বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪ ।। ১৪ চৈত্র ১৪৩০ ।। ১৮ রমজান ১৪৪৫


রাজধানীর ৭ প্রবেশমুখে খানাখন্দ ও যানজট

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

khanakhandaআওয়ার ইসলাম ডেস্ক : দেশের ৪৩ শতাংশ রাস্তার মতো রাজধানী ঢাকায় প্রবেশ ও বের হওয়া সড়কগুলোরও বেহাল দশা। রাস্তার পাশে অবৈধ স্থাপনা, ফুটপাতে দোকান, অবৈধ গাড়ি পার্কিং, খানাখন্দ সড়ক ও নদীর উপর ছোট সেতুর কারণে রাজধানীর প্রবেশ মুখেই প্রতিনিয়ত প্রচ- যানজটে শিকার হতে হয় আন্তঃজেলা যানবাহনকে। রমজানে এ পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারন করেছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিশেষ করে কাচপুর ব্রিজ-সাইনবোর্ড মোড়, জুরাইন রেলক্রসিং-পোস্তগোলা ব্রিজ, বাবুবাজার ব্রিজ-বংশাল মোড়, আমিনবাজার ব্রিজ-গাবতলীর মোড়, কামারপাড়া-আব্দুল্লাহপুর মোড় ও সুলতানা কামাল ব্রিজ থেকে ডেমরা মোড়সহ রাজধানীর প্রবেশ ও বের হওয়া এই ৭টি মুখেই প্রচ- যানজটে শিকার হতে হয় পরিবহনকে। এছাড়া রাজধানীর ভেতরের ভাঙাচোরা রাস্তাগুলো সংস্কারের কাজ চলায় বিকৃঙ্খলা অবস্থা তৈরি হয়েছে ভেতরের সড়কগুলোতে। এর মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা যাত্রাবাড়ী-গুলিস্তানের ফ্লাইওভারে নিচের সড়ক ও শহীদ ফারুক সড়ক দুটি। ফ্লাইওভার তৈরির পরও যাত্রাবাড়িতে অধিকাংশ যানবাহন নিচের সড়ক দিয়ে চলাচল করে। কিন্তু রাস্তার দুই পাশে অবৈধ গাড়ি পার্কিং, যাত্রাবাড়ী মোড়ে বাজার ও ট্রাফিট ব্যবস্থা ঠিক না থাকার কারণে প্রতিদিন সায়েদাবাদ থেকে যাত্রাবাড়ী মোড় পর্যন্ত ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থাকতে হচ্ছে ঘরমুখো মানুষের। এছাড়া বৃষ্টি হলেই ফ্লাইওভার থেকে পানি পড়ে বড় বড় গর্ত তৈরি হচ্ছে সড়কে। তাই ঈদের আগে সড়কগুলো সংস্কার করে যানজটমুক্ত না করলে ঈদে ঘরমুখো মানুষের চরম দুর্ভোগে পড়তে হবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

এ ব্যাপারে সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এমএএন ছিদ্দিক বলেন, ‘রাজধানী ঢাকায় প্রবেশ ও বের হওয়া মুখে যাতে যানজট তৈরি না হয় সে বিষয় নিয়ে বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা করে নির্দেশনা দেয়া হয়। এছাড়া সড়কগুলো মেরামতের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অনুরোধ করা হয়। পাশাপাশি রাস্তার পাশে যদি অবৈধ স্থাপনা থাকে তা উচ্ছেদের কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়। তাই এবার এই বিষয়গুলো মাথায় রেখে কার্যপত্র তৈরি করা হয়েছে। যাতে করে রাজধানীতে প্রবেশ ও বের হওয়া সড়কগুলো যানজটমুক্ত রাখা যায় সে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

এছাড়া কাচপুর ব্রিজ থেকে কুমিল্লার দাউদকান্দি পর্যন্ত প্রায় ৩০ কিলোমিটার এলাকায় প্রতিদিনেই যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে। যা ঈদে আরও দ্বিগুণ হওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের যাত্রীরাও কাচপুর ব্রিজ ব্যবহার করে রাজধানীতে প্রবেশ করার সময় প্রচ- যানজটের শিকার হতে এই মহাসড়কের যাত্রীদের। ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট এই দুই মহাসড়কের যাত্রীদের ঢাকা প্রবেশ করতে হয় চার লেনের একমাত্র কাচপুর ব্রিজ দিয়ে। দুই মহাসড়কের গাড়ির চাপের কারণে ব্রিজে ওঠার ৩০ কিলোমিটার আগ থেকে যানজট তৈরি কাচপুর ব্রিজের মুখে। এছাড়া শনিরআখড়া থেকে কাচপুর ব্রিজ পর্যন্ত ৬ কিলোমিটার সড়কে আট লেন নির্মাণ কাজ চলছে সাড়ে ৫ বছর ধরে। তাই সড়কের পাশে নির্মাণ সামগ্রিক ফেলা রাখা, গর্ত ও অবৈধ গাড়ি পার্কিংয়ের প্রতিনিয়ত যানজট তৈরি হয় এই সড়কে।

অপরদিকে ঢাকা-বরিশাল ও ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের যাত্রীরা রাজধানীতে প্রবেশ ও বের হয় পোস্তগোলা ও বাবুবাজার ব্রিজ দিয়ে। এছাড়া আরিচা ফেরিঘাট দিয়ে গাবতলীর আমিনবাজার সেতু দিয়েও উত্তরাঞ্চলের যাত্রীদের সাথে ওই মহাসড়কের যাত্রীরা ঢাকায় প্রবেশ করে। কিন্তু ঢাকার প্রবেশের মুখেই জুরাইন রেলগেট থেকে যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা, বাবুবাজার ব্রিজের ওপর থেকে বংশাল মোড় ও আমিনবাজর ব্রিজ থেকে গাবতলীর মোড় পর্যন্ত যানজটে আটকে থাকতে হয় ঘরমুখো যাত্রীদের। এর মধ্যে জুরাইন রেলগেট এলাকা রাস্তা দখল করে ফুটপাতে দোকান, এলোমেলোভাবে গাড়ি পার্কিং ও ট্রাফিকের অব্যবস্থাপনার কারণে প্রতিনিয়ত এই সড়কগুলোতে যানজট লেগে থাকে বলে ভুক্তভোগীরা জানান।

যাত্রীদের অভিযোগ, বাবুবাজার ব্রিজের উপরে অবৈধভাবে কাউন্টার তৈরি করে বাসের টিকিট বিক্রয়, অবৈধ গাড়ি পার্কিং ও ফুটপাতের দোকানের কারণে প্রচ- যানজট সৃষ্টি হয়। পাশাপাশি ফেরিঘাটেও দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হচ্ছে যানবাহনগুলোকে ঢাকায় প্রবেশ ও বের হতে। যা ঈদের আগে আরও প্রকট হতে পারে বলে আশঙ্কা করেন যাত্রীরা। অপরদিকে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক ও ঢাকা-জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ মহাসড়কের যাত্রীরা টঙ্গী ব্রিজ দিয়ে রাজধানীতে প্রবেশ করে তাই প্রবেশ মুখেও থেমে থেমে যানজটের শিকার হতে হচ্ছে যাত্রীদের। সরু রাস্তার কারণে আব্দুল্লাহপুর থেকে আশুলিয়া বেড়িবাঁধে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। এতে রাজধানী থেকে বের হওয়া মুখে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে পড়ে চরম দুর্ভোগে পড়তে হয় ঘরমুখো মানুষদের। এছাড়া ইতোমধ্যে বৃষ্টির কারণে ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কসহ বিভিন্ন সড়কে। টাঙ্গাইল, সাভার, ধামরাইসহ উত্তরাঞ্চলের অনেক যাত্রী এই সড়ক দিয়ে রাজধানীতে প্রবেশ করে। তাই সড়কগুলো মেরামত করে যানজটমুক্ত রেখে ঈদের ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান স্থানীয়রা।

এদিকে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৬৯০ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে বেশির ভাগ সড়কেরই বেহালদশা। খানাখন্দ, ম্যানহোলেন ঢাকনাবিহীন উঁচু-নিচু সড়কে পিচ-ইট-সুরকি, খোয়া উঠে তৈরি হয়েছে ছোট-বড় গর্ত। এর মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা বিভিন্ন ওয়ার্ডের গলিপথগুলো। এছাড়া রাজধানীর ভিআইপি সড়কসহ অধিকাংশ সড়কে লাগোয়া নালা না থাকায় বৃষ্টি হলেই দেখা দিচ্ছে জলাবদ্ধতা। বিশেষ করে রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়, মতিঝিল, পল্টন, গুলিস্তান, মগবাজার, মালিবাগ, রামপুরা, যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ, টিকাটুলী, দোলাইপাড়, জুরাইন, শ্যামপুর, ডেমরা ও পুরান ঢাকাসহ অধিকাংশ গলিতেই বৃষ্টি হলেই তৈরি হচ্ছে জলাবদ্ধতা। তবে রাজধানীর ভেতরের কিছু ভাঙাচোরা রাস্তাগুলো সংস্কারের কাজ শুরু হলেও এর শেষ হওয়া নিয়ে সংশয় আছে নগরবাসী। ঈদের আগে যদি সংস্কারের কাজ শেষ না হয় তাহলে চরম বিকৃঙ্খল অবস্থা তৈরি হবে রাজধানীর ভেতরের সড়কগুলোতে।

আওয়ার ইসলাম ২৪ ডটকম / এফএ


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ