল ইমাম আহমাদ]


সম্পর্কিত খবর