বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪ ।। ১৪ চৈত্র ১৪৩০ ।। ১৮ রমজান ১৪৪৫


‘অন্যায়ভাবে যে কাউকে হত্যা করলো সে যেনো পুরো জাতিকে হত্যা করলো’

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

unus ahmad2

অধ্যক্ষ মাওলানা ইউনুস আহমদ। একজন গুণী ব্যক্তি, রাজনীতিক, সংগঠন এবং ওয়ায়েজ। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব হিসেবের দায়িত্ব পালন করছেন দীর্ঘ দিন।জন্মেছিলেন খুলনায়। ইসলামি রাজনীতির বিভিন্ন ইস্যুতে তাকে তৎপর দেখা যায় মাঠে ময়দানে। দেশের বর্তমান ইস্যু ও ইসলামি রাজনীতি বিসয়ে তার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর ডটকম বিশেষ প্রতিনিধি মোস্তফা ওয়াদুদ

বর্তমান প্রেক্ষাপটে রাজনীতির প্রয়োজনীয়তা কতটুকু?

বর্তমান প্রেক্ষাপটে রাজনীতির প্রয়োজনীয়তা অনেক। জাতীয় যে কোন ইস্যু রাজনীতির মাধ্যমেই সমাধানে যেতে হয়। রাজনীতির আগেও প্রয়োজন ছিলো, এখনো আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে।

দেশে ইসলামি রাজনীতির চাহিদা কেমন মনে করেন?

ইসলামি রাজনীতির চাহিদাই বেশি। প্রচলিত রাজনীতি মানুষের ততটা পছন্দ না। বরং মানুষ এখন শান্তির রাজনীতি তথা ইসলামি রাজনীতিতে বিশ্বাসী। তারা এখন ইসলামি রাজনীতির দিকেই ধাবিত হচ্ছে। প্রচলিত রাজনীতি তো মানবজীবনে শান্তি আনতে পারে না। এটা পূর্ণাঙ্গ নয়। আংশিক। বির্তকিত ও ভুল মিশ্রিত। এখানে আল্লাহ প্রদত্ত কোনো বিষয়ের লক্ষ রাখা হয় না। সুতরাং নির্ভুল ও শান্তিময় রাজনীতির নাম হলো ইসলামি রাজনীতি।

ইসলামি রাজনীতির ভবিষ্যৎ নিয়ে কিছু বলুন।

আমাদের বাংলাদেশের নাকি বিশ্বের?

বাংলাদেশের।

বাংলাদেশেরর রাজনীতির ভবিষ্যৎ সম্পর্কে যদি জানতে চান। তাহলে বলবো, আমাদের মুহতারাম আমীরের নির্দেশ হলো, ইসলামি রাজনীতি ইসলামি কায়দায় হতে হবে। ইসলামের নামে অনেক রাজনৈতিক দল আমাদের দেশে আছে। যারা জোটগতভাবে রাজনীতি করছে। এক্ষেত্রে আমাদের কথা হলো, ইসলামি রাজনীতি অবশ্যই ইসলামি পদ্ধতিতে হওয়া উচিত। এজন্য ইসলামের স্বার্থে, দেশের স্বার্থে, মানবতার স্বার্থেই ইসলামি রাজনীতির প্রবক্তা আমরা। এখানে জাগতিক কোন কায়দায় অথবা কোনো লেজুরবৃত্তির মাধ্যমে, দুনিয়াবি কোনো স্বার্থ হাসিলের জন্য রাজনীতি করা, বাতিল মিশ্রিত রাজনীতির সাথে জোট করার প্রবক্তা আমরা নই। যদি আমরা ইসলামি রাজনীতি ইসলামের স্বার্থে করি তাহলে দেশ ও মানবতার কল্যাণ রয়েছে। আর যদি লেজুরবৃত্তির রাজনীতি করি তাহলে ইসলামি রাজনীতির ভবিষ্যৎ অন্ধকার।

বর্তমানে শুধু প্রতিশ্রুতিনির্ভর রাজনীতি দেখা যায় সর্বত্র। এর থেকে উত্তরণের পথ কী?

ইসলামি সমাজ ব্যবস্থা ও ইসলামি জীবনাদর্শ যেখানে যতটুকু বাস্তবায়ন তরা দরকার ততটুকু বাস্তবায়নের মাধ্যমে প্রতিশ্রুতি বা মিথ্যাচারের রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব।

সাম্প্রতিক জন্ম নেয়া জঙ্গিবাদের ব্যাপারে জানতে চাই।

আসলে অন্যায়ভাবে কোনো ব্যক্তি এমনকি প্রাণী হত্যা করাও যায়েয নেই। গুলশান ও শোলাকিয়ায় অন্যায়ভাবে যা করা হচ্ছে, তা ইসলামও একসেপ্ট করে না। আমরাও সমর্থন করি না। এখানে দেখা যাচ্ছে যারা মারছে ও মরছে সবাই বাংলাদেশি। এর পেছনে কারা জড়িত আছে। কারা এর অর্থ যোগান দিচ্ছে। এর পেছনে কোন শক্তি কাজ করছে তা আগে খুঁজে বের করতে হবে। তাহলে সঠিকভাবে এর তদন্ত করা সম্ভব হবে। যারা এর এর সাথে জড়িয়ে পড়ছে এর একটি কারণ এই হতে পারে, ইসলামের ব্যাপারে ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে তাদের প্ররোচিত করা হচ্ছে। তাদের ব্রেনওয়াশ করা হচ্ছে। যদি তারা ইসলামের সঠিক নির্দেশনা পেত তাহলে তারা অন্যায়ভাবে এসব হত্যাকাণ্ড সংগঠন করতো না। তারা ঘৃণিত কাজে জড়িয়ে পড়তো না। মোটকথা একটি মহল তাদের উস্কানি দিচ্ছে এ ব্যাপারে আমরা সরকারের মতোই অন্ধকারে আছি। সরকারের উচিত এটি খুঁজে বের করা।

জঙ্গিবাদ দমনে ইসলামের মৃুলনীতি কী?

শরিয়ত রয়েছে এ ব্যাপারে। কুরআনে আছে, অন্যায়ভাবে যে কাউকে হত্যা করলো সে যে যেনো পুরো জাতিকে হত্যা করলো। (সুরা বাকারা) জঙ্গিবাদকে নির্মূল করার জন্য যদি এ আয়াতটি জঙ্গিদের শুনিয়ে দেয়া হয় এবং তারা যদি এর বাস্তবায়ন করে। তাহলেই জঙ্গিবাদ দমন হয়ে যাবে। জঙ্গিবাদ দমনে এ আয়াতটিই মূলনীতি।

কখনো যদি ইসলামি দল ক্ষমতায় আসে। তাহলে কিভাবে দেশ পরিচালনা করবে?

এ ব্যাপারে কুরআনে বলে দেয়া আছে। দেশ পরিচালনার জন্য স্বরাষ্ট্র নীতি, পররাষ্ট্র নীতি, অর্থনীতি সব থিউরি সেখানে বর্ণনা করা হয়েছে।সেটাকে ফলো করতে হবে। যেমন মনে করেন, অর্থনীতির কথাই ধরা যাক। আমাদের দেশে সুদভিত্তিক অর্থ ব্যবস্থা চালু আছে। অথচ ইসলামে এটাকে হারাম করা হয়েছে। সুদের মাধ্যমে একদল আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে যায়। অন্যদল নিঃস্ব হয়ে যায়। এবং ইসলামে অর্থ ব্যবস্থা কেমন হবে তা বলে দেয়া হয়েছে। ইসলামে যাকাতকে ফরজ করা হয়েছে। ধনীর উপর দরিদ্রের হক নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। যেমন বাংলাদেশ ব্যাংকে হাজার হাজার কোটি মজুদ করে রাখা হয়। এর থেকে গরিবের জন্য কোনো অর্থ আলাদা করা হয় না। প্রতি শতে আড়াই টাকা, লাখে আড়াই হাজার করে যদি আলাদা করা হতো এবং দরিদ্রদের মাঝে বিতরণ করা হতো তাহলে দেশে কোনো গরিব লোক থাকতো না। সবাই স্বাচ্ছন্দ্যে জীবন-যাপন করতে পারতো। আমার দেশে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে এ বিধানকে ফলো করা হয় তাহলে ধনী-গরিব সবাই সুখে শান্তিতে বসবাস করতে পারবে। ইসলামি কোন দল ক্ষমতায় এলে তারা এ বিষয়টি সুন্দর ভাবে ঢেলে সাজাবেন।

[caption id="attachment_4585" align="alignright" width="450"]unus ahmad আমরা সরকার গঠনের চিন্তা করছি না। বরং সরকার গঠনের পূর্বে নিজেদের সংঘবদ্ধ করতে চাচ্ছি। আমরা নিজেরা সংঘবদ্ধ হওয়ার পর সরকার গঠনের চিন্তা করা যাবে। আপাতত এটা নিয়ে চিন্তা করা হচ্ছে না। সরকার গঠনের ব্যাপারে আল্লাহই ভালো জানেন।[/caption]

জাতীয় শিক্ষানীতিতে তো ইসলামি শিক্ষা থাকছে না, আন্দোলনে বিষয়টা সমাধানে আসবে না, তখন কোন দিকে যাবেন?

এখানে প্রসঙ্গক্রমে বলতে হয়, শিক্ষানীতি বা শিক্ষাআইন বাস্তবায়নে যাদের উপর দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, তারা কতটুকু ইসলামি শিক্ষায় শিক্ষিত। এটা একটা প্রশ্ন। কেননা যদি ইসলামি শিক্ষার কোনো আলো তাদের ভিতর থাকতো তাহলে এই বিতর্কিত শিক্ষা আইন তারা প্রণয়ন করতো না। তারা ইসলামি শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হওয়ার কারণেই তারা বিতর্কিত, ইসলামহীন ও সমস্যাসংকুল শিক্ষানীতি বা শিক্ষাআইন প্রণয়ণ করেছে। যারা এই শিক্ষানীতির সাথে কাজ করছে। সেখানে যদি কোনো উলামায়ে কেরাম থাকতো। বা উলামায়ে কেরামের পরামর্শে এটি প্রণীত হতো তাহলে শিক্ষা সিলেবাস বিতর্কিত হতো না। আমাদের আন্দোলন ও করা লাগতো না।

সারাদেশে এক খুতবায় জুমা আদায়ের পরিকল্পনাকে অনেকেই ভালো বলেছেন, এমতাবস্থায় খতীবদের করণীয় কী?

এটিতো সরকার থেকে বলে দেয়া হয়েছে। সরকারি খুৎবা দেয়া বাধ্যতামূলক নয়। বরং সময়োপযোগী, খুৎবার কিছু বিষয় নির্ধারণ করে দেয়া হয়। খতীবগণ তার আলোকে খুৎবায় আলোচনা করবেন।

জুমার খুৎবায় কোন ধরনের বক্তব্য আশা উচিত?

কোনো একটি সাবজেক্টের উপর তো আসবে না। দেশের সমস্যা। জাতীর সমস্যা। সাময়িক ইস্যু নিয়ে আলোচনা করতে হবে। এমব সমস্যা নিয়ে আলোচনা করে কার সমাধান ক হতে পারে তা নিয়েও আলোচনা করা যেতে পারে। যেমন : ব্যক্তিগত সমস্যা সংশোধনের জন্য। পারিবারিক সমস্যা, সামাজিক সমস্যা ও রাষ্ট্রীয় সমস্যা সংশোধনের ব্যাপারে আলোচনা করতে পারেন। যে এলাকার খতীব। তিনি তার মুসুল্লিদের ব্যাপারে যে আলোচনা করা ভালো মনে করবেন। সে আলোচনা করতে পারেন। এটিতে নির্দিষ্ট করে দেয়ার কোনো বিষয় নয়। কারণ যে এলাকার খতীব। তিনি তার মুসুল্লিদের ব্যাপারে ভালো জানেন। তাই বিষয়টি তিনি বিবেচনা করে নিবেন। এবং কুরআন-হাদিসের আলোকে সঠিক ও সুন্দর সমাধানকল্পে আলোচনা করবেন।

সরকারি প্রতিষ্ঠান ইসলামিক ফাউন্ডেশন বা এ ধরনের প্রতিষ্ঠানে আলেমদের অংশগ্রহণ করা প্রয়োজন কিনা?

অবশ্যই। এটা শুধু প্রয়োজনেই সীমাবদ্ধ নয়। এর অনেক জরুরত রয়েছে। যখন যোগ্য উলামায়ে কেরামের মাধ্যমে এসব প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হবে তখন সুন্দর, নির্ভুল, সময়োপযোগী, সঠিক ও মানুষের চাহিদামাফিক কাজ করা যাবে। সুতরাং আলেমদের অংশগ্রহণকে আমি জরুরি বলে মনে করি। এবং এর জন্য যা করা প্রয়োজন সেটুকু আলেমদের করতে হবে।

দেশ পরিচালনায় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ কতটুকু সক্ষমতা রাখে বলে মনে করেন?

আমরা সাধারণ কোনো দলের মতো নই। বরং আমরা একটু ভিন্ন। সেটা হলো আমরা আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করি। আমরা খুব ভেবেচিন্তে পা বাড়াই। আমরা চাচ্ছি সময় লম্বা হোক। কিন্তু সতর্ক হয়ে সাবধানতার সাথে পা বাড়ানোটাই আমি বেশি কল্যাণকর বলে মনে করি।

[caption id="attachment_8335" align="alignright" width="390"]unus ahmad3 আমরা সাধারণ কোনো দলের মতো নই। বরং আমরা একটু ভিন্ন। সেটা হলো আমরা আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করি। আমরা খুব ভেবেচিন্তে পা বাড়াই। আমরা চাচ্ছি সময় লম্বা হোক। কিন্তু সতর্ক হয়ে সাবধানতার সাথে পা বাড়ানোটাই আমি বেশি কল্যাণকর বলে মনে করি। [/caption]

ইসলামী আন্দোলন কি সরকার গঠনের চিন্তা করে? কবে নাগাদ সেটি সম্ভব বলে মনে করেন?

আপাতত আমরা সরকার গঠনের চিন্তা করছি না। বরং সরকার গঠনের পূর্বে নিজেদের সংঘবদ্ধ করতে চাচ্ছি। আমরা নিজেরা সংঘবদ্ধ হওয়ার পর সরকার গঠনের চিন্তা করা যাবে। আপাতত এটা নিয়ে চিন্তা করা হচ্ছে না। সরকার গঠনের ব্যাপারে আল্লাহই ভালো জানেন।

 

মাঠ পর্যায়ে আপনাদের কার্যক্রম কেমন?

আমাদের মুহতারাম আমীরের নির্দেশে আমরা সারাদেশে কার্যক্রম পরিচালনা করছি। বিগত ২৮ তারিখে ইউনিয়ন পর্যায়ে সভা ও মতবিনিময় হলো। ৩০ তারিখে থানা পর্যায়ে, আগামী ৫ আগষ্ট জেলা পর্যায়ে হবে। মোটকথা সারাদেশে আমরা আমাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছি। তাছাড়া আমাদের বিভিন্ন শাখায় কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। যেমন, ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন আছে। দেশের মেধাবী ছেলেরা এর সদস্য হচ্ছে। আছে ‘ইসলামী শ্রমিক আন্দোলন’ যার সভাপতি অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, সেক্রেটারী জেনারেল মাওলানা খলীলুর রহমান। জাতীয় উলামা-মাশায়েখ আইম্মা পরিষদ এর আহবায়ক কমিটির আহবায়ক হলেন নুরুল হুদা ফয়েজী. সদস্য সচিব হচ্ছেন, গাজী আতাউর রহমান। আছে জাতীয় শিক্ষক পরিষদ, ইসলামী আইনজীবি পরিষদ, ইসলামী মুক্তচিন্তা পরিষদ নামে আমাদের বিভিন্ন সংগঠন রয়েছে।

তরিকত ফেডারেশনের ডাকে একটি ঐক্য হওয়ার কথা ইসলামী দলগুলো, তার সম্ভাবনা কতটুকু?

কোনো ইসলামী দল যদি ঐক্যের আহবান করে। তাহলে আমরা ঐক্যবদ্ধ হতে প্রস্তুত আছি। আর তরিকত ফেডারেশনের মাধ্যমে ঐক্য হওয়ার ব্যাপারে আমার কিছু জানা নেই। তরিকত ফেডারেশনের সাথে আমাদের কোনো দাওয়াতে মিলিত হয়েছি বলে আমাদের জানা নেই।

সব ইসলামি দল ঐক্যমতে আসতে পারে কিনা?

পারবে না কেনো? অবশ্যই আসতে পারে। আশা উচিত। ঐক্যের আহবান করতে হবে। ঐক্যের আহবান করলে সকল ইসলামি দল সাড়া দিলে অবশ্যই ঐক্য হওয়া সম্ভব।

আরআর


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ