শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ।। ১৫ চৈত্র ১৪৩০ ।। ১৯ রমজান ১৪৪৫


ইসলামী নতুন জোট

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

islamiঢাকা : আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট-মহাজোটের বাইরে ধর্মভিত্তিক ইসলামী দলগুলোর সমন্বয়ে নতুন আরেকটি রাজনৈতিক জোট হচ্ছে। জাতীয় শিক্ষানীতি বাতিলসহ ইসলামবিরোধী বিভিন্ন ইস্যুতে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন গড়ে তোলার লক্ষ্যে এই নতুন প্ল্যাটফর্মটি হতে যাচ্ছে। এ জোটে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলের একাধিক শরিক ইসলামীসহ সমমনা কয়েকটি রাজনৈতিক দলও যুক্ত হতে পারে। প্রথম দিকে এটি ইস্যুভিত্তিক জোট হিসেবে থাকলেও আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে ইসলামী এ রাজনৈতিক জোটটি নির্বাচনী জোটে রূপান্তর হতে পারে বলে জোট গঠনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একাধিক নেতা জানিয়েছেন।

সূত্রটি জানায়, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুই বড় জোটের বাইরে থাকা ইসলামী দলগুলোর নেতারা গত কয়েক মাস ধরে নতুন একটি প্ল্যাটফর্ম গঠনে নিজেদের মধ্যে আলোচনা শুরু করেন। চলতি রমজানে তা অনেক দূর পর্যন্ত এগিয়েছে। পবিত্র ঈদুল ফিতরের পর জোট গঠন প্রক্রিয়া আরও অনেক দূর এগোবে। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছতে আরও কয়েক মাস সময় লাগতে পারে।

সূত্রটি জানায়, বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দল থেকে বেরিয়ে যাওয়া মাওলানা আব্দুল লতিফ নেজামীর নেতৃত্বাধীন ইসলামী ঐক্যজোট, চরমোনাই-পীর মুফতি সৈয়দ রেজাউল করীমের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, হাফেজ্জী হুজুরের ছেলে হাফেজ মাওলানা শাহ আতাউল্লাহর নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, প্রিন্সিপাল হাবিবুর রহমান ও মরহুম শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হকের ছেলে মাওলানা মাহফুজুল হকের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশ, ড. ঈসা শাহেদীর নেতৃত্বাধীন ইসলামী ঐক্য আন্দোলন, মরহুম মুফতি ফজলুল হক আমিনীর ছেলে আবুল হাসনাত আমিনীর খেলাফতে ইসলাম, মুসলিম লীগ (একাংশ) ও নেজামে ইসলাম পার্টিকে নিয়ে নতুন এ জোট হচ্ছে।

মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত দেশের বড় ইসলামী দল জামায়াতে ইসলামী বাদে যেকোনো ইসলামী দলকে এ জোটে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা চলছে জানিয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সম্ভাব্য এ জোট গঠনের অন্যতম উদ্যোক্তা দ্য রিপোর্টকে বলেন, বিএনপি জোটের দুই শরিক খেলাফত মজলিস (ইসহাক) ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলামকেও নতুন এ জোটে রাখার জন্য আলোচনা চলছে। এর বাইরে ২০ দলের সাবেক শরিক ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) চেয়ারম্যান শেখ শওকত শওকত হোসেন নিলুর নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (এনডিএফ)সহ ইসলামী ভাবধারার কয়েকটি সমমনা রাজনৈতিক দল ও সংগঠনকে নতুন ওই প্ল্যাটফর্মে আনা হতে পারে।

এ ব্যাপারে শেখ শওকত হোসেন নিলু বলেন, বড় দুই জোটের বাইরে জাতীয়তাবাদী ও ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্য হলে হলে মন্দ হয় না। এ নিয়ে আমিও আলোচনা শুরু করেছি।

এ ব্যাপারে নতুন এ জোটের অন্যতম উদ্যোক্তা ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মাওলানা আব্দুল লতিফ নেজামী বলেন, আপাতত শুধু ইসলামী দলগুলোকে নিয়েই জাতীয় শিক্ষানীতি বাতিলের দাবিতে ইস্যুভিত্তিক একটি জোট গঠনের প্রক্রিয়া এগিয়ে চলছে। আমরা সবার সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা করছি। তবে, ইসলামী ধ্যানধারণা পোষণ করেন এ রকম দলগুলোকে নিয়েও চিন্তা হচ্ছে। প্রথমে এটি চেতনাগত ঐক্য হবে। আগামীতে নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিলে এ জোটটি নির্বাচনী জোটে রূপান্তরিত হতে পারে, যোগ করে মাওলানা নেজামী।

কবে নাগাদ নতুন এ জোটের যাত্রা শুরু হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের লোকজন অনেকেই বিদেশে রয়েছেন। কেউ ওমরাহ, কেউ আবার হজে যাবেন। কোরবানি ঈদের (ঈদুল আজহা) পরে হয়তো আমরা এ জোটটির কার্যক্রম শুরু করতে পারব।

ইসলামী দলগুলোর নতুন জোট গঠনের প্রক্রিয়া চলছে স্বীকার করে বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর সভাপতি মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদি দ্য রিপোর্টকে বলেন, জাতীয় শিক্ষানীতি বাতিল ইস্যুতেই মূলত এই জোটটি গঠনের চেষ্টা চলছে। এ নিয়ে আলোচনা অনেক দূর পর্যন্ত এগিয়েছে। আমাদের মধ্যে যে দূরত্ব ছিল তা অনেকটা কেটে যাচ্ছে। আমরা ঈদের পরেই ইসলামবিরোধী শিক্ষানীতি বাতিলের দাবিতে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন গড়ে তুলতে চাচ্ছি।

এ জোটের নাম ও প্রধান কে হবেন তা ঠিক হয়েছে কি না জানতে চাইলে মাওলানা হামিদি বলেন, নতুন জোটের নাম এবং প্রধান কে হবেন তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। সবার মতামতের ভিত্তিতেই জোটের নাম ও প্রধান নেতা ঠিক হবে। এতে কোনো সমস্যা হবে না।

গত ১৭ জুন বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের ইফতার মাহফিলে সভাপতির বক্তব্যে দলটির আমির হাফেজ মাওলানা শাহ আতাউল্লাহ বলেন, দেশ এবং ইসলামের চলমান সঙ্কট থেকে উত্তরণে ইসলামী দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ হওয়া ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। ইসলামী দলগুলো একই প্ল্যাটফর্মে আসতে না পারলে ভবিষ্যৎ অন্ধকার, যোগ করেন তিনি।

ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ বলেন, ঐক্যের কথা বলতে বলতে মুখে ফেনা তোলা হয়। কিন্তু ঐক্য হচ্ছে না। ঐক্য না থাকার কারণেই আমরা পিছিয়ে আছি। নাস্তিক্যবাদীদের কাছ থেকে দেশ এবং ইসলামকে রক্ষায় আমাদের ঐক্যের প্রয়াস নিতে হবে।

আলোচনায় অন্য বক্তারাও একইভাবে ইসলামী দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। বক্তাদের এসব দাবির পরিপ্রেক্ষিতে খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব মাওলানা জাফরুল্লাহ খান একই সুরে বলেন, আমরা ঐক্যবদ্ধ না হলে অস্তিত্ব থাকবে না।

রমজান শুরুর পর থেকেই এসব ইসলামী দল রাজনৈতিক, সাংবাদিকসহ বিশিষ্টজনদের নিয়ে ইফতার মাহফিল করে আসছেন। এসব ইফতার মাহফিলে উপরে উল্লেখকৃত দলগুলোর নেতারা বক্তৃতায় ইসলামী দলগুলোর ঐক্যের ওপর গুরুত্বারোপ করে আসছেন।

সূত্র : দ্য রিপোর্ট


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ