বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১১ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

শিরোনাম :
‘মানতিক; যুগের চাহিদার সাথে মিলে না’ এ ধরেণের কথা অযৌক্তিক: মুফতি হিফজুর রহমান দাওরায়ে হাদিসের ফলাফল নজরে সানীর আবেদনের সময় বাকি ৩ দিন  বৃষ্টি প্রার্থনায় জামিয়াতুল আবরার রাহমানিয়ায় ‘সালাতুল ইস্তিসকা’  আদায় হাসপাতালে সৌদি বাদশাহ সালমান সোস্যাল মিডিয়ায় প্রচারিত পাঠ্য তালিকার সাথে বেফাকের পাঠ্য তালিকার সম্পর্ক নেই: বেফাক সৈয়দপুরে তাপদাহে অতিষ্ঠ মানুষ, ‘হিটস্ট্রোকে’ ১ জনের মৃত্যু স্বর্ণের দাম আরও কমলো, ভরি ১ লাখ ১৪ হাজার ১৫১ টাকা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান ইরান-পাকিস্তানের ঢাবিতে বৃষ্টির জন্য ‘সালাতুল ইসতিস্কা’র অনুমতি দেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ‘বৃষ্টির জন্যে সালাত আদায় করলেই অবশ্যম্ভাবী বৃষ্টি চলে আসবে—বিষয়টা তা নয়’

দুচাকায় বোম্বাটুরে (১ম পর্ব)

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

saikel_ourislam24শাহ নাওয়াজ শিমুল : ক্লাস ফোরে থাকাকালীন সাইকেল চালানো শেখার একটা প্রবল নেশা আমাকে পেয়ে বসলো,  শুরু হল আব্বুর সাইকেল নিয়ে ঠেলাঠেলি৷ অবশেষে সেটা দু সপ্তাহেই রপ্ত করে ফেললাম৷ তারপর থেকে সাইকেল আমার জীবনের একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে গেল৷ যখনই আব্বুর সাইকেল পেতাম তখনই এদিকে ওদিকে বেড়িয়ে পরতাম৷ আর আশেপাশে চক্কর দেওয়া তো আছেই,  নতুন নতুন হলে যা হয় আরকি৷

২০০০ সালের কথা, ডিসেম্বর মাসের শেষের দিকে একদিন সন্ধ্যায় আব্বু আমাকে একটা মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়ে দিলেন৷ শহরেরই ভিতরে তবে বাসা থেকে প্রায় দু কিলোমিটার দূরে৷ প্রথম প্রথম অনাবাসিক ছিলাম, মানে সকালে যেতাম আর এশার নামাজের পরে আবার বাসায় আতসাম৷ খুব যে কষ্ট হত তা কিন্তু নয় তবে একা একা রাতের বেলা এত পথ হেঁটে আসাটা খুবই বিরক্তিকর ছিল৷ দুমাসের মাথায় বলেই ফেললাম ‘যদি সাইকেল না দাও তাহলে আমি আর মাদরাসায় যাবো না৷’

একদিন সকাল বেলায় ঘুম থেকে উঠে বারান্দায় একটা পুরাতন ঝকঝকে এলটাস সাইকেল দেখতে পেলাম, শুধুই দেখলাম, জানতামনা যে এটাই আমার ব্যক্তিগত প্রথম বাহন৷ গোসল করে ব্যাগ গুছিয়ে যখন ঘরের বাহিরে বের হয়ে গেলাম মাদরাসায় যাবো বলে৷ আম্মু পেছন থেকে ডেকে চাবি দিল বলল ‘তোমার সাইকেল, সাবধানে চালাবা, এশার পরে সোজা বাড়ি চলে আসবা৷’ আমার যে কি খুশি সেদিন৷ তারপরে তো শুধুই স্মৃতি তৈরি৷ কত জায়গায় গেলাম, কত কিছু দেখলাম৷ সত্যি দারুন ছিল আমার প্রথম সাইকেলটা৷

তারপর দীর্ঘ চৌদ্দ বছর কেটে গেল, শহরের মাদরাসা ছেড়ে গ্রামে গেলাম। তারপর আবার শহরে এবং সবশেষে ঢাকায়৷ ২০১৪ পরিচয় হল আশরাফ ভাইয়ের সাথে,  মিনার মসজিদ মাদরাসায়৷ তিনি একটা ক্যালিস সাইকেল চালাতেন, কুলটুল মডেলের৷ওই সাইকেলটা আমার দারুন লাগে, অনেক দামি আর আমি গরিব মানুষ কিভাবে কিনবো সে পায়তারা করতে লাগলাম৷

সেবার মাহমুদের সাথে বি-বাড়িয়াতে গেলাম ওর কাজিনের বিয়ের দাওয়াতে৷ ফিরছিলাম ১৬ ডিসেম্বর সকালে, যখন আমরা ধানমন্ডি স্টার কাবাবের সামনে এলাম তখন দেখলাম অনেক সাইক্লিস্ট স্টার কাবাবে ‘বিজয় রাইড’ দিয়ে  নাস্তা করতে ঢুকছে৷ একসাথে এতগুলো লোকের এত সুন্দর সুন্দর বাইসাইকেল দেখে মাহমুদও ফিদা হয়ে গেল।  আমিতো আরো আগে থেকেই৷ এদিকে আমাদের এ নেশা আরেক জনকেও পেয়ে বসল। তার নাম নাকীব কে৷ মোটামুটি তখন তিনজনের একটা টিম,  নিজেদের ভিতরে আলাপ চলত কে কোন ধরনের সাইকেল পছন্দ করে সে নিয়ে৷

শুরুহল পুরাতন সাইকেলের খোঁজ,  দামে কম যত হয়৷ ফেসবুক ভিত্তিক সাইকেল রিলেডেট যত গ্রুপ পেইজ আছে সব গুলাতে ঢু মারতে মারতে অবশেষে আমরা ক্লান্ত হয়ে পড়লাম৷  নাকীব ওর বাসার লোকদেরকে রাজী করিয়ে ফেলল,  ওর টাকাও ম্যানেজ হয়ে গেল৷ একদিন শুক্রবার বিকালে ধানমন্ডি ‘সাইকেল লাইফ এক্সক্লুসিভ(CLE)’ থেকে ও একটা ভেলোস লিজিয়ন টেন মডেলের একটা সাইকেল ১৩৫০০দিয়ে কিনে নিয়ে এল৷ ও যখন কিনেছিল তখন ও ভালমতন চালাতে পারতো না৷ আমি মাহমুদ আর নাকীব তিনজনাই গিয়েছিলাম৷ মাহমুদ আর নাকীব রিক্সা করে বাড়ি ফিরল আর আমি নতুন সাইকেলে৷ আমার মনে মনে তখন খুব আফসোস হচ্ছিল, কারণ আমার সাইকেল নাই৷ তার দু সপ্তাহ পরে কিনলো মাহমুদ৷ ঐ একই দোকান থেকে, ও কিনলো ভেলোস লিজিয়ন ফোর্টি মডেলের, দাম পড়ল ১৭৫০০৷ মাহমুদও তখন ভাল চালাতে পারতোনা সুতরাং নতুন ঘোড়াটাকে চালিয়ে বাসায় আনার দায়িত্বটা এবারও আমার৷
saikel_ourislam24
মাহমুদ নাকীব দুজনার কেউই তখনো ভালমতন চালাতে পারতোনা, মেইন রোডে তো নয়ই৷  অবশেষে আমি অধম ওদেরকে উত্তমরুপে সাইকেল আয়ত্ব করানোর দায়িত্ব নিলাম৷ এলাকার গলিতে বিকাল হলেই ওদেরকে সাইলেক চালানো শিখাতাম৷ নাকীবের আগে মাহমুদ মোটামুটিভাবে আয়ত্ব করতে পারলো৷

শুরুহল আমার আর মাহমুদের চক্করবাজী,  মাহমুদ নিজের সাইকেলে আর আমি নাকীবেরটা নিতাম৷ এভাবে কিছুদিন গেল,  মন মানলোনা অবশেষে ধার-কর্জ করে কিনে ফেললাম একটা৷ সেইম মডেলের মানে ‘ভেলোস লিজিয়ন ফোর্টি’, তারপর বাকিটা ইতিহাস৷

আমি আর মাহমুদ যখন চক্করবাজী দিয়ে পুরা ঢাকা চষে বেড়াচ্ছিলাম কয়েক ঘন্টার ভিতরে তখন আমাদের সার্কেলের আরো কয়েকজনার বাসা থেকে টি এস সি আসতেই তত সময় লাগলো৷ মানে তানভীরের কথা বললাম আরকি৷

তানভীরের দলে আরেকজনও ছিল, নাম মাহবুব৷কেউই সাইকেল চালাতে পারতো না৷ এবার টার্গেট নিলাম ওদেরকেও শেখাবো৷ প্রতিদিন সকালে আমার প্রশিক্ষণ দেয়া শুরু হত বেলা দশটা নাগাদ৷ এলাকার গলিতেই৷ কোন কোন দিন আমরা চলে যেতাম ঢাকা উদ্দ্যান কোনদিন  আবার সোহরাউর্দি উদ্দ্যানে,  শিখাতাম ওরা মাহবুব, তানভীর শিখতো৷

এবার মাহবুবের আগে তানভীর ভালভাবে রপ্ত করতে পারলো,  সাইকেল কেনা ওর জন্য এবার ফরজ হয়ে গেল৷ ও একটা আপল্যান্ড ভ্যানগার্ড হান্ড্রেড কিনলো লায়ন সাইকেল স্টোর ধানমন্ডি ব্রাঞ্চ থেকে, দাম পড়ল ২৩৫০০৷ এর সপ্তাহ খানেকের ভিতরেই মাহদীও কিনলো একটা আপল্যান্ড৷ আমাদের টিমে তখন ৬ সদস্য,  আমি মাহমুদ তানভীর মাহদী আশরাফ ভাই আর নাকীব৷ মাহদী খুব বেশী একটা বাসা থেকে বের হতনা৷ ওকে নিয়ে আমাদের দুরে যাওয়া বলতে শুধুমাত্র জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়, আর এদিকে ভাকুর্তা পর্যন্ত৷

আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর ডটকম / আরআর


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ