শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫


আল্লাহর কালামে শেফা আছে

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

mufti monoarমুফতি মনোয়ার হোসাইন : আইরিন । ৫ বছর হলো সংসার চলছে। বড়ই ভালো মেয়ে।সবই আছে কিন্তু পরিবার জুড়ে এক নীরব শুন্যতা বিরাজ করে। কেউ স্পষ্ট করে আইরিনকে কিছু বলে না কিন্তু আইরিন বুঝে তার একটি সন্তান চায় সবাই। সে বুঝাবে কী করে যে তার সন্তান হচ্ছে না। ইতিমধ্যে চিকিতসাও করানো হয়েছে যথেষ্ট। ডাক্তারের উপর ফেইথ নেই।টেষ্টের পর টেষ্টে শুধু টাকাই গেছে।কাজ হচ্ছে না দেখে স্বামী বেচারাও হতাশ! কী আর করার উপায় খুঁজে পায় না।

কার কাছে যেন কী শুনেছে, তাই আমার স্মরণাপন্ন। আমি স্পষ্ট করে বললাম-'আমি কবিরাজ নই' তার পরেও সে নাছোড় বান্দা 'হুজুর পানি পইড়ে দ্যান'। কুরআানুল কারীমকে আমি সব থেকে আযমতের সাথে রাখি খুব ভালোবাসি। আমার রবের উপর বিশ্বাস আছে পূর্ণ মাত্রায়। আর তিনি তো বলেছেন- আমি কুরআন নাযিল করেছি যা ঈমানদারদের জন্য শেফা ও রহমত স্বরুপ' -বনী ইসরাইল,আয়াত ৮২

একদিন সময় নিলাম। খুজেঁ দেখে কুরআনুল কারীমের কিছু আয়াত নির্বাচিত করলাম। পানিটা পড়ে দিলাম।আল্লাহর উপর ভরসা রাখতে বললাম। বছর না ঘুরতেই আইরিনকে আল্লাহ সন্তানের 'মা' করে দিলেন। এই আমলের প্রতি আমার ইতমিনান হলো। সংবাদটি আস্তে আস্তে অনেকেই জানলেন। পর পর ক'জনের চিকিৎসা চলল। আলহামদুলিল্লাহ অনেকেই উপকৃত হলেন।

বগুড়া থেকে ঢাকায় আসলাম ক'মাস আগে। পাশের ফোর স্টার হোটেলের এক কর্মচারী আমার সাথে খাতির জমালো। বাচ্চা নাই ১০ বছরের দাম্পত্যে। দিলাম পানি পড়া।আল্লাহও নিরাশ করলেন না। সে এখন বাবা হতে যাচ্ছে। আলহামদুলিল্লাহ।

ওর কাছে শুনে মোবারক ছুটে এসেছে। হুজুর, আমার ৭ বছর হয়ে গেল বাচ্চা কাচ্চা হয় না। আপনার পানি পড়ায় কাজ হয় শুনেছি। দেন হুজুর। হিশেব করে ৭ দিন পর আসতে বললাম।পানি পড়া নিয়ে গেল। ডাক্তারের সব ওষুধ বন্ধ করে দিয়েছে- ও বলল।পানি পড়া দেয়ার পর ৩ মাস পার হয়েছে, কাজ হয় নি। মোবারক হতাশ। হুজুর , রেজাল্ট নাই। আমি সবর করতে বললাম। ৫-৬ দিন আগে এসে হাসি হাসি মুখে বলল-ডাক্তারি চেকআপের রেজাল্ট,আমি নাকি বাবা হতে যাচ্ছি। আচ্ছা! যাক,আল্লাহ সম্মান বাঁচানোর মালিক।

বগুড়া সেন্ট্রাল মসজিদের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। রিকসা থেকে এক যুবক কাঁদতে কাঁদতে কাছে এল। সাথে একজন মহিলা বাচ্চা কোলে সেও কাঁদছে, বাচ্চাটাও কাঁদছে। আমি অবাক। আরে কী হয়েছে?
-হুজুর, ডাক্তাররা আমাদের ক্লিনিক থেকে ফেরত দিল।এই যে বাচ্চা ৮মাস বয়স। গত ৩ দিন যাবত নাগাড়ে কানতেছে। ডাক্তার কিছুই করতে না পেরে আমাদের এক পর্যায়ে বের করে দিল। হুজুর, এই মসজিদের ইমাম কে?আমাকে দেখান আমি তার কাছে যাব।
= 'আমিই ইমাম' বলো কী করতে হবে।
-কান্না বন্ধ করার তদবীর দেন।
আমি আল্লাহর সাহায্য চাইলাম। জানা আমলগুলো করলাম। প্রিয় পাঠক বিশ্বাস করুন -আল্লাহর কালামের কী ফযিলত! প্রথম ফুঁ দিতেই চিল্লিয়ে কান্নারত বাচ্চাটি একটু থামলো। ২য় ও ৩য় ফুঁ দেয়ার সাথে সাথে বাচ্চাটি ঘুমিয়ে গেল। কান্নারত পিতা-মাতা একে অপরের দিকে তাকাচ্ছিল, কখন যেন ওদের কান্নটিও থেমে গেছে। সমুদ্রের পানির মত ওরা নীরব এখন। আমার কত যে ভালো লাগলো বলে বুঝাতে পারবো না। বাচ্চার বাবা পকেটে হাত দিয়ে মনে হয় টাকা বের করলো,আমি উনার হাত উনার পকেটেই ফেরত পাঠালাম।

অফটপিকঃ সবগুলো ঘটনা আমার নিজের।একটি বিষয় স্পষ্ট করে বলি, উল্লেখিত কারো নিকট থেকে এক পয়সারও সুবিধা গ্রহণ করি নি যদিও হাদীসে জায়েযের প্রমাণ আছে। এটি শুধু আলেম বা ইসলামের একজন প্রতিনিধি হিসেবে অন্যদের নিকট সেবাটি পৌছে দিয়েছি মানবতার কল্যাণের জন্য। যার প্রতিদান আমি যথাসময়ে আল্লাহ তআলার কাছ থেকেই নেব।আলেম-উলামা মানবতার জন্য। তাদের শ্রদ্ধা করুন, ভালো বাসুন, কাছে আসুন। আল্লাহ আমাদের সাহায্য করুন।

আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর ডটকম /আরআর


সম্পর্কিত খবর