শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ।। ১৫ চৈত্র ১৪৩০ ।। ১৯ রমজান ১৪৪৫


তুরস্কে অভ্যুত্থান সফল হলে কী ঘটত?

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

awda

শাইখ সালমান আল-আউদাহ, যিনি মুসলিম স্কলারদের ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়নের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য। বিশিস্ট ইসলামিক স্কলার ও গবেষক। সম্প্রতি তুরস্কের আনাতোলিয়া সংবাদ সংস্থাকে দেশটির অভ্যুত্থান বিষয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর মুসলিম স্কলারস-এর অফিশিয়াল পেইজ থেকে সাক্ষাৎকারটি আওয়ার ইসলামের পাঠকদের জন্য অনুবাদ করেছেন, ইমরান আনোয়ার

বলেছেন; ‘তুরস্কে ব্যর্থ অভ্যুত্থানের কারণে যে সংঘর্ষের সূচনা হয়েছে তাতে করে দেশটিতে গৃহযুদ্ধ লেগে যেতে পারে। তিনি এও বলেছেন, ‘ওই অভ্য্যত্থান সফল হলে তুরস্ক এক অনিশ্চিত পথে যাত্রা করত এবং দৃশ্যমান অগ্রগতি থেকে দেশটি বহু বছর পিছিয়ে যেত।’

আল-আউদাহ দৃঢ়ভাবে উচ্চারণ করেন, ‘এই অঞ্চলে তুরস্ক এক অতুলনীয় গণতান্ত্রিক মডেল; সে কারণে অভ্যুত্থান চেষ্টাটি সবচেয় জঘন্য পদক্ষেপ হিসেবে পরিগণিত হয়েছে। এটি ছিল তুরস্কের উত্তরোত্তর সাফল্য ও উন্নয়ন প্রকল্পকে ধ্বংস করার একটি চেষ্টা। যদি সত্যিই অভ্যুত্থান সফল হয়ে যেত, আল্লাহ্ রক্ষা করুন, তুরস্ক শত বছর পেছনে চলে যেত।’

গত মাসের মাঝামাঝিতে যে অভ্যুত্থান চেষ্টা হয়েছিল সেটিকে তিনি ‘অভাবনীয় ঐতিহাসিক ঘটনা’ হিসেবে বর্ণনা করেন। আশা এবং হতাশার মাঝে দাঁড় টেনে দেওয়া এক ভীতিকর সীমারেখা ছিল ঘটনাটি। কারণ তুরস্ক শুধুমাত্র তুর্কিদের জন্যই একটি রাষ্ট্র নয়, বরং লক্ষ লক্ষ মুসলিম শরনার্থীর জন্য এ এক আশ্রয়কেন্দ্র। আনাতোলিয়া সংবাদ সংস্থার সঙ্গে কথোকথনে শাইখ সালমান বলেন, ‘তুরস্ক এক অনুকরণীয় মডেল। কারণ আমরা ইরানী বহিরাক্রমণ এবং ইহুদিবাদীদের আরব অঞ্চলের জমি ছিনতাইয়ের মুখোমুখি হচ্ছি। তুরস্ক একটি আশাবাদের মঞ্চ তৈরি করছে; এবং দেশটি সাধারণ আরব রাষ্ট্র ও বিশেষ করে সৌদি আরবের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখেছে এবং এ সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে চেষ্টারও ত্রুটি রাখছে না ‘

আউদাহ বলেন, ‘যারা অভ্যুত্থানকে স্বাগত জানিয়েছে, তাদেরই আমরা ইহুদি রক্ষার তাৎপর্য নিয়ে রোম্যান্টিক কথা বলতে দেখি। কিন্তু যখন আরব এবং মুসলিম স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট কোন সমস্যা উদ্গত হয়, তখনই তাদের ভোল পালটে যায়। সেসময় আমরা 'শক্তি প্রয়োগ' ও 'কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে'র কথা তাদের মুখ থেকে শুনতে পাই। মুসলিম দেশগুলোর সমর্থনে বিশ্ব নেতৃত্ব সবসময় নিচু স্বরে কথা বলেছে।’

‘এতে প্রতীয়মান হয়, পশ্চিমা রাজনীতিবিদরা এখনো ক্রুসেডের ঘৃণা অনুযায়ী আচরণ করে যাচ্ছে। সত্যি বলতে, ইউরোপ-আমেরিকার ভেতর এখনো ইসলামের ব্যপারে ভয় কাজ করে বেড়ায়; এবং সেই কারণে মিশর সিরিয়া বা ইরাকের মত তুরস্কও চূর্ণ হয়ে গেলে তাদের কোন মাথাব্যথা থাকত না। এতে করে যদি পশ্চিমা দেশগুলোতে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বেড়েও যায় তাতেও তারা পরোয়া করে না। কারণ এর মাধ্যমে তো বড় বাধা তুরস্কে 'উদীয়মান ইসলামী শক্তি'কে রুখে দিতে পারছে তারা!

শাইখ আউদাহ একটি উদাহরণ তুলে ধরেন। ‘অভ্যুত্থানের পর তুরস্কে জরুরি অবস্থা এবং বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে আমেরিকা একাধিকবার নিজের উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। অথচ আমেরিকার ৯/১১'র ঘটনাটি স্পষ্ট মনে পড়ে, যদিও সেটি কোন রাষ্ট্র ছিনতাইয়ের মত ঘটনা ছিল না, বরং বর্তমানের অন্যান্য শহরের মত সেখানেও নির্দিষ্ট একটি জায়গায় সন্ত্রাসী হামলা হয়েছিল। সে সময় তারা কী করেছিল? ‘আমেরিকা তাদের পুরো রাষ্ট্রনীতি পাল্টে ফেলে। এমনকি দীর্ঘ সময় সেখানে মানবাধিকার ব্যহত হয়েছে। অনেককে তারা গ্রেপ্তার করেছে; লোকালয় থেকে বহু দূরে তারা কয়েদখানা নির্মাণ করেছে। আফগানিস্তানে যুদ্ধের আগুন লাগিয়েছে, অসংখ্যা আরব রাষ্ট্র দখল করেছে, তারপর পুরো পৃথিবীজুড়ে জনহিতকর কাজগুলো ধ্বংস করে দিয়েছে, যার ভয়াবহতায় বিশ্বের লক্ষ লক্ষ মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। নিন্দনীয় ব্যপার হল, (নিজের দেশে সীমাহীন অসঙ্গতি রেখে) অন্য দেশের সমালোচনা করা। এটা যেন হাজারো প্রয়োজনীয় কাজ ফেলে কম গুরুত্বপূর্ণ কাজে সময় ব্যয় করার মত ব্যপার’,

তুরস্ক নিয়ে আমেরিকার বর্তমান অবস্থানের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি একথাগুলো বলেন।

awda2

গত সপ্তাহে মার্কিন ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্সের (সিআইএ) পরিচালক জেমস ক্ল্যাপার এবং মার্কিন কেন্দ্রিয় অঞ্চলের অপারেশন কমান্ডার জেনারেল জোসেফ ভোটাল, উভয়েই- কলোরাডোয় আয়োজিত একটি নিরাপত্তা সেমিনারে 'তুরস্কে ব্যপক সংখ্যক সামরিক কর্মকর্তার পদচ্যুতি ও অপসারণে'র ব্যপারে নিজেদের হতাশা ব্যক্ত করেন। তাদের দাবি ছিল, এ পদক্ষেপ ‘সন্ত্রাসী সংগঠন আইএস'এর বিরুদ্ধে তুর্কি-মার্কিন সংগ্রামকে ব্যহত করতে পারে’। অথচ সে লোকগুলো গত ১৫ জুলাই ব্যর্থ অভ্যুত্থান প্রচেষ্টায় জড়িত ছিল!’

‘ফেতুল্লাহ গুলেনের অনুসারীরা যা করেছে সেটি পুরো তুর্কি জাতির সঙ্গে এমনকি সরকার ও বিরোধী দলের সঙ্গেও বিশ্বাসঘাতকতা বলে উন্মোচিত হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে হত্যা, সন্ত্রাসবাদ এবং আরো অনেক কারণে ইসলামের সুখ্যাতি আজ ম্রিয়মাণ। অথচ এই তুর্কি জাতি পুরো বিশ্বে নিজেদের শান্তি-সম্প্রীতি ও ভালবাসার উপমা হিসেবে তুলে ধরেছিল। দুর্ভাগ্যজনকভাবে কুচক্রীদের কারণে আজ তাদের শত-শত মানুষ হত্যার শিকার হয়েছে এবং হাজারো তুর্কি দুর্ঘটনায় পতিত হয়েছে।’

আউদাহ মনে করেন, ‘অভ্যুত্থান সফল হয়ে গেলে তুর্কি জাতির অভ্যন্তরে আমরা সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়তে দেখতাম; যা পরে অনুমিতভাবেই গৃহযুদ্ধে রূপ নিত। এক অজানা ভবিষ্যতের সূচনা হত তুরস্কের জন্য। গুলেনপন্থিরা যা করেছে তাতে বুদ্ধিমত্তা কিংবা সহনশীলতার পরিচয় পাওয়া যায় কি?’

‘নিজেদের জনগণের বিপক্ষে সেনাবাহিনীকে লেলিয়ে দেওয়ার এমন যুক্তি থাকতে পারে বলুন? অচিরেই এ ব্যপারটি অনেক বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিবে। মানুষকে বিভ্রান্ত করার আরেকটি ব্যপার রয়েছে এখানে। কারণ সেনাবাহিনীর যারা অস্ত্র তুলে নিয়েছে তাদের অনেকে হয়ত জানতও না যে তাদের শেষ পর্যন্ত অভ্যুত্থানে জড়িয়ে পড়তে হবে!’

তিনি বলেন, ‘আরববিশ্ব 'গুলেন মতবাদ'কে একটি সামাজিক, অর্থনৈতিক ও শিক্ষাবিষয়ক মতাদর্শ হিসেবে পর্যবেক্ষণ করেছে। সেজন্যই ইসলাম ও শান্তির বার্তাকে পাশ কাটিয়ে এই দলের একটি সমান্তরাল সত্ত্বায় ধাবিত হয়ে যাওয়া সবাইকে একটি কঠিন শিক্ষা দিয়ে গেল।’

তিনি 'সৌদি-তুর্কি' সম্পর্কোন্ননের বিষয়ে ইঙ্গিত করে বলেন, ‘এ দু'দেশের বন্ধুতার মধ্যে পুরো আরব এবং মুসলিম বিশ্বের কল্যাণ রয়েছে। কেননা সৌদি আরব হল মসজিদুল হারামাইন-এর দেশ এবং এটি ঐতিহাসিকভাবেই ইসলামি রীতিনীতির পৃষ্ঠপোষক। অপরদিকে তুরস্কও প্রাচীন ঐতিহ্যধারী ইসলামি দেশ। একে অপরকে তাদের প্রয়োজন। এই সম্পর্কের বলিষ্ঠতা ও স্থায়িত্ব আরব এবং মুসলমানদের আশা-আকাঙ্ক্ষার উৎস।’

আরআর


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ