শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৬ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১০ শাওয়াল ১৪৪৫


বন্ধ হচ্ছে আবাসিক এলাকার স্কুল মাদরাসা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

talaএ এস এম মাহমুদ হাসান : ঢাকার আবাসিক এলাকার সকল বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান উচ্ছেদে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। শুরুতে ঢাকার উভয় সিটি কর্পোরেশন এ উদ্যোগ নিলেও গত ০৪/০৪/২০১৬ ইং মন্ত্রিসভায় সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে ৬ মাস সময় দিয়ে এ সংক্রান্ত একটি সিদ্ধান্ত হয়। এর ফলে আবাসিক ভবনে অনুমোদিত/অননুমোদিত সব ধরনের কিন্ডারগার্টেন, স্কুল, হাসপাতাল, হোটেল, দোকানসহ সব ধরনের অফিস নিষিদ্ধ হচ্ছে।

আগামী অক্টোবর মাসের মধ্যে স্ব উদ্যোগে প্রতিষ্ঠান অপসারণ বা অন্যত্র স্থানান্তর করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে সরকার তথ্য সংগ্রহ করে ঢাকা ইলেট্রিক সাপ্লাই কোম্পানিগুলোর মাধ্যমে নির্দিষ্ট সময় শেষ হলে বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানিসহ সব ধরনের সরকারী সুবিধা বন্ধের আগাম নোটিশ দিয়েছে। এ নিয়ে বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন এসোসিয়েশনের নেতারা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।

তারা বলছেন, সরকার কঁচি কাঁচাদের মাতৃস্নেহে পড়ার সব সুযোগ বন্ধ করার ঘৃণ্য উদ্যোগ নিয়েছে। লক্ষ লক্ষ শিশুদের শিক্ষা গ্রহণকে বাঁধাগ্রস্ত করছেন। তাছাড়া হাজার হাজার শিক্ষকদেরও বেকার করে অনিশ্চয়তার মধ্যে ঠেলে দিচ্ছেন।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন এসোসিয়েশন এর সেক্রেটারি জাহাঙ্গীর কবির রানা আওয়ার ইসলাম ২৪.কমকে বলেন, সারা বিশ্বে আবাসিক এলাকায় এ ধরনের লক্ষ লক্ষ স্কুল রয়েছে। বাংলাদেশেও লক্ষ লক্ষ স্কুল রয়েছে। আমাদের সংগঠনে দুই হাজার ছয়শ (২৬০০) স্কুল রয়েছে। এছাড়া এ ধরনের আরো অনেক সংগঠন রয়েছে। সরকার যদি আমাদের মত প্রাথমিক কিন্ডারগার্টেন বন্ধ করতে চায়, তাহলে তার আগে সরকারকে ৫০ থেকে ৬০ হাজার সরকারী স্কুল নির্মাণ করতে হবে।

তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সরকারী বড় বড় স্কুলের কারণে ব্যস্ততম সড়কে যানজট হলেও সরকার কুচক্রীদের যড়যন্ত্রে আবাসিক এলাকার অলি-গলির মাঝে অবস্থিত ৩০০-৪০০ ছাত্র/ছাত্রীর স্কুলগুলো বন্ধ করার কথা বলছেন। যদি আবাসিক এলাকার এ কিন্ডারগার্টেনগুলো বন্ধ করতে হয়, তাহলে আবাসিক এলাকার সরকারী স্কুলগুলো আগে সরাতে হবে। যদি সেই সরকারী স্কুলগুলো থাকে, তাহলে কেন আমাদের কিন্ডারগার্টেনগুলো থাকবে না? তিনি বলেন, আমরা শিক্ষক সমাজ এ স্কুলের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করি। যদি সরকার আমাদের শিক্ষকদের কর্মসংস্থান করে দিতে পারেন, তাহলে আমরা সরকারের এমন সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাব। আমরা বিশ্বাস করি, বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রি শেখ হাসিনা এমন দূরভিসন্ধিমূলক অপরিপক্ক এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসবেন। নতুবা আমরা শিক্ষক সমাজ আন্দোলনে নামতে বাধ্য হব। আগামী ২৮ জুলাই সংগঠনের মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করে সরকারী এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আমাদের পরবর্তী কর্মসূচি জানিয়ে দেওয়া হবে ইংশাআল্লাহ।

এ নিয়ে অভিভাবকরাও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তারা বলছেন, ঢাকার অধিকাংশ এলাকা ও বাড়ি আবাসিক। সে ক্ষেত্রে যদি আবাসিক এলাকার স্কুল ও দোকানপাট বন্ধ করে দেওয়া হয়, তাহলে ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের পড়া লেখা ও নিত্য প্রয়োজনীয় পন্যের জন্য বেশ সমস্যায় পড়তে হবে তাদের। সেক্ষেত্রে আবাসিক এলাকার বাসিন্দাদের দূরে কোনো বানিজ্যিক ঝঞ্ঝাট ও ও গ্যাদারিং এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বাচ্চাদের পড়া লেখা ও আনা নেওয়ার যারপরনাই সমস্যার সৃষ্টি হবে। তাছাড়া বর্তমান বাংলাদেশে রাজনৈতিক ও সন্ত্রাসী অস্থিরতা থাকায় ছেলে মেয়েদের জীবনের নিরাপত্বা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। সূত্র মতে, সরকারের এ উচ্ছেদ সংক্রান্ত সিদ্ধান্তে সংশ্লিষ্ট মহলে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে এবং বিভিন্ন ধরনের প্রতিষ্ঠান সংশ্লিটরা একই প্লাটফর্মে আন্দোলন করার উদ্যোগ নিয়েছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সংগঠনের একজন সদস্য বলেন, শিক্ষাকে সরকার বাণিজ্যিকিকরণ করে শিক্ষকদের হেয় প্রতিপন্ন করেছেন এবং সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ আবাসিক এলাকায় অবস্থিত সব ধরনের প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগতা ও সংশ্লিষ্টদের প্রতিপক্ষ বানিয়েছেন।

এ অপরিকল্পিত নগরীতে পূর্বপরিকল্পনা ছাড়া গড়ে ওঠা এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে হঠাৎ এমন সিদ্ধান্ত একটি হঠকারী সিদ্ধান্ত হিসেবেই দেখছেন সংশ্লিরা। বিতর্ক উঠেছে, “শিক্ষাদান” সেবা নাকি বাণিজ্য? সুস্থ্য সমাজের অন্যতম চালিকা শক্তি প্রাথমিক স্কুলের বেসরকারী শিক্ষকবৃন্দকে সরকার কেন এমন অবহেলায় দৃষ্টি দেখে এমন কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন? এছাড়া ঢাকার বাণিজ্যিক ও আবাসিক এলাকায় অবস্থিত বিভিন্ন কওমী মাদরাসা ও কওমী আলেমদের দ্বারা পরিচালিত ক্যাডেট মাদরাসা সমূহেও একই ধরনের নোটিশ দেওয়া হয়েছে। ব্যক্তি পর্যায়ে এ ব্যপারে তাদের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানা গেলেও তাদের সংগঠনের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।


সম্পর্কিত খবর