বুধবার, ২৭ মার্চ ২০২৪ ।। ১৩ চৈত্র ১৪৩০ ।। ১৭ রমজান ১৪৪৫


যাকাত এবং তারুণ্যের আইডল মুশফিকুর রহীম

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

gaji ataur rahmanগাজী আতাউর রহমান : বাসস পরিবেশিত নয়াদিগন্তের এক খবরে দেখলাম, বাংলাদেশ টেস্ট ক্রিকেট দলের অধিনায়ক মুশফিকুর রহীম বিত্তবানদের প্রতি যাকাত প্রদানের আহবান জানিয়েছেন।যাতে গরীব মানুষেরা ঈদের আনন্দে শামিল হতে পারে।মুশফিকের এ আহবান খুবই প্রশংসনীয়।মুশফিকের মতো দেশের তরুণ সমাজের আইডলরা যদি এমনিভাবে ইসলামের মৌলিক এবং মানবিক দিকগুলোর সৌন্দর্য চমৎকারভাবে তুলে ধরতো তাহলে এদেশের তরুণ সমাজ কিছুতেই পথ হারাতো না।

মুশফিক যেহেতু ইসলামের একটি মৌলিক বিধান যাকাত এবং এর হকদার দরিদ্র মানুষের কথা উল্লেখ করেছেন তাই এ প্রসঙ্গে আমি কিছুটা বিশ্লেষণের প্রয়োজন বোধ করছি।

মুশফিক যাকাত প্রদানের মাধ্যমে দেশের দরিদ্র মানুষগুলোকে শুধু ঈদের একটি দিনের আনন্দে শামিল করতে চেয়েছেন।এই দরিদ্র মানুষগুলোর দরিদ্রতা যদি চির দিনের জন্য দূর হয়ে যায়, তাহলে মুশফিকের মতো মহৎপ্রাণ তরুণরা নিশ্চয় আরও বেশি আনন্দিত হবে এবং নিশ্চয় সে কাজে আরও উৎসাহ বোধ করবে, এমনটা আমরা ধারণা করতেই পারি।

তাহলে আসুন আমরা একটু ভেবে দেখি, দেশে খুব সহজে কিভাবে দারিদ্র বিমোচন সফল করা যায়; আমি চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি, ইসলামের বিধান অনুযায়ী যদি দেশে মাত্র একবছর যাকাত ব্যাবস্থা কার্যকর করা হয় তাহলে একবছর পরে দেশে আর কোন দরিদ্র মানুষ থাকবে না।এটা কোন বায়বীয় বা হাওয়ায়ী কথা নয়, বরং বাস্তবতার নিরিখে ক্যালকুলেশন করেই আমি এ কথা বললাম।বিশ্বাস না হলে আসুন হিসাবে বসি।

গত মাসে পত্রিকায় প্রকাশিত বাংলাদেশ ব্যাংক -এর হিসাব অনুযায়ী দেশের ব্যাংকগুলোতে এক লাখ বিশ হাজার কোটিপতির মোট আমানতের পরিমান তিন লাখ সতের হাজার কোটি টাকা।এ টাকা ব্যাংকগুলোতে রক্ষিত মোট আমানতের ৪০ ভাগ।তাহলে বুঝা গেল শুধু ব্যাংকে বিত্তবানদের জমানো লিকুইট মানির পরিমান প্রায় ৮ লাখ কোটি টাকা।কারণ,শুধু কোটি টাকার উপরে যারা ব্যাংকে জমা রেখছে তারাই শুধু বিত্তবার নয় বরং যারা লাখ টাকা জমা করেছে তারাও বিত্তবান একং যাকাত দেয়ার উপযুক্ত।

৮ লাখ কোটি টাকার উপর বছরে যাকাত আসে আড়াই পার্সেন্ট হিসাবে ২০ হাজার কোটি টাকা।এটা শুধু ব্যাংকে জমানো লিকুইট মানির উপর যাকাতের হিসাব।সবাই শুধু ব্যাংকেই সব টাকা রাখে না।শেয়ার, বন্ড , ডিভেঞ্চারসহ অন্যান্য লাভজনক খাতেও বিনিয়োগ করে।তাছাড়া স্বর্ণালংকার, হীরা, চান্দি, ব্যাবসার জমি এবং ব্যাবসার জন্য তৈরি বাড়ি ঘরের উপরও যাকাত ধার্য হয়।সব হিসাব করলে আরও কতো টাকা যাকাত আসতে পারে!একেবারে কম করে ১০ হাজার কোটি টাকাও যদি ধরি তাহলে মোট যাকাত থেকে সংগ্রহ হবে ৩০ হাজার কোটি টাকা।
বাংলাদেশ সরকারের হিসাব অনুযায়ী বর্তমানে দেশে প্রায় ২০ভাগ মানুষ দরিদ্র।এর মধ্যে ১০থেকে ১১ ভাগ অতি দরিদ্র। ধরে নিলাম দেশের ২০ ভাগ তথা প্রায় তিন কোটি মানুষই যাকাত পাওয়ার হকদার। তিন কোটি মানুষ মানে গড়ে ৬০ লাখ পরিবার।

৩০ হাজার কোটি টাকা ৬০ লাখ পরিবারের মধ্যে ভাগ করে দিলে প্রতিটা পরিবার পায় ৫০ হাজার টাকা করে। এই ৫০ হাজার টাকার সাথে প্রতিটা পরিবারকে যদি ব্যাংক থেকে আরও ৫০ হাজার টাকা লোন দেয়া হয় কৃষিতে, হাস, মুরগি, গরু, ছাগলের খামারে বা বিভিন্ন ক্ষুদ্র কুটির শিল্পে বিনিয়োগের জন্যে তাহলে এক বছরের মধ্যে দেশের দারিদ্র যেমন বিমোচন সম্ভব তেমনি ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে উন্নয়ন উৎপাদনেরও জোয়ার সৃষ্টি হবে।

৩০ হাজার কোটি টাকা যাকাতের সঙ্গে ৩০ হাজার কোটি টাকা লোনের কথা এজন্য বললাম, টাকাগুলো যাতে উৎপাদনশীল খাতে ব্যায় হয় এবং রাষ্ট্রের কিছুটা খবরদিারীও থাকে।তিন কোট মানুষের জন্য ৩০ হাজার কোটি টাকা লোন বেশি কিছু না।রাষ্ট্রের মাত্র কয়েক হাজার ভাগ্যবান মানুষ তিন লাখ কোটি টাকা লোন নিয়ে বসে আছে।হলমার্কের এক তানভিরই চার হাজার কোটি টাকা লোন নিয়ে মেরে দিয়েছে।
রাষ্ট্রে ইসলাম প্রতিষ্ঠা হলে যে মানুষের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠা হবে, অর্থনৈতিক সমতা, সামাজিক নিরাপত্তা এবং মানবিক মূল্যবোধ সুপ্রতিষ্ঠিত হবে ইসলামের যাকাত বিধানই এর প্রকৃষ্ট উদাহারণ।

অসংখ্য মোবারকবাদ তারুণ্যের যথার্থ আইডল মুশফিকুর রহীমকে।

লেখক : কলামিস্ট, গবেষক ও রাজনীতিক

আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর ডটকম /আরআর


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ