শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৬ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১১ শাওয়াল ১৪৪৫


ভূস্বর্গ কাশ্মীরের আলোচিত দুই নারী

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

ফারুক ফেরদৌস : কাশ্মীরের সঙ্গে দু’জন নারীর নাম উচ্চারিত হয় বেশ কিছু দিন ধরেই। সাম্প্রতিক কালে কাশ্মীরের সবচে’ আলোচিত ব্যক্তিত্ব এই দুই নারী। একজন কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী মাহবুবা মুফতি আরেকজন স্বাধীনতাকামী নেত্রী আসিয়া আন্দ্রাবি।

মাহবুবা মুফতি সম্প্রতি কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন। পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রেসিডেন্ট মাহবুবা কাশ্মীরের প্রথম নারী মুখ্যমন্ত্রী এবং ভারতের দ্বিতীয় মুসলিম নারী মুখ্যমন্ত্রী।

গত ৭ জানুয়ারি কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তার বাবা মুফতি মুহাম্মদ সাঈদ মৃত্যু বরণ করেন। মাহবুবা তখন মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন। বিজেপির সাথে জোট করার ব্যাপারে বাবার সাথে তার মতবিরোধ ছিলো। চার মাস কেন্দ্রীয় বিজেপি সরকারের সাথে অনেক বৈঠক ও শর্ত চালাচালির পর মাহবুবা গত ৪ এপ্রিল মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন।

মাহবুবা মুফতির জন্ম ১৯৫৯ সনের ২২ মে। তিনি বড় হয়েছেন রাজনীতির আবহে। তার বাবা মুফতি মুহাম্মদ সাইদ ভারতের প্রথম মুসলিম হোম মিনিস্টার, রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন ১৯৫০ সন থেকে। কাশ্মীর ইউনিভার্সিটিতে আইনের উপর পড়াশোনা করা মাহবুবার রাজনৈতিক জীবন শুরু হয় কংগ্রেসের টিকেটে বিজবেহারা রাজ্য থেকে রাজ্যসভার সদস্য নির্বাচিত হওয়ার মধ্য দিয়ে।

১৯৯৯ সনে বাবাকে সাথে নিয়ে পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টি (পিডিবি) প্রতিষ্ঠা করেন মাহবুবা। সবাই ভাবছিলেন তিনিই পিডিবির প্রেসিডেন্ট হবেন। কিন্তু তিনি তার অভিজ্ঞ বাবাকে প্রেসিডেন্ট করে নিজে ভাইস প্রেসিডেন্ট হন।

কাশ্মীরে ২০০২ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিলো পিডিবি। ২০১৫ এ বিজেপির সাথে জোট করে আবার কাশ্মীরে সরকার গঠন করেছে পিডিবি। কিন্তু নিজের ইচ্ছায় তিনি বরাবরই সরকারের বাইরে ছিলেন। বাবাকে রাজ্য শাসনের দায়িত্ব দিয়ে নিজে দলের সাংগঠনিক কাজে ব্যস্ত থেকেছেন।

২০১৬র জানুয়ারির শুরুতে তার বাবা মারা যাওয়ার পরও তিনি সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ করতে চাননি। বিশ্লেষকরা বলছেন, কাশ্মীরের নতুন মুখ্যমন্ত্রী মাহবুবা মুফতির সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ। কিন্তু আজীবন লড়াকু মাহবুবা নিশ্চই সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেই কাশ্মীরের গণমানুষের নেত্রী হিসেবে নিজের সুনাম অক্ষুণ্ন রাখবেন।

মাহবুবা তখন মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন। বিজেপির সাথে জোট করার ব্যাপারে বাবার সাথে তার মতবিরোধ ছিলো। চার মাস কেন্দ্রীয় বিজেপি সরকারের সাথে অনেক বৈঠক ও শর্ত চালাচালির পর মাহবুবা গত ৪ এপ্রিল মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন।

কাশ্মীরের আরেক আলোচিত নারী স্বাধীনতাকামী নেত্রী আসিয়া আন্দ্রাবি। জন্ম ১৯৬২ সালে। কাশ্মীরের স্বাধীনতাকামী আন্দোলনে তার ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হয়। নারী স্বাধীনতাকামীদের সংগঠন দুখতারান-ই-মিল্লাতের প্রতিষ্ঠাতা তিনি।

১৯৯০ সনে আসিয়া হিজবুল মুজাহিদিন এর প্রতিষ্ঠাতা আশিক হোসাইনকে বিয়ে করেন। স্বামীর সাথে মাত্র দুই বছর থাকতে পেরেছিলেন আসিয়া। ১৯৯২ থেকে নিয়ে এখন পর্যন্ত তেইশ বছর ধরে ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী তৎপরতা’র অভিযোগে আশিক হোসাইন ভারতের জেলে বন্দী। ১৯৯৯ সনে মুক্তি দিয়ে কিছু দিনের মধ্যে তাকে আবার গ্রেফতার করা হয়। আসিয়াকে গ্রেফতার করা হয়েছিলো ১৯৯৩ সনে।

এরপর ১৯৯৪ সনে মুক্তি পেয়ে আত্মগোপনে চলে যান। ২০০৪ সাল পর্যন্ত তিনি আত্মগোপনে ছিলেন। ভারতীয় দমন পীড়নে আসিয়ার আত্মীয় স্বজনদেরর প্রায় সবাই কাশ্মীর ছেড়ে গেলেও আসিয়া কাশ্মীর ছাড়েননি। তার স্বামী দুই যুগ ধরে বন্দী, তার শিশু পুত্রকে তার সাথে জেলে থাকতে হয়েছে, তিনি নিজে বারবার গ্রেফতার নির্যাতনের মুখোমুখি হয়েছেন কিন্তু আসিয়া আন্দ্রাবি কাশ্মীরের স্বাধীনতার জন্য লড়ে গেছেন অবিচলিতভাবে।

তিনি বলেন, ‘আমার বড় ছেলে কাশ্মীরের সর্বকনিষ্ঠ প্রিজনার। আমার সাথে যখন সে জেলে থেকেছে তখন তার বয়স ছয় মাস ছিলো।’

ভারতীয় দমন পীড়নে আসিয়ার আত্মীয় স্বজনদেরর প্রায় সবাই কাশ্মীর ছেড়ে গেলেও আসিয়া কাশ্মীর ছাড়েননি। তার স্বামী দুই যুগ ধরে বন্দী, তার শিশু পুত্রকে তার সাথে জেলে থাকতে হয়েছে, তিনি নিজে বারবার গ্রেফতার নির্যাতনের মুখোমুখি হয়েছেন কিন্তু আসিয়া আন্দ্রাবি কাশ্মীরের স্বাধীনতার জন্য লড়ে গেছেন অবিচলিতভাবে।

দুখতারানে-ই-মিল্লাত গঠনের পেছনে তার অনুপ্রেরণার কথা বলতে গিয়ে আসিয়া আন্দ্রাবি বলেন, ‘আমি একজন উচ্চাভিলাষী মেয়ে ছিলাম। বাইরে পড়াশোনা করতে যাওয়ার ইচ্ছায় বাধা পেয়ে মর্মাহত হয়েছিলাম। সেই হতাশার সময়ে আমাকে উদ্ধার করতে এগিয়ে এসেছিলো মায়িল খায়রাবাদির বই ‘খাওয়াতিন কি বাতে’।

বইটির কভার স্টোরি ছিলো মারিয়াম জামিলার ঘটনা। সব ধর্ম অধ্যয়ন করে এই খৃষ্টান মহিলা কীভাবে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন তার বর্ণনা। মারিয়াম জামিলার ঘটনা আমার চোখ খুলে দিয়েছিলো।’ তিনি মনে করেন শাসনব্যবস্থা আল্লাহর আইনে পরিচালিত হওয়া উচিত, কুরআন হওয়া উচিত যে কোনো আইনসভার সংবিধান।

স্বপ্ন দেখেন কাশ্মীর একদিন স্বাধীন হয়ে ইনসাফভিত্তিক ইসলামি রাষ্ট্র হবে। নিজের জীবনকালে আসিয়া হয়তো তার স্বপ্নের বাস্তবায়ন দেখে যেতে পারবেন না। কিন্তু তার উত্তরসূরিরা একদিন ঠিকই স্বাধীনতার সূর্য ছিনিয়ে আনবে। অত্যাচার নির্যাতনে ভারাক্রান্ত কাশ্মীরে প্রতিষ্ঠিত হবে একটি ন্যায়ভিত্তিক ইসলামি রাষ্ট্র।

আরআর


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ